![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আ টেস্ট ফর মার্ডার-রহস্য পত্রিকা
জ্যাক রীচি
মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
‘আমার কি মনে হয়, জানেন?’ হেনরি চ্যান্ডলার বলল, ‘আমার মনে হয়, মানবজাতির অন্যতম সেরা আবিষ্কার হল এই সসেজ। পুষ্টি গুণের কথা নাহয় বাদই দিলাম, ব্যবহারিক দিক দিয়েও এর জুড়ি নেই। এই জিনিস খেতে খেতে কি না করা যায়? বই পড়া যায়, টিভি দেখা যায় এমনকি চাইলে বন্দুকও ধরে রাখা যায়।’
দেয়াল ঘড়িতে এখন বারটা বেজে পনের মিনিট। পুরো অফিসে আমি আর চ্যান্ডলার ছাড়া আর কেউ নেই।
স্যান্ডউইচে একটা কামড় বসাল লোকটা, দুই এক সেকেন্ড চিবিয়ে গিলে ফেলল। এরপর হেসে বলল, ‘আপনি আর আমার স্ত্রী গোপনীয়তা ভালভাবেই বজায় রেখেছেন, মি. ডেভিস। সত্যি বলতে কি, একটু বেশিই ভালভাবে। আমার কাজে আসবে ব্যাপারটা। ঘটনাকে আমি এমনভাবে সাজাব যেন মনে হয়, আপনি আÍহত্যা করেছেন। কিন্তু পুলিশ যদি খুনের কথা ভেবেও থাকে, মোটিভ বের করতে হিমশিম খেয়ে যাবে। আপনি আমার বস-এছাড়া আপনার সাথে আমার কোন স¤পর্ক নেই। কিন্তু আপনি তো আরও বিশ জনের বস।’
ডেস্কের উপর ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে আসা হাতটা রাখলাম, ‘তোমার স্ত্রী বুঝতে পারবে। যদি ও পুলিশের কাছে যায়?’
‘মনে হয় না যাবে। প্রেমিকের জন্য একজন মহিলা অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু তা প্রেমিক জীবিত থাকা অবস্থায়। আসলে মি. ডেভিস, মেয়েরা আপনার আমার চেয়ে অনেক বেশি প্রাকটিক্যাল। তাই মৃত প্রেমিকের জন্য এত ঝামেলা করতে যাবে বলে মনে হয় না। আর সে হয়ত সন্দেহ করবে যে আমি আপনাকে খুন করেছি, নিশ্চিত তো আর হতে পারবে না। আমার স্ত্রীকে যতটা চিনি তার উপর ভিত্তি করে বলছি, সে ভাববে-ও তো মারাই গিয়েছে, এখন আর এই পরকীয়ার ব্যাপারটা পাঁচকান করে লাভ কি! আর আপনার যে স্বভাব, তাতে মনে হয় খুঁজলে এমন আরও ডজন খানেক লোক পাওয়া যাবে, যারা আপনাকে খুন করতে চায়।’
আমার কণ্ঠের মরিয়াভাবটা নিজের কানেই ধরা পড়ল, ‘পুলিশ কিন্তু কাউকে ছাড়বে না। তুমি যে লাঞ্চের সময় সবার পরে বাইরে গিয়েছ, সেটাও ওদের নজর এড়াবে না।’
মাথা নাড়ল ভাবী আততায়ী, ‘আমার তা মনে হয় না। আমি যে এখানে আছি, তা কেউ জানে না। আমি সবার সাথেই বের হয়েছিলাম, পরে ফিরে এসেছি। জানতাম আপনাকে একা পাব।’ দুই এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, ‘অনেক ভেবে দেখলাম, লাঞ্চের সময় আপনাকে খুন করাটাই সবচেয়ে ভাল হবে। এই সময়টাতে কে কোথায় ছিল, তা বের করা পুলিশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। মানুষ খায়, ঘোরে ফেরে, কেনা কাটা করে এরপর কাজে ফিরে আসে। তাই ওরা কোথায় ছিল-এটা প্রমাণ করা পুলিশের পক্ষে অসম্ভব।’
হাত নামিয়ে বাদামী কাগজের ব্যাগে ঢুকাল সে, ‘আমি এই এলাকার অনেকগুলো ক্যাফেটেরিয়াতেই লাঞ্চ সারি। কিন্তু মাথা নিচু করে রাখি বলে, কেউ বলতে পারবে না যে আমি ওদের ওখানে খেয়েছি না খাইনি। দুই সপ্তাহ হল অপেক্ষা করছি মি. ডেভিস।’ হাসল সে, ‘আজ সকালে আপনাকে লাঞ্চ হাতে অফিসে ঢুকতে দেখে বুঝেছি-আপনি দুপুরে অফিসেই খাবেন। কাজ বেশী নাকি?’
