নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফুদালের ব্লগ

ফুদাল ফিদাল

আমি সাধারণ একজন মানুষ।

ফুদাল ফিদাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্লিন সুইপ ইগনাসিয়াস

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৪

ক্লিন সুইপ ইগনাসিয়াস
জেফরি আর্চার
রুপান্তর ঃ মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
  সতের বছরের মধ্যে, নাইজেরিয়ার সতের তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে যখন ইগনাসিয়াস আগারবি মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন কেউই খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখাল না। অর্থমন্ত্রীদের আশা-যাওয়া দেখতে দেখতে ব্যাপারটা সবার কাছে ডাল-ভাত হয়ে গেছে।
  অর্থমন্ত্রী হিসেবে ইগনাসিয়াসের প্রথম পার্লামেন্টারি বক্তব্যে, তিনি তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা ব্যাক্ত করলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন দেশ থেকে দুর্ণীতি আর অরাজকতা ঝেটিয়ে দূর করবেন। বললেন, সরকারি কর্মকর্তার প্রত্যেকের উপরই তাঁর নজর থাকবে, একটু বেচাল দেখলেই তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিবেন। তাঁর প্রথম বক্তব্যের ইতি টানলেন এভাবে, “আমি নাজেরিয়ার ইজিয়ান আস্তাবল পরিষ্কার করতে চাই (অজিয়ান আস্তাবল গ্রীক পুরানের এক বিশাল আস্তাবল, যেখানে এত ঘোড়া থাকত যে একদিক দিয়ে পরিষ্কার করা শুরু করলে অন্যদিকে আবার ময়লা জমে যেত - অনুবাদক।)” মন্ত্রী খুব দৃঢ়তার সাথে কথাগুলো বললেও, জনসাধারণের যে তাঁর উপর কোন বিশ্বাস ছিল না, তা স্পষ্ট। এমনকি নাইজেরিয়ার সবচেয়ে চালু পত্রিকা দ্য ল্যাগোস ডেইলি তে তাঁর বক্তব্যের কোন উল্লেখই হল না। হয়ত, এডিটর আগের ষোলজনের বক্তব্য পুরোপুরিভাবে কাভার করায়, তার পাঠকদের সতেরতম জনের বক্তব্য পড়ার হাত থেকে রেহাই দিতে চেয়েছিলেন। কেননা, তিনি জানেন, তার পাঠকেরা একই কথা আগেও ষোলবার শুনেছে।
  ইগনাসিয়াস এসব আমলেই নিলেন না। তিনি যেন পণ করেছেন, কাজের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি অনাস্থার জবাব দিবেন। দায়িত্ব পাবার কিছুদিনের মাঝেই তিনি তাঁর প্রথম ভেলকি দেখালেন। এক ছোট সরকারি কর্মকর্তা গ্রেফতার হল - শস্য কেনা বেচার কাগজ জালের দায়ে। ইগনাসিয়াসের ঝাড়ুর দ্বিতীয় আঘাত পেলেন এক লেবানিজ ব্যবসায়ী। তাকে কোন ধরনের বিচার ছাড়াই, আমদানী রপ্তানীর নিয়ম ভংগের দায়ে দেশ থেকে বেড় করে দেয়া হল। তবে, এরপর যা ঘটল তা আসলেই অভাবনীয়, ইগনাসিয়াস নিজেও এর জন্য গর্বিত। ঘুষ খাবার দায়ে ইন্সপেক্টর জেনারেলকে গ্রেফতার করে বিচারের জন্য পাঠানো হল। ল্যাগোসের লোকদের এতদিনের ধারণা ছিল, মানুষ ঘুষ খাবার জন্যই এই পদে যায়, তাই ইগনাসিয়াসের এই কাজ তাঁকে অসম্ভব জনপ্রিয় করে তুলল।
