![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোটিভ
মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
ধীর পায়ে লোকটা এগিয়ে গেল। শান্ত পদক্ষেপ, শান্ত চেহারা দেখে বোঝার কোন উপায়ই নেই যে লোকটার মনে কি চলছে। শুধু চোখ দুটোর পাগল-প্রায় দৃষ্টি বলে দেয়, লোকটি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এদিক ওদিকে তাকিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে কাউকে। স্টার সিনেপ্লেক্স এর জটলার মাঝ থেকেই কোন একজন কে ওর খুঁজে বের করতে হবে। প্ল্যান, প্ল্যানটাকে কোনভাবেই বরবাদ হতে দেয়া যাবে না।
প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখে নিল, টিকিটটা জায়গামত আছে কিনা। ওর প্ল্যানের জন্য টিকিটটাও জরুরী। এখন যে ছবিটা দেখাচ্ছে তার নাম – সাহারা। অনেকের পছন্দ। লোকটা নিশ্চিত মিজানেরও এই ছবিটা পছন্দ। হাতের ঘড়িটায় একবার সময় দেখে নিল। আর মাত্র ৪৫ মিনিট, এরপরই ছবি শুরু হবে। কিছু করতে হলে এরমধ্যেই করে নিতে হবে।
এমন একজনকে দরকার যে ওর বানানো গল্প বিশ্বাস করবে, বেশি খুঁত ধরবে না। ধরলেই বা কি, ওর ত আর বেষ্ট ফ্রেন্ড দরকার নেই, ওর দরকার সাক্ষী। খুঁজতে খুঁজতে হটাৎ করেই পেয়ে গেল এমন একজন কে। তরুণ এক ছেলে। এরা নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে অন্যকে নিয়ে ভাবার সময়ই এদের নেই। এই ছেলেটাকে দেখেও তেমনই মনে হচ্ছে। সাধারণ কাপড় পরিহিত – টি শার্ট আর জিন্স প্যান্ট। কাঁধে ব্যাগ, একহাত ব্যাগের স্ট্রিপে উঠা-নামা করছে আর আরেক হাতে মোবাইল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফোনটার দিকে।
দুরু দুরু পায়ে এগিয়ে গেল লোকটি। সময় দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। একে দিয়েই কাজ চালাতে হবে। আস্তে করে ছেলেটার পাশে দাড়াল লোকটি। ছেলেটি মুখ তুলে তাকাতেই একটা হাসি দিল, বলল, “টিকিট কি পেয়েছেন? নাকি শেষ হয়ে গেছে?” ছেলেটিও প্রতিউত্তরে একটা হাসি দিয়ে বলল, ”আমার কপাল ভাল। পেয়েছি, আপনি?”
“আমিও পেয়েছি। আমি আশিকুর রহমান।” লোকটা বলল।
“আমি জিশান”
“কি করেন আপনি?”
“আমি লেখাপড়া করি। আপনি?”
“আমার ব্যবসা আছে। এই যে কালকেই কক্সবাজার থেকে এসেছি। নতুন মডেল মনে হচ্ছে” আশিক ছেলেটির হাতের মোবাইলের দিকে ইংগিত করে বলল। “হ্যা। আই ফোনের নতুন মডেল। দেখবেন?” আশিক আগ্রহের সাথেই মোবাইলটি হাত বাড়িয়ে নিল, একদম ওর প্ল্যানমতই সব কিছু হচ্ছে। কয়েকটা এ্যাপ চালু করল, আবার বন্ধ করল। এমন ভাব করে যেন খুব আগ্রহের সাথে মোবাইল টা দেখছে। কিছুক্ষণ পর মোবাইলটা জিশানের হাতে দিয়ে বলল, “ভাল মোবাইল। তা একাই এসেছেন নাকি কেউ সাথে আছে?” জিশান হো হো করে হেসে বলল,”নারে ভাই একাই এসেছি। আপনি?”
