![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী, মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।
ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর ফতোয়া বিভাগে থাকা কালীন সময়ে লিখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া।
প্রশ্ন
১। বিদ্আত কাকে বলে ও এর হুকুম কি? বিদআত চিনার উপায় কি? এবং কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে করণীয় কি?
২। মাহফিলে মীলাদ ও তাতে কিয়াম করার বিধান কি? এটা কখন থেকে চালু হয় এবং এর ইতিহাস কি?
৩। ওরসের শরয়ী বিধান কি?
৪। ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যিয়াফত করা কি? এর জন্য বিশেষ কোন দিন তারিখ যেমন মৃত্যুর ৩য়, ৪র্থ বা ৪০তম দিনকে অধিক বরকতপূর্ণ মনে করে নির্ধারণ করার বিধান কি? ঈসালে সওয়াবের মাসনুন তরীক্বা কি?
জনাব মুফতি সাহেব হুজুরের কাছে আবেদন এই যে, উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক শরয়ী সমাধান দিয়ে আমাদেরকে রাহনুমায়ী করবেন।
নিবেদক
এখলাসপুর এলাকাবাসী
বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী
শরয়ী সমাধান
حامدا و مصليا و مسلما، اما بعد۔
১নং প্রশ্নে উত্তর:-
বিদআত এর পরিচয় :-
আভিধানিক অর্থে প্রত্যেক নতুন বিষয়কে বিদআত বলা হলেও ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ঐসব নতুন বিষয়কে বিদআত বলে যা দ্বীন ও ধর্ম মনে করে করা হয়। অথচ ইসলামী শরীয়তে এর কোন প্রমাণ নেই।
অর্থাৎ শরীয়তের চার দলীল কুরআন, হাদিস ইজমা এবং কিয়াসে যে সব বিষয়ের কোন ভিত্তি নেই; অথবা ইসলামের প্রথম তিন স্বর্ণ যুগে (সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে’-তাবেঈনের যমানায়) যে বিষয়কে দ্বীন বা সওয়াবের কাজ মনে করে করা হয়নি; এসব বিষয়কে ধর্মীয় কাজ বা সওয়াবের কাজ মনে করে করার নাম বিদআত। এ প্রসঙ্গে হাফেয ইবনে রজব (রহ.) “জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম” গ্রন্থে লিখেন:-
و المراد بالبدعة ما احدث مما لا أصل له في الشريعة يدل عليه و أما ما کان له أصل من الشرع يدل عليه فليس ببدعة شرعا و إن کان بدعة لغة۔ )جامع العلوم و الحکم صفحه ۱۹۳ بحواله راه سنت صفحه ۷۷۔(
অর্থ:- বিদআত ঐ নতুন বিষয়কে বলে যার প্রামাণ্য কোন ভিত্তি শরীয়তে নেই। আর যে নতুন বিষয়ের কোন প্রামাণ্য ভিত্তি শরীয়তে পাওয়া যায় তাকে শরয়ী বিদআত বলে না, যদিও আভিধানিক অর্থে তাকেও বিদআত বলা হয়।
আল্লামা সা’দুদ্দীন তাফতাযানী (রহ.) মৃত: ৭৯২ হিঃ তাঁর “শরহুল মাক্বাসিদ” গ্রন্থে উল্লেখ করেন:-
إن البدعة المذمومة هو المحدث في الدين من غير أن يکون في عهد الصحابة و التابعين ولادل عليه الدليل الشرعي۔ (شرح المقاصد جلد ۲ صفحه ۲۷۱ بحوالهء راه سنت صفحه ۸٤)
অর্থ: নিন্দনীয় বিদআত হলো ধর্মীয় ব্যাপারে কোন নবআবিষ্কৃত বিষয় যা সাহাবা ও তাবেঈনের যমানায় ছিলো না এবং এর পক্ষে শরয়ী কোন প্রমাণও নেই।
বিদআতের হুকুম :-
বিদআত অত্যন্ত মারাত্মক গোনাহ। কেননা এটি হলো ইসলামী শরীয়তে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন। এর দ্বারা দ্বীনের আসল রূপ-রেখা বদলে যায়। ফলে সত্য-মিথ্যা ও হক এবং বাতিলের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। মানুষ মিথ্যা ও বাতিল কাজটিকেই সহিহ্ ও হক এবং সওয়াবের কাজ মনে করে করতে থাকে। ফলে এ থেকে তাওবা করারও সুযোগ হয় না। তাই এটি মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্যে শয়তানের এক বড় হাতিয়ার। শয়তান মানুষকে এর দ্বারা খুব সহজেই পথভ্রষ্ট করতে পারে। কাল কেয়ামতের ময়দানে বিদআতী লোকেরা অনেক আশা-ভরসা নিয়ে উঠবে। তাদের ধারণানুযায়ী কৃত সৎকর্মের পুরস্কার লাভের আশায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এরাই হবে সবচে’ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত। তারা সেদিন তাদের কৃত সব আমলকে বৃথা এবং নিষ্ফল দেখতে পাবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন:-
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا (১০৩) الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا (১০৪)
অর্থ:- বলুন, আমি কি তোমাদেরকে সে সব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারাই সে লোক, যাদের পার্থিব জীবনের প্রচেষ্টা পন্ড হয়। অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।
