নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফুদালের ব্লগ

ফুদাল ফিদাল

আমি সাধারণ একজন মানুষ।

ফুদাল ফিদাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্য ফিফটি সেন্ট ভিক্টিম’স

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

দ্য ফিফটি সেন্ট ভিক্টিম’স
জ্যাক রীচি
মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
বাগান চেয়ারে বসে বসে ডা. মট আর কয়েকজন রোগীকে দেখছিলাম আমরা।
‘আচ্ছা, ক্লার্ক,’ বললাম। ‘এমন জায়গায় থাকছ কেন? এখানে থাকতে যে তোমার ভালো লাগে না, তা তো পরিষ্কার বুঝতে পারছি।’
লেমোনেড ভর্তি গ্লাসে একটা চুমুক দিল ক্লার্ক, ‘কে বলল তোমাকে। সময়মত খাবার পাই এখানে। সেই সাথে রয়েছে অখণ্ড অবসর। ভালো লাগবে না কেন?’
‘খাওয়া আর অবসরই কি সব? এই মানসিকতা কিন্তু স্বাভাবিক না।’
‘আমি মানুষটাই তো স্বাভাবিক নয়। পাগল, তোমার মতোই পাগল।’
‘তোমাকে দেখে তো পাগল মনে হয় না।’
এক টুকরা হাসি দেখা গেল ওর ঠোঁটে, ‘অ্যালফ্রেড, দেখতে কেমন দেখায় তাতে কিছু যায় আসে না,’ কপালে আঙুল দিয়ে টোকা দিল সে। ‘এখানে কী আছে আর কী নেই, সবকিছু তার উপর নির্ভর করে। মানুষের জীবনের প্রতি আমার কোনও শ্রদ্ধাবোধ নেই। চোখের পাতা একবারও না ফেলে, চাইলেই আমি যে কাউকে খুন করে ফেলতে পারি।’
ক্লার্কের উপর কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ করছি আমি। কিন্তু প্রতিবার এই জায়গাটায় এসে থমকে যায়। এবার এগোতেই হবে, ‘ক্লার্ক, আগেও একথা বলেছ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। আমার ধারনা, তুমি ভান ধরে এখানে আছ।’
ভ্রূ কুঁচকে জবাব দিল লোকটা, ‘ভুল বলছ।’
‘নাহ, ঠিকই বলছি।’ চেয়ার ঠেলে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ভাবখানা এমন যে ওর সাথে কথা বলতে আর ভালো লাগছে না।
যেমনটা ভেবেছিলাম, লাফ দিয়ে উঠল ক্লার্ক, ‘আমার কাজিন হোমারকে হাসতে হাসতে খুন করে ফেলেছিলাম।’
‘আমার সন্দেহ আছে। তোমাকে তো গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়নি!’
‘তার কারণ আছে। আমার পরিবারের বলদ গুলো আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। বলেছে, ওটা নাকি অ্যাক্সিডেন্ট ছিল!’
হাঁটা থামিয়ে জানতে চাইলাম, ‘আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে পারবে?’
ইতস্তত করল ক্লার্ক, ‘পারলেও করব না। খুনী বলেই যাকে তাঁকে খুন করতে হবে কেন? আমার বন্ধুর সংখ্যা এমনিতেই কম, আরও কমাতে চাই না।’
‘তাহলে অন্য ভাবে প্রশ্নটা করি,’ বললাম। ‘ধরো ফোনবুক খুলে যেকোনও একটা নাম দেখিয়ে দিলে তাকে খুন করতে পারবে?’
‘অবশ্যই,’ উত্তর দিল ও। ‘কোনও ব্যাপারই না।’
বিদ্রুপের হাসি হাসলাম, ‘ফাঁকা বুলি।’
এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, ক্লার্ক আমাকে হোমারের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার চিন্তা করছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, ‘চলো তাহলে। ফোনবুক খুঁজে বের করি।’
‘আমার মনে হয়, ডা. মটের অফিসে একটা আছে।’
***
ডাক্তারের অফিসটা এই মুহূর্তে খালি। আরামদায়ক আর সুন্দরকরে সাজানো ঘরটার এককোনায় অবস্থিত ডেস্কের উপর থেকে টেলিফোন বুকটা তুলে নিলাম। এরপর ‘না দেখেই’ একটা পৃষ্ঠা খুলে ল্যাপেল থেকে একটা পিন খুঁজে নিলাম। সেদিন সকালেই ফুটো করে রেখেছিলাম। এবার সেই ফুটো বরাবর পিন গেঁথে, ক্লার্কের হাতে তুলে দিলাম ফোনবুকটা। ‘নাম কী?’