ঠোঁট দুটো কোনরকমে ভেজালাম, ‘হ্যাঁ।’
স্যান্ড উইচের উপরের অংশটা তুলে মাঝখানের দুটো ছোট সসেজের দিকে তাকাল চ্যান্ডলার, ‘মানব দেহ বড়ই অদ্ভুত। জানেন, এখন আমার এত খিদে পেয়েছে যে মনে হচ্ছে, আস্ত ঘোড়া খেয়ে ফেলতে পারব।’
কিছুই বললাম না আমি, উত্তেজনায় মুখের ভেতরটা শুকনো ঠেকছে।
‘খাবেন নাকি একটা? হাজার হলেও, আপনারই জিনিস।’
এবারও কিছু বললাম না।
কাগজের ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছল লোকটা, ‘হয়ত ভাবছেন, এমন সময় খাবার নিয়ে কেন বকবক করছি।’ নিজে নিজেই নড করল, ‘আসলে আমি নিজেও জানি না কেন। বুঝে উঠতে পারছি না, এখুনি গুলি করে আপনাকে মারব নাকি আরও কিছুক্ষণ উপভোগ করব সময়টাকে!’
বাদামী ব্যাগটাতে থেকে অনেক কষ্টে নজর সরিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম, ‘হেলেন এখন কোথায়?’
‘কেন্? বিদায় জানাতে চান? নাকি আমাকে থামাতে বলতে চান? কোনটাই হবে না মি. ডেভিস। হেলেন এক সপ্তাহের জন্য ওর বোনের কাছে গিয়েছে।’
বড় করে একটা টান দিলাম সিগারেটে, ‘মরতে আমার আপত্তি নেই। দুনিয়াকে দেবার মত বা দুনিয়ার কাছ থেকী পাওয়ার মত আর কিছুই বাকি নেই।’
মাথা কাত করল চ্যান্ডলার, আমার কথার অর্থ বুঝতে পারেনি।
‘এই নিয়ে তিনবার হল,’ বললাম, ‘তিনবার! হেলেনের আগে ছিল বিয়াট্রিস, তার আগে ডরোথি।’
হঠাৎ হাসল সে, ‘কথা বলে কালক্ষেপন করতে চাইছেন? ঔাভ নেই, মি. ডেভিস। করিডরের দরজাটা বন্ধ করে রেখেছি। দুপুর একটার আগে কারও আসার কথা না, এলেও ঢুকতে পারবে না। যদি বেশী চেষ্টা করে, তাহলে আপনাকে গুলি করে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাব।’
আমার হাত থেকে বেয়ে পড়া ঘাম, ডেক্সের উপর ছাপ রেখে দিয়েছে। ‘প্রেম আর ঘৃণা খুব কাছাকাছি দুটি অনুভূতি চ্যান্ডলার। আর আমার ক্ষেত্রে দুটোই খুব তীব্র।’
সিগারেটের দিকে তাকালাম আমি, ‘আমি ডরোথিকে খুব ভালবাসতাম, নিশ্চিত ছিলাম যে সে-ও আমাকে ভালবাসে। বিয়ে করার কথা ছিল আমাদের। অনেক প্ল্যান করেছিলাম। শেষ মুহূর্তে মত পালটালো ডরোথি। বলল, আমাকে ভালবাসেনা। কখনো নাকি বাসেইনি।’
চ্যান্ডলার মুচকি হেসে আরেকটা কামড় বসাল স্যান্ডউইচে।
‘যদি আমি ওকে না পাই তাহলে কেউ পাবে না।’ চ্যান্ডলারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘এই কথা ভেবে ওকে খুন করি আমি।’
চোখের পলক ফেলল লোকটা, পিঠ সোজা হয়ে গিয়েছে।
‘আমাকে এসব কেন বলছেন?’