অতএব বিদআত হলো মিথ্যাকে সত্য, বাতিলকে হক ও গোনাহ্র কাজকে সওয়াব মনে করা, যা ইসলামী শরীয়তে একটি জঘন্যতম অপরাধ। শয়তান এর দ্বারাই মানুষকে বেশী পথভ্রষ্ট করে। কাল কেয়ামতের মাঠে এই বিদআতী কর্ম কান্ডের কারণেই মানুষ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাইতো মানবতার মুক্তির দূত, বিশ্ব জাহানের করুণার আঁধার হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদআত ও বিদআতী সম্পর্কে উম্মতকে এত বেশী সতর্ক করেছেন যা শিরক ব্যতীত হয়ত অন্য কোন গোনাহ থেকে করেননি। নিম্নে এ সম্পর্কে কতিপয় সহিহ্ হাদিস পেশ করা হলো-
قال رسول الله صلي الله عليه و سلم أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ (مسلم شريف صفحه ۔۲۸۵۔۲۸٤جلد ۱،( و في رواية النسائي وکل ضلالة في النار (نسائي شريف جلد۱ صفحه ۱۷۹)
অর্থ:- নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন: জেনে রাখ, সর্বোত্তম বর্ণনা হলো আল্লাহর কিতাব পবিত্র কুরআন। সর্বোত্তম আদর্শ হলো মুহাম্মদ (সা.) এর আদর্শ। আর সর্বনিকৃষ্ট কাজ হলো বিদআত তথা নবআবিষ্কৃত বিষয়সমূহ। প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। আর প্রত্যেক গোমরাহীই জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
قال رسول الله من أحدث فيها حدثا أوأوي محدثا فعليه لعنة الله و الملئکة و الناس أجمعين۔ لا يقبل منه صرف و لا عدل- (بخاري شريف جلد۱ صفحه ۲۵۱)
অর্থ: রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মদিনা শরীফে কোন বিদআত আবিষ্কার করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লা’নত ও ফিরিশতাগণের লা’নত এবং সমস্ত মানব জাতির লা’নত। তার থেকে ফরয বা নফল কোন এবাদতই কবুল করা হবে না।
উল্লেখ্য যে, বিদআত কাজ সব জায়গায় অপরাধ, তবে পবিত্র নগরী মদিনাতে এহেন কাজ করার দ্বারা অপরাধের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। কেননা এ নগরী হলো হিদায়াত ও সুন্নতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়ার নগরী।
قال رسول الله أبي الله أن يقبل عمل صاحب بدعة حتي يدع بدعته۔ (إبن ماجه صفحه ٦)
অর্থ:- রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা বিদআতীর কোন আমল কবুল করা থেকে অস্বীকার করেছেন, যে পর্যন্ত সে তার বিদআত ছেড়ে না দেয়।
قال رسول الله من وقر صاحب بدعة فقد أعان علي هدم الإسلام (شعب الإيمان للبيهقي جلد ۷ صفحه ٦۱ رقم الحديث ۹٤٦٤)
অর্থ:- রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর সম্মান দেখাল, সে যেন দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করতে সহযোগীতা করল।
বিদআত ও বিদআতীর নিন্দা ও তা থেকে সতর্ক করে রাসূল (সা.) প্রিয় উম্মতকে অনেক কথা বলে গেছেন, হাদিসের কিতাবসমূহ থেকে যদি শুধু এ বিষয়ের হাদিসকে একত্রিত করা হয় তবে এক বিশাল ভান্ডার জমা হয়ে যাবে। তবে হক পিপাসুদের জন্যে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাই যথেষ্ট। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হলো সর্বপ্রকার বিদআতী কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখা। নিজের ঈমান ও আমল হেফাজত করা। পরকালের জীবনের চরম ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আল্লাহপাক আমাদের সকলকেই তাওফিক দান করুন! আমীন!!
বিদআত নির্ণয়ের মানদন্ড
প্রশ্ন:-অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোন একটি বিষয় বিদআত হওয়া ও না হওয়ার মধ্যে আলেমগণের ইখতিলাফ হয়। উভয় পক্ষই কুরআন-হাদিস থেকে দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করে। এক্ষেত্রে বিদআত নির্ণয়ের সঠিক মানদন্ড কি?
উত্তর:-একথায় কোন সন্দেহ নেই যে, প্রত্যেক বাতিল ফিরকাই; চাই তা কাদিয়ানী হোক বা রাফেজী, নাস্তিক হোক বা বিদআতী; নিজ নিজ দাবীর পক্ষে কুরআন-হাদিস থেকে কিছু দলীল দেয়ার চেষ্টা করে। তাই এক্ষেত্রে কোন বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালার একমাত্র সঠিক মানদন্ড হলো তা’আমুলে সালফে সালেহীন। অর্থাৎ ইসলামের প্রথম তিন স্বর্ণ যুগ সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের আমল। এই তিন যুগই হলো সুন্নত-বিদআত পার্থক্য করার মানদন্ড। সুতরাং যে কাজটি ঐ যুগে করার মত পরিবেশ-পরিস্থিতি ও কারণ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা দ্বীন মনে করে করেননি, এমন কাজকে পরবর্তীতে দ্বীন মনে করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে করাই হলো বিদআত।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসের বর্ণনায় এসেছে
عن العرباض بن سارية قال وعظنا رسول الله صلي الله عليه و سلم موعظة ذرفت منها العيون و وجلت منها القلوب، قلنا يا رسول الله، إن هذه لموعظة مودع، فماذا تعهد إلينا، قال׃قد ترکتکم علي البيضاء ليلها کنهارها، لا يزيغ عنها بعدي إلاهالک، و من يعش منکم فسيري إختلافا کثيرا، فعليکم بما عرفتم من سنتي و سنة الخلفاء الراشدين المهديين، و عليکم بالطاعة و إن عبدا حبشيا عضوا عليها بالنواجذ، فإنما المؤمن کالجمل الأنف حيثما أنقيد انقاد۔ (مسند الإمام احمد بن حنبل جلد۲۸ صفحه ۳٦۷ رقم الحديث ۱۷۱٤۲)
