![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্লে আ গেম অফ সায়ানাইড
জ্যাক রীচি
মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
‘বাচ্চারা,’ মিস উইকার আদেশ করলেন, ‘ডিটেকটিভকে বলে দাও যে সায়ানাইড কোথায় রেখেছ।’
কিন্তু রনি আর গারট্রুড শুধু আমার দিকে চেয়ে হাসল। বলল না কিছুই।
বৃদ্ধাক্সগুলি ও তর্জনীর মাঝে একটা সোডিয়াম সায়ানাইডের বড়ি নিয়ে চোখের সামনে ধরলাম। ঘোলাটে সাদা দেখতে জিনিসটার ব্যাস হবে বড়জোর সোয়া ইঞ্চি। ‘দেখতে এরকম, কিন্তু ওগুলো ক্যান্ডি না। খাওয়া একেবারে নিষেধ।’
‘রনি আর গারট্রুড, দুজনেই খুব দুষ্ট আর বাজে বাচ্চা।’ মিস উইকার যেন ঘোষণা দিলেন।
বাচ্চাদের মা, মিসেস র্যানডাল, লাল হয়ে গেলেও কিছু না বলে চুপ করে রইলেন।
মোট নয়টি বড়ি আছে। আমরা বাড়ির বাইরে খুঁজে চারটা পেয়েছি। এই ঘরের খেলনা ট্রেনের মাঝে আরেকটা লুকানো আছে। কিন্তু চারটি পিলের এখনো কোন হদিস নেই
‘তুমি কি আসলেই ডিটেকটিভ?’ রনির বয়স সাত, ও ছোট।
‘হ্যাঁ, রনি। এখন ভাল ছেলের মতো বল তো, বাকি বড়ি গুলো কোথায় রেখেছ?’
‘তোমার পার্টনার কই?’
‘আমার কোন পার্টনার নেই।’
‘কেন?’
‘আমি লেফটেন্যান্ট ডিটেকটিভ। লেফটেন্যান্ট ডিটেকটিভদের পার্টনার থাকে না।’
‘কেন?’
ইচ্ছা হল, বদমাশটার গলা চেপে ধরি। ‘কেননা লেফটেন্যান্ট ডিটেকটিভরা খুব নিচুমনা হয়, ওদের সাথে কেউ কাজ করে টিকতে পারে না।’
এই মুহূর্তে বাচ্চাদের খেলার ঘরে আছি আমরা। এই বিশাল ভিক্টোরিয়ান বাড়িতে এই ঘরটাই সবচেয়ে বেশী অন্ধকার আর বিষণè।
আমি ওদের মায়ের দিকে ফিরলাম, ‘আপনি একটু বলে দেখুন না?’
মিসেস র্যানডাল ছোট খাট মহিলা। ভয়ে সাদা হয়ে আছে। ‘আমি শিয়োর যে ওরা সময় হলেই আপনাকে বলে দেবে, লেফটেন্যান্ট। এখন গো ধরে আছে তো, একটু সময় দিন।’
‘রক্তের দোষ।’ মিস উইকার বললেন। ‘ওদের বাবা ছিল সেলসম্যান।’
গারট্রুড রনির চেয়ে দুই বছরের বড়। ওর চোখে দুষ্টমি খেলা করছে। ‘আমরা শুধু রুটি আর পানি খেয়ে দিন কাটাই।’
মিসেস উইকার চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালেন, ‘তোমাদের আর তোমাদের মায়ের মাথার উপর একটা ছাদের যোগান দেই আমি। কথাটা ভুলে যেও না।’
‘ছাতা পড়া রুটি,’ রনি যোগ করল, ‘আর মাঝে মাঝে পানিটা হয় লবণাক্ত।’
আমার লোকরা আরেকবার বাড়ির বাইরে খুজে দেখছে। ভেতরটাও খুজে দেখেছে, কিন্তু সফলতার খাতা শুন্য।
আমি জোর করে হেসে বললাম, ‘আহা বাচ্চারা, আর জিদ করে না। এবার বলে ফেল। দুই ঘন্টা হয়ে গেল।’
‘ওই বড়িগুলো দিয়ে কি কাজ হয়?’
