![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুকের এক বন্ধুর অনুরোধে তার দেয়া লেখাটা শেয়ার করলাম, তবে বন্ধুর নামটা প্রকাশ থেকে বিরত রইলামঃ
-----------------------------
ক' বছর আগে লালন ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রক্ষিতে হুমায়ুন আহমেদের লেখা। যা ভাস্কর্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তির তথ্য পাবেনঃ
==========বাউল ভাস্কর্য // হুমায়ুন আহমেদ
মাদ্রাসার কিছু ছাত্র হইচই করেছে, সঙ্গে সঙ্গে সরকার নতজানু। সরকার জনতার চেতনারই ছায়া, কাজেই আমরাও নতজানু। ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারছি না। হুঙ্কার শুনছি−‘সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হবে। শিখা অনির্বাণ নিভিয়ে দেওয়া হবে।’
সরকার দেরি করছে কেন? শিখা অনির্বাণ নিভিয়ে অন্ধকারে প্রবেশ করলেই হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের দরজা-জানালা এখনই সিল করে দেওয়া দরকার।
মাদ্রাসার যেসব বালক না বুঝেই হইচই করছে তাদের কিছু ঘটনা বলতে চাচ্ছিলাম। তাদের না বলে আমি বর্তমান সরকারের সদস্যদের ঘটনাগুলো বলতে চাচ্ছি। তাঁরা কি শুনবেন?
আমাদের মহানবী (সা.) কাবা শরিফের ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেয়ালের সব ফ্রেসকো নষ্ট করার কথাও তিনি বললেন। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি পড়ল কাবার মাঝখানের একটি স্তম্ভে। যেখানে বাইজেন্টাইন যুগের মাদার মেরির একটি অপূর্ব ছবি আঁকা। নবীজী (সা.) সেখানে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘এই ছবিটা তোমরা নষ্ট কোরো না।’ কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর অসীম মমতা থেকে। মহানবীর (সা.) ইন্তেকালের পরেও ৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ খলিফাদের যুগে কাবা শরিফের মতো পবিত্র স্থানে এই ছবি ছিল, এতে কাবা শরিফের পবিত্রতা ও শালীনতা ক্ষুণ্ন হয়নি।
মহানবীর (সা.) প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাকের (আরব ইতিহাসবিদ, জন্ন: ৭০৪ খৃষ্টাব্দ মদিনা, মৃত্যু: ৭৬৭ খৃষ্টাব্দ বাগদাদ) লেখা দি লাইফ অব মোহাম্মদ গ্রন্থ থেকে ঘটনাটি বললাম। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বইটি অনুবাদ করেছেন আলফ্রেড গিয়োম (প্রকাশকাল ২০০৬, পৃষ্ঠাসংখ্যা ৫৫২)।
আমরা সবাই জানি, হজরত আয়েশা (রা.) নয় বছর বয়সে নবীজীর (সা.) সহধর্মিণী হন। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতেন। নবীজীর তাতে কোনো আপত্তি ছিল না, বরং তিনিও মজা পেতেন এবং কৌতুহল প্রদর্শন করতেন। (মুহাম্মদ আলী আল-সাবুনী, রাওযাইউল বয়ন, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩)
৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) জেরুজালেম জয় করেন। প্রাণীর ছবিসহ একটি ধুপদানি তাঁর হাতে আসে। তিনি সেটি মসজিদ-ই-নব্বীতে ব্যবহারের জন্য আদেশ দেন। (আব্দুল বাছির, ‘ইসলাম ও ভাস্কর্য শিল্প: বিরোধ ও সমন্বয়’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদ পত্রিকা, জুলাই ২০০৫ জুন ২০০৬)
পারস্যের কবি শেখ সাদীকে কি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু আছে? উনি হচ্ছেন সেই মানুষ যার ‘নাত’ এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মিলাদে সব সময় পাঠ করে থাকেন।
‘বালাগাল উলা বি কামালিহি
কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি…’
মাদ্রাসার উত্তেজিত বালকেরা শুনলে হয়তো মন খারাপ করবে যে, শেখ সাদীর মাজারের সামনেই তার একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে। সেখানকার মাদ্রাসার ছাত্ররা তা ভাঙেনি।
ইসলামের দুজন মহান সুফিসাধক, যাঁদের বাস ছিল পারস্যে (বর্তমান ইরান) এঁদের একজনের নাম জালালুদ্দীন রুমি। অন্যজন ফরিদউদ্দীন আত্তার (নিশাপুর)। তাঁর মাজারের সামনেও তাঁর আবক্ষমূর্তি আছে। (বরফ ও বিপ্লবের দেশে, ড. আবদুস সবুর খান, সহকারী অধ্যাপক, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।)
কঠিন ইসলামিক দেশের একটির নাম লিবিয়া। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে বিশাল একটা মসজিদ আছে। মসজিদের সামনেই গ্রিকদের তৈরি একটি মূর্তি স্বমহিমায় শোভা পাচ্ছে। সেখানকার মাদ্রাসার ছাত্ররা মূর্তিটা ভেঙে ফেলেনি।
আফগানিস্তানের তালেবানরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি (যা ছিল বিশ্ব-ঐতিহ্যের অংশ) ভেঙে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। আমরা ভাঙছি সাঁইজির মূর্তি। যাঁর জীবনের সাধনাই ছিল আল্লাহর অনুসন্ধান।
‘মাওলা বলে ডাক রসনা,
গেল দিন, ছাড় বিষয় বাসনা
যেদিন সাঁই হিসাব নিবে
আগুন পানি তুফান হবে
এই বিষয় তোর কোথায় রবে?
