নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফ এর দৃষ্টিভঙ্গি

ফ এর দৃষ্টিভঙ্গি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় সঙ্গীত : আমার পয়েন্ট অফ ভিউ

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৫৭

জাতীয় সঙ্গীত জিনিসটা নিয়ে সেই স্কুল লাইফ থেকেই আমার মধ্যে কখনোই কোনো ফ্যাসিনেশন, ইমোশন কাজ করেনি। পিটি-প্যারেডে কখনোই গাইনি, স্টেডিয়ামে ম্যাচশুরুর পূর্বে বেজে উঠলেও উঠে দাঁড়াইনি। মোটাদাগে এই ব্যাপারটারই বিরোধী ছিলাম আমি। বড় হয়ে ধীরে ধীরে যখন এটার ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরি জানতে পারি, তখন বুঝতে পারি যে ঠিক ট্র‍্যাকেই আছি।

২০১৯ সালের দিকে ভারতীয় চ্যানেলের রিয়েলিটি শোতে জনৈক বাংলাদেশী গায়ক এরকম একটা টপিক তুলেছিলো, সাথে সাথে নেটিজেনরা তার মূণ্ডুপাত শুরু করে। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে তাকেও সাপোর্ট দিয়েছি, যদিও লোকটাকে আমার একদমই পছন্দ না। তাকে সাপোর্টের কারণ হচ্ছে, রবিঠগের লেখা ঐ রবীন্দ্রসংগীত বাংলাদেশকে যতটা না রিপ্রেজেন্ট করে, তারচেয়েও বেশি রিপ্রেজেন্ট করে প্রিন্স মাহমুদের লিরিক্স-মিউজিকে জেমসের গাওয়া পিয়ানো অ্যালবামের বাংলাদেশ গানটা - এটুকুই ছিলো তার বক্তব্য। কথা কিন্তু সে মোটেও ভূল বলেনি। আমার সেই সাপোর্ট করা পোস্টের লিংক কমেন্টে দেয়া থাকলো।

সেই একই টপিকে আবার নতুন করে কথা উঠলো আর বলাই বাহুল্য, এবার যে তুললো, তাকেও আমি সমর্থন করছি। পূর্ববঙ্গ ও মুসলিমবিদ্বেষী রঠার গীতি যে কোনোভাবেই আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হবার যোগ্য না, তার সমর্থনে কয়েকটা কথা বলা জরুরি বোধ করছি।

‘’আমার সোনার বাংলা ‘’ গানটি রচিত হয়েছিলো ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। সত্যেন রায়ের রচনা থেকে জানা যায়, ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায় এই গানটি প্রথম গীত হয়েছিলো। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে আমার সোনার বাংলা গানটি লেখেন, যা অনেক পরে, ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয় [ তথ্যসূত্র ঃ উইকিপিডিয়া ]! বঙ্গভঙ্গ ছিলো ঢাকাকে রাজধানী করে ত্রিপুরা, মালদহ, আসাম নিয়ে একটি নতুন একটি প্রদেশ, যেটি গঠিত হলে মুসলমানরা উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছিলো। খুব স্বাভাবিকভাবেই উগ্র সাম্প্রদায়িক রঠা গংরা এর বিরোধিতা শুরু করে। এর বিরোধিতায় তখন প্রচুর জাতীয়তাবাদী লেখা, সঙ্গীত সৃষ্টি হয়, তন্মধ্যে একটি ছিলো এই "আমার সোনার বাংলা"! পরবর্তীতে ১৯১১ সালে এদের বিরোধিতায় বঙ্গভঙ্গ রদ হয়, আর মুসলমানদের মন ভেঙ্গে যায়, যেটিতে প্রলেপ দিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। বলা বাহুল্য, এখানেও বিরোধিতা করেছিলো নিষিদ্ধপল্লীর মালিকের নাতি রবীন্দ্রনাথ! তারই লেখা ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে "পাঞ্জাব সিন্ধ গুজরাট মারাঠা", "যামুনা গঙ্গা" মানে ভারতকে রিপ্রেজেন্ট করে এমন টপিক আছে৷ পাকিস্তানের প্রতীক চাঁদ-তারার কথা তাদের জাতীয় সঙ্গীতে আছে, "পারচামি সিতার ও হিলাল"... আমাদেরটায় এমন কিছুই নাই ৷ আর এটার ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরিও সবাই জানে৷ বাংলাদেশকে স্পেসিফিকালি রিপ্রেজেন্ট করে এমন কিছু নাই। পরিবর্তনের দাবীটা আমার মতে যৌক্তিক। আবার লোকটা ভারতীয়। একজন ভারতীয় লেখকের রচিত গান কেনো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে? অন্যদেশের কবি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত লিখলে তা "জাতীয়"-টাই বা থাকে কিভাবে? সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কথাটা কানে বাজে, " মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙ্গালী রক্ত দিয়েছে। কিন্তু একটি কলমের কালি খরচ করে একজন বাঙ্গালী একটা জাতীয় সঙ্গীত রচনা করতে পারলো না!" - ঠিকই তো! এটা কার ব্যর্থতা?

তো এমন একজন লোক, যার কাজই ছিলো তীব্র সাম্প্রদায়িক মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানো, সেই লোকের লেখা গান চুরি করা সুরে (গগণ হরকরার একটি গানের সুর) কিভাবে একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত হয়? তার গানে যে বাংলার কথা আছে, সেটি তো শুধুই বর্তমান বাংলাদেশ না, এর মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গও আছে। কিন্তু সঙ্গীত যেহেতু বাংলাদেশের, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কেনো থাকবে? এসব তো মনিবের অনুগত ভৃত্যমার্কা চিন্তাধারা! বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভারতীয় প্রোডাক্ট হটিয়েছি, এখন ঘাড়ে বসে থাকা শাহবাগী মার্কা সকল প্রেতাত্মাগুলোকেও নামানোর সময় এসে গেছে। শাহবাগীদের ঘেউ ঘেউ কানে না তুলে এই টপিকে কথাবার্তা জারি রাখুন, যদিও দেশে এই মুহুর্তে এরচেয়েও বড় সমস্যা রয়েছে। তবে আমার মতে, ভারতের তাঁবেদারদের হটানোর পর তাদের ভৃত্যগিরি, দালালির কোনো নিশানাই আর রাখা উচিত হবে না, তা তাদের প্রেতাত্মারা যতই ঘেউ ঘেউ করুক না কেনো।


বিঃদ্রঃ অনেকেই ডিএল রায়ের "ধনধান্যে পুষ্পে ভরা" গানটার পক্ষে কথা বলছে। রঠার যে অপরাধ, একই অপরাধ তারই, এটা হয়তো তারা জানে না। বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি রঠার মতোই আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে কনটেক্সটে আমার সোনার বাংলা লেখা হয়েছিলো, ডিএলের এই গানটাও একই কনটেক্সটে লেখা! ইতিহাস জানুন, এটাই জানার মোক্ষম সময়।

https://bn.banglapedia.org/index.php?title=বঙ্গভঙ্গ,_১৯০à§%

https://bn.banglapedia.org/index.php?title=রায়,_দ্বিজেন্দ্রলাল

আমার নোবেল রিলেটেড ফেসবুক পোস্ট:
https://www.facebook.com/share/p/RTodoYJBigREwN4d/?mibextid=oFDknk

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.