অর্থ:- হযরত এরবায ইবনে সারিয়া (রা.) বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূল (সা.) আমাদেরকে এমন ওয়াজ করলেন যার কারণে চক্ষু থেকে অশ্র“ প্রবাহিত হলো, এবং অন্তর সমূহ ভীতসন্ত্রস্ত হলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এটি তো বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদেরকে কিসের ওসিয়ত করেন? তখন রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাচ্ছি এমন সাদা স্পষ্ট ময়দানে যার রাত্র ও দিন সমান। আমার পরে এখান থেকে কেউ বিচ্যুত হবে না কেবল ধ্বংসপ্রাপ্ত ছাড়া। আর আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নত ও আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরবে। আর তোমরা (আমীরকে) অনুসরণ করবে যদিও সে একজন হাবশী গোলাম হয়। একথা গুলোকে দাঁত দিয়ে আঁকড়িয়ে ধর কেননা মুমিন হলো লাগাম লাগানো উটের ন্যায়। তাকে যেদিকেই নেয়া হয় সেদিকেই যায়।
অন্য এক বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেনÑ
خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم۔
(بخاري شريف جلد۱ صفحه ۵۱۵)
অর্থ:- আমার উম্মতের সর্বোত্তম যুগ হলো আমার যুগ, অতঃপর তাদের সাথে মিলিত পরবর্তী যুগ, অতঃপর তাদের সাথে মিলিত পরবর্তী যুগ।
এ ধরণের সহিহ্ হাদিসের বহু বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, সাহাবা, তাবেঈ এবং তাবে’ তাবেঈগণের আমল ইসলামী শরীয়তের দলীল। এবং যে কোন বিষয়ের সুন্নত ও বিদআত হওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক মানদন্ড। এই তিন যুগ সম্পর্কেই রাসূল (সা.) সর্বোত্তম হওয়ার স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা সাআদ রুমী (রহ.) “মাজালিসুল আবরার” কিতাবে লিখেনÑ
لا يجوز أن يقلد الإنسان في دينه إلامن هو معصوم و هو صاحب الشريعة أو من شهد له صاحب الشريعة بالخير و هم القرون الثلاثة۔ (مجالس الأبرار صفحه ۱۳۳ بحواله اشرف الفتاوي جلد ۱ صفحه ٤۲۸)
অর্থ:- দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে নিষ্পাপ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর স্বাক্ষ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম তিন যুগ (সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে’-তাবেঈ) ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করা বৈধ নয়।
অতএব কোন বিষয়ে যদি সুন্নত ও বিদআত হওয়ার ব্যাপারে দ্বন্ধ বা মতানৈক্য হয় তবে ইসলামের প্রাথমিক তিন যুগ সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের আমলই হবে সেখানে চূড়ান্ত ফয়সালাকারী। যে আমল তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তা সুন্নত বলে বিবেচিত হবে। আর যে আমলের কোন অস্তিত্ত্ব তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে না তা বিদআত বলে গণ্য হবে।
সন্দেহযুক্ত বিষয়ে করণীয়
প্রশ্ন:- কোন বিষয়ে যদি কারো সন্দেহ হয় যে, বিষয়টি সুন্নত না বিদআত? সুনির্ধারিত ভাবে কোন একদিকে ফয়সালা করতে না পারে তবে ঐ ব্যক্তির জন্যে করণীয় কি?
উত্তর:-ধর্মীয় কিতাব অধ্যয়ন ও আলেমগণের বয়ান ইত্যাদির পরও যদি কোন বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে কারো সন্দেহ থেকে যায় যে, এটি সুন্নত না বিদআত? তখন ঐ ব্যক্তির জন্যে সঠিক রাস্তা হলো এই যে, সন্দেহযুক্ত এই বিষয়টিকে সে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিবে। এটাই ইসলামী শরীয়তের নির্দেশনা।
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন,
ألحلال بين و الحرام بين و بينهما مشتبهات، لا يعلمها کثير من الناس، فمن اتقي الشبهات إستبرأ لدينه و عرضه، و من وقع في الشبهات وقع في الحرام کالراعي حول الحمي، يوشک أن يوقع فيه (بخاري شريف جلد۱ صفحه ۱۳)
অর্থ:- হালাল ও হারাম সুস্পষ্ট এবং এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহযুক্ত বিষয় যা অনেক মানুষই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এসব সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে দূরে থাকল সে যেন নিজের দ্বীন ও সম্মানকে বাঁচাল। আর যে ব্যক্তি এসব সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হলো, তার উদাহরণ হলো ঐ রাখালের ন্যায় যে সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে জন্তু চড়ায়, যার ফলে কখনো ঐ চারণভূমিতেও পতিত হতে পারে।