‘গয়না পরিষ্কার করা যায়।’
‘আমাদের কোন গয়না নেই।’ গারট্রুড বলল, ‘কিন্তু এ্যাগনেস আন্টির আছে।’
মিস উইকার চোখ ছোট ছোট করে বললেন, ‘চুরি করে দেখছিলে নাকি!’
আমি বুঝতে পারলাম যে, ভুলটা আমিই করেছি। আমি বাড়ির সবাইকে আতংকিত করে তুলতে চাইনি বলে, আমার লোকদের নির্দেশ দিয়েছিলাম-ওরা যেন আগে বাড়ির বাইরের বাগানটাতে সার্চ চালায়। বাচ্চাগুলো নিশ্চয় জানালা দিয়ে ওদেরকে খুঁজতে দেখেছে, আর ধরে নিয়েছে আমরা নতুন কোন খেলা খেলছি।
হাসতে হাসতে গালের মাংসপেশীগুলো ব্যথা করছে, ‘খুব বুদ্ধিমানের মত বড়িটা খেলনা ট্রেনের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিলে। কার মাথা থেকে ঐ বুদ্ধি বের হয়েছে?’
‘তুমি কখনোই জানতে পারবেন না।’ আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে বলল রনি। ‘আমরা আমাদের হাতের ছাপ মুছে ফেলেছি।’
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, ‘একটু কঠিন হতে হবে মনে হচ্ছে। শাসন না করলে বাচ্চারা লাই পেয়ে যায়।’
মিস উইকারের আপত্তি করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মিসেস র্যান্ডাল শক্তভাবে বলে দিলেন, ‘আমার বাচ্চাদের গায়ে হাত লাগানোর কথা কল্পনাও করবেন না।’
ঘাড় মালিশ করতে করতে বললাম, ‘কিন্তু ওদের দেহ তো অন্তত পরীক্ষা করে দেখতে দেবেন, নাকি?’
রনি হাসল, ‘খুঁজে লাভ নেই, আমি পরিষ্কার।’ ওর বড় বড় চুলগুলো দেখে ভাবলাম, ওর মা চুল কেটে দেয় না কেন?
‘আর কোন মহিলা পুলিশ ছাড়া অন্য কাউকে আমি আমার শরীরে হাতও দিতে দেব না।’ গারট্রুড জানাল।
দেখতে যত নি®পাপই মনে হোক না কেন বাচ্চা দুটোকে, আসলে বদের হাড্ডি।
‘আমি রনিকে সার্চ করে দেখি।’ বললাম, ‘আর তোমার আম্মু তোমাকে সার্চ করে দেখুক।’
কিছুই পেলাম না আমরা।
‘এ্যাগনেস আন্টিকে সার্চ করে দেখুন না!’রনি পরামর্শ দিল।
মিস উইকার ক্ষেপে গেলেন, ‘আমার কাছে কোন বড়ি টিল নেই।’
‘আমি যদি কোন দক্ষ ডিটেকটিভ হতাম,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল রনি, ‘আমি কারো মুখের কথায় বিশ্বাস করতাম না।’
ওর দীর্ঘশ্বাস ফেলা দেখে যেন আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। মনে হচ্ছিল, নিজেই ওর চুল ধরে কেটে দেই। হঠাৎ একটা চিন্তা এলো মাথায়-ছোাট বাচ্চারা মাথার চুল এতো পরিপাটি করে আঁচড়ে রাখে না। অন্তত দু ঘন্টা ধরে তো না-ই।
‘রনি,’ শক্ত কণ্ঠে বললাম, ‘এদিকে এসো!’ ওকে ইতোস্তত করতে দেখে যোগ করলাম, ‘এই মুহূর্তে এসো বলছি।’
আরেকটা বড়ি খুজে পেলাম।
পাজী ছেলেটা মাথার চামড়ার সাথে স্কচটেপ দিয়ে জিনিসটা লাগিয়ে রেখেছে। এরপর পরিপাটি করে আঁচড়ে নিয়েছে চুল।
পটানোর জন্য বললাম, ‘খুব ভাল বুদ্ধি বের করেছিলে রনি। এবার আংকেল জেমসকে বলতো, অন্য তিনটা বড়ি কোথায়?’
