নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজছিলাম। তাই আমি মন্দিরে গেলাম, সেখানে তাকে খুঁজে পেলাম না। আমি গির্জায় গেলাম, সেখানেও তাকে পেলাম না। এরপর আমি মসজিদে গেলাম সেখানেও তাকে পেলাম না। এরপর আমি নিজের হৃদয়ে তাকে খুঁজলাম, সেখানে তাকে খুঁজে পেলাম।

গফুর ভাই

সাধারন নাগরিক একজন

গফুর ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিঊ ঃ হুমায়ুন আহমেদ এর উপন্যাস "কুটু মিয়া"

৩০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:০৪



তার নাম কুটু মিয়া। বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। সে বাবুর্চি কাজ জানে। বাংলা , ইংলিশ, থাই, মোগলাই সব ধরনের রান্না পারে। পাইলট স্যার তাকে একটা সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এই সার্টিফিকেট নিয়ে সে কাজ করতে এসেছে আলাউদ্দিন সাহেবের বাড়িতে। আলাউদ্দিন সাহেবের কুটু মিয়াকে পছন্দ হলো না। তাঁর নাম হলো কোথাও কোনো সমস্যা আছে। সমস্যা তিনি ধরতে পারছেন না। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি ধরতে পারছেন না। তাঁর জীবনের বদলে যেতে শুরু করে। এক সময় দেখা গেল তিনি কুটু মিয়কে সঙ্গে নিয়ে গুনগুন করে গান গাইছেন-
যমুনার জল দেখতে কালো
স্নান করিতে লাগে ভালো
যৌবন ভাসিয়া গেছে জলে।।

‘কুটু মিয়া’ চেতনার অতল গহ্বরে জন্মানো আতঙ্কের গল্প। যে আতঙ্ক আমরা গোপনে লালন করি কিন্তু এখনো তার মুখোমুখি হই না। বইটা পড়ে ভয় লাগেনি। তবে কিছু কিছু জায়গায় গা ঘিনঘিন করেছে। এখানে অনেক কিছুই বলা হয়নি। যেমন, খাটের নিচে কে ছিলো, কুটু মিয়া মনের কথা জানতে পারে কি না, কুকুরের সাথে কুটু মিয়ার কোন যোগসূত্র ছিল কি না বা আলাউদ্দিন সাহেবও যে ফোস্কাজনিত রোগে মারা যাবেন এটা কুটু মিয়া আগে থেকেই জানত কি না, নাকি সবকিছু কুটু মিয়া ইচ্ছা করে করেছে, সব মিলিয়ে মনে হাজারটা প্রশ্ন এসেছে।

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র আলাউদ্দিন হলেও মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন কুটুমিয়া। কুটু মিয়া…বইটার নাম শুনে খুব আদুরে একটা মানুষের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে আসে তাই না??কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত...ঘোর কৃষ্ণবর্ণের লোকটির আকৃতি পুরনো বাড়ির খাম্বার মতো গোল। মাথার চুল জায়গায় জায়গায় খাবলা খাবলা, তেলতেলে মুখ এবং চোখজোড়া অতিশয় ছোট হওয়াতে কালো মণির অংশ দেখতে পাওয়া যায় না বলে হঠাৎ দেখলে মনে হয় তার চোখই নেই।সাথে তার শরীর থেকে ভেসে আসে বোটকা গন্ধ। এবার কল্পনা করতে পারছেন কুটু মিয়াকে দেখতে কেমন লাগে???

আর আলাউদ্দিন সাহেবের আত্মীয়স্বজন বা কাছের বলতে বিশেষ কেউ নেই। তিনি কখনো বিয়েও করেননি, একা থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। একসময় কলেজের শিক্ষকতা করতেন। বর্তমানে হাজী প্রকাশনীর একজন ছোটখাটো লেখক।হাজী সাহেব কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কিছু বই দিলে সেই বইগুলো থেকে কপি করে নতুন একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করাই তার কাজ।হাজী সাহেব সাহেব সেখানে অন্যকারো নাম বসিয়ে বাজারে ছাড়েন।

গল্পটি শুরু হয় কুটু মিয়ার আলাউদ্দিনের কাছে কাজ চাইতে আসার মাধ্যমে।কুটু মিয়া বাবুর্চি কাজ জানে। বাংলা, ইংলিশ, থাই, মোগলাই সব ধরনের রান্না পারে। পাইলট স্যার তাকে একটা সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। এই সার্টিফিকেট নিয়ে সে আলাউদ্দিন সাহেবের বাড়িতে কাজ করতে এসেছে। তাকে দেখে প্রথমে পছন্দ না হলেও পরবর্তীতে আলাউদ্দিন বাধ্য হয়ে তাকে কাজে রেখে দেয়।রহস্যময় মানুষ কুটু মিয়া কয়েকে দিনের মধ্যেই আলাউদ্দিনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়ে পড়ে এবং আলাউদ্দিন এক অজানা কারণে তার উপর প্রচুর পরিমাণে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।বদলে যেতে শুরু করে আলাউদ্দিনের জীবন। আলাউদ্দিন সাহেব তার লেখালেখি কাজ ছেড়ে দেন। টাকা পয়সার জন্য বসত বাড়ি বিক্রি করে দেন।সব কিছু বাদ দিয়ে কুটুমিয়ার বানানো খাবার আর সেবাই মগ্ন হয়ে যান। তার কাছে কুটুমিয়ার রান্নাই পৃথিবীর সেরা খাবার বলে মনে হয়। তিনি কুটুমিয়ার কাছে পাইলট স্যারের কথা শুনতে শুনতে এক সময় নিজের অজান্তেই পাইলট স্যারের মত জীবন যাপন করা শুরু করেন। একসময় তার শারীরিক দিক দিয়েও অদ্ভুত পরিবর্তন হয়।ঘটতে থাকে অস্বাভাবিক বিভিন্ন ঘটনা!!! এক সময় দেখা গেল তিনি কুটু মিয়াকে নিয়ে গুনগুন করে গানও গাইছেন!!!-
যমুনার জল দেখতে কালো
স্নান করিতে লাগে ভালো
যৌবন ভাসিয়া গেছে জলে।

তাহলে কি রহস্য লুকিয়ে আছে কুটুমিয়ার মাঝে?? কে সে??কিভাবে আলাউদ্দিনকে প্রভাবিত করলো??? কেনই বা করলো???

“কুটু মিয়া” ভয়ঙ্কর অন্ধকার এক ভুবনের গল্প। হরর আর সাইকোলজিক্যাল দুইটি বিষয় নিয়ে লেখা বইও বলা যেতে পারে।যদিও প্রথম থেকে খুবই ভালো লেগেছে মনে মনে ভাবছিলাম আমারও একজন কুটুমিয়ার মতো বাবুর্চি চাই। কিন্তু শেষটা পড়ে আমি অনেকক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। চোখে চোখে ভাসছিল লেখকের সেই কুটুমিয়া..

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১৫

হাবিব বলেছেন: রিভিও ভালো হয়েছে। বইটি পড়া ছিল না আপনার থেকে জেনে নিলাম।

২| ৩১ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:১০

গফুর ভাই বলেছেন: ধন্যবাদ হাবিব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.