এমন বহু সহিহ্ হাদিসের দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয় যে, কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি কারো সন্দেহ হয়, এটি সুন্নাত না বিদআত? মুস্তাহাব না মাকরূহ্? তখন সেক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর দিক নির্দেশনা হলো সে কাজটি ছেড়ে দেয়া। তাইতো হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফাতাওয়া গ্রন্থ “ফাতাওয়ায়ে শামী” তে উল্লেখ আছে-
اذا تردد الحکم بين سنة و بدعة کان ترک السنة راجحا علي فعل البدعة۔ (فتاوي شامي جلد۱ صفحه ٦۰۰)
অর্থ:- যখন কোন বিষয়ে সুন্নত ও বিদআত হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ হয় তখন বিদআত করার চেয়ে সুন্নত ছেড়ে দেয়াই অগ্রগণ্য।
২নং প্রশ্নের উত্তর
মাহ্ফিলে মীলাদের পরিচয়
মাহ্ফিল শব্দের অর্থ অনুষ্ঠান আর মীলাদ শব্দের অর্থ জন্ম। মাহফিলে মীলাদ অর্থ হলো জন্ম বৃত্তান্তের অনুষ্ঠান। তবে যে কারো জন্মের আলোচনাকে মাহ্ফিলে মীলাদ বলে না বরং বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার উদ্দেশ্যে প্রতি বৎসর ১২ই রবিউল আওয়াল মহা ধুমধামের সহিত যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তাকেই মাহ্ফিলে মীলাদ বলে। তবে পরবর্তীতে এর ব্যবহার আরো ব্যাপক হয়ে যায়। বৎসরের যে কোন সময় বরকতের উদ্দেশ্যে বা দোয়া কবুলের জন্য মীলাদ পড়া হয়। তবে এই মীলাদে রাসূল (সা.) এর জন্ম আলোচনা কোন মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে না। বরং রাসূল (সা.) এর শানে কিছু আরবি, ফারসি, উর্দু ও বাংলা শে’র ও কবিতা পাঠ করে উপস্থিত সকলেই সুর মিলিয়ে এক সাথে দুরূদ পড়া ও দোয়া করাই এর উদ্দেশ্য। এ পদ্ধতিতে দুরূদ পড়া ও দোয়া করাকেও মাহ্ফিলে মীলাদ শরীফ বা মীলাদ বলে অভিহিত করা হয়।
মীলাদ মাহ্ফিলের বিধান
একথায় সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, রাসূল (সা.) এর সাথে মুহাব্বত, ভালবাসা ও এশকের নামই হলো ঈমান। তাঁর (সা.) এর শুভ জন্ম থেকে নিয়ে ইন্তেকাল পর্যন্ত পবিত্র জীবনের প্রতিটি অংশের বর্ণনা ও ঘটনাবলী সহীহ্ভাবে জানা এবং তা আলোচনা করা অত্যন্ত বরকতময় ও আল্লাহ্ তায়ালার রহমত লাভের মাধ্যম। প্রত্যেক মুসলমানেরই কর্তব্য হচ্ছে, রাসূল (সা.) এর পূর্ণ জীবনী বিশুদ্ধভাবে জানা এবং তাঁকে নিজের জীবনের দিশারী বানানো। বছরের প্রতিটি মাস, মাসের প্রতিটি সপ্তাহ্ এবং সপ্তাহের প্রতিটি দিন ও দিনের প্রত্যেকটি ঘন্টা ও মিনিটের মধ্যে এমন কোন মুহুর্ত নেই যেখানে রাসূল (সা.) এর জীবনী আলোচনা নিষেধ। বরং বছরের যে কোন দিনের যে কোন সময়ে রাসূল (সা.) এর জন্ম বৃত্তান্ত বা জীবনী আলোচনা করা খুবই বরকতময় মুস্তাহাব কাজ। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হলো এই যে, রাসূল (সা.) এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার জন্যে ১২ই রবিউল আউয়াল কে নির্ধারিত করা, তাতে মহা ধুমধামের সহিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, শিন্নী ও রকমারী খানার ব্যবস্থা করা, বিশেষভাবে এদিনেই গরীব-মিসকীনকে খানা খাওয়ানো, এবং জশনে জুলুস ও মিছিল বের করা এরূপ মীলাদ মাহ্ফিলের আয়োজন ইসলামের অনুসরণীয় প্রথম তিন স্বর্ণ যুগের কোথাও কোন অস্তিত্ত্ব নেই। রাসূল (সা.) এর নবুওয়াতের ২৩ বছর, তারপর খোলাফায়ে রাশেদীনের ৩০ বছর এবং সাহাবায়ে কেরামের যমানা ১১০হি. এবং তাবিয়ীনের যমানা ১৭০ হিঃ ও তাবে তাবেঈনের যমানা প্রায় ২২০ হি. পর্যন্ত। রাসূল (সা.) এর এশ্ক তাঁদের মধ্যে পরিপূর্ণ ছিল। মুহাব্বত ও ভালবাসা অনেক বেশী ছিল। রাসূল (সা.) এর সম্মান ও মর্যাদা তাঁরাই সবচেয়ে বেশী করেছেন। এতসব কারণ থাকা সত্যেও ঐ তিন স্বর্ণ যুগের কেউ এই মীলাদ মাহ্ফিলের আয়োজন করেননি। এবং এভাবে করাকে সওয়াবের কাজও মনে করেননি। তাই প্রচলিত এই পদ্ধতিতে মীলাদ মাহ্ফিলের আয়োজন ধর্মীয় ব্যাপারে একটি নবআবিষ্কৃত বিষয়। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে নিকৃষ্টতম বিদআত বলে গণ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লামা আবুল হাসান আলী বিন ফজল মুকাদ্দাসী স্বীয় কিতাব “জামিউল মাসায়িলে” বলেনÑ
إن عمل المولد لم ينقل من السلف و إنما أحدث بعد القرون الثلاثة في الزمان الطالح و نحن لا نتبع الخلف فيما أهمله السلف لأنه يکفي بهم الإتباع فأي حاجة لنا إلي الابتداع۔
অর্থ:- মীলাদ শরীফের আমল সালফে সালেহীন (সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈন) থেকে বর্ণিত নয়। বরং তা প্রথম তিন যুগের পর খারাপ যমানায় আবিষ্কৃত। অতএব পূর্ববতীরা যে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে আমরা পরবর্তীদের অনুসরণ করবনা। কেননা পূর্ববর্তীদের অনুসরণই যথেষ্ট। নতুন বিষয় আবিষ্কারের আর কি দরকার?