‘তুমি আমার আংকেল নও।’ রেগে গিয়েছে পাজীটা।
অন্য দিক দিয়ে এগোবার চেষ্টা করলাম, ‘আইসক্রিম খাবে? এমন দিনে আইসক্রিম খেতে দারুণ লাগে।’
চোখের দৃষ্টি দিয়ে প্রস্তাবটা নিয়ে আলোচনা করল দুই ভাই বোন। বুঝলাম, পটে গিয়েছে।
‘কোন সমস্যা নেই। অন্য তিনটা বড়ি কোথায় বল, আমি কথা দিচ্ছি-যত চাও তত আইসক্রিম খাওয়াব।’
সাফ না করে দিল বদমাশ দুটো!
‘এক ডলার করে দেব দুইজনকে।’ মরিয়া হয়ে উঠেছি আমি।
রনিকে ভজানো গেল না। ‘এক মিলিয়ন ডলার করে দিলে, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে পারি।’
‘আচ্ছা যাও, দুই ডলার করেই দিব। এক মিলিয়নের কাছাকাছি কিন্তু।’
‘না, কাছাকাছি না। আমি একশ পর্যন্ত গুনতে জানি, কি ভেবেছ আমাকে?’
কখন পায়চারী করা শুরু করেছি, নিজেই টের পাইনি।
মিসেস উইকার জানতে চাইলেন, ‘আপনারা কি নিশ্চিত যে মোট নয়টা বড়ি ছিল?’
‘হ্যাঁ।’
‘কিন্তু সায়ানাইড চুরি করবে কে?’
‘চোর তো সায়ানাইড চুরি করেনি। গয়না ব্যবসায়ীর বাক্স থেকে সবকিছু ব্যাগে ভরেছে। এরপর আপনার বাড়ির বাইরে গাড়ি থামিয়ে যখন কি চুরি করে আনল তা দেখতে গিয়েছে, তখনই টের পেয়েছে যে ওগুলো সায়ানাইড। ভয়ের চোটে গেটের বাইরে থেকেই বাগানের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে ওগুলো।’
মিসেস র্যানডাল যেন ভয় পেয়েছেন, ‘বলেন কি? এই বাগানে? আমার বাচ্চারা যে বাগানে খেলা করে।’
‘তা তো করেই, আর খুঁজেও পেয়েছে ওগুলো।’ মহিলার বোকামীতে বিরক্ত হলাম আমি। ‘আমি তো সেজন্যেই এখানে, নাকি?’
‘আংকেল জেমস, আমাদেরকে একটা গল্প শোনাও না!’ আব্দার করল গারট্রুড।
‘আমি তোমাদের আংকেল জেমস নই।’ বিরক্ত কণ্ঠে জবাব দিলাম। কিন্তু পর মুহূর্তেই সামলে নিলাম নিজেকে, ‘কোন গল্প শুনতে চাও?’
বাচ্চা দুটো বেশ কিছুক্ষন তর্ক বিতর্কের পর ‘লেনি, দ্য জিরাফ উইথ দ্য শর্ত নেক’-এর ব্যাপারে একমত হল। কপাল ভাল, গল্পটা খুব একটা বড় ছিল না।
গল্প শেষ হতে বইটা বন্ধ করে রাখলাম, ‘এখন বাচ্চারা, বল তো বড়িগুলো কোথায়?’
