নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু নাই

নীল গাংচিল

ভালো হতে পয়সা লাগে না

নীল গাংচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাদাছক ( ২ )

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৫৫

বাসভবনে থাকাকালীন বেশিরভাগ সময় লাইব্রেরীতেই থাকেন আহমেদ সোহরাব। লাইব্রেরী কাম পার্সোনাল অফিস। শত শত বই শেল্ভের তাকে তাকে সাজানো। বড্ড পরিপাটি পরিবেশ।
সন্ধ্যে ৭টা । রীথির ছুটি হয় নি এখনো। একগাদা বইপত্র আর ফাইল ঘাটাঘাটি করছেন দুজন। সামনে চায়ের কাপ। কামড়ায় কেবল বই বা ফাইলের পাতা ওল্টানোর শব্দ।
“ রীথি ”
“স্যার”
“ক্যান ইউ প্লিজ ব্রিফ মি এবাউট দ্যা ক্যাবিনেট মিটিং” ?
“উইদিন ওয়ান উইক স্যার”।
“ওয়ান উইক”।
চশমাটা খুলে টেবিলের ওপর রাখলেন সোহরাব। চেয়ার থেকে উঠে বেশকিছু ফাইল হাতে নিয়ে শেল্ভে গুছিয়ে রাখছিলেন।
“ তুমি তাহলে বাসার দিকে রওনা দাও। আজ আর না। বাকি কাজ
কাল এসে করো ”
“ ওকে স্যার ”
“ আর শিডিউলে কাল দুপুরের পরের সব প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে দাও । আই নিড আ টি টাইম উইথ ফিন্যান্স মিনিষ্টার ”

লাইব্রেরীর কর্ণারে স্লাইডিং ডোর দেয়া বারান্দা, স্মোকিং কর্ণার। ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নিয়ে সেদিকেই হাটা দিলেন সোহরাব। বই-পত্র ফাইল গুছিয়ে নিচ্ছে রীথি। বারান্দার স্লাইডিং ডোর ঠেলে রীথিকে বললেন
“ ডু মি আ ফেভার রীথি ”
“ বলুন স্যার ”
“ এনসিউর মি দ্যাট মিস্টার প্রেসিডেন্ট ইজ ইন হোম অর নট ”
“ ওকে স্যার ”

স্লাইডিং ডোর অফ করে সিগারেট ধরালেন সোহরাব । প্রথমেই একটা লম্বা টান। খানিকক্ষন পর একগাদা ধোঁয়া ছেড়ে এবারে হালকা টান। ইজি চেয়ারটায় বসে চুপচাপ ধুমপানে মনোযোগ দিলেন তিনি । বারান্দায় কোন বাতি নেই। বাসভবনের সীমানাপ্রাচীর আর বাগানের ভেতরকার ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় বারান্দায় মৃদু আলো হয়।

বারান্দা থেকে বাসভবনের সামনের লন আর উত্তরের বাগানের বেশ কিছুটা দেখা যায়। বাগানের সর্বত্র ছোট বড় নানান সাইজের, নানান জাতের বহু দেশী-বিদেশী গাছগাছালি। মূল ফটক থেকে বাসভবনের দরজার ফোয়ারা অব্দি রাস্তার দু’পাশে সারি সারি ক্রিসমাস ট্রি । মাঝে মধ্যে কিছু পাইন ট্রিও রয়েছে। ফোয়ারার চারিদিক পাতাবাহারের বেষ্টনি দেয়া। সন্ধের পর ফোয়ারায় বাতি জ্বলে।

চারদিক সুনসান নিরবতা । বাগানের গাছগাছালি ঘিরে যথেষ্ট জোনাকী আর ঝিঁঝিঁ পোকার আনাগোনা । ভেতরের এঁকেবেঁকে যাওয়া সরু রাস্তা দিয়ে প্রহরীদের বেশকজন রাইফেল হাতে টহলরত। করিম মূল ফটকের সিকিউরিটি বক্সে বসে আগামী কয়েকদিনের সিকিউরিটি শিডিউল রেডি করছে।

ওয়্যারলেসে শুঁ শুঁ শব্দ করে উঠলো। ওপাশ থেকে –
“Control . Check out the smoking corner. Over.”
“Copy that”.