আল্লামা আব্দুর রহমান মাগরিবী (রহ.) লিখেন:Ñ
إن عمل المولد بدعة لم يقل به و لم يفعله رسول الله صلي الله عليه و سلم و الخلفاء و الأئمة۔ (کذا في الشرعة الإلهية بحواله راه سنت صفحه۱٦۵)
অর্থ:- নিশ্চয় মীলাদ শরীফের আমল বিদআত। কেননা রাসূল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদীন এবং আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন কেউই এটা করেননি। এবং করার জন্য বলেনওনি।
মীলাদ মাহফিলে কিয়াম
মীলাদ মাহফিলের আরেকটি কাজ হলো রাসূল (সা.) এর জন্মের আলোচনার সময় বা সালাত ও সালাম পাঠের সময় মাঝখানে হঠাৎ সবাই মিলে দাঁড়িয়ে যায়। অনেকের আক্বীদা-বিশ্বাস যে, রাসূল (সা.) সেই মাহফিলে উপস্থিত হন। তাই তারা রাসূল (সা.) এর শুভাগমণের সম্মানার্থে কিয়াম করে। আবার অনেকেই কিয়ামকে দুরুদ শরীফ পড়ার আদাব বলে ভাবে। অনেকেই এই কিয়ামেকে ওয়াজিব-ফরযের ন্যায় মনে করে। যারা এভাবে মীলাদ ও কিয়াম করে না তাদেরকে ওয়াহাবী, কাফের, বেআদব ইত্যাদি বলে গালাগালি করে।
এভাবে কিয়াম করার কোন বিধান ইসলামী শরীয়তে নেই। ইসলামের প্রথম তিন যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না। তাই এ কাজটিও একটি নিন্দনীয় বিদআত। যা অবশ্যয় পরিত্যাজ্য। এর পেছনে যেসব যুক্তি প্রমাণ দেয়া হয় তার কোন ভিত্তি নেই। মীলাদ মাহ্ফিলে রাসূল (সা.) আসেন এ মর্মে কুরআন হাদিসের কোথাও কিছু বলা হয়নি। বরং এর বিপরীতে বলা হয়েছে:-
قال رسول الله صلي الله عليه و سلم إن لله ملائکة سياحين في الأرض يبلغوني من أمتي السلام. (نسائي شريف جلد ۱ صفحه ۱٤۳)۔
অর্থ:- রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ্র একদল ফিরিশতা এমন রয়েছে যারা যমীনে বিচরণ করে এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার কাছে ছালাম পৌঁছায়।
এরূপ অনেক সহীহ্ হাদিস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, কোন মীলাদ বা দুরূদের মাহ্ফিলে রাসূল (সা.) নিজে উপস্থিত হন না। বরং তাঁর কাছে দুরূদ ও ছালাম পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীতে বিচরণশীল বিশেষ একদল ফিরিশতা নিয়োজিত রেখেছেন। অতএব একথা ভিত্তিহীন বানোয়াট যে, রাসূল (সা.) মীলাদ মাহ্ফিলে এসে উপস্থিত হন। বরং এটি সহিহ্ হাদিসের পরিপন্থী কথা। সুতরাং এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে কিয়াম করাও ভিত্তিহীন অবৈধ এবং বিদআত। আর এ ধারণাও ভুল যে, কিয়াম করা দুরুদের আদাব। যদি তাই হতো, তাহলে তারা মীলাদ মাহফিলের পুরো সময়টাতেই দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু তারা মাঝখানে কেবল অল্প সময় দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ নামাযে দুরূদ শরীফ পড়ার মাসনুন পদ্ধতি হলো বসে পড়া। যদি দাঁড়িয়ে দুরূদ পড়াই আদাব হতো তাহলে নামাযেও দাঁড়িয়ে পড়া সুন্নত হতো। এ ছাড়া দুরূদ পড়ার সময় বা রাসূল (সা.) এর আলোচনার সময় এভাবে কিয়াম করার কোন বিধান ইসলামী শরীয়তের কোন দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণ কেউই এভাবে কিয়াম করেননি। এমনকি স্বয়ং রাসূল (সা.) নিজে কোন মজলিসে উপস্থিত হলেও সাহাবায়ে কেরাম কিয়াম করতেন না। কেননা রাসূল (সা.) কিয়াম করাকে অপছন্দ করতেন, যা সহিহ্ হাদিসে বর্ণিত আছে।
এজন্যই হক্কানী আলেমগণ সর্বদা উম্মতকে এরূপ মীলাদ ও কিয়াম থেকে বারণ করেন ও তাদেরকে সতর্ক করেন। এ প্রসঙ্গে ক্বাযী শিহাবুদ্দীন দৌলত আবাদী (রহ.) তাঁর “তুহফাতুল ক্বাযা” গ্রন্থে লিখেনÑ
مجلس المولد الشريف لا ينعقد لأنه محدث و کل محدث ضلالة وکل ضلالة في النار، و ما يفعلونه من الجهال علي رأس کل حول في شهر ربيع الأول ليس بشئ و يقومون عند ذکر مولده صلي الله عليه و سلم و يزعمون أن روحه صلي الله عليه و سلم يجئ و يحضر، فزعمهم باطل بل هذا الإعتقاد شرک و قد منع الأئمة عن مثل هذا۔ (اشرف الفتاوي جلد۱ صفحه ٤٤۲)
অর্থ:- মীলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। কেননা তা নবআবিষ্কৃত। আর প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহী। আর প্রত্যেক গোমরাহীই জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে জাহেলগণ প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাসে যা করে তার কোন ভিত্তি নেই। আর তারা রাসূল (সা.) এর জন্মের আলোচনার সময় কিয়াম করে ও ধারণা করে যে, রাসূল (সা.) এর পবিত্র আত্মা সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের এ ধারণা বাতিল বরং শিরকী আক্বীদা। ইমামগণ এরূপ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন।
শায়েখ ইবনে হাজার মক্কী (রহ.) বলেন,
إن القيام في أثناء المولد الشريف بدعة لا ينبغي فعلها۔
অর্থ:- মীলাদ শরীফের মাঝখানে কিয়াম করা বিদআত। এটা করা উচিৎ নয়।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথা স্পষ্ট হলো যে, মীলাদ ও কিয়াম শরয়ী কোন দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। ইসলামের প্রথম তিন যুগে এর কোন অস্তিত্ত্ব ছিলো না। বরং তা নবআবিষ্কৃত বিষয়। তাই এবার আমরা আলোচনা করব এর প্রকৃত ইতিহাস ও আবিষ্কারক কে?