“আমি আসলে মুভি তেমন একটা দেখি না। আমার বন্ধু মিজানের পিড়াপিড়িতেই এসেছি।” মিজানের নাম মনে পড়তেই যেন ঘৃণার এক স্রোত বয়ে গেল আশিকের দেহে। বন্ধু? হাহ, এত বিশ্বাস করতাম যাকে সেই কিনা আমার এত বড় সর্বনাশ করল। কিন্তু জিশানের মুখের দিকে নজর পড়তেই নিজেকে সামলে নিল সে, আর ৎ কিছু ক্ষণ, ভাবল আশিক, আর অল্প একটু পড়েই আমার আশাকে কেড়ে নেয়ার শোধ আমি তুলব। “ভাল কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এখনও আসল না। বেশিক্ষণ ত আর নেই। জ্যামেই আটকা পড়ল কিনা।” বলতে বলতেই ফোন বের করে মিজানকে ফোন দিল আশিক।
বার দুয়েক রিং হবার পর মিজান ফোন ধরল। “হ্যা দোস্ত বল, হোটেলে পৌছে গেছ?” মিজানের গলার আওয়াজ কানে যেতেই আশিক আবার সেই পরিচিত অনুভুতি বোধ করল। তীব্র ঘৃণায় ওর গলা দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছিল না। নিজেকে সামলে নিয়ে কোন ক্রমে বলল,“হ্যাঁ, পৌছে গেছি। তাড়াতাড়ি আয়, মুভি শুরু হবে কিছুক্ষণ পড়েই।”
“মুভি? কিসের মুভি? তুই আমাকে সিনেপ্লেক্স এর পিছনের হোটেলটায় আসতে বলেছিলি না?” মিজানের প্রশ্ন, গলার শুনেই বোঝা যাচ্ছে ও কনফিউজড।
“ওই ত ঐটাই, তাড়াতাড়ি আয়।” জিশানকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল আশিক। “এসে পড়েছে প্রায়” আশিক জিশানকে বলল,”আচ্ছা, আসি। কথা বলে ভাল লাগল।” কথাটা বলে আর অপেক্ষা করল না আশিক, যেন কত ব্যস্ত। কিন্তু অল্প কিছুদুর গিয়েই ফিরে আসল, ভাব টা এমন যেন কত জরুরী কথা বলতে ভূলে গেছে। বলল, “আচ্ছা, জিশান। আমার মোবাইলের সামনের ক্যামেরাটা ঠিক মত কাজ করছে না। আপনি ত মনে হই ভালই জানেন এসব, দেখবেন একটু?” জিশান হেসে মোবাইল টা হাতে নিল। ক্যামের বের করে বলল,” মনে ত হচ্ছে ঠিকই আছে। একটা সেলফি তুলে দেখবেন নাকি?” আশিক বলল,“আপনার সাথেই নাহয় একটা তুলি।”
জিশান আবার হেসে দুইজনের একটা সেলফি তুলল। বলল, “ক্যামের ঠিকই আছে।”
ধন্যবাদ জানিয়ে মোবাইলটি পকেটে ভরল আশিক। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আর ২৫ মিনিট বাকি আছে মুভি শুরু হবার। খুশি হয়ে উঠল সে। আর মাত্র পাচ মিনিট, পাচ মিনিট পর হত্যাকান্ডটা ঘটবে, আশিকের প্রতিশোধ পূর্ণ হবে। জিশান সাক্ষী হিসেবে ভালই কাজে দিবে, বিশেষ করে সেলফি টা। ৬ মাসের দীর্ঘ প্ল্যানিং আজ কাজে লাগাবে।
দ্রুত পায়ে হেঁটে হোটেলে চলে আসল আশিক। আগের দিনেই একটা রুম বুক করে রেখেছে ও। লিফটের কাছে এসে অপারেটরকে বলল তিন চলায় দিতে। উঠতে যাবে লিফটে, এমন সময় ফোন বেজে উঠল। অবাক হবার একটা ভাল করে ফোন ধরেই চেঁচিয়ে উঠল, উদ্দেশ্য যাতে বেশী লোককে শুনান যায়, “কি? ছাদে আসব? কিন্তু কেন?”। এবার আস্তে করে বলল,“আচ্ছা, বাবা আসতেছি।” লিফটম্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার বন্ধু। এখন আবার ছাদে যেতে বলছে।” লিফটম্যান বিরক্তির সাথে কাঁধ ঝাকাল।