  চার মাস ধরে বিচার চলার পর যখন ইন্সপেক্টর জেনারেলকে আঠার মাসের জন্য জেলের সাজা দেয়া হল, তখন দ্য ডেইলি ল্যাগোসের প্রথম পাতায় দেখা গেল হাস্যজ্জোল ইগনাসিয়াসকে। তাঁকে আদর করে লোকেরা “ঝাডুদার ইগনাসিয়াস” বলে ডাকা শুরু করল। মিঃ ক্লিন হিসেবে ইগনাসিয়াসের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলল, কারণ তাঁর নিন্দুকেরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে অপরাধে অভিযুক্ত করে অপবাদও রটাতে পারল না। লোকেরা বলা শুরু করল, ঝাড়ুদার ইগনাসিয়াসের হাত থেকে জেনারেল ওটবিও, যিনি তৎকালীন সরকার প্রধান ছিলেন, রক্ষা পাবেন না।
  ইগনাসিয়াস এখন নিজেই একশ মিলিয়ন ডলারের বেশি দামী চুক্তিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করলেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া এত দামী কোন চুক্তিই অনুমোদন পেত না। এখানেও ইগনাসিয়াসের সততার প্রমাণ দেখা গেল, যেহেতু তাঁর নিন্দুকেরা কোনভাবেই তাঁর নামে কোন স্ক্যান্ডালের খোঁজ দিতে ব্যর্থ হল।
  ইগনাসিয়াস যখন সাফল্যের সাথে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম বর্ষ শেষ করে, দ্বিতীয় বর্ষে পা দিলেন, তাঁর নিন্দুকেরাও মানতে বাধ্য হল যে, ইগনাসিয়াস কাজ করে দেখিয়েছেন। এই সময়ই রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল ওটবি ইগনাসিয়াসকে একটা অনির্ধারিত মিটিং এর জন্য ডাকলেন ।
  জেনারেল ওটবি মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করার জন্য ডোডান ব্যারাককে বেছে নিয়েছিলেন। মন্ত্রী মহোদয় এসে পৌছাতেই জেনারেল তাঁকে সাদরে ভিতরে নিয়ে জেনারেলের স্টাডিতে বসালেন। বাইরের প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ইগনাসিয়াস, আপনার করা শেষ বাজেট রিপোর্টটা আমি সেদিনই পড়ে শেষ করেছি।কিন্তু এই যে এক্সচেকার (ট্যাক্স ও অন্যান্য অর্থ আদায়কারী সরকারী প্রতিষ্ঠান) এভাবে কোটি কোটি টাকা হারাচ্ছে, তা ত খুবই দুশ্চিন্তার ব্যাপার। আপনি বলছেন এই টাকাটা মধ্যস্ততাকারী পক্ষে দিয়ে বিদেশী সংস্থাগুলো মেরে দিচ্ছে। তা কারা এই মধ্যস্ততাকারী, সে বিষয়ে আপনার কোন ধারণা আছে?”
  ইগনাসিয়াস সোজা হয়ে বসলেন, প্রথম থেকেই তিনি একদৃষ্টিতে রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে তাকিয়ে আছেন। বললেন, “আমার সন্দেহ হয় যে, অধিকাংশ অর্থই প্রাইভেট সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা হয়। কিন্তু আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই বলে আমি অসহায়।”
  “খালি বলুন আপনার কি দরকার? যেকোন ক্ষমতা আপনার দরকার, আমি আপনাকে দিব। যেকোন কিছু। খালি চেয়েই দেখুন। ও আর, বোদহয় আমার ক্যাবিনেট মেম্বারদের দিয়ে শুরু করাটাই ভাল হবে। এখনকার মেম্বারদের ত অবশ্যই, আগের মেম্বারদেরকেও পরীক্ষা করে দেখবেন। পদমর্যাদা বা র‍্যাংক নিয়ে চিন্তা করবেন না, সেসব আমি সামলাব।”
  “আসলে এমন একটা দুরূহ কাজ সফলভাবে করতে গেলে কিছু জিনিস লাগবে। বিশেষ করে স্যার, আপনার নিজ হাতে সই করা একটা লেটার অফ অথরিটি পেলে...... ” ইগনাসিয়াস বললেন।
  “পাবেন। কাল সকাল আটটার মধ্যেই আপনার টেবিলে পাবেন।”, রাষ্ট্রপ্রধানের মন্তব্য।
  “সেই সাথে আপনার বিশেষ দূত হিসেবে পদ পাওয়া গেলে ভাল হত। কেননা, তাহলে বিদেশে খোঁজ নিতে সহজ হবে।”
  “তাও পাবেন। আর কিছু?”