জোরে জোরে পড়ল সে, ‘ওয়ালশ, জেমস পি., ১৩৭২ ওয়েষ্ট ফক্স লেন।’
নীরবতা নেমে এলো ঘরে।
মুচকি হাসি হাসলাম, ‘ভয় পাচ্ছ? পিছিয়ে আসতে চাচ্ছ নাকি?’
‘না,’ বলল ক্লার্ক। ‘কিছু ঝামেলা আছে।’
‘এই যেমন এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া? দরজা তো খোলাই থাকে। সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেও কেউ কিছু বলবে না।’
‘ও কথা বলছি না। বলছি, বন্দুক কিনতে পাব কোথায়? আর পেলেও, কিনবই বা কীভাবে? আমার কাছে পয়সা নেই।’
‘বন্দুকের কী দরকার? ছুরিই ভালো, আওয়াজ করে না।’
‘বাসের ভাড়াও হিসাবে আনতে হবে। আসতে যেতে দুই ডাইম লাগবে।’
‘এখানে অনেক দিন কাটিয়ে দিলে, ক্লার্ক,’ হাসতে হাসতে বললাম। ‘বাস ভাড়া এখন কেবল পঁচিশ সেন্ট।’ এই বলে আধ ডলার এগিয়ে দিলাম ওর দিকে।
পয়সাটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ট্যাক্সি নিলে কেমন হয়?’
‘উহু, ড্রাইভার যদি মনে রাখে? আমি চাই না তুমি ধরা পড়। বাসে একদম শেষ পর্যন্ত যাবে। এরপর চার ব্লক পুবে হেঁটে আসবে। গ্লাভস থাকবে হাতে। চুপচাপ জেমস ওয়ালশের গলা ফাঁক করে দিয়ে কেটে পড়বে। আমার মনে হয়, রাত একটার দিকে কাজটা সারলেই ভালো করবে। সেসময় সবার ঘুমিয়ে থাকার কথা। এমনকি চাকর বাকরদেরও।’
‘ওর যে চাকর আছে, তা জানলে কীভাবে?’
‘ঠিকানা দেখে আন্দাজ করলাম। ধনী এলাকা ওটা।’
‘তাহলে রাত দুটোয় গেলে আরও ভালো হয় না?’
‘বাস রাত পৌণে দুইটার দিকে বন্ধ হয়ে যায়।’
‘তুমি জান কীভাবে...’
কড়া চোখে ক্লার্কের দিকে তাকালাম, ‘কী হলো ক্লার্ক? ভয় পাচ্ছ? তাহলে থাক, বাদ দাও।’
‘ভয়! আমি!’ হেসেই উড়িয়ে দিল ক্লার্ক। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘রাতে যদি বাইরে যেতেই হয়, তাহলে এখন ঘুমিয়ে নেই।’
ও চলে গেলে, আমি ডা. মটের সুইভেল চেয়ারে এসে বসলাম। সামনে রাখা সিগারের বাক্স থেকে একটা সিগার তুলে নিয়ে ধরালাম। ধোঁয়া ছাড়লাম ফাইল ক্যাবিনেটের দিকে লক্ষ্য করে। তালা বন্ধ করে রাখা আছে ওগুলো। কিন্তু ডাক্তার সাহেব চাবিগুলো নিজের ডেস্কের ড্রয়ারেই রাখেন!
ডা. মটের এই সীভিউ স্যানিটারিয়াম হাউজে মোট বত্রিশ জন রোগীর আবাস, অবশ্য রোগী না বলে ডাক্তার সাহেব তাদের ‘অতিথি’ বলে ডাকেন। সবার ফাইল উল্টিয়ে দেখার পর, ক্লার্ককে বেছে নিয়েছিলাম।
বারো বছর আগে, পারিবারিক এক অনুষ্ঠানের সময় ক্লার্ক ওর কাজিন হোমারকে ছুরি মেরে হত্যা করেছিল। কিন্তু অন্য সব আত্মীয়রা কেন জানি এক জোট হয়ে বলে, ব্যাপারটা দূর্ঘটনা! মেনে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষও। এর ছয়মাস পরে ক্লার্ককে এই স্যানিটারিয়ামে রেখে যায় ওরই আত্মীয়রা।
আমি এসেছি বেশীদিন হয়নি, মাস আষ্টেক হবে। এর কৃতিত্ব দিতে হয় আমার দুই ভাগ্নে আর এক ভাগ্নিকে। আমার বোন তিনটা, প্রত্যেকেই এক একটা করে বিচ্ছুকে জন্ম দিয়ে গিয়েছে। ওই তিন জনে মিলে কোনও এক ডা. রবার্টসকে পটিয়ে প্রমাণ করেছে, আমি মানসিক স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ নই! এই স্টেটের আইন অনুসারে, যদি কমপক্ষে তিনজন মানুষ এবং একজন ডাক্তার ঘোষণা দেয়, ’অমুক ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। সে নিজের এবং আশেপাশের মানুষদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে’ তাহলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে এরকম কোনও মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
