![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকাল ১০ টা বেজে ৫ মিনিট। রাজধানীর কোন এক পাঁচ তারা হোটেলে একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে এসেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ সোহরাব । মাথায় কাঁচা-পাকা চুল , চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, সাদা পাঞ্জাবী আর সাথে মুজিবকোট ভালোই মানিয়ে নিয়েছে পঞ্চাশের কাছাকাছি শরীরটায়। আধ ইঞ্চি লম্বা দাঁড়িগুলো বেশ সুনীপুণভাবে ঢেকে রেখেছে চেহারার ক্লান্তি আর বয়সের চাপ । সামনে পেছনে দুজন করে দীর্ঘদেহী গানম্যান সমেত করিডোর পেরিয়ে চলেছেন ।
রুমে ঢুকতেই আরো ক’জন প্রহরীর সেখানে আগে থেকেই সমাগম। দুজন দুদিকের জানালার পাশে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে রাইফেল, চোখে কালো চশমা । রুমের দরজার বাইরেও দুজন প্রহরী রয়েছে। একইভাবে।
প্রধানমন্ত্রী সোফায় বসে পড়লেন। ঠিক বসলেন না, শরীরটা একরকম এলিয়ে দিলেন। চশমাটা খুলে দুচোখ বন্ধ করে চুপচাপ হেলান দিয়ে রইলেন। এমন সময় দরজায় নক।
- ইয়েস, কাম ইন।
বেশকিছু ফাইল হাতে এক যুবতীর প্রবেশ। প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট। চোখে চশমা,গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো। গুড মর্নিং জানিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। চেহারায় নার্ভাসনেস। মনে হচ্ছে বড়-সড় ধকল সামলে এলো বৈকি।
চশমাটা চোখে দিয়ে উঠে বসে তাকালেন প্রধানমন্ত্রী।
- হুম, মর্নিং। রীথি, প্রধানমন্ত্রীর পিএ যদি সকাল সকাল এমন ঘাবড়ানো চেহারা নিয়ে হাজির হয় তাহলে লোকে কি বলবে শুনি ? হুম ? বাসার সবাই ভালো তো ?
- জ্বি স্যার। সবাই ভালো। মাকে আজ ওষধ খাওয়াতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো।
- হতেই পারে।
সিরামিকের কেটলি থেকে কাপে লিকার ঢেলে চিনি দিয়ে নাড়তে নাড়তে রীথিকে বসতে বললেন প্রধানমন্ত্রী। রীথি বসে পড়লো পাশের সোফায়। চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলেন রীথির দিকে প্রধানমন্ত্রী।
- সকালের কনফারেন্সের ফার্স্ট আওয়ারের স্পিচটাতো তোমার কাছেই ছিলো। কালো ফাইলে। তুমিও ছিলে না তাই আমিও পাইনি। অবশ্য, সমস্যা হয়নি খুব একটা। ওটা ছাড়াই বরঞ্চ ভালো হয়েছে আমার স্পিচ।
রীথির কোন জবাব নেই। ব্যাপারটা খেয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী।
- কি ব্যাপার ?
- না স্যার। কিছু না।
এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন রীথির দিকে ।
- বলো কি হয়েছে।
- না, মানে । আমি স্যার সত্যিই মাকে ওষধ খাওয়াতে গিয়ে দেরি করেছি।
- হ্যা, তা হতেই পারে। এতে এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে?
- আসার সময় করিম স্যার আমাকে খুব জেরা করেছেন। সার্চ অব্দি করেছেন। স্যার একটার পর একটা প্রশ্ন করেই চলেছেন, করেই চলেছেন। আমায় ধমকও দিয়েছেন। এমনিতেই ওনাকে খুব ভয় পাই।
প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা রীথির।
- করিম তোমায় জেরা করেছে ?
