নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আপনারে দীপ করে জ্বালো\' (\'অত্তদীপ ভব\')

গৌতমী সাময়িকী

নীড় ছাড়ার গন্ধ শরীরে যার!

গৌতমী সাময়িকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বাসের বিবর্তন // প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া

০২ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭



ভারত বর্ষের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মে আদিতে কোন দেবতা ছিল না । বুদ্ধ কোন দেবতার কথা বলেন নি । কিন্তু শেষতক বৌদ্ধ মহাযানী সম্প্রদায় সেই বুদ্ধকেই দেবতা তথা অবতার বানিয়ে ছেড়েছেন ।পরে এ সম্প্রদায় হিন্দু ধর্মীয় দেবতাদের অনেক কে মেনে নিয়েছে । এমন কী কয়েকজন বিদেশী দেবতাদেরও নমস্য হিসেবে গ্রহন করেছে । বস্তুত স্হানীয় ভাবে নমস্য কোন দেবতাকেই বাদ দেয় নি মহাযানীরা । ক্রমে কল্পিত হলো হাজার খানেক বুদ্ধ , চালু হলো বেধিসত্বের পূজা ।
বৌদ্ধ দেবদেবীর সমারোহ দেখা যায় ৩০০ অব্দে গুহ্যসমাজ নামের বৌদ্ধ শাস্ত্র গ্রন্হ রচনার পর । এ যুগে গড়ে উঠে বৌদ্ধ দেব সমাজ । আনুমানিক ১১৩০ ঋস্টাব্দে রচিত নিস্পন্ন যোগাবলী গ্রন্হে অভযাকবগুপ্ত উল্লেখ করেছেন অসংখ্য দেবদেবীর কথা । পরবর্তীকালে বৌদ্ধসমাজে মঠ এ আচার্য দের চাহিদা মাফিক আবির্ভাব ঘটে নতুন নতুন দেবদেবীর ।বৌদ্ধ দেবীদের তালিকায় রয়েছেন আলোকদেবী চারজন , গৌরদেবী আটজন । এছাড়াও আছে ডাকিনী দেবী , দার্শনিক দেবী, বাসিতা দেবী ,ভূমি দেবী ,ধরিনী দেবী, প্রতিসম্বিত দেবী , দেবী দ্বারপালিকা , দেবী নৃত্য,পন্চরক্ষা দেবী ,দেবী পশুমূখী প্রমুখ । মূলত নাস্তিক ধর্ম হলেও একপর্যায়ে জৈনধর্মের অংশবিশেষ দেবদেবীর কল্পনা গড়ে উঠে । চব্বিশ জন তীর্থন্কর বাদে জৈনদেবতাদের মধ্যে রয়েছে চারটি ভাগজ্যোতিষী,বিমানবাসী,ভবনপতি ,ও ব্যন্তর । বিদ্যাদেবীর সংখ্যা ষোল ,স্বরস্বতি এদের প্রধান ।
বিশ্বাসের বিবর্তনের মাধ্যমে পারসিক- গ্রীক দেবতাদের দু একজন উপাস্য হিসাবে গৃহীত হয়েছিল বৈদিক ভারতে । এখানে বদলে গেছে তাদের নাম এমনকী বৈশিষ্ট্যও। পন্ডিতদের ধারনা ঋগবেদে বর্নিত অন্যতম দেবতা বরুন প্রাচীন গ্রীক দেবতা উরানাস এর প্রতিকল্প । আবার ঋগবেদে বরুন অসুর নামেও অভিহিত । যাকে অহুর নামে অভিহিত করতো পারসিকরা । অহুর ছিলেন তাদের একমাত্র দেবতা যিনি সব ভালো জিনিষের সৃস্টিকর্তা । আলো ও দয়ার দেবতার বলা হতো তাকে । পরে তিনি রুপান্তরিত হন অহুরা মাজদায় ( ঈশ্বর )। পারসিক জরথুস্ত্রবাদিদের অন্ধকার ও পাপের দেবতা দীব ভারতে স্বীকৃতি পায় । পারসিকদের আন্দ্রা দেবতাই নাকি বৈদিক দেবতা ইন্দ্র । পারসিক সূর্য দেবতা মিথেরার পূজা এখনো প্রচলিত আছে ভারতে । উল্লেখ্য প্রাসংগীক পারস্যের একটি জনগোষ্টির আনুমানিক ২০০০ ঋস্টপূর্বে ভারতে আসে , সংগে নিয়ে আসে তাদের দেব বিশ্বাস । তবে তাদের অহুর অসুর বা অপদেবতা হিসেবে প্রযুক্ত হতে থাকে । সামাজিক , রাজনৈতিক , ও ধর্মবিশ্বাসের ভিন্নতাকে কেন্দ্র করে গ্রহন বর্জন চলেছে বদলে গেছে উপাস্য দেবতার গুনাগুন ।