ওদের উদ্দেশ্য যে পয়সা, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে কাঁচা পয়সা উদ্দেশ্য না, তাদের লক্ষ্য হলো স্ট্রাস্টি হয়ে আমার কেনা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার হস্তগত করা। অবশ্য কাজটা এখনও সারতে পারেনি, আদালতে আটকে আছে, কতদিন আর থাকে তা খোদা মালুম।
আচমকা কপাল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে মুছতে দোরগোড়ায় উপস্থিত হলেন ডা. মট।
‘আপনাকে জানালা দিয়ে কৌকেই (ঘাসের মাঠে কাঠের বল দিয়ে খেলা হয়য়) খেলতে দেখছিলাম,’ বললাম আমি। ‘ভালোই খেলেন।’
লজ্জা পেলেন ডাক্তার সাহেব। ‘তাই নাকি? প্রতিদিন কিছু সময় খেলার জন্য আলাদা করে রাখি।’
আমি তার চেয়ার ছেড়ে ওঠার প্রয়াস পেলাম, কিন্তু এক হাত তুলে বাঁধা দিলেন আমাকে। ‘বসে থাকুন, অসুবিধা নেই। আমি গোসল করতে যাচ্ছি।’
‘আরেকটু বিরক্ত করব ডাক্তার সাহেব,’ বললাম। ‘আমার ঠিকানা লিখে রাখার বইটা পাচ্ছি না।’
‘তাই না কি?’ বললেন মট। ‘ভুলে কোথাও রেখে এসেছেন হয়ত। আশা করি, দুই এক দিনের মাঝেই পেয়ে যাবেন।’
‘আমার ঘরটা খুব ভালভাবে খুঁজে দেখেছি,’ বললাম আমি। ‘কোথাও দেখলাম না তো। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে যে, জিনিসটা কেউ চুরি করেছে!’
ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন ডাক্তার সাহেব। ‘দেখ অ্যালফ্রেড, তুমি তো জানো যে আমার এখানে কোনও চোরের স্থান নেই। তুমি ভুল করে অন্য কোথাও ফেলে এসেছ।’
সেদিন বিকালে, ক্লার্ক যখন ওর ঘর থেকে বেরোল, তখন চুপিচুপি ভেতরে ঢুকে পড়োলাম আমি। বইটা আসলে আমার কাছেই ছিল। এবার ক্লার্কের আয়নার পেছনে টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিলাম।
রাতের খাবারটা দারুণ সুস্বাদু হয়েছিল। খাবার খেয়ে, রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত টিভি দেখলাম। এরপর খুঁজতে বেরোলাম বার্ট স্পলডিং-কে। বার্ট বেচারা নতুন এসেছে, দশাসই মানুষ। ব্যবহারও খারাপ।
লোকটাকে যখন খুঁজে পেলাম, তখন সে ফার্নেস রুমে বসে আছে। লাথি দিয়ে চেয়ারটা তার নীচ থেকে সরিয়ে দিলাম। ধপাস করে আছাড় খেল বার্ট। ফলাফল? যেমনটা চেয়েছিলাম। আমাকে রাতটা আইসোলেন সেলে একা একা কাটাতে হলো।
পরদিন প্রাতরাশের আগে আমার সাথে দেখা করতে এলেন ডা. মট। ‘এমনটা ঘটল কেন, অ্যালফ্রেড!’ বললেন তিনি। ‘আমি থাকলে অবশ্য তোমাকে একা থাকতে দিতাম না। কিন্তু কী করব বলো? মা’র সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’
‘অসুবিধা নেই, ডাক্তার সাহেব,’ বললাম আমি। ‘কিছু মনে করিনি।’
ডা. মট চুকচুক শব্দ করলেন। ‘কিন্তু তুমিই বা কাজটা করলে কেন? বেচারা বার্ট তো ভয়ে আধমরা হয়ে আছে!’
‘ও-ই আমার বই চুরি করেছে।’ শক্ত কণ্ঠে জানালাম।
চোয়াল ঘষলেন তিনি। ‘সত্যি না কি? প্রমাণ আছে কোনও।’
‘নেই, তবে আমি নিশ্চিত।’
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার সাহেব। ‘আহ, আলফ্রেড। পাগলামি কোরো না তো। আমাদের এখান প্যারানয়ায় ভোগা কোনও রোগী নেই, রাখা হয় না।’
‘আমি দুঃখিত, ডাক্তার সাহেব।’ লজ্জিত কণ্ঠে জানালাম। ‘আমার ভুল হলেও হতে পারে।’
সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে এলো লোকটার চেহারা। ‘ব্যাপার না। এবার উপরে চলো, নাস্তা দেয়া হয়েছে। এই ঘরে গত পঁয়ত্রিশ বছরে কেউ পা রাখেনি। চাবী খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে।’
নাস্তা শেষ হবার সাথে সাথে ক্লার্ককে টেনে বাগানে নিয়ে এলাম।
‘কাজ হয়েছে?’ আমি জানতে চাইলাম। ‘ওয়ালশকে...?’
