নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাংহাই থেকে অভিনন্দন টাইগারদের। অব্যাহত থাকুক বাংলা ওয়াশের এই ধারা......এটাই কামনা রইলো....

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৪০

দ্বিতীয় ওয়ানডের দিন পুরোটা সময় আকাশ পথে আর বিমানবন্দরে কেটেছে। প্রথমে গুয়ানজু এয়ারপোর্টে নেমে যে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলাম, তা হলো বাংলাদেশের খেলার খবর কী?

কিন্তু কেউই জানাতে পারছিলেন না। ভেতরটা ছটফট করছিল খুব। দ্রুত এয়ারপোর্ট সিমকার্ডের দোকানে গিয়ে একটি সিমকার্ড কিনে নিলাম। ক্রিক ইনফোতে সার্চ দিয়ে জানতে পারলাম বাংলাদেশ এর অবস্থা ভালো। শুধু ভালো না, বেশ ভালো।

আমার মুখজুড়ে ছড়ানো হাসি দেখে পাশে বসে থাকা চাইনিজ ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কি ইন্ডিয়ান?"
হেসে বললাম, "নাহ বাংলাদেশি। আমরা ভালো পজিশনে আছি। পাকিস্তান আমাদের কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছে।"
ভদ্রলোক খানিক ভরকে গেলেন।
চোখ বড় করে বললেন, "আবারও বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে না-কি!"

বললাম, "জ্বি। অস্ত্রবিহীন রক্তপাতহীন যুদ্ধ। যার নাম 'ক্রিকেট যুদ্ধ' ট্যাঙ্ক গোলাবারুদ যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়!"

ভদ্রলোকের মুখেও হাসি ছড়িয়ে পড়লো। হেসে বললেন, "বেস্ট অব লাক ফর বাংলাদেশ!"

পাশেই বসে গোঁফের আড়ালে মিটি মিটি হাসছেন একজন। দেখে অনেকটা বাংলাদেশি বলেই মনে হলো। জিজ্ঞেস করলাম, "ভাই কি বাংলাদেশি?"

ডানে বামে মাথা নাড়লেন।

"ডানে বামে মাথা নাড়েন ক্যান? মুখ নাই?"

"ভাইসাব ম্যা গুজরাট সে হু। ম্যারে কো বাংলা নেহি আতি হে। "

"অ। আই মিন ইন্ডিয়ান?"

"জ্বি।"

"ওয়ালর্ড কাপে তো আমাদের চিটিং করে হারিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরপর দুই ম্যাচে জিততে যাচ্ছি আমরা। এইবার চিটিং করলে আম্পায়ারকে মাটিতে পুতে ফেলবো।"

"সেদিনের ঘটনার জন্য আমরা শরমিন্দা ভাইসাব। প্রকৃত জয় আপনাদেরই হয়েছে। শালা আলিমদার সব গোণ্ডগোলের মূল।"

তারপর বললেন, "আপনারা একদিন অনেক দূর যাবেন.....। বেশ ভালো খেলছে আপনাদের ছেলেরা। আমি যদিও ক্রিকেট বুঝি না, কিংবা দেখি না। কিন্তু শুনেছি যে, ইউ আর ডুয়িং ওয়েল ডে বাই ডে..।"

গুয়ানজু থেকে সাংহাই যাবো। ফ্লাইট ডিলে। বাংলা টাইম সাড়ে ৫টার বিমানের প্রাথমিক সিডিউল পড়লো সাড়ে রাত সাড়ে এগারোটা।

এয়ার পোর্টের ভেতরে ঘুরে ঘুরে দেশি লোকজন খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে জনা দশেক সাংহাইর যাত্রি পেয়ে গেলাম। দশ জন এক সাথে বসে মোবাইলে খেলার আপডেট দেখছি। সাথে ছিলেন গুজরাটি ভাইসাব। তিনিও আমাদের সাথে উপভোগ করছেন। এক ভাই ছিলেন বরিশালের। তিনি কিছুক্ষণ পর পর ঘুরে এসেই জিজ্ঞেস করছেন, "এই ভাই, রান কতো অইলে কন দেহি...। আহা তামিমের রানডা কতো অইলে হেইডা একটু কন দেহি...। আর বেশি সময় লাগবে না হানে বোঝজেন, মোরা জিইত্তা যাইমু হানে......।"

এগারোটার ফ্লাইট পুনরায় ডিলে হয়ে রাত দুইটা হলো। এর ভেতর বাংলাদেশ জিতে গেলো...। আমরা যথসম্ভব উল্লাস করে বিজয় উদযাপন করলাম।

হঠাৎ একজনকে দেখলাম, দেখতে একেবারে পাকিস্তানির মতো। কাছে গিয়ে বললাম, "ভাইসাব, হাম তো আপ লোগ কো হারা দিয়া। হে হে হে হারা দিয়া, হে হে হে হারা দিয়া... দিয়া দিয়া ...."

ভাইসাব ঠোঁট উল্টে ইংরেজিতে জানতে চাইলেন কী বলছি আমরা? তারপর বললেন, "আই এম ফরম ইরান!"

"অহ সরি সরি!"

সাংহাই আসার পর চরম ব্যস্ততার ভেতর দিয়ে কাটছে। তৃতীয় ওয়ানডের কোন আপডেট নিতে পারি নি। শুধু জয়ের খবরটি দেখেছি।

হোটেলের নিচে নেমে রিসিপশনের সামনে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলতে লাগলাম, "বাংলাদেশ জিতেছে বাংলাদেশ জিতেছে।"

উপস্থিৎ চাইনিজগণ "হা" করে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশ শব্দটিকেও তাদেরকে চাইনিজে অনুবাদ করে বুঝাতে হবে!

তারপর বলতে লাগলাম, "মুনচুয়ালাকা মুনচুয়ালাকা।"

পাকিস্তানের চাইনিজ আমার জানা নেই। তাই কার সাথে জিতেছে কি জিতেছে তা আর তাদের বোঝাতে পারলাম না।

"ওয়াটার ওয়াটার" বলে ইশারায় অভিনয় করে বুঝিয়ে দেবার পরও যারা বিয়ারের বোতল এগিয়ে দেয়, তাদেরকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ ও তার জয় সম্পর্কে বুঝাতে গেলে নির্ঘাত মাথার চুল সব টেনে ছিড়ে ফেলতে হবে....।


......এখানে চাইনিজ টিভি চ্যানেল ছাড়া অন্য কোন চ্যানেল দেখায় না। তাই স্বচক্ষে জয় দেখা হয় নি আমার তবে জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে মিস করি নি একটুও....।

অভিনন্দন টাইগারদের। অব্যাহত থাকুক বাংলা ওয়াশের এই ধারা......এটাই কামনা রইলো....


#সাংহাই থেকে#

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.