নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফুদালের ব্লগ

ফুদাল ফিদাল

আমি সাধারণ একজন মানুষ।

ফুদাল ফিদাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপহার - পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:০২

উপহার - পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে
ফ্রেডরিক ব্রাউন
রূপান্তরঃ মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
ধার রী একা নিজের রুমে বসে আছেন, ধ্যান মগ্ন। হটাৎ দরজার ওপাশ থেকে একটা চিন্তাধারা টের পেলেন, মঙ্গলবাসীদের জন্য এটা স্বাভাবিক। অনেকটা আমাদের দরজা নক করার মত। দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তির দ্বারা খুলে ফেললেন সেটাকে। “আস, বন্ধু”, বললেন তিনি। চাইলে অবশ্য মুখে না বলে টেলিপ্যাথি দিয়েও বলতে পারতেন, কিন্তু দুই জন মঙ্গলবাসী যখন সামনা সামনি আসে, তখন মুখে বলাটাই ভদ্রতা।
এজন খী ঘরে প্রবেশ করলেন, “আজকে আপনি দেরি করে ফেলেছেন, আমার নেতা।”
“জানি খী। একঘন্টার মাঝেই পৃথিবী থেকে পাঠানো রকেট এসে পড়বে। আমি সেটাকে দেখতে চাই। জানি, এখান থেকে প্রায় হাজার মেইল দূরে অবতরণ করবে। কিন্তু তুমি ত জানই, এর দ্বিগুণ দূরত্বে ল্যান্ড করলেও, সেই সময়ের পারমাণবিক বিস্ফোরণ এখান থেকেও টের পাওয়া যাবে। বহুদিন ধরে আমি এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছি। যদিও কোন পৃথিবীবাসী রকেটে থাকবে না, তাও এই রকেটের মাধ্যমেই পৃথিবীর সাথে মঙ্গলের প্রথম সংযোগ স্থাপিত হবে। অবশ্য প্রথম যোগাযোগ বলা ঠিক হবে কিনা জানিনা, কারণ আমাদের টেলিপ্যাথি টিম বহুশতক ধরেই ওদের উপর নজর রাখছে। কিন্তু সরাসরি দ্বিপাক্ষিক সংযোগ এটাই প্রথম। ”
খী পাশেই রাখা একটা নীচু চেয়ারে আরাম করে বসলেন, “তা ঠিক। আমি যদিও খুব কাছ থেকে সাম্প্রতিক রিপোর্ট গুলি দেখিনি, কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝি নি। ওরা এ্যটমিক ওয়ারহেড (পারমাণবিক বোমার যে অংশ বিস্ফোরিত হয়) কেন ব্যবহার করছে? আমি মানছি যে, ওদের ধারণা আমাদের গ্রহে কেউ বাস করেনা, তারপরও.........”
“ওরা আসলে বিস্ফোরণটাকে পরিদর্শন করতে চায়। ওদের লুনার টেলিস্কোপ দিয়ে দেখে, কি জানি বলে ওটাকে... হ্যাঁ, স্পেক্ট্রোস্কোপিক এ্যানালাইসিস করবে। ওদের ধারণা এতে করে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে ওদের জ্ঞান বাড়বে। আমাদের গ্রহের জলবায়ু, মাটি এসব সম্পর্কে ওদের ধারণা দরকার। এটাকে ধরে নাও - কি বলব, অগ্রদুত। কিছুদিনের মাঝেই ওরা সশরীরে এসে পড়বে। আর তারপর .........”
মঙ্গল অপেক্ষা করছে, তার সমস্ত সম্পদ নিয়ে, পৃথিবীর জন্য। অবশ্য মঙ্গলের খুব বেশী সম্পদ অবশিষ্ট নেই - একটা শহর আর তার নয়শ জনের মত অধিবাসী। মঙ্গলের সভ্যতা পৃথিবীর চেয়ে প্রাচীণ হলেও, অবলুপ্তপ্রায়। এই কজনই বাকি আছেন। একটা শহর আর তার নয়শ অধিবাসী। তারা আপেক্ষমান, কখন পৃথিবী তাদের সাথে যোগাযোগ করবে। কারণ? কারণ দুটি একটি তাদের নিজেদের স্বার্থ জড়িত আর অন্যটি স্বার্থহীন।
