![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দ্য কিং অফ বিস্টস
ফিলিপ হোসে ফার্মার
রূপান্তরঃ মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
সাধারণত, জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান কাজ বাদে অন্য কিছু নিয়ে মাথাই ঘামান না। কিন্তু আজকের ঘটনাটা ভিন্ন। এমন গুরুত্বপূর্ণ একজনের ভার অন্য কারও হাতে দিতে চাচ্ছেন না। ঠিক করলেন, নিজেই ল্যাবরেটরি আর চিড়িয়াখানাটা ঘুরিয়ে দেখাবেন। বাজেটের ব্যাপার স্যাপার আছে।
‘আমাদেরকে যে বাজেট দেয়া হয়,’ ট্যুরের একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে বলেই ফেললেন, ‘সব বিলুপ্ত প্রাণীকে আবার ক্লোন করার বা রক্ষণাবেক্ষন করার জন্য যথেষ্ঠ নয়। তাই আমাদেরকে বেছে বেছে কাজ করতে হয়। যেসব সুন্দর সুন্দর প্রাণীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে, সেগুলোকে নিয়েই আমরা কাজ করি। আসলে, আমাদের নিজেদের হিংস্রতা আর বোকামীর খেসারত দেবার চেষ্টা করছি। একটা কথা আমরা প্রায়ই বলে থাকি, কোন একটা প্রজাতির সব সদস্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলে মানে স্রষ্টাকে চপেটাঘাত করা।’
তিনি একটু থামলেন। দুজনেই একসাথে তাকালনে শক্তি বলয় আর গরাদের ওপাশে। ঘোড়ার মত দেখতে অবলুপ্ত প্রাণী কোয়াগাটা আনন্দে লাফাচ্ছে। ওর কেশর বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সুর্যের সোনালী আলো। সমুদ্রের ভোঁদড়টা পানির উপরে এই মাত্র ভেসে উঠল। ওদিকে গাছের আড়াল থেকে একটা গরিলা উঁকি দিচ্ছে। গণ্ডারটাকে দেখে মনে হচ্ছে, ছোট খাট একটা ট্যাংক। গুরুত্বপূর্ণ লোকটির খুব ভাল লাগছে এতগুলো বিলুপ্ত প্রাণীকে একজায়গায় দেখে।
একদিকে কয়েকটা ডোডকে দেখতে পেয়ে ওদিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন জীববিজ্ঞানী, ‘ঐ যে দেখুন, ডোডো! দেখতে খুব একটা সুন্দর না হলেও, আচার আচরণ খুবই মজার। বড় অসহায় প্রাণী। উড়তে জানে না। যাক গে,’ ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি, ‘চলুন আপনাকে আমাদের চিড়ায়াখানার একেবারে নতুন সদস্যদেরকে দেখিয়ে আনি।’
‘চলুন।’ সায় জানালেন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিটি।
প্রধান ভবনের দিকে এগোলেন তাঁরা। বিশাল একটা ভবন। হল ঘরে সারি সারি ট্যাঙ্ক। সেগুলোই জেলী জাতীয় তরলে ভর্তি।
‘ওগুলো আফ্রিকান হাতির ভ্রুণ।’জীববিজ্ঞানী বললেন। ‘আমরা ভাবছি, বেশ বড় বড় একটা দল বানিয়ে নতুন সরকারী রিজার্ভেশনে ছেড়ে দিব।’
‘আপনার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।’ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি বললেন, ‘আপনি পশু-পাখিকে খুব ভালবাসেন, তাই না?’
‘আমি জীবনকে ভালবাসি।’
‘আচ্ছা। একটা জিনিস জানতে চাচ্ছিলাম।’ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি প্রশ্ন করলেন, ‘ক্লোন করার জন্য দরকারী তথ্য কোথায় পান?’
‘বেশিরভাগই প্রাচীন জাদুঘরে রাখা কংকাল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু তথ্য প্রাচীন বই থেকেও পেয়েছি। মানে যেগুলোর পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলো থেকে আর কি। এই যে ডিমটাকেই দেখুন না। বোয়া কন্সট্রিকটরের বাচ্চা বড় হচ্ছে এখানে। আর ঐ যে ওখানে দেখুন। ওখানে আমরা বাঘের বাচ্চা বড় করছি।’
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি একেবারে শেষ ট্যাংকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ‘এটা কোন প্রাণী? মাত্র একটা দেখতে পাচ্ছি।’
‘আহ, আর বলবেন না!’ দুঃখে ভরে গেল জীববিজ্ঞানীর গলা। ‘একটাই পেয়েছি। আর পাই নি। আজীবন একা একাই থাকতে হবে। তবে, আশা করি আমার ভালবাসা দিয়ে ওর সঙ্গীর অভাব ভুলিয়ে দিতে পারব।’
‘কেন? একটাই কেন? এই প্রাণীটাকি এতই ভয়ানক? এমনকি হাতি, বাঘ বা ভালুকের চেয়েও বেশি?’
‘এই প্রাণীটার জন্য আমাকে আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয়েছে।’ জীববিজ্ঞানী বললেন। গলা কাঁপছে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি ভয়ে এক পা পিছিয়ে এলেন, ‘তাহলে তো... কিন্তু এত বড় দুঃসাহস আপনার...’
জীববিজ্ঞানী মাথা নাড়লেন। ‘ঠিকই ধরেছেন। এটা মানুষ।’
©somewhere in net ltd.