মীলাদ মাহ্ফিলের ইতিহাস
ইসলামের ইতিহাসের পূর্ণ ছয়শত বছর অতিবাহিত হয়ে গেল মীলাদ মাহ্ফিল নামে কোন অনুষ্ঠান বা এবাদতের নামগন্ধও তাতে ছিলো না। ৬০০ বা ৬০৪ হিজরীতে ইরবিল দেশের বাদশাহ্ মুজাফফরুদ্দীন কোকবুরীর সহযোগিতায় কতিপয় দুনিয়ালোভী নামধারী আলেমের মাধ্যমে প্রচলিত এই মীলাদ মাহ্ফিলের আবিষ্কার হয়।
বাদশাহ মুজাফফরুদ্দীন কোকবুরী সরকারী কোষাগার থেকে মীলাদ অনুষ্ঠানের জন্যে অনেক অর্থ সম্পদ ব্যয় করত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিত। রাসূল (সা.) এর জন্ম তারিখে মতানৈক্য থাকার কারণে এই অনুষ্ঠান এক বছর ৮ই রবিঃ আউঃ আরেক বছর ১২ই রবিঃ আউঃ করা হত।
ছয়শত চার হিজরীতে একজন অপব্যয়কারী বাদশাহ্ ও কতিপয় দুনিয়ালোভী চাটুকার আলেমদের মাধ্যমে আবিষ্কৃত এই মীলাদ মাহ্ফিল আস্তে আস্তে মুসলিম সমাজে প্রচলিত হতে থাকে। প্রত্যেক যুগের হক্কানী আলেমগণ এ থেকে বারণ করলেও মুর্খ ও জাহেল লোকেরা একে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে মনে করে। নামধারী দুনিয়ালোভী কতিপয় বিদআতী মৌলভীগণ একে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর মুহাব্বতের প্রকাশ বলে চালিয়ে দেয়। ফলে এক সময় এই মীলাদ অনুষ্ঠানই ঈদে মীলাদুন্নবীতে পরিণত হয়। এমনকি অনেক অতিভক্ত মুর্খ লোকদেরকে এই শ্লোগান দিতেও শুনা যায় যে, সকল ঈদের সেরা ঈদ/ ঈদে মীলাদুন্নবী।
ইসলামে ঈদ দু’টি না তিনটি?
আবূদাউদ শরীফে সহিহ্ সনদে বর্ণিত এক হাদিসে আছে:-
عن أنس قال قدم النبي صلي الله عليه و سلم المدينة ولهم يومان يلعبون فيهما فقال ما هذان اليومان، قالوا کنا نلعب فيهما في الجاهلية، فقال رسول الله صلي الله عليه و سلم قد ابدلکم الله بهما خيرا منهما يوم الأضحي و يوم الفطر۔ (أبو داؤد جلد۱ صفحه۱٦۱، مشکوة جلد ۱ صفحه ۱۲٦(
অর্থ: হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) যখন মদিনায় আসেন। তখন মদিনাবাসীদের জন্য বছরে দু’টি দিন ছিল যাতে তারা উৎসব করত। রাসূল (সা.) এ দিন দু’টি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন, তখন তারা বলল, আমরা জাহেলী যুগে এ দু’দিন উৎসব করতাম। তখন রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের এ দু’দিনকে আরো উত্তম দু’দিনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।
এরূপ আরো অসংখ্য হাদিসের দ্বারা ইসলামের বাৎসরিক ঈদ দু’টি বলে প্রমাণিত হয়। তিনটি ঈদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী নামে কোন ঈদ এর পক্ষে হাদিসের কিতাব সমূহে সহিহ্ হাদিস তো দুরের কথা কোন যয়ীফ বা মওজু রেওয়ায়েতও পাওয়া যায়না। সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের যমানায় এ নামে কোন ঈদের নাম নিশানাও ছিলো না। নামধারী সুন্নী আশেকে রাসূলগণ অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করে সরাসরি রাসূল (সা.) এর সহিহ্ হাদিস সমূহের বিরোধীতা করছে। রাসূল (সা.) এর রেখে যাওয়া ইসলামের দুই ঈদের সাথে আরেকটি বাড়িয়ে নবী করীম (সা.) এর সাথে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে। “অতিভক্তি চোরের লক্ষণ” একেই বলা হয়। তাই এহেন বেআদবী মূলক ধৃষ্টতা প্রদর্শন ও বিদআত কাজ থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য অতীব জরুরী।
রাসূল (সা.) এর জন্ম দিবস কি চায়?
ঈদ পালন না সওম সাধন??
নিঃসন্দেহে রহমাতুল্লিল আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম বিশ্ববাসীর জন্য এক বড় নেয়ামত ও আনন্দের বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই আনন্দের দিনটিকে মানুষ কিভাবে পালন করবে? যারা ঈমান আনেনি, রাসূল (সা.) এর আনুগত্য স্বীকার করেনি, তাদেরকে নিয়ে তো কোন কথা নেই। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, ইসলামের লাগাম লাগিয়েছে, সর্বক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর আনুগত্য স্বীকার করেছে, তাদের জন্যে করণীয় হলো এক্ষেত্রে রাসূল (সা.) কি করেছেন বা করার নির্দেশ দিয়েছেন তা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা। তাই এখানে রাসূল (সা.) এর জন্মদিনে কি আমল ছিল তা উল্লেখ করা হলো।
সহিহ্ মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বর্ণিত আছেÑ
عن أبي قتادة الأنصاري قال و سئل عن صوم الإثنين، قال ذاک يوم ولدت فيه و يوم بعثت أو أنزل علي فيه۔ (مسلم شريف جلد۱ صفحه۳٦۸)
অর্থ:- হযরত আবু কাতাদাহ্ আনসারী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) কে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, এদিনেই আমি জন্ম লাভ করি এবং এদিনেই আমার উপর ওহী অবতীর্ণ করা হয়।
এই হাদিস এবং এরূপ আরো অনেক সহিহ্ হাদিসের দ্বারা জানা যায় যে, রাসূল (সা.) জন্ম দিনের শুকরিয়া পালনার্থে সোমবারে রোযা রাখতেন। আরো বিস্তারিত জানার জন্যে দেখুন:-
আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী- ৪/২৮৬,
তারীখে দিমাশ্ক- ৩/৬৬
অতএব কোন মুসলমান যদি সত্যিকার অর্থে আশেকে রাসূল ও নবী প্রেমিক হতে চান এবং রাসূল (সা.) এর জন্ম দিবস পালন করতে চান তবে তাঁর জন্য করণীয় হলো রাসূল (সা.) এর অনুসরণে সোমবারে রোযা রাখা। তা না করে যদি কেউ শুধুমাত্র বৎসরে একবার ১২ই রবিউল আউয়ালে রাসূল (সা.) এর জন্ম দিবস পালন করে, তাও আবার রোযার পরিবর্তে ঈদ করে। তবে তা হবে রাসূল (সা.) এর সাথে চরম গোসতাখী ও বেআদবী। যা কোন আশেকে রাসূল তো দূরের কথা কোন সাধারণ মুসলমানও করার দুঃসাহস দেখাতে পারে না। তাই সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের কর্তব্য হলো কুরআন-হাদিস বিরোধী নবআবিষ্কৃত প্রচলিত এসব মীলাদ মাহ্ফিলের মত গর্হিত বিদআত কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। নিজের মূল্যবান হায়াতকে এসব কাজে ব্যায় না করে পরকালের ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে নিজেকে বাঁচানো। আল্লাহ্পাক সকলকেই দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!!