‘কেন বলব? আমাদের কি বলার কথা ছিল?’ রনি চোখ পিটপিট করতে করতে বলল।
বাচ্চাদেরকে সবসময় নিষ্পাপ ভেবে এসেছি আমি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এতদিন ভুল করেছি।
‘ট্যাক্টিক এ্যাগ্রিমেন্ট কাকে বলে, জানো?’ জিজ্ঞাসা করল।
ওরা জানে না, জানার কথাও না।
‘এই এ্যাগ্রিমেন্টটা হল এমন এক ধরনের চুক্তি, যেখানে দুই পক্ষ কোন কিছু লিখিত বা মৌখিকভাবে উচ্চারিত কথা ছাড়াই একটা চুক্তিতে উপনীত হয়। তোমাদেরকে কেন ঐ বা-, ইয়ে গল্পটা পড়ে শোনালাম, বল তো?’
রনি হাসল, ‘কারণ তুমি ভেবেছিলে, গল্পটা শোনালে আমরা তোমাকে পিলের অবস্থান জানাব।’
আমি নড করলাম, ‘যদি ভাবতাম যে তোমরা জানাবে না, তাহলে কি পড়ে শোনাতাম?’
‘সম্ভবত না।’
‘কিন্তু তোমরা আমাকে পড়ে শোনাতে দিয়েছ, নাই যদি বলবে তাহলে থামাওনি কেন?’
কিছু বলল না ছেলেটা।
‘তাহলে কি আমাদের মাঝে একটা ট্যাক্টিক এ্যাগ্রিমেন্ট হলো না? এখন যদি আমাকে না বল, তাহলে তোমার বিবেক তোমাকে দুষবে, তাই না?’
‘না।’
‘রনি,’ ওর মা বলল, ‘কাজটা ভাল হচ্ছে না। তোমার বলে দেয়া উচিত।’
রনিকে দেখে মনে হল না যে ও ওর মায়ের সাথে একমত।
‘একটার কথা বল অন্তত।’ মিসেস র্যানডাল অনুরোধ করলেন, ‘ছোট একটা বড়ি কোথায় আছে, সেটাই নাহয় আংকেল জেমসকে বল।’
নিজেদের মাঝে ফিসফিস করা শুরু করল বিচ্ছুদুটো। ‘আচ্ছা, একটার কথা বলছি। ছাদের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলাম। ওখানেই থাকার কথা।’
আমি বাইরে গিয়ে সার্জেন্ট ডেভিসকে ডাকলাম। সে বাগানের খোঁজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সব কিছু খুলে বললাম ওকে।
‘উপরে তো খুঁজে দেখা হয়নি। মাথাতেই আসেনি।’ কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলল সে।
রাগ চেপে রাখা কষ্টই হয়ে পড়ল, ‘খুঁজে দেখ, চিমনিটাও দেখ।’
আবার ঘরে ফিরে এলাম আমি, হাত কচলাতে কচলাতে বললাম, ‘বাচ্চারা, আরেকটা গল্প শুনতে চাও?’
‘নাহ।’ রনি বলল, ‘আমরা আর কোন ট্যাক্টিক এ্যাগ্রিমেন্ট চাইনা।’
‘তোমাদের ঘুমের সময় হয়ে গিয়েছে।’ মিসেস র্যানডাল বলল।
চোখ গরম করে তাকালাম মহিলার দিকে, ‘বাকি বড়িগুলো পাওয়ার আগে কোন ঘুম-টুম নেই।’
কিন্তু বাচ্চাদের ব্যাপারে মিসেস র্যানডাল অন্য কারো কথা কানে তুললে তো, ‘দেখতে পাচ্ছেন না, বাচ্চারা ক্লান্ত? ওদের বিশ্রামের দরকার।’
মিস উইকার ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলেন, কিন্তু আমি রয়ে রয়ে গেলাম। খুঁজে পেতে একটা চেয়ার নিয়ে এসে বসে পড়লাম।
বাচ্চাদেরকে বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল মিসেস র্যানডাল। পর্দা টেনে দিয়ে আমার দিকে ফিরে বলল, ‘কি মিষ্টি বাচ্চা আমার, তাইনা?’
সার্জেন্ট ডেভিস ঘরে ঢুকল, ‘আরেকটা বড়ি পেয়েছি।’
‘ভাল। চিমনী খুঁজে দেখেছ?’
