নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজছিলাম। তাই আমি মন্দিরে গেলাম, সেখানে তাকে খুঁজে পেলাম না। আমি গির্জায় গেলাম, সেখানেও তাকে পেলাম না। এরপর আমি মসজিদে গেলাম সেখানেও তাকে পেলাম না। এরপর আমি নিজের হৃদয়ে তাকে খুঁজলাম, সেখানে তাকে খুঁজে পেলাম।

গফুর ভাই

সাধারন নাগরিক একজন

গফুর ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

চীন কিভাবে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করেছিল?

৩১ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১০

গত শতাব্দীতে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন এমন সব ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যেগুলোর প্রভাব ছিলো অত্যন্ত সূদুরপ্রসারী। হোক তা ভালো কিংবা মন্দভাবে। তারমধ্যে চীনের নাটকীয়ভাবে পারমাণবিক ক্ষমতাধর হয়ে ওঠার গল্প ছিলো অন্যতম।


সময়ের হিসেবে তখন ১৯৫৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু সে ধ্বংসযজ্ঞের আঘাত তখনও বিশ্ববাসীকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সে সাথে যুদ্ধাপরবর্তী তৈরি হওয়া সংকট,বিশ্বমোড়লদের চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

চীন নামক রাষ্ট্রটি তখন এর ইতিহাসের কালো এক অধ্যায়ের সমাপ্তি করলো।অবশেষে সৈরাচারী চিয়াং-শেক সরকারের অত্যাচার থেকে চীনাবাসী মুক্তি পেল। বিপ্লবের নায়ক, মাও-সে-তুং। রেড আর্মির বুটে ভর দিয়ে চীনের সর্বত্রই চলছে তখন নবজাগরণের ডাক।

সে বছর অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে চীন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিউক্লিয়ার এনার্জি নিয়ে গবেষণার জন্য লক্ষ্য স্থির করে। যদিও সে শান্তিপূর্ণ গবেষণা পরে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে কৌশলগত নিউক্লিয়ার ফোর্স ডেভেলপমেন্ট এ রূপ নেয়।

এর তিন বছর পর ১৯৫৬ সালে চীনের অষ্টম কংগ্রেসে "Twelve year science plan" নামক বিল গৃহীত হয়। সে বিলের মধ্য দিয়েই মূলত চীনের পারমাণবিক অস্ত্রসস্ত্র তৈরির অভিপ্রায় প্রকাশ পায়।

তবে, চীন কয়েকবছর আগেই এর চিত্রায়ণ শুরু করে দেয়। ১৯৫১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে একটি গোপন যুক্তি সম্পাদিত হয়। সে চুক্তিতে দু'পক্ষের ধর্তব্য ছিলো; মস্কো,চীনের বেইজিংয়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করবে। এবং প্রয়োজনীয় সব লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন,তথ্য-উপাত্ত, বিজ্ঞানী,ট্রেইনার তারা দেবে। বিনিময়ে বেইজিংকে নির্দিষ্ট পরিমানের কাচা ইউরোনিয়াম মস্কোকে পরিশোধ করতে হবে। মস্কো,বেইজিংকে একটা স্যাম্পল পারমানবিক বোমাও হস্তগত করে। এতেই বুঝা যায় সেসময় এ চুক্তিটি দুই রাষ্ট্রের কাছে কত মূল্যবান ছিলো।

অবশ্য মূল্যায়নের পেছনে কারনও কম ছিলো না। স্নায়ুযুদ্ধর শাখা-প্রশাখা তখন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। উল্লেখ্য তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা উভয়ই বিশ্বে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। কোরিয়ার যুদ্ধ, ভিয়েতনামের সংগ্রামসহ আরো বেশ কিছু কারনে সোভিয়েত ইউনিয়ন এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তাজড়িত ছিলো। চীনকে শক্তিশালী করে কিছু সুবিধা আদায় করে নেয়া যাবে,সে চিন্তাভাবনাও সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিলো।

তবে সবকিছুর মত চায়না-সোভিয়েতের উষ্ণ সম্পর্কে শীতল হাওয়া বইতে থাকে। ১৯৬০- এর দশকের শুরুতে সম্পর্কের টানাপোড়েন চরম আকার নেয়। ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চীনের আগ্রাসনকে কেন্দ্র উভয়পক্ষই পরস্পরের মনমালিন্যের পাত্র হয়। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। ফলাফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনকে পারমাণবিক প্রজেক্ট সংক্রান্ত কোনো সাহায্য তৎপরতা করতে অস্বীকৃতি জানায়।

এমন ঘটনা চীনকে বেশ দৃঢ় করে তোলে। চীন তখন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়,একাই তারা সফল হবে। যদিও সোভিয়েত থেকে তখন প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাদি চীনের হাতে চলে এসেছে। বাকী শুধু এর বাস্তবায়ন।

চীন নতুন করে আবার আছে প্রজেক্ট পরিকল্পনা করতে থাকে। আর তার নাম দেয় "প্রজেক্ট-৫৯৬"।

১৯৬০ সালের পয়লা এপ্রিলে সে প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়। লোকেশন বাছাই করা হয় জিনজিয়াং প্রদেশের লেক লৌপ নুর (Lake Lop Nur) এর পাশের বিরানভূমিতে। দশহাজার শ্রমিক ও যুদ্ধবন্দীদের দ্বারা সে প্রজেক্ট সাইটটি তৈরি করতে চীনের পাঁঁচবছর সময় লেগে যায়। পুরোসাইটের আয়তন ছিলো ১০০০০০ বর্গকিলোমিটার, যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৬৭ ভাগের বেশি।সেসাথে দুনিয়ার সবচেয়ে নিউক্লিয়ার টেস্টিং সাইটের তকমাও পেয়ে যায়। এভাবেই চীনের পারমাণবিক কার্যক্রম পুরোদমে চলতে থাকে।