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ওরস ও তার শরয়ী বিধান
ওরস এর পরিচয়:-
বৎসরের কোন এক নির্ধারিত দিনে কোন পীর বা ওলীর মাজারে তাঁর ভক্তবৃন্দ সকলেই একত্রিত হয়ে যিয়ারত করে, ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আমল ও অনুষ্ঠান করে। অনেকেই সেখানে গিয়ে মাযারকে সিজদা করে ও তাওয়াফ করে এবং আলো জ্বালায়। এছাড়াও গান-বাদ্যসহ আরো অনেক কাজ করে থাকে। এটাকেই ওরস বলে অভিহিত করা হয়।
ওরস এর শরয়ী বিধান
একথায় কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ্র ওলী ও বুযুর্গগণের সাথে মুহাব্বত রাখা ঈমানের দাবী। তাদের জন্য বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা, কবর কাছে থাকলে গিয়ে যিয়ারত করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা খুবই প্রশংসনীয় মুস্তাহাব আমল। কিন্তু বৎসরের কোন একটি দিনকে কবর যিয়ারতের জন্যে বিশেষভাবে নির্ধারিত করা এবং ঐ দিনে সকলেই একত্রিত হয়ে ওরস করা কখনোই জায়েয হবে না। কেননা রাসূল (সা.) এভাবে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে একত্রিত হওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-
لا تجعلوا قبري عيدا (نسائي۔ مشکوة جلد ۱ صفحه۸٦)
অর্থ:- তোমরা আমার কবরে ঈদের ন্যায় উৎসব করিও না।
অর্থাৎ ঈদে যেভাবে তোমরা সবাই মিলে একত্রিত হও আমার কবরে যিয়ারতের জন্যে সেভাবে একত্রিত হয়ো না। অতএব যে কাজ রাসূল (সা.) এর কবরে নাজায়েয তা অন্য কোন পীর বা ওলীর মাজারে জায়েয হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
এ প্রসঙ্গে ক্বাযী ছানাউল্লাহ্ পানিপথী (রহ.) “তাফসীরে মুযহরী” কিতাবে লিখেন-
لا يجوز ما يفعله الجهال بقبور الأولياء و الشهداء من السجود و الطواف حولها و اتخاذ السرج و المساجد إليها و من الاجتماع بعد الحول کالأعياد و يسمونه عرسًا. (تفسير مظهري جلد ۲ صفحه ٦۵)
অর্থ: জাহেলগণ ওলীদের মাজারে যা কিছু করে তার সবই নাজায়েয। অর্থাৎ কবরকে সিজদা করা ও তার আশে পাশে তাওয়াফ করা এবং আলো জ্বালানো ও তার দিকে সিজদা করা এবং বছর পুর্তিতে ঈদের ন্যায় সেখানে একত্রিত হওয়া ও তাকে ওরস নামে আখ্যায়িত করা।
মূলত প্রচলিত এ ওরস কেবল মাত্র একটি গোনাহের নাম নয় বরং তা বিভিন্ন প্রকার র্শিক, বিদআত ও শরীয়ত বিরোধী অনেক কর্মকান্ডের জংশনের নাম। এসব শরীয়ত বহির্ভূত কার্যসমূহ থেকে পাঠকবৃন্দের জ্ঞাতার্থে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
কবরে মসজিদ নির্মাণ ও সিজদা করা
এসব ওরসকে কেন্দ্র করে পীর আউলিয়াদের কবরে মসজিদ নির্মাণ করা হয় বা কবরকেই সিজদার স্থান বানানো হয়। এটা শিরকী কাজ। যা ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের মনগড়া বানানো। রাসূল (সা.) উম্মতকে এসব কাজ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা.) যখন অসুস্থ অবস্থায় শায়িত ছিলেন, তখন নবীপতœী হযরত উম্মে সালমা ও উম্মে হাবীবা (রা.) হাবশা দেশের “মারিয়া” নামক একটি গির্জার সুন্দর্য্য ও তাতে অঙ্কিত ফটোর কথা উল্লেখ করেন। রাসূল (সা.) তখন মাথা তুলে বললেন, এরা ঐসব লোক যখন তাদের কোন বুযুর্গলোক মারা যায় তখন তাঁর কবরে তারা মসজিদ নির্মাণ করে। অতঃপর তাতে এসব ফটো অংকন করে। এরাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্টতম মাখলুক।
অন্য এক বর্ণনায় রাসূল (সা.) এরশাদ করেন,
ألاوإن من کان قبلکم کانوا يتخذون قبور انبياءهم و صالحيهم مساجد ألا فلا تتخذوا القبور مساجد إني أنهاکم عن ذلک.
