![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....
"ছার এমনে আর কয় দিন?"
প্রশ্নটি করলেন যোবেদা খাতুন। আমার কারখানার প্রডাকশনে কাজ করা একজন নারী শ্রমিক। যোবেদার দেখা-দেখি এগিয়ে আসলেন তফুরা, হনুফাসহ আরও অনেকে। তাঁরা এক প্রকার ঘিরে ধরলেন আমায়।
আমি প্রতিদিন তাঁদের আশ্বস্ত করি এই বলে যে- "এই তো আগামী সপ্তায়ই সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধরেন আপনারা। ইনশাল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।"
"ছার আমগো তো পেট আছে। কাম কইরা যা পাই, তাতে তো আর চলে না। বাল-বচ্চারে ঠিক মতোন খাওন দিতাম পারি না।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। তারা আমার কারখানায় প্রডাকশনে কাজ করেন। যে পরিমান প্রডাকশন সে পরিমান আয়...। আজ একমাসের উপর হলো তাঁদেরকে পর্যাপ্ত কাঁচামালের যোগান দিতে পারছি না আমি।.... কারখানায় প্রবেশ করলে তাঁদের কাছ থেকে এক প্রকার পালিয়ে থাকারই চেষ্টা করি। আমাকে পেলেই তাঁরা ঘিরে ধরেন। নানা অভিযোগ-অনুযোগ ছুড়তে থাকেন।
....একদিন বুকভারা আশা নিয়ে এই অসহায় মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু করেছিরাম আমি। বিশ্ববিদ্যায় হতে পাশ করে চাকরির পিছনে না ছুটে আব্বার অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। মাত্র দুই বছরে আমার ব্যাবসায়কি সেক্টরে সেরা তিনজনের একজন হতে সক্ষম হই। আমার অক্লান্ত পরিশ্রম, ধৈর্য আর নিজের উপর নিজের আস্থাই আমাকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করে।
বিসিএস ক্যাডার কিংবা একজন ভালো সংবাদকর্মী হবো- এমনটিই ছিল একসময় জীবনের লক্ষ্য। অনেক ভেবে চিন্তে লক্ষ্য পরিবর্তন করেছি।... মহান আল্লাহ তালার অশেষ রহমতে আজ প্রায় তিনশতাধিক লোকের কর্মসংস্থান করতে সক্ষম হয়েছি আমি। যাঁদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক।
ভেবেছিলাম, নতুন বছরে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করবো। নতুন করে আরও কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো।... কিন্তু পরিতাপের বিষয়- এভাবে চলতে থাকলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বদলে হয়তো পুরনো অনেককেই বিদায় জানাতে হবে।..... আমি জানি বিষয়টি অনেক বেদনার হবে। হয়তো বিদায় বেলায় তাঁদের মুখের দিকে তাকাতে পারবো না আমি। হয়তো সেদিন তাঁদের সাথে সাথে নীরবে কাঁদবো আমিও............।
©somewhere in net ltd.