  “আর কিছু লাগবে না স্যার। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।”, ইগনাসিয়াস চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
  “যদিও আশা করি প্রয়োজন পড়বে না, তাও সাবধানের মার নেই। এটাও নিয়ে যান। ”, জেনারেল দরজার কাছে গিয়ে ইগনাসিয়াসকে একটা ছোট অটোম্যাটিক পিস্তল দিলেন, “এখন বোধহয় আপনাকে মৃত দেখতে যায় এমন লোকের সংখ্যা আমার সমান হয়ে গেছে।”
  ইগনাসিয়াস অপ্রস্তুতভাবে জেনারেলের হাত থেকে অস্ত্রটা নিলেন। পকেটে রেখে বিড়বিড় করে ধন্যবাদ জানালেন। উনার অপ্রস্তুত অবস্থা দেখেই হয়ত রাষ্ট্রপ্রধান আর কিছু বললেন না, ইগনাসিয়াসকে বিদায় জানালেন।
  নাইজেরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরকে অন্ধকারে রেখে ইগনাসিয়াস তাঁর নতুন পাওয়া দায়িত্ব পালনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তাঁর কাজে বাধা দেয়ার মত কোন ব্যক্তি বা কোন সরকারী কর্মচারীই আর নেই। রাতের পর রাত খেঁটে খুটে তিনি একটা তালিকা বানালেন। এখন তিনি শিকার ধরতে প্রস্তুত।
  মন্ত্রী মহোদয় বিদেশে যাবার জন্য অগাস্ট মাসটাকে বেছে নিলেন। কেননা, এই মাসে অধিকাংশ নাইজেরিয়ান ছুটিতে চলে যায়, আর তাই তাঁর অনুপস্থিতি তেমন একটা সন্দেহের উদ্রেক করবে না। তিনি তাঁর সেক্রেটারী বলে তাঁর নিজের, তাঁর স্ত্রীর আর তা দুই সন্তানের জন্য অরল্যান্ডোর (যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটা শহর - অনুবাদক) জন্য ফ্লাইট বুক করালেন। নির্দেশ দিলেন টাকা যেন অবশ্যই তাঁর নিজস্ব একাউন্ট থেকে পরিশোধ করা হয়।
  ফ্লোরিডায় পৌছে তিনি প্রথম যে কাজটি করলেন তা হল ম্যারিয়ট হোটেলে চেক-ইন করা। এরপর তাঁর স্ত্রীকে জানালেন যে, তিনি বিশেষ কাজে কয়েকদিন নিউইয়র্কে কাটাবেন। তবে ফিরে আসবেন ছুটি শেষ হবার আগেই। পরেরদিন সকালে ইগনাসিয়াস তাঁর পরিবারকে ওয়াল্ট ডিজনীর স্বপ্নপুরীতে রেখে নিউইয়র্কের ফ্লাইটে উঠলেন। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে অল্প দুরুত্বে এলেন লা গার্ডিয়া (এয়ারপোর্ট) থেকে কেনেডি(আরেকটা এয়ারপোর্ট) - তে। এখানে এসে কাপড় চেঞ্জ করে রিটার্ণ টিকেট কেটে চড়ে বসলেন সুইসএয়ারের একটা ফ্লাইটে, গন্তব্য জেনেভা।
  জেনেভায় পৌছাবার পর ইগনাসিয়াস দেখে শুনে একটা অখ্যাত হোটেলে উঠলেন। এরপর একঘুমে আট ঘন্টা পার করে দিলেন। পরের দিন সকালে নাস্তা করার সময় তিনি আবার তাঁর করা ব্যাংকের লিষ্টটাতে নজর বুলালেন। এই নাম গুলো তিনি নাইজেরিয়াতে রিসার্চ করার সময়ই পেয়েছেন। তিনি ঠিক করলেন, প্রথমে যাবেন গার্বার এত সিয়ে - তে। ব্যাংকটা তাঁর হোটেল থেকে বেশ কাছেই। হোটেলের কনিসিনিয়ারির (হোটেল ম্যানেজার) কাছ থেকে ব্যাংকের নাম্বার নিয়ে ফোন করলেন। ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে সময় চাইতেই, চেয়ারম্যান জানালেন দুপুর বারটায় তিনি সময় দিতে পারবেন।