টানা বেশকয়েক বছর পরিশ্রমে পর ১৯৬৪ সালের ১৬'ই অক্টোবর চীন সত্যিকারের কোনো পারমাণবিক বোমার সফল টেস্ট করতে সমর্থ হয়। সে বোমাটি ছিলো ২৫ কিলোটন ক্ষমতার এবং ১০২ মিটার উচু টাওয়ার থেকে ফেলে টেস্ট সম্পন্ন করা হয়।


সেই একদশক চীনের পারমাণবিক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে গবেষণার বেশ উন্নতি হলো। বোমার সফল বিস্ফোরণের মাত্র ২ বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ১৯৬৬ সালের ২৫ অক্টোবরে চীন নিউক্লিয়ার মিসাইল ছুড়তে সক্ষম হয়। সাফল্যের ধারাও ক্রমে উর্ধ্বমুখী হতে থাকে। সে ধারা শীর্ষে পৌছায় ১৯৬৭ সালের জুনে ১৪ তারিখে হাইড্রোজেন বোমা তৈরির মধ্য দিয়ে।

এরপর চীনকে সে অর্থে আর কারো কাছে সাহায্য চাইতে হয়নি। চাইনিজ বিজ্ঞানীরা নিজেরাই গবেষণা করে চলেছন। সেসময় তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, বোমা তৈরির পুরো কার্যক্রমটি কিভাবে আরো সাশ্রয়ী ও সহজভাবে করা যায়। সে পথে চলতে চলতেই তাদের মাথায় খেলে যায় "থার্মোনিউক্লিয়ার" ধারনাটি। বোমা তৈরিতে চিরাচরিত জ্বালানী ইউরোনিয়ামের সাথে চাইনিজ বিজ্ঞানীরা বুদ্ধি করে কিছুটা লিথিয়াম-৬ পরমানু মিশিয়ে দেয়। ১৯৬৭ সালের সেই ছোট ১০০ কিলোটনের বোমাটি ধ্বংস যজ্ঞের যে নমুনা দেখায়,তা বিজ্ঞানীদেরও কল্পনাতীত ছিলো। এবং সে সাথে চীনের সে টেস্টটি ছিলো পারমানবিক ইতিহাসে প্রথম দুই স্তরের থার্মোনিউক্লিয়ার টেস্ট।

এমন আরো অনেক পরিবর্তন চাইনিজ নিউক ডিপার্টমেন্টে আসতে থাকে। যেমন বোমাগুলোর আকৃতি ৭০০ কেজির মত ছোট আকারে নিয়ে আসা,যা তৎকালীন যেকোনো ছোট ফাইটার জেটে বহনযোগ্য ছিলো। নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনকারী মিসাইল তৈরির দিকেও চীন ঝুকে যায়।

সময় যত গড়ায়, ভয়ংকর সব অস্ত্রের বিস্তারও বাড়তে থাকে। ২০০৬ সালে পেন্টাগনের চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ ও সক্ষমতা নিয়ে একটি পেপার প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ১৯৮০ দশকের শেষদিকে চীন তৃতীয় বৃহত্তম পারমানবিক রাষ্ট্রে পরিনত হয়। সে পেপারে বিস্তারিত আরো বলা হয়, ১৯৭০ সালে চীনের কার্যকরী নিউক্লিয়ার অস্ত্রের সংখ্যা ছিলো আনুমানিক ২০০টি। ১৯৮০ দশকে এসে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭৫। প্রতিবছর ৭৫টি করে সক্ষমতা ধরলে, ১৯৯০ সাল আসতে আসতে চীনের প্রায় ২০০০ নিউক্লিয়ার উইপেন,ব্যালাস্টিক মিসাইল, লঞ্চ-প্যাড, বোমারু বিমান প্রোডাকশন লাইনে চলে আসে। আর ২০০৫ সালের মধ্যেই চীনের ৭৯৩-৯১৬টি শুধু কার্যকর বোমা থাকার হিসাবও সেই পেপারে দেখানো হয়।


এতসব ক্ষমতা নিঃসন্দেহে যেকোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে অহংকারী করে তোলবে। তবে চীন এখন এ নীতিতে ব্যতিক্রম। ২০০৬ সালে চীনের "Chinese Defense White Paper-2006" শীর্ষক জার্নালে,চীনের পররাষ্ট্রনীতি এ ব্যাপারে বেশ খোলাসা করে বলে। সে জার্নালে বলা হয়,চীন কখনোই কোনো যুদ্ধে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবেনা। হোক তা কোনো পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র কিংবা শক্তিহীন রাষ্ট্র।

যতক্ষণ না চীনকে আগে আঘাত করা হচ্ছে।

একে চীনে পররাষ্ট্রনীতিতে NFU স্ট্র‍্যাটিজি বা Not First Use বলা হয়। অন্যন্য পারমানবিক রাষ্ট্রধরদের নীতি যেখানে ব্যতিক্রম। যদিও চীন অলিখিতভাবে সে নীতি অনেক আগেই মেনে আসছে।

তবে চাইনিজরা খুবই রক্ষণশীল জাতি।তারা সেসব বিষয় নিয়ে সবসময়ই চেপে যেত। প্রকৃত হিসাব কিংবা তথ্য হয়তো তাদের চেয়ে ভালো কেউ জানেনা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৩২

খায়রুল আহসান বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে লেখাটা নিজে নিজে আরও কয়েকবার পড়বেন। তথ্যগত কোন ত্রুটি হয়তো নেই, তবে বাক্যগঠন নিয়ে কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে, যা সম্পাদনা করে নিলে এটি একটি ভালো পোস্টের মর্যাদা পেতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.