![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাকাতি
মুল ঃ লেন জিংবার্গ
রুপান্তর - মো: ফুয়াদ আল ফিদাহ
এই ছোট গ্রামের ব্যাংকটা, একটা ছোট কিন্তু আধুনিক দেখতে বিল্ডিং এ অবস্থিত। গ্রামের ব্যাংক বলতে, অন্য একটা বড় ব্যাংকের শাখা। একটা নব্য অধিকৃত জমিতে বিল্ডিংটা বানানো হয়েছিল। সাধারণত ব্যাংকগুলো গ্রামের ঠিক মাঝখানে থাকে, কিন্তু এই ব্যাংকটা ছিল, গ্রামের এক কোণায়। হাইওয়ে আর নতুন ব্রিজটার সংযোগস্থলে।
শেরিফ বেনস ও অনেকটা গ্রামের মতই ছিলেন, বয়স্ক, কাঁধ দুটো ঝুকে গেছে, ক্লান্তির ছাপ শরীরে স্পষ্ট। এইমুহুর্তে অবশ্য তিনি দৌড়ে ব্যাংকের দিকে যাচ্ছেন। যখন ব্যাংকের ভিতর ঢুকলেন, তখন হাপাচ্ছেন। তাকে দেখেই ব্যাংকের চিকন-চাকন ক্যাশিয়ার দৌড়ে তার দিকে এল আর চীৎকার করে বলল, 'আংকেল হ্যাঙ্ক!!! ভয়াবহ ব্যাপার, আমাদের ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে!' মেয়েটির চেহারা আতংকে কাগজের মত সাদা, চোখ ভয়ে আলুর মত বড় বড়।
'ডা-ডাকাতি?' শেরিফের কাঁধ আবার ঝুকে গেল, তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, উনি প্রচন্ড শক পেয়েছেন। নিজেকে সামলে নিতে উনার একটু সময় লাগল। অবশেষে তিনি ভয়ে কাঁপতে থাকা মেয়েটির কাঁধে আলতো করে চাপড় মেরে বললেন, 'শান্ত হও এমা। খুলে বল সবকিছু।'
'ওহ, আংকেল!! কি-' এমা কাঁদতে শুরু করল।
'এমা, অফিশিয়াল ব্যাপার-স্যাপার। আমাকে শেরিফ বেনস বলে ডাক। আর শান্ত হও। আমাকে ঠিকভাবে সব না বললে, আমি কিভাবে ব্যবস্থা নিব বল?' ক্রন্দনরত মেয়েটিকে তিনি হাত ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। এরপর, তাকে সামলে নেবার সুযোগ দিতে ফিরে তাকালেন, ব্যাংকের একমাত্র পুরুষ লোকটার দিকে তাকালেন - টম, ব্যাংকের ম্যানেজার। বললাম, 'টম, তুমি বলত ব্যাপারটা কি? সময় খুবই মূল্যবান। এসব ব্যাপারে যত দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়া যায়, ততই অপরাধীদের ধরা পরার সম্ভাবনা বাড়ে।'
'আমরা অন্য সব দিনের মতই, নয়টার দিকে ব্যাংক খুলি। এর আধঘন্টা পরেই দুইজন লোক ভিতরে এল। আমি আমার ডেস্কে বসে চিঠিপত্রগুলো খুলছিলাম। লোকদুটো অপরিচিত, কিন্তু দেখে সন্দেহজনক মনে হয় নি। এমা ওর কাউন্টারে বসে ছিল, ওর কাউন্টার ছিল খোলা। আর হেলেন ভল্টের ভিতরে ছিল। যাই হোক, কয়েক মিনিট পরেই লোকগুলো ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেল। আমি তখনও কিছু সন্দেহ করি নি। এর কয়েক মিনিট পরেই শুনি এমার চীৎকার। লোক দুটি নাকি তাকে একটা টাইপ করা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিল। ওতে লেখা ছিল - এই কাগজের ব্যাগটায় ডলার ভরে দাও, নাহয় সবাইকে মেরে ফেলা হবে। আমি একটা গাড়ীর আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু হাইওয়ের ট্রাফিক এত বেশী যে, কোন দিকে গেল, বলতে পারব না। তাও আমি দৌড়ে দরজার কাছে চলে যাই, পরে ফিরে এসে আপনাকে ফোন দেই।'
শেরিফ বেনস নিজের উইন্ডব্রেকারের পকেট হাতড়ালেন, নোটবুকের খোঁজে। কিন্তু কিছু না পেয়ে , ম্যানেজারের ডেস্ক থেকে একটা পেন্সিল আর কাগজ তুলে নিলে, ‘ঠিক কয়টায় ঘটনা ঘটে, টম?’
