নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শোক না-কি উৎসব??

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

জ্যাঠাকে দেখলাম, সেহরি খাবার শেষে ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলওয়াত করছেন। তারপর দীর্ঘ মোনাযাত ধরে বসে আছেন।

মোনাযাত শেষে জিজ্ঞেস করলাম, এত দীর্ঘ মোনাযাতে কী দোয়া করলেন?

জ্যাঠা চোখের জল মুছে বললেন, "আজ আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবস। তার জন্য দোয়া করলাম রে বাবা। আল্লাহ তার ও তার পরিবারের সকলকে জান্নাতবাসী করুক।"

এরপর কিছু সময় বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনালেন- "এক সোনার মানুষ ছিল রে........."

তারপর কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন, "তোরা সবাই আজ নামাজ পড়ে তার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবি।"

আমার আম্মাকে কাছে ডেকে বললেন, "বউ তুমি চাল-ডাল দিয়ে একটু লেটকা খিচুরি রান্না কইরো। দু'চারজন মিচকিন খাওয়াবো।"

আম্মা বললেন, "বাসায় ডাল তো নাই।"

জ্যাঠা আলনা থেকে পাঞ্জাবিটা এনে পকেট হাতড়ে কয়টা ভাংতি টাকা আমার হাতে দিয়ে বললেন, "যা দোকান থেইকা ডাল কিনে আন।"

আমি ডাল কিনে আনলাম।

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবস উপলক্ষ্যে জ্যাঠা সারাদিন রোজা রাখলেন।

নব্বইর মাঝামাঝির ঘটনা। জ্যাঠা তখন মরণ ব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। মৃত্যুর জন্য দিন গুনছেন। আমাদের বাসায় থেকে তার চিকিৎসা চলছে।

আমাদের গ্রামে যে ক'জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন, জ্যাঠা ছিলেন সবার মুরব্বি। ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন প্রচণ্ড জেদি ও একরোখা।

দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর জ্যাঠা একসময় মারা গেলেন.....। বঙ্গবন্ধুর জন্য কিভাবে শোক পালন করতে হয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জ্যাঠা দেখিয়েছেন আমাদের।

আজ জ্যাঠা বেঁচে থাকলে শোকের নামে এই উৎসব আর চাঁদাবাজি দেখে সত্যিই আফসোস করতেন। ভাগ্য ভালো এই সব অনাচার তাকে দেখে যেতে হয় নি। তাকে দেখে যেতে হয় নি, শোক প্রকাশের নামে নেতা পাতি নেতাদের মুচকি হাসি-মার্কা ছবি দিয়ে বানানো হাজার হাজার ব্যানার ফ্যাস্টুন আর পোস্টার।

তাকে দেখে যেতে হয়নি, বিরানি আর খিচুরির জন্য দুইশত টাকা চাঁদা দেবার পর সামান্য একজন পান-দোকানির করুণ চাহনি আর বুকভরা দীর্ঘশ্বাস।

তাকে দেখে যেতে হয়নি, ১৫ই আগস্টের খিচুরির জন্য চাঁদা দিতে অস্বীকার করার ফলে লাঞ্ছিত হওয়া একজন স্কুল শিক্ষকের অশ্রুভেজা মুখ। এবং সেই স্কুলের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের মার খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার দৃশ্য।

জ্যাঠার ভাগ্য ভালো তিনি মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন। অন্যথায় শোকের নামে করা এই উৎসবের মহড়া দেখে তিনি সত্যিই দারুণ ব্যথিত হতেন... সত্যি...



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.