নড করল সে। ‘আমার তো তাই মনে হয়।’
‘মনে হয় মানে?’
‘গলা একটা কেটেছি বসে। আসলে চাঁদের আলোয় পরিষ্কার বুঝতে পারিনি।’
‘বাতি জ্বালাওনি কেন?’
‘জ্বালালে কী লাভ হতো? আমি তো জেমস পি. ওয়ালশকে চিনিই না।’
যুক্তি আছে বেচারার কথায়, মানতে বাধ্য হলাম।
‘বাড়িটা অনেক বড়,’ বলল ক্লার্ক। ‘চার-চারটা ফাঁকা বেডরুমের পর, পঞ্চম ঘরটায় একজনকে খুঁজে পেয়েছিলাম। এখন সন্ধ্যার কাগজের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’
সময় কাটাবার জন্য ক্লার্ক আর আমি, দুজনেই ইজেল নিয়ে ছবি আঁকায় ব্যস্ত হয় পড়লাম। এগারোটার দিকে এসে উপস্থিত হলেন ডা. মট। ‘পুলিশ এসেছিল। আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিল। তবে আমি অনুমতি দেইনি।’
‘কেন?’
‘দেখ, অ্যালফ্রেড। এখানে তোমরা সবাই রোগী হিসেবে রয়েছ। আইনের চোখে, তোমরা অসহায়। তোমাদের কোনওভাবেই, কোনও কর্মকাণ্ডের জন্যই দায়ী করা যায় না। আদালতের লিখিত আদেশ ছাড়া পুলিশকে তোমাদের আশেপাশে ঘেঁষতেও দিতে চাই না। সী ভিউ তার অতিথিদের সুরক্ষা দিতে জানে। তাছাড়া, হঠাৎ করে দেখলাম ওরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে!’
‘কেন? আগ্রহ হারাবে কেন?’
‘পুলিশ জানতে চাইছিল, রাত এগারোটা থেকে ভোর তিনটা পর্যন্ত তুমি কোথায় ছিলে। ওদেরকে জানালাম যে, আইসোলেন সেলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল তোমাকে। তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। ওদের ধারণা, খুনটা হয়েছিল রাত একটার দিকে।’
‘খুন! কে খুন হলো?’
‘তোমার ভাতিজাদের একজন। জেমস পি. ওয়ালশ।’
***
আমার ভাতিজি, হেনরিয়েটা ম্যাককম্ব, পরেরদিন বিকালে আমার সাথে দেখা করতে এলো।
‘এসো, এসো,’ বললাম আমি। ‘বহুদিন পর দেখা!’
হাসলাম আমি। ‘শেষকৃত্যের সময় আমার পক্ষ থেকে কিছু ফুল পাঠিয়ে দিও।’
বরফ শীতল চোখে আমার দিকে তাকাল মেয়েটা। ‘জেমস মারা গিয়েছে, তোমার জন্য অবশ্য তা সুখবর।’
‘ওকে খুন করা হয়েছে।’
‘অবাক হয়েছি বলব না। নিজের কথা বাদ দিলাম, তারপরও ওর মতো একজন অসহনীয় স্বভাবের মানুষকে-’
কথাটা অস্বীকার করল না হেনরিয়েটা। ‘গতকাল রাত একটার দিকে কাজটা করা হয়েছে।’
‘পুলিশ নিশ্চয় এখনও খুনীকে ধরতে পারেনি? পারলে তো বলতে।’
‘হ্যাঁ, বলতাম।’
‘সন্দেহ করছে কাউকে?’
হতাশাভরে নড করল মেয়েটা। ‘আমাকে।’
আবারও হাসলাম। ‘শুধু তোমাকে? আমার আরেক প্রিয় ভাতিজা ফ্রেডিকে করেনি? জেমসকে খুন করতে চাবার কারণ তো ওর-ও আছে। আমার সম্পত্তি যত কম ভাগ হবে, একেক জনের কপালে তত বেশি পয়সা জুটবে।’
কুতকুত করে তাকাল হেনরিয়েটা। ‘আমার মনে হচ্ছে, অনেক ভেবে চিন্তে তার একটাকে সময় হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। ওই সময় আমার আর ফ্রেডির যার যার বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকার কথা। অ্যালিবাই জোগাড় করা সম্ভব হবে না। তাই পুলিশের সন্দেহ পড়বে আমাদের যেকোনও একজন বা উভয়ের উপর!’