বক্স থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীর বারান্দার দিকে তাকালো করিম। আবছা আলোয় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। করিম চারদিক আরেকবার দেখে নিলো। ওয়্যারলেস সেটের লাল বাটন চেপে ধরে-
“Stay alert. Take a walk outside of the residence, now!”
“Copy that”.

দু’জন করে মোট চারজন প্রহরী বাসভবনের দুদিকে সীমানা প্রাচীর ঘেষে টহলে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। হাতে রাইফেল।
বারান্দার স্লাইডিং ডোর ঠেলে রীথি বললো “ স্যার, মিষ্টার প্রেসিডেন্ট ইজ ইন হোম নাউ। শুড আই কনফার্ম এন এপয়েনমেন্ট ?”
এশট্রেতে সিগারেটের ফিল্টার চেপে দিয়ে –
“ নাহ, তুমি যাও। আমি একটু ঘুরে আসছি ওইদিক থেকে। আন-অফিশিয়ালি ”
“ ওকে স্যার। গুড নাইট ”

রীথি চলে গেলো। লাইব্রেরি থেকেও বেরিয়ে এলেন সোহরাব। ড্রয়িং রুমের সাথেই লাইব্রেরী। দেহরক্ষীদের দুজন ড্রয়িং রুমেই ছিলো। একজনকে ডেকে বললেন ওয়্যারলেসে করিমকে ইনফর্ম করতে বললেন।

রাষ্ট্রপতি ডঃ অনুপ চক্রবর্তী। বয়স বাহাত্তর। অভিজ্ঞতায় চুল পেকেছে বহু আগে। চোখে বাদামী ফ্রেমের প্লাস লেন্সের চশমা পড়ে বই পড়ছিলেন নিজের লাইব্রেরিতেই। বড্ড সাদা মনের এই মানুষ দেশের স্বনামধন্য একজন শিক্ষক । জ্ঞানার্জনে পাড়ি দিয়েছেন বহুদেশ। দেশ-বিদেশের নামকরা বহু বিশ্ববিদ্যাইয়ের শিক্ষকতায় সুনাম কুড়িয়ে এসেছেন। কিন্তু শেষমেষ নিজের দেশেই ফিরে এলেন। হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। কেউ দেশে ফেরার কারণ জানতে চাইলে বলতেন “ প্রানভরে বাংলায় লেকচার দেয়ার সে-কি তৃপ্তি, তুমি বুঝবে না ”।

লাইব্রেরির স্লাইডিং ডোর ঠেলে “ শুনছেন? সোহরাব এলো । আসতে বলবো এখানে ?” বললেন রাষ্ট্রপতীর সহধর্মিনী ।
বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতেই চশমার ওপর দিয়ে তাকালেন সহধর্মিনীর দিকে।
“হুম। আসবে বলেছিলো। পাঠিয়ে দাও। ”

বডিগার্ডদের বাইরে থাকতে বলে সোহরাবের প্রবেশ।
“গুড ইভিনিং স্যার। ”
“ইভিনিং , এসো সোহরাব। চেয়ারটা টেনে বসে পড়ো। ডু ইউ মাইন্ড ইফ আই ট্রিট ইউ এজ মাই স্টুডেন্ট নট এজ প্রাইম মিনিস্টার ? ”

মুচকি হেঁসে “নট এট অল স্যার। হু ডাজন্ট ওয়ান্ট টু বি ইওর স্টুডেন্ট ? এন্ড আফটার অল ইট’স এন আন-অফিশিয়াল ভিজিট। ”
“ চা চলবে ?”
“ আলবৎ চলবে ”

দামী কাঠের তৈরি বেশ প্রশস্ত রিডিং টেবিলের ওপর বেশকিছু বইয়ের একটা ছোটখাটো জটলা। টেবিলের দুপাশে বসে আছেন দুজন। চা এসে গেলো যথারীতি।

চায়ে চুমুক দিয়ে সোহরাব –
“ একটা প্রোপোজাল রাখতে চাইছি নেক্সট উইকেই কেবিনেট মিটিং-এ ”
“ কি বিষয়ে শুনি ? ” চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন রাষ্ট্রপতি সাহেব।

চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলেন সোহরাব। বললেন –
“ সামনেই তো নতুন সরকারের প্রথম বাজেট। খুব একটা সময় নেই। আর কাজও প্রায় গুছিয়ে এলো বৈকি ”
“ ক্যাবিনেট তাহলে মাথা ঘামায় ?”