প্রাচীনকালে ধর্মান্তরিত হবার প্রধান লক্ষন ছিল যুগ যুগ ধরে উপাস্য দেবতাদের বর্জন করে নতুন উপাস্য দেবতার কাছে মাথানত করা । ধর্ম বদল মানে বিশ্বাস বদল । এই বিশ্বাস বদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন একটি শ্রেনী , যাদের বলা হতো মুনি ঋষি আর শ্রেনীটির নাম ধর্মগুরু । এখান থেকেই গুরু শ্রেনীর সাথে ভারতবাসীর পরিচয় ঘটে । প্রাচীন কালে এরা নিজেরাই নিজেদের মুনি ঋষি সন্যাসী তপস্বী নামে পরিচিত করাতেন । প্রয়শই মুনি ঋষিরা ছিলেন ব্রাম্মন সন্তান । সম্ভবত মুনি ঋষিরাই প্রথম আশীর্বাদ - অভিশাপের ধারনা জন্ম দেন । তাঁরাই প্রচার করেন তপস্যার মাধ্যমে তিনি ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃত শক্তির অনুগ্রহ ভাজন হয়েছেন কাজেই ঈশ্বর তার কথা রাখতে বাধ্য । সাধারন মানুষের মধ্যে এই ধারনা বদ্ধমূল করার পর কথিত ধর্মগুরু রা বরপ্রদান এ শাপান্ত করার প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিজের মতের অনুকূলে আনতেন । এমন কী প্রতাপশালী রাজরাজরাও তাদের সমীহ করে চলতেন । বিশ্বাসের এ ধারনাটি এখনো বিদ্যমান। বিজ্ঞানের এ যুগেও সর্বস্তরের মানুষ মুনি ঋষি , সাধু সন্যাসী , বুজরুগীতে সিদ্ধহস্ত ভেকধারীদের শরনাপন্ন হন । তাদের বর বা আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন । কোন কোন পন্ডিতের মতে এই সব গুরুরা ছিলেন প্রাচীন ভারতের প্রথম পর্যায়ের ভূ- স্বামী বা জমিদার সম্প্রদায় । এরা সংসার জীবন যাপন করতেন কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতিতে আরালে ,অর্থ সম্পদ আর বৈভব অর্জনের জন্যে খুলে বসতেন নানা আশ্রম । ধর্ম শিক্ষা আর বিদ্যাদানের নামে অবিভাবক থেকে মোটা দক্ষিনা ও শীক্ষার্থী দের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করতেন । পেতেন রাজগৃহে পৌরহিত্য করার সুযোগ । এই পুরোহিতরা রাজ শক্তিকে ব্যবহার করতেন বিরোদ্ধবাদীদের শায়াস্তা করতে । শাস্ত্র পঠন পাঠন যজ্ঞ পূজা মন্ত্রদান এর মধ্যমনি হয়ে উঠেন গুরু রা । এদের দাপট ও ক্ষমতা রাজাকেও অনেক খেত্রে ছাড়িয়ে যেত । এই দেবতা ও গুরু প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার ও প্রতিবাদী কন্ঠের নাম মহামতি গৌতম বুদ্ধ ও তার অবিসংম্বাদিত কালাম সূত্র । গোটা ভারতবর্ষ তখন ব্রাম্মন্যবাদ , গুরুবাদ কে ত্যাগ করে যে মানবিক বোধের