হাসি আর ধরে রাখতে পারলেন না । হো হো করে হেসে উঠলেন ।
কাছে থাকা একজন প্রহরীকে ডাকলেন
- মারুফ। শোনো তো।
দু’পা এগিয়ে এসে মারুফ -
- ইয়েস স্যার।
- করিমকে একটু ডাকো তো। বলো যে আমি চা খেতে ডেকেছি।
- ওকে স্যার।
ওয়্যারল্যাসে বার্তা পৌছে গেলো।
লিফট থেকে বেরিয়ে করিডোর ধরে হেটে যাচ্ছেন করিম। প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি ইনচার্জ।
ক্লিন শেভড, শার্টের ভেতর থেকে গলার পাশ দিয়ে বের হওয়া প্যাচানো কালো কর্ড সোজা ডান কানে ইয়ারপিস সহ, চোখে সোনালি ফ্রেমের কালো চশমা আর ব্ল্যাক স্যুট পড়া পাঁচ ফিট ন’ইঞ্চির শরীরটা খুব একটা স্বাস্থ্যবান বলা যায় না। কপালের বা’দিকে কাঁটা দাগ সহ প্রায় মেদ বিহীন বড্ড মায়াহীন চেহারা আর নিঃশব্দ হাটা। মুখে হাসি নেই বললেই চলে।
দরজার সামনে যেতেই দেখে দুজন প্রহরীর একজন ফোনে ব্যাস্ত। পাশে গিয়ে দরজার দিক মুখ করে দাড়িয়ে গলা খাকিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলেন করিম। ফোনে ব্যাস্ত প্রহরী ফিসফিসিয়ে ফোনের অপরপ্রান্তে নিজের অবস্থার কথা জানানোর ব্যর্থ চেষ্টার এক পর্যায়ে লাইন কেটে দিলো ।
- মর্নিং স্যার।
- দুবার বলেছো সকাল থেকে। নক দ্যা ডোর।
দরজায় নক।
- ইয়েস, কাম ইন।
দরজা খুলে করিমের প্রবেশ।
- হ্যালো স্যার।
- এসো এসো করিম।
টি-টেবিল থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে করিম। হাতের ওপর হাত রেখে সোজা দাঁড়িয়ে আছে।
- চারদিক সবাইকে এমন ভয় পাইয়ে দিলে হবে ? বেচারীর অবস্থা দেখো। এখনো ভয় কাটেনি।
এক বিন্দু নড়চড় হলো না, একটু তাকালোও না করিম।
- সরি স্যার। আই ওয়াজ ডুইং মাই ডিউটি, স্যার।
হাসলেন প্রধানমন্ত্রী। করিমকে বসতে বলে সিরামিকের কেটলি থেকে আরেকটা কাপে লিকার ঢালতে ঢালতে-
- কিন্তু, রীথি তো আমারি পিএ। হোয়াই শুড শি গো থ্রু দ্যা সার্চিং প্রসেস ?
স্যুটের পকেট থেকে আর কোমর থেকে দুটো পিস্তল আর হাতের ওয়্যারলেস সেটটা সামনে রেখে বা’দিকের সোফায় বসলো করিম।
- প্রথমত, মেডাম লেট করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি আগে থেকে ইনফর্ম করেন নি যে তার আসতে লেট হবে। নিয়ম অনুযায়ী অফিসিয়াল কেউ যদি নির্ধারীত সময়ে আসতে না পারেন তাহলে তার উচিত সিকিউরিটি ইঞ্চার্জকে ইনফর্ম করা যে কেন তার দেড়ি হচ্ছে বা হবে বা হয়েছে, কিংবা কতক্ষন লাগতে পারে। অথবা ইন দ্যা মিন টাইম যদি অন্য কোথাও যান, হোক সেটা গ্রোসারি সপ বা ডক্টর এপয়েন্টমেন্ট সেটাও ইনফর্ম করতে হবে উইথ এক্সেক্ট ইনফর্মেশন। শি গট লেট। বাট শি ডিড নট ইনফর্মড মি বিফর। সকাল ৮ টায় আসার কথা আসলেন ৯ টা ৪৫ এ। হাউ ক্যান আই বি সো সিওর দ্যাট শি ওয়াজ নট উইথ আদার হার্মফুল প্ল্যান ?
- হুম।
গভীর একটা নিশ্বাস ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী।
- তা তুমি ভুল বলো নি। কি আর করা।
রীথির দিকে তাকালেন। অবস্থা খুব একটা ভালো না। এভাবে আর কিছুক্ষণ হলে কান্না ঝরতে বাকি নেই। নিউ রিক্র্যুট।
- রীথি, ফাইলগুলো রেখে ফ্রেশ হয়ে নাও। আর, , , , তোমার ম্যাডামকে একটা ফোন করো। আর আমার আগামী পরশু কোন প্রোগ্রামটা ক্যানসেল করা যায় সেটা একটু ব্রিফ করো। আর হ্যা, আমার নেক্সট স্পিচটা দিয়ে যাও।
- জ্বী স্যার।
রীথি বেরিয়ে গেলো।
আবার চশমাটা খুলে হেলান দিয়ে বসলেন প্রধানমন্ত্রী। করিম চা শেষ করলো কেবল। ওয়্যারলেস সেটটা হাতে নিয়ে করিম-
- কন্ট্রোল রুম, কালেক্ট অল দ্যা সেলফোনস ফ্রম অল দ্যা মেম্বারস অফ দ্যা সিকিউরিটি প্যানেল।
- কপি দ্যাট।
চায়ে চুমুক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন -
- সিকুইরিটি ইস্যু ঠিক আছে তবে মাঝে মাঝে একটু বাড়াবাড়ি মনে হয় না তোমার ?
করিম চশমাটা খুলে-
- এক্সিউজ মি স্যার, অ্যালাও মি টু টক ফ্র্যাংকলি ।
- প্লিজ ।
- স্যার, ৭১ এ দেশ স্বাধীনের কিছুদিন পর থেকেই আমরা আবার স্বাধীনতা হারাই।
- কিভাবে ?