মুচকি হাসলেন সোহরাব।
“ ক্যাবিনেট ঘাবড়ে আছে কিছুটা ”

চায়ের কাপ রেখে শেল্ভের দিকে এগিয়ে গেলেন হাতের বইটা রাখতে ।
“ ছোট বাচ্চা প্রথম প্রথম হাটতে গেলে আশেপাশের সবাই উৎসাহের সাথে সাথে কিছুটা ঘাবড়েও তাকে। তাই বলে কি হাটা বন্ধ হবে ? হাটা বন্ধ করলে চলবে ?? প্রস্তাবটা কি শুনি ? ”
“ এক্স মিনিষ্টারদের বেশকজনকে একত্র করতে একটা ইনভাইটেশনের ব্যাবস্থা করবো ভাবছি । অভিজ্ঞদের মতামত ফেলে দেয়া যায় না। ওরা ওদের সময়ের করাপ্টেড হলেও অভিজ্ঞ। ”
“ এতো মারকাট – আন্দোলনের পর আবার ওদেরি সান্নিধ্য ? পারবে তো সামলাতে ? ” একটা ছোটখাটো ইংরেজি বই বের করে নিলেন শেল্ভ থেকে।
“ সেটাই ভাবছি ”

“ তোমার বুদ্ধ্যির গোঁড়ায় তো দেখি ধোঁয়া না দিলে হচ্ছে না ” চশমার ওপর দিয়ে তাকালেন সোহরাবের দিকে।

ড্রয়ার খুলে এশট্রে , লাইটার আর সিগারেট নিয়ে বললেন “ চলো, জানালার পাশে বসা যাক। ওদিকটা একটু আঁধার করে রেখেছি। ধোঁয়া ফোঁকার উপযুক্ত জায়গা। ”

হাতের ছোট বইটা এগিয়ে দিয়ে “ নাও, এটা রাখো, পড়া শেষ হলে ফেরত দিও ” চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে “ মনে করে ফেরত দিও ”

বইটা হাতে নিয়ে গন্ধ শুকে সোহরাব “ ভালো ঘ্রাণ । কিসের বই এটা ?”

টেবিলের বইগুলো গুছিয়ে রাখছিলেন অনুপ সাহেব “ বইয়ের গায়ে নাম তো লিখাই আছে ”
লাইব্রেরীর দক্ষিণে একটা বড় প্রশস্ত জানালার ধারে দুটো মুখোমুখি ইজি চেয়ারে বসে আছেন দুজন। সিগারেটের ধোঁয়ায় জানালা দিয়ে আসা মৃদু আলো আরো আবছা হয়ে উঠেছে।
“ কাদের কাদের চিঠি দেবে কিছু ঠিক হলো ? ”

এশট্রেতে সিগারেটের সুরকী ছেড়ে –
“ এক্স ফিন্যান্স দুজন আর ফরেইন তো থাকছেই। বাকি যারা মিনিষ্টার কাম বিজনেসম্যান ছিলো তাদের বিগহেডদের সবাইকেই নেড়েচেড়ে দেখবো। ”
“ মনে হচ্ছে না এতো সহজে উট পাহাড়ের নিচে আসবে। ” একগাদা ধোঁয়া ছেড়ে চেয়ে রইলেন বাইরের দিকে।
“ সে আর বলতে। উপায় চাই। সাপ- লাঠি দুটোই সেফ চাই ”

“ বহুবছর আগের কথা। আফ্রিকার কোন এক অঞ্চলে বিদ্রোহীরা কেবল হানা দেয়। নকশালের প্রভাব যে শুধু ভারতবর্ষেই ছিলো তা না। বিপ্লব নিজের দিক খুজে নেয়। এরপর এগিয়ে যায়। সেখানেও তাই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমির অধিকারী আঞ্চলিক জমিদারদের হত্যা করা হয়। মূদ্রার চেয়ে কাজের বিনিময়ে গমের প্রচলন ছিলো বেশী। অর্থাৎ যার গম আছে সেই জমিদার বা মহাজন। বাকিরা প্রজার মতো ক্ষেটে জমিতে গম জন্মাতো আর বিনিময়ে খাওয়ার গম নিতো। ওই জমিদারদের হত্যার পর উঠে আসে আরেক প্রশ্ন। ”
“ যেমন ?”
“ জমিদারদের জমানো গমগুলো কই ?”
“ মানে কি ? গুদামেই নিশ্চই ।”
“ গুদাম কোথায় ?”
“ জমিদারদের বাড়ি ”
“ নাহ। জমিদারেরা ওগুলো লুকিয়ে রেখেছিলো যেন কেউ কখনো আন্দাজ করতে না পারে কার কাছে কতো গম মজুদ আছে।”
“ তারপর? ”