‘এই ধরুন... নয়টা বত্রিশে।’
শেরিফ বেনস ছোট্ট একটা নড করে, পেন্সিলের মাথা থুতু দিয়ে ভিজিয়ে নিলেন। এরপর তথ্যটা লিখে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কত নিল?’
‘একেবারে সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে ছোট ছোট নোটে পঞ্চাশ হাজার ডলার ত হবেই।’ ম্যানেজার মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন, যেন ব্যাপারটার গুরুত্ব এতক্ষণে অনুধাবন করতে পেরেছে। ‘হ্যাঙ্ক, এই শাখা খোলা হয়েছে তিন মাসও হয় নি, এরই মাঝে একটা ডাকাতি হয়ে গেল!! আমার চাকরী মনে হয় শেষ।’
‘আরে দাঁড়াও। সবকিছু এখনও শেষ হয়ে যায় নি। মনে করে দেখত টম, ওদের বর্ণনা দিতে পার কিনা।’
‘আসলে আমি ত তাদের দিকে ভালোভাবে তাকাইও নি। এক ঝলক দেখেছি কেবল। তবে যতটুকু মনে হয়, দুইজনের বয়স ... এই ত্রিশের ঘরে। স্বাস্থ্য মোটামুটি। পরণে স্যুট ছিল... আর হ্যাঁ, এদের মধ্য অপেক্ষাকৃত ভারী লোকটার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ছিল। এই লোকটার মাথায় কোন হ্যাট ছিল না, চুল কাল রঙের, পরিপাটি করে আঁচড়ানো। অন্য লোকটার হাতে ছিল একটা ভাঁজ করা খবরের কাগজ। মাথায় ছিল হ্যাট... চুলের রঙ দেখতেই পাই নি।’
‘আমি দুইজনকেই ভালোভাবে দেখেছি, হ্যাঙ্ক।’ হেলেন স্মিথ ভল্ট থেকে বেরিয়ে এসে বললেন। হেলেন মাঝবয়সী, হালকা সোনালী চুলের মোটা-সোটা মহিলা। ‘হ্যাট ছাড়া লোকটার চুল ঘন কাল, চেহারাইয় তীক্ষ্ণ একটা ভাব আছে, দেখতে বিদেশী মনে হয়, নাকের নীচে পাতলা একটা গোঁফ। অন্যজন একটা হান্টিং ক্যাপ পড়ে ছিল, আমার মনে হয়, লোকটার মাথায় টাক আছে। আর -’
‘হান্টিং ক্যাপের রঙ কি ছিল, হেলেন?’ শেরিফ জিজ্ঞাসা করলেন, হাতে পেন্সিল, লেখার জন্য প্রস্তুত।
‘বাদামী রঙের।’
এমা ওর চেয়ারে সোজা হয়ে বসল, ‘না, না! কমলা রঙের! ঐ লোকটাই আমাকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়েছিল।’
‘লোকটার উচ্চারণে অস্বাভাবিক কিছু ছিল?’
‘আংকেল, দুই জনের কেউ কথাই বলে নি। আমাকে খালি নোটটা এগিয়ে দিয়েছিল। টাইপ করে একটা নোট। লেখা ছিল - ‘এই ব্যাগটায় ডলার ঢুকিয়ে দাও, নতুবা সবাইকে মেরে ফেলা হবে। কাগজের আড়ালে একটা কাটা শটগান আছে। আমরা ডলার নিয়ে বেরিয়ে যাবার দশ মিনিট পর এ্যালার্ম বাজাবে। সাবধান, বাইরে আমাদের লোক সাব - মেশিংগান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’ আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। কোনমতে আমার সামনে রাখা ক্যাশ টাকা গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে দেই। মনে হচ্ছিল, ভয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলব।’
‘নোটটা কোথায়?’ শেরিফ বেনস জিজ্ঞাসা করলেন।
‘নোট? লোকগুলো টাকার সাথে নোটটাও নিয়ে গেছে।’
বেনসের মুখ থেকে হতাশার আওয়াজ বেরিয়ে এল, ‘এমা, ভালভাবে চিন্তা করে দেখ। শপিং ব্যাগটাতে কোন অস্বাভাবিকতা ছিল?’