‘কী জানি! কিন্তু ফ্রেডিকে সন্দেহ করা হচ্ছে না কেন? তুমিই বা কেন করছ না?’
‘ও তখন স্যান ফ্রান্সিসকোতে বেড়াতে গিয়েছিল। আর তাছাড়া, একটা মাছি মারা সাহস ফ্রেডির নেই।’ জ্বলন্ত চোখে আমার দিকে তাকাল মেয়েটা। ‘আমার তো তোমাকে সন্দেহ হয়।’
মুচকি হাসলাম। ‘সত্যি বলতে কী, জেমস যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে, তখন সেখানে উপস্থিত থাকতে পারলে খুশী হতাম। তবে একবার কী ভেবে দেখেছ যে, পরিবারের অন্য কেউ ওকে খুন করতে চাইতে পারে? হাজার হলেও, জেমসকে কারোই খুব একটা পছন্দ ছিল না।’
কথাটা যে মনে ধরেছে, তা মেয়েটার চেহারা দেখেই টের পেলাম।
***
রাতের খাবার খেয়ে ক্লার্ক আর আমি আবার বাগানে হাঁটতে বেরোলাম।
‘ক্লার্ক,’ আমিই কথা শুরু করলাম। ‘বিমান থেকে প্যারাশুট নিয়ে লাফ দিতে অনেক সাহস লাগে না?’
একমত হল ক্লার্ক। ‘হ্যাঁ। বিশেষ করে যদি যে লাফাচ্ছে, তার উচ্চতাভীতি থাকে।’
নড করলাম আমিও। ‘কিন্তু আমার কী মনে হয় জান? ব্যাপারটা যে কতটা ভয়াবহ, তা প্রথমবারের মতো যে লাফ দিচ্ছে সে জানে না। এজন্যই হয়ত ভয় কিছুটা কম লাগে। কিন্তু একবার লাফ দেবার পর, সবকিছু জানা থাকার পর, আরেকবার লাফ দিতে যে কত বেশি সাহস লাগে তা ভেবে দেখেছ? তাই বলি কী, প্রথম বার প্যারাশুট নিয়ে লাফ দেবার চাইতে, দ্বিতীয়বার দিতে অনেক বেশি সাহস লাগে।’
‘দাঁড়াও, দাঁড়াও,’ বলল ক্লার্ক। ‘আমি সাহসের পরিচয় দেবার জন্য বিমান থেকে লাফ দিতে রাজী নই!’
এক হাত তুলে থামালাম ওকে। ‘আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, ক্লার্ক-তুমি একটা খুন করেছ। কিন্তু তোমার সাহসের আসল প্রমাণ হবে, আরেকটা খুন করতে পারা।’
ভ্রূ কুঁচকে তাকাল সে। ‘আমার আসলে মনে হয় না যে, আরেকবার খুন করতে পারার সাথে সাহসের কোনও সম্পর্ক আছে।’
আমারও তা মনে হয় না, কিন্তু ‘সাহস’ ব্যাপারটা পুরুষদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ক্লার্ককে তাতিয়ে তোলা দরকার। হালকা হাসলাম, ‘জেমস ওয়ালশ কে খুন করার সময় তোমার বয়ে পা কাঁপছিল, স্বীকার করে নাও! এই জন্যই আরেকবার খুন করতে চাচ্ছ না।’
কথাটা শোনামাত্র উঠে দাঁড়াল ও। ‘ভয়? আমি ভয় পাচ্ছিলাম? হাসালে। আর ওয়ালশ আমার প্রথম শিকার না, তুমি হোমারের কথা ভুলে যাচ্ছে।’
‘ওহ হোমারের প্রসঙ্গ টানছ?’ হাত নাড়িয়ে ওর কথা যেন উড়িয়ে দিলাম। ‘সে তো তোমার কাজিন ছিল। এরসাথে ঠাণ্ডা মাথায় বিকারণে খুনের কী সম্পর্ক?’
নড করতে বাধ্য হলো সে। ‘তা ঠিক, আর কাজটা করেও ফেলেছিলাম রাগের বশে।’
‘এখন একটাই উপায় আছে।’ আগেরবার ব্যবহার করা পিনটা আবার হাতে তুলে নিলাম। ‘চল আরেকবার ডা. মটের ফোনবুক ঘেঁটে দেখি।’
পাঁচ মিনিট পরের কথা, চোখ কুঁচকে ফোনবুকে লেখা নামটা পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ক্লার্ক। ‘হেনরিয়েটা ম্যাককম্ব?’
‘হ্যাঁ। ঠিকানা দেখে মনে হচ্ছে, মেয়েটা কোনও অ্যাপার্টমেন্টে থাকে।’
‘ফ্ল্যাট নাম্বার?’