বিশ্বাস সৃস্টি করেছিল , তারই ফলে বুদ্ধের মৃত্যূর পর প্রতিশোধ নিতে এই ব্রাম্মন আর গুরুরাই বুদ্ধ কে ও তার প্রচারিত ধর্ম কে কলুষিত ও আবরন ঝুলিয়ে নিয়ে গেছে সেই প্রাচীন বিশ্বাসের পদমূলে । বুদ্ধ নাম ও দর্শনে আছে , আচরনে নাই । সকলেই সেই প্রাচীনকালের মতোই দেবতা অনুগ্রহে ব্যাস্ত । গুরুরা বিজ্ঞানের এই চরম যুগেও ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের জ্ঞান সল্পতা আর অলসতার সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে বিশ্বাসের পৌনপুনিক বিবর্তন ঘটিয়ে চলছে । আমরা অনেকেই নীরব দর্শক । বিপর্যস্ত প্রাচীন কাল থেকে আজো অবধি নারী । নারী তাই নিষিদ্ধ বস্তু বটে কিন্তু বিশ্বাস ও শ্রোতা দর্শক হিসেবে ঐ নারীই ভরসা , এই গুরুদের প্রতিপত্তি প্রদর্শনের সমাবেশে । আধুনিক গুরুরা সেই প্রাচীন পদ্ধতির আধুনিক সংস্করন ঘটিয়ে নতুন নতুন দেবতা ও বুদ্ধের প্রতিরূপ তৈরী করে এক নতুন রাজ্য ও জমিদারি বিনির্মান করে চলেছেন । এবং প্রত্যেকেই কোন না অলৌকিক শক্তির মীথ ছডিযে দিচ্ছে । ফলে একই উদ্দেশ্যের গুরুরা পরস্পর কে আক্রমণ করছে , একে অপর কে ভন্ড বলছেন , মূলত গ্রাহক ও দাতা হাতছাডা হবার ভয়ে । নতুন নতুন বিশ্বাস আর বিবর্তনের ফাঁকেই জন্ম হচ্ছে ধর্ম বিরুপ শক্তিশালী যুক্তিবাদী তরুন সমাজ । ফলে সমাজের সব শক্তি সোচ্চার এদের ধর্ম দ্রোহী ও বিপদগামী আখ্যা দিতে । কেউ বুদ্ধের মৌলিক শিক্ষায় ফিরে যেতে আর চায় না । কারন চারপাশের অন্যসকল ধর্ম বিশ্বাসের সাথে টিকে থাকতে বিশ্বাসের অন্ধ বিবর্তন অন্ধ সমাজে বসবাস কারী বৌদ্ধ নাম ধারী হয়ে থাকাটা বডুয়া বৌদ্ধ সমাজের টিকে থাকার কৌশল হয়তো কিন্তু তা আদৌ কোন প্রজ্ঞাবান মানুষের বিশ্বাস নয় । বুদ্ধ মানুষের । কোন একক সম্পরদাযের নয় । কোন বিজ্ঞানী যেমন কোন সম্রদাযের নয় , তেমনি বুদ্ধ দু: খ মুক্তির পথের আবিষ্কারক হিসেবে কোন সম্প্রদায় এর সম্পত্তি নয় । পৃথিবীর মানুষ তাকে সক্রেটিস গ্যালিলিওর মতোই এক দূর্লভ মানব হিসেবে মানবিক পৃথিবীর সম্পদ মনে করে । জাতিসংঘ তার জন্ম দিন উদযাপনের মধ্যদিয়ে বুদ্ধ কে মন্দির আর গুরুদেব কারাগার থেকে মুক্তি প্রার্থনা করেছেন । বিশ্বের সব মানুষের কাছে জ্ঞান , প্রজ্ঞা আর কার্যকরন থিউরী অনুসরনের মাধ্যমে বিশ্বাসের বিবর্তন ঘটাতে আহ্বান জানায় এর মাধ্যমে । এক জাতি , এক সম্রদায়, এক বিশ্ব ও মানুষের পৃথিবীর একটি ঠিকানা রচনার মধ্যদিয়ে সাম্যের পৃথিবী বুদ্ধের আলোকিত সত্য ধারনেই সম্ভব ।

লেখক : প্রকৌশলী , সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠক ।
প্রথম প্রকাশ : ৩১মার্চ ,২০১৭ , গৌতমী সাময়িকী ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.