  বারটার কিছু আগেই ইগনাসিয়াস একটি পুরানো, অতি ব্যবহারে জীর্ণ ব্রিফকেস হাতে নিয়ে ব্যাংকে পৌছে গেলেন। নাইজেরিয়ানরা সময়ের প্রতি যন্তবান না হলেও, ইগনাসিয়াস সময়ের মূল্য দিতে ভালভাবেই যানেন। ব্যাংকে তাঁকে স্বাগত জানালো ধূসর স্যুট, সাদা শার্ট আর ধূসর সিল্কের টাই পরা এক স্মার্ট চেহেরার যুবক। যুবকটি ইগনাসিয়াসদের দিকে একটা কুর্নিশ করে নিজের পরিচয় জানাল - ম্যানেজারের ব্যক্তিগত সহকারী। আরও জানাল ইগনাসিয়াসকে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিসে নিয়ে যেতেই তাকে পাঠানো হয়েছে।
  যুবকটির পিছু পিছু ইগনাসিয়াস একটা লিফটে উঠলেন। এগার তলায় পৌছাবার আগে কেউই আগ বাড়িয়ে কোন কথা বললেন না। এগার তলায় চেয়ারম্যানের অফিসে পৌছে যুবকটি দরজায় নক করলে ভিতর থেকে আওয়াজ আসল, “আসুন।” যুবকটি ঘরে ঢুকে ঘোষণা করার মত করে বলল, “নাইজেরিয়ার অর্থমন্ত্রী এসে পড়েছেন, স্যার।”
  চেয়ারম্যান তার ডেস্কের পিছন থেকে উঠে এসে ইগনাসিয়াসকে স্বাগত জানালেন। ইগনাসিয়াস দেখলেন ইনিও যুবকটির মতই ধূসর স্যুট, শাদা সার্ট আর ধূসর টাই পড়ে আছেন।
  “শুভ সকাল, মন্ত্রী মহোদয়”, চেয়ারম্যান বললেন, “দয়া করে বসুন।” হাত ধরে তিনি ইগনাসিয়াসকে নিয়ে এসে একটা নীচু কাঁচের টেবিলের পাশে রাখা আরামদায়ক চেয়ারে বসালেন। “আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা না করেই আমাদেরকে কফি দিতে বলেছি। আশা করি কোন অসুবিধা হবে না”, ক্ষমা প্রার্থনার সুরে বললেন চেয়ারম্যান।
  ইগনাসিয়াস মাথা নাড়িয়ে বোঝালেন কোন অসুবিধা নেই। এরপর জীর্ণ ব্রিফকেসটাকে আর চেয়ারের পাশে আস্তে করে রেখে দিয়ে কাঁচের দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকালেন। টুকরো টাকরা কথা চলতে লাগল। এরিমধ্যে এক মেয়ে এসে তাঁদের তিনজনকে কফি সার্ভ করল। মেয়েটি বেড়িয়ে যেতেই ইগনাসিয়াস কাজের কথায় চলে আসলেন, “আমার দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিশেষ অনুরোধ নিয়ে আজ আমি এসেছি।”
  চেয়ারম্যান বা তার যুবক সহকারীর কাউকেই খুব একটা বিস্মিত মনে হল না, যেন এমন অনুরোধ তারা রোজই পেয়ে থাকেন। ইগনাসিয়াস বলে চললেন, “উনি দয়া করে আমাকে একটা গুরুত্বপুর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। কাজটা হল আমার দেশের কোন কোন নাগরিকের আপনার ব্যাংকে নাম্বারড এ্যকাউন্ট আছে, তা খুজে বের করা।”
  এতটূকু শুনেই চেয়ারম্যান বলা শুরু করলেন, “কিন্তু আমার ত সেই তথ্য আপনাকে দেবার অনুমতি......”