‘ক্ষতি কি?’ সিগারেট টেনেই চলছি আমি, ‘আমি খুন করেছি ওকে। কিন্তু শুধু খুন করাই যথেষ্ট ছিল না। বুঝতে পেরেছ তো, চ্যান্ডলার? আমি ঘৃণা করতাম ওকে। তীব্র ঘৃণা।’
সামলে ওঠার সুযোগ দিলাম না ওকে, ‘একটা চাকু আর হ্যাকস কিনেছিলাম। কাজ শেষ করে ওর দেহের টুকরাগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম নদীতে।’
সাদা হয়ে গিয়েছে ভাবী আততায়ীর মুখ।
অ্যাশট্রে তে গুঁজে দিলাম সিগারেটের ফিল্টার, ‘দুই বছর পর বিয়াট্রিসের সাথে দেখা। বিবাহিত ছিল তখন, কিন্তু তাতে কি? প্রেম কি এতো কিছু দেখে শুনে হয়? ছয়টা মাস খুব আনন্দের সাথে কাটালাম। ভেবেছিলাম, আমি যেমন ওকে পাগলের মত ভালবাসি, সে-ও নিশ্চয় আমাকে তেমন ভালবাসে। ভুল ভাঙ্গল ওর স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে বলার পর। হেসেছিল সে...যেন...যেন...’
এক পা পিছিয়ে গেল চ্যান্ডলার।
কপাল বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে আমার, ‘এবার চাকু আর হ্যাকস আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। রাতের বেলা মাংসের টুকরাগুলো কুকুর দিয়ে খাইয়েছিলাম। চাঁদনী রাত ছিল। বসে বসে দেখেছি পুরোটা সময়।’
ভয়ে আতংকে চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে হেনরির চোখ।
আস্তে করে উঠে দাঁড়ালাম আমি। ভয়ে আমার ডেস্কের উপর হাতের স্যান্ড উইচটা রেখে দিয়েছে সে। হাত বাড়িয়ে উপরের পাউরুটি টুকু সরিয়ে ফেললাম। হেনরির দিকে হেসে বললাম, ‘পর্ক (শুয়োরের মাংস) কেসিং কিনতে পাওয়া যায়, জান?’
উত্তর দিল না সে, আশাও করিনি। ‘সসেজ বানাবার মেশিনের দামও কম। মাত্র পয়ত্রিশ ডলার।’
এবারও কোন কথা নেই। ‘সসেজ কিভাবে বানায়, জানতে চাও? খুব সহজ। প্রথমে হাড় থেকে মাংস ছাড়াতে হবে। এরপর ছোট ছোট করে টুকরা করতে হবে সেগুলো।’
ঠিক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমার স্ত্রী তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাইনি চ্যান্ডলার। আমাকে শুধু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে। আমি ভালবেসেছি ওকে, আবার ঘৃণাও করেছি। দুনিয়াতে এরচেয়ে বেশী ঘৃণা আর কাউকে করিনি।’
চ্যান্ডলারের ভয়ার্ত চোখে চোখ রেখে হাসলাম, ‘হেলেন আসলে এখন কোথায়, বল তো!’
শেষকৃত্যের পাট চুকে গেলে, হেলেনকে গাড়িতে উঠতে সাহায্য করলাম। একা হতে আমার দিকে ফিরে মেয়েটি বলল, ‘আমি নিশ্চিত যে হেনরি আমাদের সপর্কের ব্যাপারে কিছুই জানত না। কিন্তু তোমার অফিসে বসে কেন আত্মহত্যা করতে গেল, তা এখনো আমার মাথায় ঢুকছে না।’
কবরস্থানের গেট দিতে গাড়ি বের করছি এখন। হাসলাম ওর দিকে চেয়ে, বললাম, ‘আমিও জানি না। কে জানে, হয়ত উল্টা পাল্টা কিছু খেয়ে ফেলেছিল!’
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৪
ফুদাল ফিদাল বলেছেন:
২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৩
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: এন্টারটেইনিং একটা লেখায় মাত্র ২৬ হিট! কত আব-জাব-কাব লেখার শ' খানেক হিট পড়ে!
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৮
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ভাল্লাগসে। ঘুমাইতে যাওয়ার আগে টুকরো বিনোদন।