নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফ এর দৃষ্টিভঙ্গি

ফ এর দৃষ্টিভঙ্গি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাজিয়া মিছিল : পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্য নয়, বিষফোঁড়া

০৬ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:৩৩

"পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্য" এই কথাগুলো শুনলে আমার যথেষ্ট ভালো লাগলেও কিছু ব্যাপার এমন আছে, যা নিজেদের কথিত "ঐতিহ্য"(!) বলে মেনে নিতে কষ্ট হয়, বা মানতে কখনোই মনে চায় না।যার মধ্যে একটা হচ্ছে, শিয়া ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় হোসাইনী দালান ও এখান থেকে বের হওয়া তাজিয়া মিছিল।১৬৪২ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে নির্মিত হয় এটি, যার নির্মাতা ছিলেন সৈয়দ মীর মুরাদ।এই ইমামবাড়া থেকে এলাকা বা রাস্তাটিরই পরবর্তীতে নামকরণ হয় হোসাইনী দালান রোড।

আমরা যারা পুরাতন ঢাকার অধিবাসী মুসলমান, দু:খজনক হলেও সত্য যে আমাদের একটা বড় অংশের আক্বীদা এই শিয়া ফিরকা দ্বারা বেশ ভালোই প্রভাবিত।ঐ সম্প্রদায়ের ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদা এমন লোকও আছে যাদের সামনে তুলে ধরলে তারা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। আর সাথে বোনাস হিসেবে ওয়াহাবী, ইয়াজিদের বংশধর, সৌদির তেলের টাকাখোর - এসব সস্তা, বস্তাপঁচা ট্যাগ তো আছেই।

ছোটবেলা থেকেই খুব কাছ থেকে দেখা এমন কিছু ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদা নিয়েই কিছু বলতে চাই।মিলিয়ে নেবেন, এগুলো ইসলামে সমর্থিত কিনা।

উপরেই বলেছি, হোসাইনী দালান মুঘল আমলের স্থাপনা, অথচ সেই বিশেষ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস হচ্ছে, এটি সেখানে থাকা পুকুরের নিচ হতে উঠে এসেছে। কিভাবে সম্ভব?

জিঞ্জির, ব্লেড, ছু*রির মাতমের ব্যাপারে গতকাল একটা পোস্টে বলেছিলাম। সেখানে রেফারেন্সও তুলে ধরেছি কিছু সহীহ হাদিসের।এদিকে আর না হয় নাই বা গেলাম।

কারবালার যু*দ্ধের প্রতীক হিসেবে বেশ জাঁকজমক করে, সাদা একটা ঘোড়াকে সাজানো হয়।সেই ঘোড়া যখন তাজিয়া মিছিলের জন্য বের করা হয়, তার উপর দুধ ঢেলে দেয়া হয়।ঘোড়ার গা চুইয়ে সেই দুধ যখন মাটিতে পড়ে, সেই দুধ হাতে নিয়ে কাউকে খেতে, কাউকে মাথায়/কপালে/গায়ে দিতে দেখেছি।এটা কি ইসলাম সমর্থিত?

দালানের ভেতরে কাঠ, কাগজ, রঙ, জরি, ফুল, কঞ্চি দিয়ে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কল্পিত রওযা স্থাপন করা আছে, যেখানে প্রচুর লোকজনদের দেখা যায় কাউকে কপাল স্পর্শ করতে, কাউকে চুমু খেতে, কাউকে সালাম করতে। এই মাজারভক্তি কি আদৌ ইসলামসম্মত?

একই রকম সমাধির প্রতিকৃতি তাজিয়া মিছিলেও বের করা হয়, যেটাকে আমরা ঢাকাইয়া ভাষায় "বোলতা গওরা" বলি। গওরা শব্দের অর্থ তাজিয়া আর বোলতা শব্দের অর্থ আদেশ দেওয়া বা বলা। কথিত আছে, আশুরার দিন দুপুর গড়াতেই রাজধানীর ফরাশগঞ্জে অবস্থিত ‘বিবি কা রাওজা’ নামের একটি রওজা শরীফের খাদেম সেজদায় চলে যেতেন।গওরা উঠানোর জন্য গায়েবি আদেশ পাওয়ার পর তিনি সেজদা থেকেই ‘ওঠাও’ বলে আওয়াজ দিতেন। আওয়াজ পাওয়া মাত্র মিছিলকারীরা পাগলের মতো গওরা নিয়ে রওয়ানা হতো। অনেকের বিশ্বাস, এই তাজিয়া আপনাআপনিই দ্রুতগতিতে চলতে থাকে,যাকে "ইয়া হোসাইন","ইয়া হোসাইন" শ্লোগান তোলা মিছিলকারীরা আটকে রাখতে পারে না।এর বৈশিষ্ট্য হলো এটি একবার চলতে শুরু করলে নাকি থামে না।পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে বলে একে ‘পাগলা গওরা’ও বলা হয়।বোলতা গওরার মিছিল দেখাটাও অনেকে পূণ্যের কাজ মনে করে, ১০ই মুহাররাম সকাল সকাল এটা দেখতে আজিমপুর, উর্দু রোড, চকবাজারেও চলে যেতে দেখেছি অনেককেই।এই বিশ্বাসটা ঠিক কোন ধরণের ইসলাম? যখনই এই মিছিল রাস্তাটা দিয়ে যায়, দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে এসব কেমন রেওয়াজ-রসম পালন?

বোলতা গওরার উপরে অনেকে মানত পুরো হওয়ার জন্য কবুতর, মুরগির বাচ্চা, সোনা-রূপা,পয়সা ইত্যাদি দেন।বিয়ে, সন্তানলাভ, রোগমুক্তি, মামলা-মোকদ্দমা জয় ও কাজকর্ম পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষ মানত করে থাকে। এছাড়াও "সেহরা শিন্নি" নামে ককসিটের টুকরার মতো একটি বস্তু কিনে তাজিয়াতে দিলেও অনেকের মানত পূরণ হয় বলে এরা মনে করে।ঈমান-আমলের এই অবস্থা?

হোসাইনী দালানের ভেতরেই এই ১০ দিন আরো দেখা যায়, "তলোয়ার কাটা পানি", যাতে আরবীতে "حساين" লেখা থাকে আর এটা ধোয়া পানি ভীড় করে সংগ্রহ করে অনেকেই। এখানকার শরবত, পড়াপানিও অনেকে মানতপূর্তি, কাজ হাসিলের উদ্দেশ্যে পান করে থাকে।এসব কর্মকাণ্ড মেলে কি ইসলামের সাথে?

আজ দেখলাম সেকুলাঙ্গার গোষ্ঠী থেকে হুক্কাহুয়া ভেসে আসছে এই শিরক-বিদআহ'র আখড়া তাজিয়া মিছিল নিয়ে মায়াকান্নার! প্রচুর হাসলাম এসব দেখে আর উপলব্ধি করলাম যে আমরা যারা এসবের বিরোধিতা করি, আমরা আসলেই রাইট ট্র‍্যাকেই আছি! সেকুত্তারা যা নিয়ে নাকিকান্না করবে, যেটার পক্ষে ঘেউ ঘেউ করবে, সেটাতে আসলেই সমস্যা আছে।

এতকিছুর পরও মুসলমান নামধারীদের হুঁশ হয় না।এদের কিছু বিশ্বাস, কর্মকান্ড, আচার-পার্বণ একটি বিশেষ ধর্মের সাথে মিলে যায়।ভিন্নধর্মের আক্বীদাকে আমরা নিজেদের ঐতিহ্য বানিয়ে বসে আছি। আল্লাহ হিদায়াত করুন আমাদের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.