  “দয়া করে আগে আমার কথা শেষ করতে দিন”, মন্ত্রী মহোদয় এক হাত তুলে বললেন।, “আমাকে আমার দেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।” এরপর ইগনাসিয়াস তাঁর কোটের ভিতরের পকেট থেকে একটা খাম বের করে চেয়ারম্যানের হাতে দিলেন। চেয়ারম্যান খাম থেকে জেনারেল ওটবির সই করা অনুমতিপত্রটি বের করে মনোযোগের সাথে পড়লেন।
  পড়া শেষ হলে চেয়ারম্যান গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললনে, “আমি দুঃখিত। এই কাগজ আমার দেশে কোন মুল্যই রাখে না, ইয়োর এক্সিলেন্সি।” তিনি কাগজটিকে খামে ঢুকিয়ে ইগনাসিয়াসকে ফেরত দিলেন। বললেন, “আমি অবশ্যই আপনার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করি। আমার মনে কোন সন্দেহই নেই যে, আপনার মন্ত্রীত্ত্ব ও দূতালি, দুই পদেই আপনার রাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু ব্যাংকের গোপনীয়তা রক্ষার যে আইন আছে, সেই আইনবলে আপনার এমন স্পর্শকাতর তথ্য জানতে চাবার কোন অধিকার নেই। আমাদের শ্রদ্ধেয় ক্ল্যায়েন্টদের অনুমতি ছাড়া আমরা কিছুতেই তাঁদের নাম প্রকাশ করতে পারব না। আমি আসলেই দুঃখিত, কিন্তু এমনটাই ব্যাংকের নিয়ম।” চেয়ারম্যান উঠে দাঁড়ালেন, যেন বুঝাতে চাচ্ছেন এ ব্যাপারে তিনি আর কোন মন্তব্যই করবেন না। কিন্তু তিনি ত আর ঝাড়ুদার ইগনাসিয়াসকে চিনেন না।
  “আমার রাষ্ট্রপ্রধান”, ইগনাসিয়াস নরমস্বরে বললনে, “আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাতে আমি আমার রাষ্ট্রের পক্ষে আপনার ব্যাংকের সাথে চুক্তি করতে পারি, যেন নাইজেরিয়া আর সুইজারল্যান্ডের ভবিষ্যৎ সমস্ত লেনদেন আপনার ব্যাংকের মাধ্যমেই হয়।”
  “আমাদের উপর আপনার ভরসায় আমরা খুশি, মন্ত্রি মহোদয়”, চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন। “কিন্তু আশা করি আপনি বুঝবেন যে, এতে করেও আমরা আমাদের ক্ল্যায়েন্টদের গোপনীয়তা কিছুতেই ভঙ্গ করতে পারব না।”
  ইগনাসিয়াস কিন্তু দাঁড়ান নি। এবার শক্ত কন্ঠে বললেন, “তাহলে আমিও আশা করি যে, আপনি বুঝবেন মিঃ গার্বার, যদি আমাই আমাদের জেনেভার অ্যাম্বাসেডরকে এই নির্দেশ দেই যে সে যেন সুইস ফরেন অফিসে অফিসিয়ালে আপনার ব্যাংকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ জানায়”। কথাটার গুরুত্ব বোঝাতে কয়েক মুহুর্ত চুপ করে আবার বললেন, “অবশ্য যদি আপনি আমি যে সব তথ্য চাই, সেসব আমাকে জানাতে সম্মত হন, তাহলে এত কিছুর কোন প্রয়োজনই পড়বে না। আপনার ব্যাংকও বিব্রতকর কোন পরিস্থিতে পরার হাত থেকে রক্ষা পাবে।”
  “আপনি চাইলে অবশ্যই এমন অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, স্যার। আর আমার মনে হয় আমাদের অফিস থেকেও আপনার অ্যাম্বাসেডরকে ভদ্রভাবেই জানানো হবে যে, কোন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই সুইস আইন অনুসারে এমন তথ্য জানার দাবি জানাতে পারে না।”