একবার ভেবে দেখ না।’
- লালন শাহ
দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে আমার দম বন্ধ লাগছে। কীভাবে প্রতিবাদ করব তাও বুঝতে পারছি না। একজন লেখকের দৌড় তার লেখা পর্যন্ত। বিটিভিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের গাথা জোছনা ও জননীর গল্প প্রচার হচ্ছে। প্রতিবাদ হিসেবে এই গাথার প্রচার আমি বন্ধ করলাম। দেশ মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার জন্য এখনো তৈরি না।
বাংলাদেশে তো অনেক বড় বড় ইসলামি পন্ডিত আছেন। তাঁরা কেন চুপ করে আছেন? তাঁরা কেন পূজার মূর্তি এবং ভাস্কর্যের ব্যাপারটা বুঝিয়ে সবাইকে বলছেন না?
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষের মতো বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীর সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় অতি তুচ্ছ এই প্রাণী নিজের মেধায় সৃষ্টিরহস্যের সমাধানের দিকে এগুচ্ছে। তার পরিচয় সে রেখে যাচ্ছে কাব্যে, সাহিত্যে, সংগীতে, শিল্পকলায়। মাত্র সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার এই প্রাণী তার দীর্ঘ ছায়া ফেলেছে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। মানুষের সৃষ্টির প্রতি সম্মান দেখানো মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতিই সম্মান দেখানো। কারণ সব সৃষ্টির মূলে তিনি বাস করেন।
‘এ দুর্ভাগ্য দেশ হতে, হে মঙ্গলময়
দুর করে দাও তুমি সর্ব তুচ্ছ ভয়−
লোকভয়, রাজভয়, মৃত্যুভয় আর
দীনপ্রাণ দুর্বলের এ পাষাণভার।
এই চিরপেষণ যন্ত্রণা, ধুলিতলে
এই নিত্য অবনতি, দন্ডে পলে পলে
এই আত্ম অবমান, অন্তরে বাহিরে
এই দাসত্বের রজ্জু, ত্রস্ত নতশিরে
সহস্রের পদপ্রান্ততলে বারম্বার
মনুষ্য মর্যাদাগর্ব চিরপরিহার−
এ বৃহৎ লজ্জারাশি চরণ-আঘাতে
চুর্ণ করি দুর করো। মঙ্গল-প্রভাতে
মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে
উদার আলোকে-মাঝে, উন্নুক্ত বাতাসে।’
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:৫৫
দু:খ করে বলেছেন: ইসলামের ব্যাখ্যা দিতে সাহিত্যিককে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করাটা বেঠিক। দেখুন
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২৯
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন: আপনার দেয়া নবীকে নিয়ে প্রথম কাহিনীটুকু সত্য নয় । যে উপন্যাসিকের কথা উল্লেখ করেছেন ঐটা নিয়ে যথেস্ট বিতর্ক রয়েছে ।
Narrated Ibn Abbas: When the Prophet saw pictures in the Ka'ba, he did not enter it till he ordered them to be erased. When he saw (the pictures of Abraham and Ishmael carrying the arrows of divination, he said, "May Allah curse them (i.e. the Quraish)! By Allah, neither Abraham nor Ishmael practiced divination by arrows."
Sahih Bukhari 4:55:571