আহা, কি দারুন প্ল্যানটাই না করেছি। সব ঠিক ঠাক মতই হচ্ছে। জিশান এক সাক্ষী, যে জোরে কথা বলেছি তাতে রিশিপসনিষ্ট আর লিফটম্যান ও সাক্ষী দিবে। আসলে প্ল্যান টা জটিল ছিল। আশা, আর একটু অপেক্ষা কর। তোমাকে সঙ্গ দিতে খুব শিঘ্রই একজন আসছে। আশিকের মনে হল এক যুগ ধরে লিফট উঠছে। মনে হল দীর্ঘ সময় পর লিফট ছাদে থামল। লিফট থেকে বেড়িয়ে এসে ছাদে দাড়াল। উপর থেকে মনে হচ্ছে পুরা ঢাকা শহর ওর চোখের সামনে। “আচ্ছা, তোর সমস্যাটা কি বলত?” একটা বিরক্তিমাখা কন্ঠ বলে উঠল, ” আজকে সকালে ফোন করে বললি ৩.৪৫ এ তোর সাথে ছাদে দেখা করতে। মাঝখানে ফোন দিয়ে কি সব সিনেমা সিনেমা করলি। এসে ফোন দিতে বলেছিলি দিলাম। ধরে এমন ভাব করলি যেন আমিই তোকে ছাদে আসতে বলেছি। কাহিনী কি রে?” আশিক ঘুরে দাড়াতেই মিজানকে দেখতে পেল। দেখে মনে হচ্ছে খুব বিরক্ত। আশিকের খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেকে সামলাতে। ওর ইচ্ছা করছে এখানেই মিজানের গলা চেপে ধরতে। নিজ হাতে খুন করতে মন চাচ্ছে ওর। কিন্তু না, এতে ওর শাস্তি খুব হালকা হয়ে যাবে যে, প্ল্যান মোতাবেক আগাও – ওর মনে যেন কেউ কথা বলে উঠল। “স্যরি রে,” আশিকের হাসি তে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি, “জানিসই ত আমি কেমন ভুলোমনা।” “কত দিন পর তোকে দেখলাম বলত? ছয় মাস? অ্যাক্সিডেন্টটার পর......” বলতে বলতে থেমে গেল মিজান। “হ্যাঁ, অ্যাসিডেন্টটার পর আর আমাদের দেখা হয় নি।” আশিক উত্তর দিল, “আসলে তোকে সেই জন্যই ডেকেছি। আজকে সব মিটিয়ে ফেলব।”
আশিকের গলার তিক্ততা মিজান ধরতে পারল। চেহারা কাল করে বলল, “দেখ, ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। তুই ত জানিসই আশা কেমন মুভি পাগল ছিল। শো মিস হবে ভেবে আমাকে বার বার বলছিল আরও জোড়ে চালাতে। তুইও ছিলি না। মন খারাপ করে থাকত। তাই আমি আর কি করব বল। যদি জানতাম ট্রাক টার সাথে ধাক্কা খাব, তাহলে কি আর......” চোখে এসে গেল ওর।
“আরে না আমি বলতে চাচ্ছি, ওসব বাদ দে। আমিও বুঝি ওটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। কপালের উপর কার হাত আছে বল? ”আশিক বলল,”আসলে তোকে আসতে বলছি একটা সুসংবাদ দেয়ার জন্য। অনেকদিন ধরেই ত বলছিলি আমার সাথে ব্যবসা করবি। তোকে পার্টনার বানিয়ে নিয়েছি। এবার আমি একটু বিশ্রাম নিব। মা – বাবা নেই। তুই আর আশাই ছিলি। এখন ত...... “ আশিকও চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না।
মিজান এগিয়ে এসে আশিকের কাঁধে হাত রাখল, শ্বান্তনা দেবার ভঙ্গিতে। এদিকে আশিক ত ভিতরে ভিতরে লাফাচ্ছে – গাধাটা বিশ্বাস করেছে।
মিজান বলল,“আসলেই বল, ভাগ্য কি কেউ বদলাতে পারে? চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি। মন টা হালকা হবে”।
“নারে, আমার একজনের সাথে দেখা করার কথা।” আশিক বলল, “তবে তোর জন্য একটা উপহার আছে।”
“কি?”