  “এমন হলে আমি আমার নিজের মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিব যেন, এসব তথ্য না জানানো পর্যন্ত নাইজেরিয়ার সাথে যে কোন সুইস নাগরিকের ব্যবসা স্থগিত রাখা হয়।”
  “এমনটা করা না করা আপনার ইচ্ছা, স্যার।” ম্যানেজার অবিচল।
  “ও সেই সাথে বর্তমানে চলছে এমন সব চুক্তিও পুন পর্যালোচনার আওতায় আনা হবে, আর সেই সাথে আমি নিজে দেখবে যেন আপনার দেশবাসী কোন ক্ষতিপূরণ না পায়।”
  “এমন কাজ করাটা কি আপনার ও আপনার দেশের জন্য বিব্রতকর হবে না, মন্ত্রী মহোদয়?”
  “বিশ্বাস করুন ম্যানেজার সাহেব, এমন সিদ্ধান্ত নিতে আমি একচুলও পিছপা হব না।” ইগনাসিয়াস দৃঢ় কন্ঠে বললেন।
  “তাহলেও” ম্যানেজার জবাব দিলেন, “ক্ল্যায়েন্টদের গোপনীয়তা রক্ষার করতে আমরা একচুল ও ছাড় দিতে পারবনা,”
  “সেক্ষেত্রে ম্যানেজার সাহেব, আমি আজকেই আমাদের জেনেভার অ্যাম্বাসেডরকে আমাদের জেনেভার দূতাবাস বন্ধ করার আদেশ দিতে বাধ্য হব। সেই সাথে ল্যাগোসে আপনাদের রাষ্ট্রদুত কে “রাটা (অনাহুত)” হিসেবে ঘোষণা করা হবে।”
  প্রথমবারের মত ম্যানেজারের ভ্রু কুঁচকে গেল।
  “আমি আরও একটা কাজ করব।” ইগনাসিয়াস সুযোগ বুঝে চাপ বাড়ালেন, “সেটা হল লন্ডনে ফিরে আমি একটা প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করব। আমি নিশ্চিত করব যেন সারা দুনিয়ার মানুষ জানে যে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান আপনার ব্যাংকের কর্মকান্ডে দারুণ অসন্তুষ্ট। এমনটা হলে আমার মনে হয়, আপনার অনেক সম্মানিত ক্ল্যায়েন্টই তাদের এক্যাউন্ট বন্ধ করে অন্য কোণ ব্যাংকে এ্যকাউন্ট খুলবে।”
  মন্ত্রী মহোদয় ম্যানেজারে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন, কিন্তু ম্যানেজার নিশ্চুপ।
  “তাহলে আপনি আমার জন্য আর কোন পথই বাকি রাখলেন না।” ইগনাসিয়াস চেয়ার থেকে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললনে।
  চেয়ারম্যান ধরে নিলেন ইগনাসিয়াস ফিরে যাচ্ছেন, তাই হাত বাড়িয়ে দিলেন করমর্দনের জন্য। কিন্তু ইগনাসিয়াসকে চিনতে তার এখনও অনেক দেরি। ভয়কম্পিত চোখে তিনি দেখলেন ইগনাসিয়াস নিজের পকেটে হাত ধুকিয়ে একটা ছোট পিস্তল বের করে আনছেন। ম্যানেজার আর তার সহকারী দুই জনেই বরফের মত জমে গেলেন, কেননা তারা কোন কিছু করার আগেই ইগনাসিয়াস এগিয়ে এসে অস্ত্রের মুখ চেয়ারম্যানের কপালে চেপে ধরেছেন।
  “ঐ নাম গুলো আমার চাই, মিঃ গার্বার। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন সেগুলো পাওয়ার জন্য আমি যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত। আপনি যদি এখনই আমাকে ঐ নাম গুলো না দেন, আমি আপনাকে খুন করতে বাধ্য হব। বুঝতে পেরেছেন?”