মঙ্গলের সভ্যতার গতিপথ পৃথিবীর সভ্যতার চেয়ে আলাদা। মঙ্গলে আসলে কোন যান্ত্রিক উৎকর্ষতা নেই। মঙ্গলের সভ্যতার উদ্দেশ্য আসলে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা। তাদের সমাজ ব্যবস্থা এতই উন্নত যে গত পঞ্চাশ হাজার বছরে কোন অপরাধের ঘটনা ঘটেনি, যুদ্ধ - বিগ্রহ ত অনেক দুরের ব্যাপার। বিজ্ঞানের যে দিকটার দিকে ইনারা এগিয়ে আছেন তা হল প্যারাসাইকোলজি - মানসিক ক্ষমতা। পৃথিবী এদিকে একদম শিশু। মঙ্গল পৃথিবীকে কত কিছু শেখাতে পারে - কিভাবে অপরাধমুক্ত, যুদ্ধ মুক্ত পৃথিবী গড়া যায়। টেলেপ্যাথি, টেলিকাইনেসিস এসব ত আছেই।
বিনিময়ে মঙ্গলের আশা, পৃথিবী তাদেরকে শিখাবে প্রযুক্তির ব্যবহার। মঙ্গলের নিজের পক্ষে এদিকে আগানো এখন অসম্ভব। কিন্তু পৃথিবীর কাছ থেকে প্রযুক্তি শিখতে পারলে একটা মৃতপ্রায় গ্রহ আর একটা মৃতপ্রায় প্রজাতি, বেঁচে যাবে। দুই গ্রহই এক লাফে অনেকদুর এগিয়ে যাবে। দুই গ্রহই লহবে লাভবান।
আর আজরাতে প্রথম সংযোগ স্থাপিত হবে। প্রথম রকেটে আসছে পৃথিবীর অগ্রদুত । পরের রকেটে, পৃথিবীবাসীদের - নাহলেও অন্তত একজন পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসবে। অবশ্য এতে পৃথিবী হিসেবে দুই বছর, আর মঙ্গলের হিসেবে চার বছর সময় লাগবে। মংগলবাসীরা জানেন, কারণ - তাদের টেলিপ্যাথির টীম কিছুটা হলেও পৃথিবীবাসীদের প্ল্যান জানতে পেরেছে। দুর্ভাগ্য দুই জাতির জন্যই, কারণ এত বেশী দূরত্বে তারা কিছুতেই দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ করতে পারেন নি। নাহলে, তারাই জানিয়ে দিতে পারতেন মঙ্গলের জলাবায়ু, মাটি ইত্যাদির সম্পর্কে। তাহলে প্রথম রকেট পাঠাবারও প্রয়োজন ছিল না।
আজরাতে রী, মঙ্গলসীদের নেতা (এর চেয়ে কাছাকাছিভাবে আর কোন শব্দ তাঁর পদ বর্ননা করতে পারে না) এবং খী, তাঁর প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক সহকারী ও ঘনিষ্ট বন্ধু অপেক্ষা করেবেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। সময় ঘনিয়ে আসতে তাঁরা পান করলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাঁদের পানীয় আসলে মেনথলের উপর ভিত্তি করে বানানো। মেনথল মঙ্গলবাসীদের কাছে মদের মত। এরপর ছাদে গিয়ে দাঁড়ালেন। উত্তর দিকে তাকালেন দুই জন, রকেটতার সেখানেই অবতরণ করার কথা। রাতের আকাশে জ্বলজ্বলে তারা দিকে উনারা তাকিয়ে তাকিয়ে রইলেন অধীর আগ্রহে।
চাঁদের এক নম্বর অব্জারভেটরিতে রোগ এভারেট আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল, “ফেটে গেছে উইলি। আর এখন ফ্লিমগুলো ডেভেলপ হবার সাথে সাথে আমরা মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে জানতে পারব।” কথা বলতে বলতেই এগিয়ে গেল উইলি সিংগারের দিকে। হাত মেলাল ওর সাথে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটা এক বিশাল অর্জন।
“আশা করি আমরা কাউকে ভুলে মেরে ফেলি নি, রোগ। মানে কোন মঙ্গলবাসীকে মেরে ফেলি নি আরকি। হিসেব ঠিক ছিল ত? স্টাইরিস মেজরের ঠিক মাঝখানে পড়েছে ত?”
“যতটুকু কাছে সম্ভব। তবে আমার মনে হয় প্রায় হাজার মাইল দক্ষিণে পড়েছে। পঞ্চাশ মিলিয়ন মাইল দূর থেকে এরচেয়ে ভাল কিছু করা সম্ভব না। আচ্ছা, উইলি তোমার কি মনে হয়? আসলেই মঙ্গলবাসী বলে কিছু আছে?”
উইলি এক মুহুর্ত চুপ করে ভাবল। এরপর বলল, “না”। কিছুক্ষণ আগে বললেও কথা টা ভুল হত। কিন্তু এখন পুরোপুরি সঠিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.