‘দেখতেই হবে?’ কাতর কণ্ঠে বলল সে।
‘হ্যাঁ।’ জানিয়ে দিলাম, কোন গাইগুই চলবে না।
ও বেরিয়ে গেলে আমি মিসেস র্যানডালের দিকে ফিরে বললাম, ‘আপনার স্বামী...’
‘দুই বছর আগে মারা গিয়েছে।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিসেস র্যানডাল, ‘আমাদের জন্য কোন টাকা-পয়সা রেখে যায়নি দেখে, আমার খালার সাথে এসে থাকতে বাধ্য হই।’
মিস উইকারকে দেখেই বুঝেছি, নিতান্ত বাধ্য না হলে এই পরিবার এখানে থাকত না। তাও নিশ্চিত হবার জন্য জানতে চাইলাম, ‘আর কোন জায়গা ছিল না?’
‘নাহ। এ্যাগনেস খালা ছাড়া আমার আর কোন আত্মীয় জীবিত নেই। তারও আর কেউ নেই। আমি ভেবেছিলাম...’ ইতস্তত করল সে, ‘ভেবেছিলাম যে কোথাও কাজ নেব। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পাল্টাই। আমি মনে করি, একজন মায়ের দায়িত্ব হল তার বাচ্চাদের সাথে থাকা।’
কথা সত্যি, আমিও তাই মনে করি।
‘বড়ি।’
লাফ দিয়ে উঠে বসলাম, ‘কেউ কি পিলের কথা বলল?’
‘রনি। ঘুমের মাঝে কথা বলছে।’
চেয়ার ছেড়ে রনির কাছে গেলাম। চোখ বন্ধ হয়ে আছে, ধীরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ছেলেটা।
‘ওকে জাগাবেন না।’ মিসেস র্যানডাল অনুরোধ করলেন।
‘আমি চাই না।’ রনির পাশে হাটু গেড়ে বসে রইলাম, কিন্তু আর কিছু বলল না ছেলেটা।
নম্রস্বরে বললাম, ‘পিলের কথা বলছিলে, রনি।’
কিন্তু রনি ঘুমিয়েই রইল।
‘রনি,’ ফিসফিস করে বললাম, ‘ঘুম থেকে উঠে আমাকে জানাবে যে অবশিষ্ট বড়ি কোথায় রেখেছ, বুঝতে পেরেছ? ঘুম থেকে উঠে আমাকে জানাবে অবশিষ্ট বড়ি কোথায় রেখেছ। ঘুম থেকে উঠে আমাকে জানাবে অবশিষ্ট বড়ি-,’
‘এসব কি হচ্ছে?’ জানতে চাইল মিসেস র্যানডাল।
‘আমি পোষ্ট-হিপনোটিক সাজেশন দিচ্ছি।’ রনির ঘুমন্ত মাথাটার আরও কাছে নিয়ে এলাম আমার মুখ, ‘ঘুম থেকে উঠে-’
‘থামুন বলছি।’ আদেশ দিলেন যেন মিসেস র্যানডাল, ‘আমি আপনাকে রনি ছোট্ট মনটাকে নিয়ে খেলতে দিব না!’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম, এমনিতেও খুব একটা কাজ হবার কথা না।
প্রায় আধা ঘন্টা পর বাচ্চারা নড়তে শুরু করল।
‘বাচ্চারা,’ বললাম আমি, ‘অনেক হয়েছে।’
‘আগে ওদেরকে কেক আর দুধ খেতে দিন।’ মিসেস র্যানডাল বললেন, ‘আপনি খাবেন নাকি, লেফটেন্যান্ট?’
দুধের ক্ষেতা পুড়ি!
অনেক কষ্ট করে নিজেকে ওদের খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আটকে রাখলাম। এখনো দুইটা বড়ি খুঁজে পাইনি আমরা। এখানেই কোথাও আছে। বাগান খুঁজে দেখা হয়েছে, বাড়ি খুঁজে দেখা হয়েছে। বাচ্চারাও বাদ পরেনি। যদি ভাবতাম লাভ হবে, তাহলে নিজেকেও খুঁজে দেখতাম...
