নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নয়দুয়ারি

গ্রীনলাভার

আপাতত মনে হচ্ছে অ্যাডভেন্চারই জীবন। হাটুভাঙ্গার বাঁকেই আমার বাড়ি। সবাইকে নিমন্ত্রন।

গ্রীনলাভার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এপিটাফ...

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৬

আমি যখন আদিগন্ত কোন মাঠের একপ্রান্তে গিয়ে দাড়াই অথবা নির্জন সমুদ্র তীরে অথবা নাম না জানা কোন পাহাড় চুড়ায় - যখন সামনে শুধু ঢেউ খেলে যাওয়া সবুজ উচু নিচু পাহাড়গুলো পিঠ দেখায়, তখন এইসব বিশালতার মাঝে আমার ক্ষুদ্র অস্তিত্বের জন্য আমার মহান সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। মনে মনে বলি, "হুম! জীবনটা অনেক সুন্দর।" হঠাৎ তবুও কেন যেন মনের এককোনে একবিন্দু শুন্যতা জন্মায়। বিন্দুটা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আমি আদিগন্ত মাঠের প্রান্তে দাড়িয়ে থাকি। সমুদ্র তীরে হেঁটে বেড়াই। অথবা পাহাড়চুড়ায় কিছুক্ষন বসে থাকি। নীল আকাশ দেখি। নিশ্চুপ প্রকৃতিকে কাছে ডাকি।



স্মৃতির ঝাপি খুলে বসি। এখানে শুন্যতাদের ক্ষমতা বেশি। স্মৃতিগুলো ধোঁয়ার মতো কিসে যেন মুড়িয়ে থাকে। একধরনের ঘোর লাগা শুরু হয়। শুন্যতার মাঝে নিজেকে ওজনহীন মনে হতে থাকে।



"তোমার পছন্দের একটা কবিতা শোনাও..." - মৌরীর এই প্রশ্নে আমি ভেবাচেকা খেয়ে যাই। স্কুলে ১০ লাইন কবিতা মুখস্ত করতে গিয়ে দাঁত কপাটি খুলে পড়ার উপক্রম হত। যাও কয়েকটা মুখস্ত করেছিলাম - কিন্তু সেতো কবেকার কথা!! হঠাৎ কে যেন সুর করে আবৃতি করে উঠে -



এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।



আমি কোন দিকে তাকাই না। বুঝতে পারি, আমার বাবা। মনের কোন গহিনে চুপটি করে বসে আছেন। সময়মতো হঠাৎ হঠাৎ কথা বলছেন। আমি দেখছি, বাবা একমনে টেবিলে ঝুকে ড্রয়িং আঁকছেন। মাঝে মাঝে মাকে চা দিতে অনুরোধ করছেন। আমি পাশে দাড়িয়ে অবাক হয়ে ট্রেসিং পেপারে কাটা নিখুত সরলরেখাগুলো দেখি। আবার বাবা আবৃতি করেন -



এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,

পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।

এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,

সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!

সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি

লাঙল লইয়া খেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও পথ ধরি।

যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত

এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।



- আমি ফিক করে হেসে উঠি। এরপর বাবার সাথে সাথে আমিও সুর মেলাই -



এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে

ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা

আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ ।

শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু পয়সা করি দেড়ী,

পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।

দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,

সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!

হেস না হেস না শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,

দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!

নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,

পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে।



(আর কয়েক দিন পর আমার মায়ের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। ভাবছিলাম মাকে নিয়ে কিছু লিখব। হয়তো এপিটাফ টাইপের কিছু একটা। বেশ কয়েকবার লিখতে বসে দেখি কিছুই লিখতে পারছিনা। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে নিজের অজান্তেই কবর কবিতার কয়েক লাইন মনে মনে আবৃতি করি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি, আবৃতিকার যেন আমি নই - আমার বাবা -



আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,

কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!

হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,

আমার দাদির তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।

)







মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: আপনার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩

গ্রীনলাভার বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া রাখবেন আমার মায়ের জন্য।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪

গ্রীনলাভার বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া রাখবেন আমার মায়ের জন্য।

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৩

বেলা শেষে বলেছেন: হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,
আমার দাদির তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।
Hart touchable Feelings for your parents!
Salam & Respect to your familly too.

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৯

গ্রীনলাভার বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া রাখবেন আমার মায়ের জন্য।

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৪৫

বেলা শেষে বলেছেন: এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] ।

I do it for my parents too.

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫২

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: "

স্কুলে ১০ লাইন কবিতা মুখস্ত করতে গিয়ে দাঁত কপাটি খুলে পড়ার উপক্রম হত। "


এ কি অবস্হা?

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০

গ্রীনলাভার বলেছেন: :D :D :D :D

কবিতা কেন যেন আমাকে কখনোই টানে না। :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.