আরেকটু হলেই বলে বসেছিলাম, কিন্তু শেষ মুহূর্তে সামলে নিলাম নিজেকে। ‘লবিতে দেখলেই পেয়ে যাবে। মেইলবক্সে নাম লেখা থাকে।’
‘আগেরকার সময়েই খুন করতে হবে? রাত একটায়?’
‘নাহ। আজকালকার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং জোর করে ঢোকা যায় না। জানালা দিয়েও ঢুকতে পারবে না, ফ্ল্যাটটা যদি ছয়তালায় হয়? রাত একটায় মানুষজন কাউকে দরজার সামনে ঘুরঘুর করতে দেখলে সন্দেহ করবে। সকাল দশটার দিকে কাজটা করো না হয়।’

পরদিন সকাল নয়টা, আমি ক্লার্কের হাতে বাস ভাড়া তুলে দিয়ে ওকে বিদায় জানালাম। একটু যে বিবেকের দংশন অনুভব করছিলাম না, তা নয়। ভয়ও পাচ্ছিলাম, যদি আমার অ্যালিবাই বানাতে কোনও সমস্যা হয়! অথবা যদি ক্লার্ক ধরা পড়ে।
ধরা পড়ার সাথে সাথে যে ও পাখির মতো গান গাইবে, সেই ব্যাপারে আমার কোনও সন্দেহ নেই। মিথ্যা কথা বলতে চালাক হতে হয়, উপস্থিত বুদ্ধি থাকতে হয়। কোনওটাই ওর নেই। তবে সমস্যা নেই, আমাকে কর্তৃপক্ষ কিছু বললে জানাব, ক্লার্ক একেবারে ঢাহা মিথ্যাবাদী। প্রমাণ করে দেব যে ও আমার ঠিকানা লিখে রাখার বইটা চুরি করে, সেই অনুসারে খুন করেছে।
যাই হোক, লোকটাকে বিদায় দিয়ে ডা. মটকে খুঁজতে শুরু করলাম। যেমনটা ভেবেছিলাম, তিনি কৌকেই খেলায় ব্যস্ত।
লাঞ্চের কিছুক্ষণ আগে আবার উদয় হলো ক্লার্ক, আমাকে দেখে উজ্জ্বল হাসি হাসল।
‘নিজেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বলে পরিচয় দিয়ে ঢুকেছি।’ বলল ও।
‘খুব ভালো। কিন্তু কাজ সেরেছ তো?’
‘দরজায় চেইন লাগানো ছিল। কিন্তু আমার পরিচয় শোনা মাত্র খুলে প্রবেশ করতে দিল মেয়েটা। আজকালকার লোকজন ইন্টেরিয়ওর ডিজাইনারদের ভয় পায় না।’
‘ভালো, ভালো! কিন্তু কাজ হয়েছে তো?’
‘তারপর কিছুক্ষণ কথা বললাম। মেয়েটা জানাল, ওর পছন্দের রঙ হলো লাইলাক। এরপর আমাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে একটা ভাঙা টাইল দেখাল, ওটা না কি সে এই ফ্ল্যাটে ওঠার পড় থেকেই ওমন। তবে আমার তা মনে হয় না। যাই হোক, এরপর কাজটা সারলাম।’
সেদিন বিকালে আবার পুলিশের পা পড়ল সীভিউ-এ, আমার সাথে দেখা করতে চাইল। কিন্তু ডা. মট তাদেরকে নিশ্চয়তা দিয়ে জানালেন যে হেনরিয়েটা যখন খুন হয়েছে, তখন আমি তার সাথেই ছিলাম। এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হইনি।
দুই দিন পর আরেকজন আমার সাথে দেখা করতে এলো, আমার একমাত্র অবশিষ্ট ভাতিজা ফ্রেডি।
‘আহ,’ বললাম আমি। ‘তোমাকে এমন কী জিনিস ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এখানে টেনে আনল?’
‘আংকেল অ্যালফ্রেড, আমি অংকে কোনওদিনই পাকা ছিলাম না। কিন্তু এতটুকু জানি যে দুই আর দুইয়ে চার হয়।’
‘ঠিক বলেছ। তবে যদি কেউ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে, তাহলে হিসাবটা এমন সহজ না-ও হতে পারে।’
ফ্রেডি ছোটখাট, শান্ত চেহারার মানুষ। বয়স পঁয়ত্রিশের আশেপাশে হবে। আমাকে ষড়যন্ত্র করে এখানে পাঠাবার আগে আমি ওকে পছন্দই করতাম।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। ‘আংকেল, আমি নিশ্চিত যে হেনরিয়েটা আর জেমসের মৃত্যুর পেছনে তুমিই কলকাঠি নাড়ছ।’
‘আমার অ্যালিবাই একদম নিশ্ছিদ্র।’
‘সেটাই তো স্বাভাবিক। তোমার কাছ থেকে কাঁচা কাজ আশা করা যায় না। নিশ্চয় কোনও আততায়ী ভাড়া করেছ!’