ভয়ংকর একটা চিন্তা মাথায় খেলে গেল।
মিসেস র্যানডালকেও ভীত বলে মনে হল, ‘আপনি ঠিক আছেন তো লেফটেন্যান্ট?’
নিশ্চয় ঘামছিলাম খুব। ক্ষুদে বদমাশদের এতবড় সাহস, এত দুরপরিকল্পনা, এত বড় শয়তানী প্ল্যান নিশ্চয় হবে না।
কিন্তু না, সাহসের কোন কমতি নেই এদের!
আরেকটা বড়ি খুঁজে পেলাম।
আমার ট্রাউজারের পকেটে ছিল!
নিজেকে সামলে নিলাম আমি, আর মাত্র একটা বড়ি খুঁজে পেলেই হল।
হাসলাম আমি, অন্যভাবে এগোতে চাচ্ছি, ‘বাচ্চারা, আমি জানি শেষ বড়িটা কোথায়।’
ওদের চোখে সন্দেহ খেলা করে গেল।
‘আসলেই জানি,’ বললাম আমি, ‘বাগানে আছে ওটা।’
আমাকে বোকা বানাতে পেরেছে ভেবে হাসিতে ফেটে পড়ল রনি , ‘হয়নি। ওটা বাড়ির ভেতরেই আছে।’
গারট্রুড অগ্নি দৃষ্টিতে চাইল ওর দিকে।
অবশেষে বোকা বানাতে পেরেছি বিচ্ছুটাকে। ‘বলতে ভুল হয়ে গিয়েছিল। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে বড়িটা বাড়ির ভেতরেই আছে।’ মনে মনে দুই ভাগে ভাগ করে নিলাম বাড়িটাকে, ‘এই তলাতেই আছে।’
কিন্তু বার বার কি আর ঘুঘু ফাঁদে পা দেয়! নিশ্চুপ রইল দুজন।
মিসেস র্যানডাল হাসল, ‘দেখেছেন, ওদের কত বুদ্ধি?’ মাতৃøেহ যেন বেয়ে পড়ছে তার কণ্ঠ দিয়ে।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনি আসলে কার দলে?’
‘অবশ্যই আইনের দলে,’ দ্রুত বলল সে,‘কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রশংসা করতে দোষ কি?’
যাইহোক, অন্তত এই টুকু তো জানা গেল যে জিনিসটা বাড়ির ভেতরে আছে! সবাইকে ভেতরে ডেকে এনে দরকার হলে পুরো বাড়িটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলব।
আমার মনের কথা যেন পড়ে ফেলেছে গারট্রুড, ‘খুঁজে পাবে না।’
আমারও কেন জানি সেকথাই মনে হচ্ছিল।
‘এসো কুচকাওয়াজ করি।’ হঠাৎ বলে উঠল রনি।
অবাক হয়ে মিসেস র্যানডালের দিকে তাকালাম।
‘আমি মাঝে মাঝে পিয়ানো বাজাই,’ ব্যাখ্যা দেয়ার সুরে বলল সে, ‘বাচ্চারা সেই তালে তালে কুচকাওয়াজ করে।’
নিজেকে অনেক কষ্টে শান্ত করে বললাম, ‘আমিও বাচ্চাদের সাথে যোগ দেব।’
বাচ্চারা আবারো চোখে সন্দেহ নিয়ে আমার দিকে তাকাল, ওদেরকেই বা দোষ দেই কিভাবে!
