শাহবাগ ২.০ হলে শাপলা ২.০ ও অবশ্যম্ভাবী

১২ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:১৩

২০১৩ সালে কথিত "যুদ্ধাপরাধী"(!)দের ফাঁসির দাবীতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ সড়ক অবরোধ করে কিছু হাভাতে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, যারা মূলত অনলাইনে, সামহোয়্যারইন, মুক্তমনা ব্লগে ইসলামবিদ্বেষী ও নোংরা চটি লেখালেখি করতো। যার পুরোভাগে ছিলো ইমরান,লাকী,অমি পিয়াল,রাজীব হায়দার, অভিজিৎরা। প্রথমটায় না বুঝেই অনেকে এদের জোরালো সমর্থন জানালেও তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, মোটিভ, স্পন্সর ধীরে ধীরে খোলাসা হতে শুরু করে মূলত শফিউর রহমান ফারাবী (আল্লাহ তাকে রহম করুন)সহ আরো কিছু ইসলামপ্রিয় ভাইদের কল্যাণে। ফ্যাসিস্ট হাচিনা সংসদে দাঁড়িয়ে নিজে বলেছিলো, তার নাকি ইচ্ছে করে সেখানে গিয়ে পড়ে থাকতে। এর দ্বারাই এক সময় পরিষ্কার হয় যে খোদ আওয়ামী লীগ ছিলো এই শাহবাগ প্রতিষ্ঠার পেছেন। বারডেম, পিজির মতো আশেপাশে হাসপাতাল থাকার পরও এরা ২৪×৭ মাইক বাজিয়ে শব্দদূষণ চালিয়ে গেছে, কেউ কিছু বলার সাহসটা পর্যন্ত পায়নি, পাছে "রাজাকার", "ছাগু" এসব ট্যাগ খাওয়া লাগে। এই শাহবাগ এমনই ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করেছিলো, "আমিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, কিন্তু..." - এই "কিন্তু" কথাটাই যে উচ্চারণ করবে, সে ই রাজাকার। এই ট্যাগটা একদম সস্তা হয়ে গিয়েছিলো তখন, যত্রতত্র ঢালাওভাবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো। জামাত নেতা ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের ফাঁসিতে ঝোলাতে শাহবাগ প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো, যার স্পন্সরে ছিলো সরকার নিজে। টাকা-পয়সা, বিরিয়ানিসহ অনেক কিছুর মাধ্যমেই তাদের সহায়তা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিকের চারাগাছ পরে বিশাল বৃক্ষ তথা ফ্রাংকেন্সটাইনের দানবে পরিণত হয়ে এমনই রূপ ধারণ করে যে বিচারপতিদের ফাঁস হওয়া স্কাইপি সংলাপে শোনা যায়, "সরকার একটা রায় চায়, তারা রায়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে"! বাংলাদেশে কারো মৃত্যুতে মিষ্টিমুখ করার কালচারটাও এই শাহবাগ সূচনা করেছে। কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দিয়ে এর জন্ম হলেও পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন ইস্যুতে এরা মুখ খুলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে, আর সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করেছে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাচিনা সরকার। হাচিনা রেজিমকে দিনের পর দিন টিকিয়ে রাখতে এই শাহবাগ তার গোড়ায় পানি ঢেলেছে, ফুলে-ফেঁপে উঠতে সহায়তা করেছে। এদেরই ফেরি করা চেতনার সহায়তায় লা*শের পর লা*শ ফেলেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাচিনা সরকার। শাপলায় ইসলামপ্রিয় মুসলমানদের ম্যাসাকারের মাধ্যমে যা আরো পোক্ত হয়েছে। এই শাপলার জন্ম হয়েছিলো শাহবাগের কাউন্টার হিসেবে, যা অল্প সময়েই সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। মগজে-হৃদয়ে কুরআন ধারণ করা আলিমে দ্বীনদের উপর র‍্যাব-পুলিশ-বিজিবির যৌথ অভিযানের মাধ্যমে গ-ণ-হ/ত্যা চালিয়ে লাশ মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে ফেলে দেয়া হয়েছে! আর সংসদে দাঁড়িয়ে ডাইনিটা উচ্চারণ করেছে, "এরা রঙ মেখে শুয়েছিলো।"

৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানের পর জাতির ঘাড় থেকে এই শাহবাগের ভূত যখনই ভাবা হচ্ছিলো যে নামানো গেছে, তখন হঠাৎ সেই তাড়িয়ে দেয়া শুয়োরদের প্রতিনিধি লাকিকে আবার শাহবাগে দেখা গেছে শ্লোগান দিতে, যদিও ইমরান এখনো পলাতক। শাহবাগের মুখোশ উন্মোচন করতে তখন শাপলা দাঁড়িয়েছিলো ঠিকই, প্রয়োজনে এবার আবারও দাঁড়াবে।

প্রশ্ন হলো, এর পেছনে কারা? সবাই আওয়ামী লীগের কথা উচ্চারণ করলেও সাথে আমি উজিরে খামোখা, সো কল্ড মচ্ছরমাইন্ড মহফুয আলমকেও অ্যাড করতে চাই। সম্ভবত ইসলামপন্থীদের সদা জাগ্রত অবস্থায় দেখে সে মনে মনে বেশ ভীত, এর কাউন্টার দেয়ার জন্য তার মতোই লাল-বাম মতাদর্শ ধারণ করা লাকিদের সামনে এনেছে। কে না জানে, এই মালকে মচ্ছরমাইন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবার পর থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে পচ্চুর লাল-বামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে! নিজের একটা ফেসবুক পোস্টে সে শাহবাগীদের "কমরেড" হিসেবেও অভিহিত করেছে, যেখানে ইসলামপন্থীদের বেলায় তার শব্দচয়ন ছিলো বিপরীত ও অ্যাগ্রেসিভ, যেখানে মূলত হুমকিই ছিলো মূল। তাই এই ব্যাটাকেও আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে চাই। ইসলামপন্থীদের সাধারণ প্রতিবাদকে এই ব্যাটার কাছে মব মনে হয়েছে আর প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেও কাল শাহবাগীরা যে পুলিশের উপর হা মলা করলো, এ নিয়ে তার হুমকি তো না ই, বরং পরামর্শ ছিলো কেবল "শান্ত থাকার"র! এসব লালনবাদী,পালংবাদী লাল-বামের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার কুফল আমরা দেখতে পাচ্ছি।

যাই হোক, ইমরান-লাকি-পিয়ালসহ শাহবাগের সকল কুশীলব, এর গোড়ায় পানি ঢালা প্রথম আলোসহ মিডিয়া ও এর স্পন্সর হাচিনার বিচার করতেই হবে। আরেকটা শাহবাগ কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া যাবে না। শাহবাগ একটা মবের নাম, ফ্যাসিস্টের টুলের নাম, শাহবাগ মানুষের র ক্ত চায়, ইসলামপন্থীদের কবর চায়। যদি সরকার না পারে, তাহলে সাধারণ মুসলমান তথা তৌহিদি জনতা যা করার করবে। শাহবাগ টিকে গেলে হয়তো তাহলে আবারও শাপলা গর্জে উঠবে।

০ টি +০/-০