‘কীভাবে? আমার কাছে কোনও পয়সাকড়ি নেই। মাসে মাসে অল্প করে কিছু ভাতা পাই।’
‘তাহলে এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছ, যে ভবিষ্যতের আশায় বর্তমানে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজী আছে।’
এরপর কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ও। ‘এরপর কী আমার পালা।’
কিছু না বলে, মুচকি হাসলাম শুধু।
আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলল বেচারা। ‘আমি না থাকলে, আংকেল অ্যালফ্রেড, আজ তুমি লাশ হয়ে কবরে পড়ে থাকতে।’
‘তাই না কি? কীভাবে?’
‘হেনরিয়েটা আর জেমস যখন আমার সাথে প্রথম যোগাযোগ করল, তখন ওরা চাচ্ছিল তোমাকে একেবারে মেরে ফেলতে। আমিই ওদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তোমাকে এখানে পাঠাবার ব্যাপারে রাজী করিয়েছি।’ খাঁকড়ি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল। ‘আংকেল অ্যালফ্রেড, আমার বিশ্বাস মৃতের চাইতে জীবিত অবস্থায় আমি তোমার বেশি কাজে আসব। যেহেতু আমিই তোমাকে এখানে পাঠিয়েছি, তাই আমার পক্ষেই তোমাকে এখান থেকে বের করে নেয়া সহজ।’
সন্দেহের চোখে ওর দিকে তাকালাম আমি। ‘তুমি কী কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে দোষ স্বীকার করে নেয়ার কথা ভাবছ?’
‘না, তা না। ওকাজ করলে আবার আমার সমস্যা। আমি শুধু আমার বক্তব্যে পরিবর্তন আনব। বলব, হেনরিয়েটা আমার উপর চাপ প্রয়োগ করে ও কথা বলিয়ে নিয়েছিল।’
‘আর ডা. রবার্টসের কী হবে?’
‘আরও হাজার দশেক ডলার পেলেই ব্যাটা নিজের অভিমতে ত্রুটি দেখতে পাবে।’
‘তোমাদের তিনজনের কথা বাদ দিলাম,’ কঠোর কণ্ঠে বললাম আমি। ‘তোমার নাহয় নিয়ম নীতির বালাই ছিল না। কিন্তু ডা. রবার্টস একজন চিকিৎসক। তার এমন কাজ করা উচিত হয়নি। এমন বেয়াদব ইতরের শাস্তি হিসেবে ম-’ থেমে গেলাম। শব্দটা আর উচ্চারণ করলাম না।
কান ডলল ফ্রেডি। ‘যদি এতটাই সমস্যা হয়, আংকেল অ্যালফ্রেড, তাহলে কিছুদিন ধৈর্য ধর। আগে লোকটা তোমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাক। তারপর নাহয়...’
যুক্তি আছে ছেলেটার কথায়!
তিন মাস পার হবার আগেই মুক্তি পেলাম আমি, সেই সাথে ফিরে পেলামা আমার সমস্ত সম্পদ।
ফ্রেডিকে বিদায় জানালাম আমি, দেশ ভ্রমণে বেরোচ্ছে ছেলেটা। ওর দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রার্থনা করলাম, সেই সাথে জীবনটা যেন ভালভাবে কাটে তাই বিশ হাজার ডলারও দিলাম। এ-ও ওয়াদা করলাম যে আমার উইলে ওর জন্য কিছু রেখে যাব। তবে কেবলমাত্র তখনই, যখন আমার মৃত্যু স্বাভাবিক উপায়ে হবে।
বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে, সীভিউ স্যানিটারিয়ামের দিকে রওনা দিলাম। আমার উকিল, জেসন উইকার, এরিমাঝে ডা. মটের অফিসে চলে এসেছে। ওখানে ডাক্তার সাহেবেরও উকিল উপস্থিত ছিলেন। ভদ্রলোকের নাম লেওনার্ড ওয়াটসন। লোকটা এখানকারই এক রোগী। কিন্তু যখন স্বাভাবিক থাকে, তখন ওর ঝানু উকিলের পরিচয়টা টের পাওয়া যায়।
কাগজ-পত্র সব পড়ে চশমাটা ভাজ করতে করতে তিনি বললেন, ‘ঠিকই আছে সব, ডা. মট।’
ডাক্তার সাহেব আমার আমার দিকে তাকালেন। ‘আপনি কী নিশ্চিত যে আপনি সীভিউ এর নীতি নির্ধারক হতে চান না? আপনি বললে আমি আরও দুই পার্সেন্ট শেয়ার আপনার নামে লিখে দিতে রাজি আছি।’
‘দরকার নেই,’ বললাম আমি। ‘ঊনপঞ্চাশ শতাংশই যথেষ্ট। সীভিউ চালানোর ভার আপনার হাতেই থাকুক।’
‘ধন্যবাদ। আরেকটা কথা, বিগত তিন বছর ধরে আমরা...আমরা লাভের মুখ দেখছি না। এখানকার কয়েকজন অতিথির পরিবার ভুলেই গিয়েছে যে, তারা এখানে আছেন। আমি আসলে ভর্তুকি দিয়েই তাদেরকে রেখে দিয়েছি। সরকারি কোথাও পাঠাতে মন টানছিল না।’
‘কোনও সমস্যা নেই,’ বললাম আমি। ‘তারা তো আমাদের অতিথি। আর অতিথিদের কি ফিরিয়ে দেয়া যায়?’