“ঘুরে দাঁড়া, আমার দিকে পিঠ দিয়ে।” কথা বলতে বলতে কখন ওরা রেলিং এর দিকে চলে এসেছে, মিজান বুঝতেই পারে নি। মিজান ঘুরে দাঁড়াল রেলিং ধরে।
আহ, একটা ধাক্কা, একটা ধাক্কা দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যত অজুহাতই দিস না কেন, তোকে আমি মাফ করব বলে মনে করেছিস। আমার জীবনে আশাই সবচেয়ে দামি ছিল। তাকেই তুই কেড়ে নিলি?
হাত দুটি বাড়িয়ে দিল আশিক। শেষ মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে করে মিজানকে স্পর্শ করল,”এই নে, ধর।”
মিজান ওর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠল। “সাহারার টিকিট, তুই সাহারার টিকিট কিভাবে পাইলি? আমিবুকিং দিয়েও পাইনি। থ্যাংক ইউ।”
আশিক জোর করে হেসে বলল, “তুই ছাড়া এখন আর আমার কে আছে বল? তাড়াতাড়ি যা। ছবি শুরু হল বলে।” “ফোন দিস, আবার ছয় মাসের জন্য হারায়া যাস না, ঠিক আছে?” “ভুলে গেলি? তুই আর আমি এখন পার্টনার। যাব কোথায়?” হেসে সিনেপ্লেক্স এর দিকে রওনা হল মিজান।
মিজান সিনেপ্লক্সে ঢুকতেই আশিক একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। প্ল্যান পুরাপুরিই কাজ করেছে। মিজানকে এখন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ত সব সহজ হয়ে যেত। কিন্তু না মিজান কে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। আশিকের বেঁচে থাকার অবলম্বনকে মিজান কেঁড়ে নিয়েছে। আরামে মৃত্যু ওর কপালে নেই।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেলিং এর দিকে এগিয়ে গেল ও। হোটেল টার এদিকটায় অন্ধ গলি। ও লাফ দিয়ে পড়লেও, ওর লাশ আবিষ্কার হতে হতে ঘণ্টা দুই লেগে যাবে। মনে মনে আবার ভেবে নিল কিছু বাদ পড়েছে কিনা। জিশান সাক্ষী দিবে ও হাসি খুশী লোক, আত্মহত্যা করার কোন লক্ষণ ওর মধ্যে দেখা যায় নি। লিফটম্যান আর রিসিপশনিষ্ট সাক্ষী দিবে যে মিজানই ওকে ছাদে আসতে বলেছে। দুই মাসের আগের ওর উইলে ও মিজানকেই সব দিয়ে দিয়েছে। পুলিশ মোটিভ ও খুঁজে পাবে।
আশার কথা ভাবতে ভাবতে ও রেলিং টপকে কার্নিসে দাঁড়াল। অনেক স্বপ্ন ছিল ওদের। এবার ট্রিপ থেকে এসেই বিয়ের প্রস্তাব দেবার কথা ছিল আশার বাসায়। সব নষ্ট করে দিল মিজান। ও যত কিছুই বলুক আশিক জানে, মদের অভ্যাস মিজানের ভালমতই আছে। সম্ভবত ওই দিনও সে মাতাল হয়েই গাড়ী চালাচ্ছিল। “আর একটু অপেক্ষা কর, আশা। তোমাকে আর একা থাকতে হবে না।”
পড়ন্ত দুপুরের মরে আসা রোদের মাঝে সিনেপ্লেক্সের পিছনের কোন অখ্যাত হোটেলের ছাদের উপর দিয়ে এক পশলা বাতাস বয়ে গেল। ফাঁকা, নিশ্চুপ ছাদ।
বি.দ্র.-রহস্য পত্রিকায় প্রকাশিত।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০২
ফুদাল ফিদাল বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৭
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল্লাগসে। সাবলীল বর্ণনা।