নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....
আজ খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন বজর উদ্দিন। আগে ভাগে গা-গোছল ধুয়ে তৈরী হয়ে বাহিরের উঠোনে তেল চিটচিটে পুরনো হাতলঅলা চেয়ারটিতে খুব আরাম করে বসে আছেন তিনি।
আজ মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে তাঁর। আজ তাঁর প্রতিশোধের দিন। শুধু তাঁর বললে ভুল হবে, পুরো মজুপুরবাসীর ই প্রতিশোধের দিন আজ। না না শুধু মজুপুর নয়, বিরামপুর, হরিরামপুর, আক্কেলপুর, ভবানীগঞ্জসহ পুরো উপজেলাবাসীর ই প্রতিশোধ নেবার দিন আজ।
গত কয়েক বছর ধরে টিপু ও তার বাহিনীর অনেক অন্যায় অত্যাচার মুখবুজে সহ্য করেছেন নীলগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।
আজ সেই সব নিগৃহীত নিপীড়িত মানুষের প্রতিশোধের দিন। নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানো অত্যাচারী টিপুর বিরুদ্ধে আজ চরম প্রতিশোধ নিবে তারা।
চৈত্রের কড়া রোদটা ক্রমশ চড়াও হতে শুরু করেছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দীপ্ত পায়ে মজুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন বজর উদ্দিন।
স্কুলের কাছাকাছি আসতেই লাঠি-সোঁটা হাতে দশ-বারো জন যুবকের একটা দল পথ আগলে দাঁড়াল বজর উদ্দিনের।
"স্লামলাইকুম কাকা, টিপু ভাই'র পক্ষ থেইকা আপনারে সালাম।" যুবকদের মধ্য হতে বজর উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলল একজন।
"অলাইকুম ছালাম।"
"কেমন আছেন কাকা?"
"আল্লায় রাখছে বাজান।"
"কাকা কই যাইতাছেন এমন সাজগোজ কইরা?" জানতে চাইল আরেকজন।
"কেন্দ্রে যামু বাজান, ভোট দিমু।"
"হুদাহুদি কাকা কিল্লেইগা বাড়িত তে বাইর অইছেন কন? যান বাড়িত যাইয়া বইয়া আল্লা-বিল্লা করেন গা। কষ্ট কইরা আর যাওনের দরকার নাই আমনের ভোট দেওয়া হইয়া গেছে।"
হা করে যুবকদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন বজর উদ্দিন। এখনও কেন্দ্রেই গেলেন না তিনি, অথচ ভোট দেওয়া হয়ে গেছে তার!
"কি কাকা কতা কানে যায় না? খাড়াইয়া রইলেন ক্যান? না-কি বুড়া বয়সে কানের ফুডা বড় করতে অইবো?" বলতে বলতে টি-শার্টের নিচে লুকানো চকচকে ছুরির মাথাটা খানিক বের করে দেখালো একজন।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বজর উদ্দিন। ঘটনাটা কি ঘটেছে বুঝতে বাকি রইল না তাঁর। প্রতিশোধের যে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি, সেই আশা চির হতাশায় রূপ নিল আজ।
টিপু ও তার বাহিনীর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া হলো না তাদের।
খানিকটা কুজো হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলেন বজর উদ্দিন। চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ঝাঁপসা হয়ে আসছে তাঁর..........
©somewhere in net ltd.