![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
' পথের পাঁচালী' আর 'চাঁদের পাহাড়'-এর মতো দুটি মাস্টারপিস পড়ার পরে যে কেউ ব্যানার্জী বাবুর জাবরা ফ্যান হয়ে যাবে।দীর্ঘ বিরতির পর ব্যানার্জী বাবুর গ্রন্থ আবার হাতে।
রাণাঘাট রেল স্টেশনের বাজারে সবেমাত্র দুটি হোটেল।একটি বেচু চক্কত্তির হোটেল, অপরটি যদু বাঁড়ুয্যের হোটেল।একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে দশবছর যাবৎ।
হাজারী ঠাকুর নামক ছেচল্লিশ বছর বয়সী এক ব্রাহ্মণ কাজ করে বেচু চক্কত্তির হোটেলে।হাজারী ঠাকুরের রান্না যে একবার খেয়েছে তো সে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার নাম করে গেছে।মূলতঃ হাজারী ঠাকুরের রান্নার জন্যই বেচু চক্কত্তির হোটেল যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলের তুলনায় এগিয়ে।বেচু চক্কত্তির হোটেলে কাজ করে পদ্ম ঝি,হোটেল বেচু চক্কতির হলেও মূলত নিয়ন্ত্রণ পদ্মের হাতে।পদ্ম যা বলে তাই বেদবাক্য হিসেবে মেনে নেয় হোটেল কর্তা মেরুদন্ডহীন এবং নির্বোধ বেচু চক্কত্তি।
কিন্তু পদ্ম হাজারী ঠাকুরকে চোখের বালি ছাড়া আর কিছুই মনে করে না।হাজারী ঠাকুরের সব কাজেই খুঁত ধরা যেন তার নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাড়িঁয়েছে।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত খালি পেটে খাটিয়া দুটি কড়কড়ে ভাত,কোনোদিন সামান্য একটু ডাল আবার কোনোদিন তাও না-ইহাই তাহার বরাদ্দ।এতকিছু সহ্য করেও মাসিক সাত টাকা বেতনের জন্য এখানে পড়ে আছে শুধুমাত্র তার বারো বছর বয়সী মেয়ে টেঁপি আর স্ত্রীর জন্য।
তারপরও সারাদিনের কাজ শেষে চূর্ণী নদীর ধারে বসে বসে ভাবে তারও একদিন একটা নিজের হোটেল হবে।সেও বেচু বাবুর মত মনিবের দায়িত্ব পালন করবে।কিন্তু সে স্বপ্ন হতাশার দীর্ঘশ্বাসের সাথে মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।
কিন্তু হাজারি দমে যাবার লোক নয়।তার মনের কোণে লুকিয়ে থাকা সেই নিজের হোটেল তৈরির স্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।
একজন মানুষের জীবনে সে অনেক স্বপ্ন দেখে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় স্বপ্নের তকমা পায় একটি বা দুটি। কারো কারো পুরো জীবন কেটে যায় সে স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করতে করতে, আবার কেউ পেয়েও যায় সোনার হরিণ। কিন্তু সেই স্বপ্নটি পূরণ হবার পরও যদি মনে হয়, কিছু বাকি রয়ে গেছে? আর খুব অপ্রত্যাশিত কিছু, অপ্রত্যাশিত কেউ এসে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়?
'আদর্শ হিন্দু হোটেল'-এর মাধ্যমে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কতগুলো সাধারণ মানুষের অসাধারণ জীবনযাপন তুলে ধরেছেন।কিভাবে দারিদ্রের এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুঝে একজন সাধারণ হোটের কর্মী জীবনসংগ্রামে অবশেষে বিজয়ীর হাসি হেসেছেন তার স্পষ্ট ছাপ রেখেছেন এই ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাসে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বরাবরই অসাধারণ লাগে;এটিও ব্যতিক্রম নয়।
©somewhere in net ltd.