“ কৃষকেরা বিদ্রোহীদের সাথে মিটিং করলো। জমিদারের পলাতক চ্যালাদের চারিদিক খোঁজ পড়ে গেলো । এদিকে গ্রামের পর গ্রাম অনাহারে কদিন যাবৎ । একদিন বিকেলে এক কৃষক একটা বড় সাইজের ইঁদুর দেখতে পায়। খেয়ে একদম ঢোল হয়ে থাকা ইঁদুরটা ঝিমোচ্ছিলো রীতিমতো। একটা ঢিল ছুড়তেই ইঁদুর নড়েচড়ে গর্তের দিক এগোয়। পিছু নেয় সেই কৃষক। আবিষ্কার করে এক বিরাট গর্তের। গর্তের মুখেই এদিক ওদিকঅনেক গম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ”
“ অর্থাৎ গর্তে গম আছে ? ”
“ নাহ, গর্তে আছে ইঁদুর ”

এশট্রেতে সিগারেটের ফিলতার চেপে দিলেন সোহরাব-
“ গম পায় নি?”

“ গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের ডেকে আনা হলো। ইঁদুরের গর্ত খোঁড়া হলো। গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে গমের খোঁজ পেলো কৃষকেরা। কেননা গর্তের অপর প্রান্তে ছিলো গমের স্তুপ যা কিনা এক জমিদারের বাড়ির ঠিক তলায় কামরার মতো করে বাধিয়ে রাখা গুপ্তস্থান। সেখানে ছিলো শত শত টন গম। এভাবে অন্য জমিদারদের বাড়ির নিচ থেকে, ভিটের মাটি খুঁড়ে গম উদ্ধ্যার করা হয়। ”
“ এরপর ?”
“ তা জেনে তোমার কাজ নেই বাট বি দ্যা ফার্মার। চোখ কান খোলা রাখো। এমন বহু ইঁদুর আছে যারা তোমায় তোমার অতিথীদের গমের খোঁজ দেবে । ”
“ তার মানে ...।”
“ প্রথমে ফর্মালিই চিঠি দাও। সব ঠিকঠাক হলেই ভালো। আর প্রথম চিঠিতে কাজ না হলে , পরের চিঠিতে না হয় গমের খোঁজ দিলে। গম বাঁচাতে অবশ্যই আসবে। ”
“ মাছের তেলে মাছ ভাঁজবো ?”
“ হুম, তবে তুমি শুধু গন্ধটা নেবে। তোমার বাবুর্চিরা তোমায় কি পরিবেশন করছে না হয় সেটা ধরতে পারবে না। ”

আরেকটা সিগারেট ধরালেন অনুপ সাহেব।
“ তবে একটু সাবধান থাকা উচিৎ তোমার। ওরা যেন তোমার গমের খোঁজ না পায়।”
“ সে চেষ্টা ওরা করবেই।”
“ করুক। বাট ডোন্ট বি দ্যা গুড বয় আল দ্যা টাইম। ”
“ হুম, আজ তাহলে উঠছি ।”

ইজি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন সোহরাব। অনুপ সাহেব উঠলেন না।
“ দিনক্ষণ দেখেই কাজে নেমে পড়ো। যতদুর জানি ক্যাবিনেট অমত করছে না এতে ”
“ হাউ ক্যান ইউ বি সো শিওর ??? হাউ ডু ইউ নৌ ?”

সিগারেটে একটা লম্বা টান দিলেন অনুপ সাহেব। একটুপর একগাদা ধোঁয়া ছেড়ে বললেন -
“ Don't ever forget who is the king ”

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৬

আশরাফুল এষ বলেছেন: বেশ ভালো লিখেছেন অনেক শুভকামনা

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

রানা আমান বলেছেন: ভালো লিখেছেন, বেশ ভালো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.