- এই যে, নিজেদের ভেতরেই হারিয়ে বসি। প্রথমে জাতির পিতাকে হারাই। কিছুদিন বাদে শাষণ চলে যায় স্বৈরাচারের হাতে। সেখান থেকে রক্ষা পেতে আবারো গণতন্ত্র ব্যবহৃত হয়। কাজ শেষ গণতন্ত্র হাওয়া। পরিবারতন্ত্রের আগমণ। আর আজ প্রায় ৩০ বছর পর পরিবারতন্ত্রকে সরিয়ে আবারো সেই গণতন্ত্র উঠে এসেছে আপনার হাত ধরে। ইউ ব্রোক আ থার্টি ইয়ার্স বেরিয়ার। এন্ড ইটস নট এন্ড হিয়ার। এত সহজে এর রেশ যাবে না স্যার। আর তাই আপনাকে বেস্ট সিকিউরিটি দেয়াই আমার কাজ। হোয়াট এভার ইট টেকস। হু এভার হ্যাভ এ প্রবলেম উইথ দ্যাট আই ডোন্ট কেয়ার স্যার। আই হ্যাভ টু সেভ ইউ সো দ্যাট ইউ ক্যান সেভ ডেমোক্রেসি ফর আওার পিপল। স্যার।
- আমার আগে যারা ছিলো ওরাও মুজিবকোট পড়তো , আমিও পড়ি। তাহলে কিভাবে আলাদা হলাম আমি ওদের চেয়ে ?
মুচকি হেঁসে প্রশ্ন করলেন করিমকে প্রধানমন্ত্রী । চেয়ে রইলেন তার দিকে, উত্তরের অপেক্ষায় হয়তো।
- স্যার, এভরিওয়ান হ্যাজ হিজ আইডল। ইউ হ্যাভ ইউর্স টু। ইউ আর ফলয়িং ইউর আইডল এন্ড হোল্ডিং হিস সাইন । ইট’স আ সাইন স্যার। অল দা টাইম ইউ লুক এট দ্যা মিরর দিস কোট উইল রিমেম্বার ইউ , হু ইউ আর, হোয়াট ইউ শুড ডু অর নট, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী অনেকক্ষণ চেয়ে রইলেন করিমের দিকে। চশমা পরিষ্কাটা চোখে দিয়ে হাসলেন একটু। শুকনো একটা হাসি। তবে আত্মতৃপ্তীর হাসি ।
করিমের ওয়্যারলেস শু শু শব্দ করে উঠলো। ওপাশ থেকে-
- কন্ট্রোল ইনচার্জ ! দেয়ার আর সেভারাল জার্নালিস্টস টু এটেন্ড দ্যা কনফারেন্স মেড আ ক্রাউড হেয়ার। ওভার।
সেটের লাল বাটন চেপে ধরে করিম-
- সেপারেট মেল এন্ড ফিমেল এন্ড সার্চ দেম ভেরি ওয়েল। ওভার।
- স্যার, বেশকিছু বিদেশি সাংবাদিকও এসেছে।
- চেক দেয়ার আই ডি, পাসপোর্ট, ভিসা, গ্যাদার সাম ইনফর্মেশন এবাউট দেম। ওভার।
সেটটা রাখতে গিয়ে রাখলো না। কি যেন মনে হলো তার। আবার লাল বাটনে চাপ-
- অল স্টেশন, অল স্টেশন। স্টে এলার্ট। কিপ আই অন পার্কিং লট। আই রিপিট, কিপ আই অন পার্কিং লট।
সোফা থেকে উঠে দাড়ালো করিম। কোমরে আর কোটের ভেতর পিস্তল গুজে নিয়ে -
- স্যার, মে আই লিভ ?
প্রধানমন্ত্রী উঠে দাড়িয়ে হাত বাড়ালেন করিমের দিকে । হ্যান্ডসেক করতে করতে-
- আই এম ভেরি মাচ গ্রেটফুল টু ইউ এন্ড ইউর টিম , অফিসার।
- মাই প্লেশার, স্যার।
রুম থেকে বেরিয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকা প্রহরির দিকে তাকালেন করিম । বোঝাই যাচ্ছে ফোন না থাকায় বেচারার মন দিল ভালো না।
করিডোর পেরিয়ে লিফটের দিকে যেতে যেতে আবারো ওয়্যারলেস সেটের লাল বাটন চেপে ধরে করিম-
- Report me from the conference hall. Over.
- Reporting sir. Over.
- Remove the program schedule that is being hanged right outside the conference hall and do not inform anybody about the attending and speeching time of the prime minister.
- copy that
( কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভাল।
ভাবছি লিখাটা চালিয়ে যাব। রিলেটিভ একখানা নাম চাই।
কনসেপ্ট মাথায় আসতেই লিখে ফেললাম। )
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৩
নীল গাংচিল বলেছেন: আছি বেশ ভালো।
নাম নির্বাচন নিয়ে বড্ড সমস্যায় আছি মশাই।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৫১
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: নান্দনিক উপস্থাপন। বেশ ভালো লেগেছে। লেখাটি চলুক দাদা...
হ্যাঁ, ভালো আছি। আপনি?