‘হ্যা! মনে পড়েছে!। ব্যাগটাতে এ&পি লেখা এমবস করা ছিল!’
শেরিফ তাঁর হ্যাট পিছনে ঠেলে দিয়ে মাথা চুলকে বললেন, ‘ধ্যুত! হাজার হাজার সুপারমার্কেট গড়ে উঠেছে। আশে পাশের পঞ্চাশ মাইলের মধ্যে এই নামে অনেকগুলোই খুঁজে পাওয়া যাবে। কি আর করা...’ বলতে বলতেই তিনি ডেস্কের দিকে ফিরে ফোন হাতে তুলে নিলেন, ‘স্টেট ট্রুপারদের ফোন দেয়া ছাড়া উপায় নেই। আচ্ছা, ওদের গাড়ির দিকে কেউ খেয়াল করেছিল?’
দুই মহিলা আর ব্যাংক ম্যানেজার, সবাই মাথা নাড়লেন, কেউ দেখেনি। এমা বলল, ‘আমি নিশ্চিত না, কিন্তু সম্ভবত একটা পুরোনো ধূসর সেডান গাড়িকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।’
শেরিফ হতাশভাবে মাথা নাড়লেন, কি ভেবে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন, ‘ব্যাংকে কোন গ্রাহক ছিল না?’
টম বললেন, ‘জ্বি না, কেবল খুললাম।’
‘এত টাকা নগদ কেন রেখেছ?’ বেনস জিজ্ঞাসা করলেন।
‘আরে হ্যাঙ্ক, মানে শেরিফ বেনস, আপনি ত জানেনই এই শাখাটা কেন খোলা হয়েছে। ব্রীজ চালু হবার পর থেকে, আমরাই নদীর ঐ পারে দুইটা ফ্যাক্টরির বেতন-ভাতা দেই। প্রতি বুধবার সকালে চুয়াল্লিশ হাজার ডলার এখান থেকে যায়। এছাড়া এমনিতেও হাজার দশেক সবসময় রাখতেই হয়।’
হেলেন আফসোসের সাথে মাথা নেড়ে বললেন, ‘দুনিয়াটার কত অধঃপতন হয়েছে। এর আগে কখনও আমাদের গ্রামে...’
শেরিফ কথা শেষ হবার আগেই হতাৎ করে এমার কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলেন, ‘প্রিন্ট! দুই জনের কেউ কি এই কাউন্টার ধরেছিল?’
এমা বলল, ‘বলতে ভুলেই গেছি! তুমি বলায় মনে পড়ল, দুইজনের হাতেই গ্লাভস ছিল!’
শেরিফ দুঃখভরে মাথা নাড়লেন, ‘ড্যাম, আমাদের ভাগ্য শিকে ছিঁড়ছে না।’ তিনি জানালার দিকে গিয়ে পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালেন। ‘বৃষ্টি হতে পারে’, স্বদগোক্তির মত বললেন।
এক মুহুর্ত সেভাবেই থাকাই পর তিনি ফিরে এলেন। ডেস্কে বসে, হাতের কাগজটিকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন। ‘মন্দ নয়। এমা, তোমার কান্নার ভান ঠিক হয় নি, আরও ভাল করতে হবে। স্টেট ট্রুপাররা এলে কিন্তু এতে চলবে না। আন্টি হেলেন, খুব সুন্দর করে সামলেছ। যে কেউ তোমাকে বোকা-সোকা মহিলা ভাববে। টম, তুমিও ভালই করেছ, কিন্তু আরও বেশি আপসেট দেখাতে হবে; এমন আচরণ কেন যেন দুনিয়া ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আগামীকাল আমরা শেষ বারের মত রিহার্সেল করব। মঙ্গলবার রাতে আমি পঞ্চাশ হাজার ডলার নিয়ে যাব। জেলের মেঝেতে একটা লুকানোর জায়গা আছে। বুধবার সকাল, ব্যাংক খুলেই আমাকে ফোন দিবে। খেয়াল রাখবে যেন কোন গ্রাহক সেই সময় না থাকে। এইত। আমরা ছয় - সাত মাস অপেক্ষা করে টাকা গুলোকে ভাগ করে নেব। ভান করব, উত্তরাধিকার সূত্রে সবাই কিছু টাকা পেয়েছি। টম, আমার অভিনয় কেমন হল?’
‘চমৎকার। একেবারে বোকা গ্রাম্য পুলিশের মত হয়েছে, বাবা।’
©somewhere in net ltd.