  ম্যানেজার আস্তে করে মাথা নাড়লেন। ফোঁটা ফোঁটা ঘাম তাঁর কপাল বেয়ে ঝরে পড়ছে। “তারপর আমি নজর দিব আপনার সহকারীর দিকে”, ইগনাসিয়াস বললেন। আরেক হাত দিয়ে দেখালেন অল্প দুরত্বে মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটির দিকে।
  “আমাকে এখনি তোমাদের ব্যাংকের সমস্ত নাইজেরিয়ান ক্ল্যায়েন্টের তথ্য এনে দাও।” যুবকটির দিকে তাকিয়ে বললেন ইগনাসিয়াস, “নাহয় তোমার চেয়ারম্যানে কপাল গুঁড়িয়ে দিব।”
  যুবকটি নির্দেশনার জন্য চেয়ারম্যানের দিকে তাকাল। চেয়ারম্যান এখন ঝড়ে পরা পাতার মত কাঁপছেন। কিন্তু পরিষ্কার কণ্ঠে তিনি বললেন, “না, পিঁয়েরে। কখনোই না।”
  “আপনি যা বলেন”, যুবকটি ফিস ফিস করে বলল।
  “আমি কিন্তু আপনাদের দুই জনকেই যথেষ্ঠ সুযোগ দিয়েছি।”, ইগনাসিয়াস হ্যামারটাকে পিছনে টেনে বললনে। ম্যানেজারের কপাল বেঁয়ে ঘাম এখন পানির মত ঝরছে। যুবকটি সহ্য করতে না পেরে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল, ভয়ার্তভাবে অপেক্ষা করছে গুলির আওয়াজের।
  “চমৎকার”, ইগনাসিয়াস চেয়ারম্যানের মাথা থেকে অস্ত্রটি সরিয়ে নিতে নিতে বললেন। ফিরে গিয়ে শান্তভাবে বসে পড়লেন আগের চেয়ারটাতে। এদিকে দুই ব্যাংকারই এখনও ভয়ে কাপছে, নিশ্চুপ। বোধহয় ভাবছে এখন আবার কি?
  মন্ত্রী মহোদয় সেই জীর্ণ, পুরাতন ব্রিফকেসটাকে তাঁর চেয়ারের পাশ থেকে তুলে কাঁচের টেবিলে রাখলেন। ব্রিফকেসের আংটা দুটি খুলতেই ডালা খুলে গেল।
  ব্যাংকার দুজন ব্রীফকেসের ভিতরের সুন্দর করে সাজানো একশ ডলারের নোট গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন। পুরো ব্রীফকেস ভর্তি একশ ডলারের নোট, এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও ফাঁকা নেই। ম্যানেজার মনে মনে হিসেব করে ফেললেন, না হলেও পাঁচ থেকে সাত মিলিয়ন ডলার আছে ওখানে।
  “আচ্ছা বলুন ত”, ইগনাসিয়াস বললেন, “আপনার ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম যেন কি?”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.