আসলে সত্যি কথা বলতে কি, ওদেরকে আরেকটা ট্যাক্টিক এ্যাগ্রিমেন্টে জড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একই ফাঁদে যে ওরা দুইবার পা দেবে না, তা স্পষ্ট।
‘আমার কুচকাওয়াজ করতে খুব ভাল লাগে।’ বাচ্চাদেরকে একটা দেঁতো হাসি উপহার দিলাম।
‘এসো তাহলে।’ গারট্রুড আমন্ত্রণ জানালো, ‘তবে আগে দরজা বন্ধ করে, নিচে কার্পেট দিয়ে নিতে হবে। এ্যাগনেস আন্টি আওয়াজ সহ্য করতে পারেন না।’
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মিসেস র্যানডাল পিয়ানোর সামনে গিয়ে বসলেন। বাচ্চাদের সাথে সাথে আমিও কুচকাওয়াজ করলাম কিছুক্ষণ। নিজেকে এরচেয়ে বোকা আর কখনও মনে হয়নি।
দরজাগুলো ঝড়ের গতিতে ভেতরে প্রবেশ করল সার্জেন্ট ডেভিস। আমাকে কুচকাওয়াজরত দেখে হাঁ হয়ে গেল ওর মুখ।
‘কি?’ জানতে চাইলাম।
‘চিমনি...চিমনি কিছু পাওয়া যায়নি।’
‘যাবার কথাও না। শেষ বড়িটা ঘরের ভেতরেই আছে।’
‘ঘরের ভেতরে! আপনিই না বললেন চিমনীতে...’
রাগ আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না, এমনিতেই দুশ্চিন্তায় অবস্থা খারাপ। চিৎকার করে বললাম, ‘বেরিয়ে যাও, গাধা কোথাকার। বাইরে গিয়ে খোঁজ।’
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে গেল সে।
একটু বিরতি দিয়ে আবার শুরু জঘন্য কুচকাওয়াজ।
‘অনেক হয়েছে বাচ্চারা।’ মিস র্যানডাল বেশ কিছুক্ষণ পর বলল, ‘লেফটেন্যান্টকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে।’
ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিতে দিতে বসে পড়লাম, আসলেই ক্লান্ত আমি। মগজটাকে খাটানো দরকার, এখনো একটা বড়ি বাকি আছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে কানে এলো এক রক্ত হিম করা চীৎকার।
মিসেস আঁতকে উঠে মুখে হাত দিল, ‘এ্যাগনেস খালার গলা মনে হল। তাঁর রুম থেকেই আসছে মনে হয়। সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্রথমটাই তার ঘর।’
দরজা খুলে দৌড়ে উপরতলায় উঠলাম।
গিয়ে দেখি, কার্পেটের উপর পরে আছেন মিস উইকার। ব্যথা আর আসন্ন মৃত্যুর আতংকে বড় বড় হয়ে আছে চোখজোড়া।
হাঁটু গেড়ে বসলাম মেঝেতে পরা দেহটার উপর, আমার করার মত কিছু নেই বুঝতে পেরে হাত বাড়ালাম ফোনের দিকে। এ্যাম্বুলেন্স ডাকলাম, কিন্তু জানি কথা শেষ হবার আগেই তিনি মারা গিয়েছেন।
ফোন রেখে তাকালাম তাঁর দিকে। মাথার পাশেই একটা চায়ের কাপ পরে আছে।
সাইড টেবিলের দিকে নজর চলে গেল আমার-একটা সিলভারের টিসেট, পিরিচে রাখা কয়েকটা সরু করে কাটা লেবু আর একটা চিনির বাটি।
মিসেস র্যানডাল আর তার বাচ্চাদুটো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
গারট্রুড ওর মায়ের দিকে তাকাল, ‘এখন আর কুচকাওয়াজ করার সময় কার্পেট দিতে হবে না, তাই না আম্মু?’
আমরা একটা বড়ি খুঁজছিলাম, কিন্তু বড়িটা যে পাউডারে পরিণত হয়ে গিয়েছে-তা বুঝতে পারিনি।
কে করেছে কাজটা?
গারট্রুড?
নাকি রনি?
ছেলেটার চেহারায় একটা অদ্ভুত হাসি খেলা করছে...
নাকি ওদের মা?
চোখের দৃষ্টিটা কেন জানি অন্যরকম...
নাকি তিন জনই দায়ী?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, কোনদিন-ই আমি সত্যটা জানতে পারব না।
©somewhere in net ltd.