ডা. মট প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সই করে দিলেন।
একদফা পান করলাম সবাই। আমাদেরকে একা রেখে উকিলেরা বেরিয়ে গেল।
‘আপনার জন্য কি এখানে একটা স্যুইটের ব্যবস্থা করে দেব?’ জানতে চাইলেন ডা. মট।
‘তার দরকার হবে না। বড় সড় একটা ঘর হলেই চলবে। আমার আগের ঘরটাই দিয়ে দেন না কেন? আমি এখানেই আমার বেশিরভাগ সময় কাটাতে চাই। তবে মাঝে মাঝে হয়ত ব্যবসার পাগলাটে জগত থেকে ঘুরে আসতে হতে পারে।’
***
স্যুটকেস থেকে সবকিছু বের করে ঘরটা দখল নিলাম বলা যায়। এরপর বেরিয়ে এলাম বাগানে। বিকালটা খুব সুন্দর। বাগান থেকে ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছিল যেন বাড়ি ফিরে এসেছি।
তবে একটা কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে-ডা. রবার্টসের সাজা!
ক্লার্কের খোঁজ করলাম প্রায় সাথে সাথে। যা ভেবেছিলাম, আমাদের আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি আকছে ও। আমাকে দেখে মুখ উজ্জ্বল করে বলল, ‘অনেকদিন পর দেখা। খুব ভালো লাগছে অ্যালফ্রেড। আমি তো ভেবেছিলাম, তোমাকে আর দেখতে পাব না। থাকছ তো?’
‘হ্যাঁ,’ ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম। ‘বন্ধু, ভেতরে চলো তো। কথা আছে।’
পিটিপিট করে চাইল ক্লার্ক। ‘ওহ! ওই ফোনবুকের কাহিনি?’
নড করলাম আমি, আর বাঁধা দিল না ও।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েছি, এমন সময় সে বলল, ‘আচ্ছা, আলফ্রেড। তুমি আসলে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিজে তৃপ্তি পাচ্ছ। তাই না?’
‘উম...বলতে পার।’
‘কারণ তোমার আসলে খুন করার সাহস বা মুরোদ নেই। ঠিক?’
ওর কথা আর ভাষা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ‘কে বলেছে নেই? আছে, অতি অবশ্যই আছে।’
‘নেই।’
‘আছে।’
ডা. মটের অফিসে ঢোকা মাত্র সরাসরি টেলিফোন বুকের দিকে এগিয়ে গেল ক্লার্ক। ওটা খুলে নিজের পিন একটা নামের উপর সেঁধিয়ে দিয়ে বলল, ‘নামটা পড় তো।’
কেন জানি মনে হচ্ছিল, পাশার দান উলটে গিয়েছে। ‘ক্লার্ক...’ কিন্তু ততক্ষণে নামটা পড়ে ফেলেছি আমি। ‘থিওডোর এল. ক্লার্ক? তোমার চাচার নাম না?’
নড করল সে। ‘হ্যাঁ, এই লোকটাই আমাকে এখানে আটকে রেখেছে।’
‘কিন্তু একে মৃত দেখতে চাও কেন? আমার তো ধারনা ছিল, সীভিউ তোমার পছন্দের জায়গা!’
‘তা ঠিক। তবে ব্যাপারটা আসলে নীতির। আংকেল থিওডোর যদি জানে যে আমার এই জায়গা পছন্দ, তাহলে আধা ঘণ্টার মাঝে আমাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেবে। বড় বাজে লোক।’ ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল ক্লার্ক।
বড় বড় হয়ে গেল আমার চোখ। ‘তুমি চাচ্ছ যে আমি...’
নড করল ও।
পুরো এক মিনিট সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে দেখলাম ব্যাপারটা। এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘ঠিক আছে। বন্ধুত্বের খাতিরে আমি কাজটা করব।’
করলামও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.