(مسلم شريف جلد۱ صفحه۲۰۱)
অর্থ:- সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীগণ নবী ও বুযুর্গদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছিলো। খবরদার! তোমরা কবরসমূহকে সিজদার স্থান বানিয়োনা। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে এ কাজ থেকে নিষেধ করছি।
কবর পাকা করা ও প্রাসাদ নির্মাণ
এসব ওরস উদযাপনের সুবিধার্থে কবরসমূহকে পাকা করা হয়। সেখানে নির্মাণ করা হয় প্রাসাদ, ওরসের সময় সেখানে লোকজন বসে ও অবস্থান করে। এসব কাজই ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ।
সহিহ্ হাদীসে হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে,
نهي رسول الله صلي الله عليه و سلم أن يجصص القبر و أن يبني عليه و أن يقعد عليه (مسلم شريف جلد۱ صفحه ۳۲۱، ترمذي شريف جلد ۱ صفحه ۱۲۵، مشکوة جلد۱ صفحه ۱٤۸)
অর্থ:- রাসূল (সা.) কবর পাকা করতে ও তার উপর নির্মাণ করতে এবং তথায় বসতে নিষেধ করেছেন।
অন্য এক সহিহ্ হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন,
لأن يجلس أحدکم علي جمرة فتحرق ثيابه فتخلص إلي جلده خير له من أن يجلس علي قبر۔ (مسلم شريف جلد۱ صفحه ۳۱۲، مشکوة شريف جلد ۱ صفحه ۱٤۸)
অর্থ:- তোমাদের কারো জন্যে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর বসে কাপড় পুরে চামড়ায় আগুন পৌঁছে যাওয়া উত্তম হবে কবরের উপর বসার চেয়ে।
কবর যিয়ারতের জন্য মহিলাদের উপস্থিতি
ও তাতে আলো জ্বালানো
কবর যিয়ারতের জন্যে মহিলাদের সেখানে উপস্থিত হওয়া ও সেখানে সিজদা করা এবং তাতে আলো জ্বালানো, এসবই ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ গর্হিত কাজ। যা প্রচলিত ওরসে করা হয়।
সহিহ্ হাদীসের কিতাব সমূহে বর্ণিত আছে,
لعن رسول الله صلي الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد و السرج. (أبو داؤد شريف جلد۲ صفحه ۱۰۵، نسائي شريف جلد ۱ صفحه ۲۲۲، طيالسي صفحه۷۵۳، سنن کبري للبيهقي جلد ۵ صفحه ٤۵۸، مشکوة شريف جلد۱ صفحه۷۱)
অর্থ: কবর যিয়ারতকারিনী মহিলা ও সিজদাকারী ও তাতে আলো প্রজ্জ্বলনকারীদের উপর রাসূল (সা.) লানত করেছেন।
গান-বাদ্য করা ও ঢোল-তবলা বাজানো
প্রচলিত এসব ওরসে আরেকটি জঘন্যতম যে গোনাহ্ করা হয় তা হলো গান-বাদ্য করা ও ঢোল, তবলা ইত্যাদি বাজানো। কুরআনের অনেক আয়াত ও অসংখ্য সহিহ্ হাদীস দ্বারা এগুলোর হারাম হওয়া প্রমাণিত। এক হাদিসে নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন যে, আমাকে আল্লাহ্ পাক সারা জাহানের রহমত ও পথ প্রদর্শক করে পাঠিয়েছেন। আমাকে তিনি আদেশ করেছেন, খেলাধুলা ও গান বাদ্যের যন্ত্রসমূহ যথা ঢোল, তবলা, সারেঙ্গী, সেতারা ইত্যাদি মিটিয়ে দেয়ার জন্য।
একটু লক্ষ্য করার বিষয় হলো, যে কাজকে মিটিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল (সা.) কে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন সে কাজকে আবার একজন মুসলমান কিভাবে করতে পারে? তাও আবার সওয়াবের কাজ মনে করে দাম্ভিকতার সাথে করা হয়। نعوذ بالله من ذلک
সার কথা হলো এই যে, প্রচলিত এই ওরস এমন অনেক জঘন্যতম গোনাহের সমষ্টি যার নিষিদ্ধতা ও ভয়াবহ শাস্তির কথা বিভিন্ন সুস্পষ্ট ও সহীহ শুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যার নমুনা স্বরূপ কিয়া দাংশ উপরে আলোকপাত করা হয়েছে। বিস্তারিত দেখুন উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী দা.বা. কর্তৃক রচিত “সুন্নাত-বিদআতের সঠিক পরিচয়” গ্রন্থের পৃ: ১১৩-১১৭।
মূলত কবর ও মাযারকে নিয়ে এসব কর্মকান্ড বিজাতীয় ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের থেকে মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে। যা থেকে রাসূল (সা.) মুসলমানদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো; কতিপয় মুর্খ, বুযুর্গদের অতিভক্ত লোকজন বিজাতীয় এ সংস্কৃতিকে এমনভাবে আঁকড়িয়ে ধরেছে যে, ইয়াহুদী-খৃষ্টানকেও ছাড়িয়ে গেছে। তারা তো শুধু নবী ও ওলীগণের কবরে এসব করত আর মুর্খ মুসলমানগণ ফাসেক ও ভন্ড বেশরা ফকির এবং লেংটা বাবাদের কবরেও এসব করে থাকে। এমনকি মানুষকে বাদ দিয়ে কুমিরের মত প্রাণীরও মাযার নির্মাণ করে। অনেক ক্ষেত্রে কোন কবর না থাকা সত্ত্বেও সেখানে মিথ্যা বানোয়াট মাযার তৈরী করা হয়। যা দেখে ইয়াহুদী-খৃষ্টানরাও লজ্জাবোধ করবে। এসব শরীয়ত বিরোধী গর্হিত পাপের কাজ থেকে একজন মুসলমানের বেচে থাকা ঈমানী দায়িত্ব। প্রচলিত এসব ওরসে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা থেকেও একজন খাঁটি মুসলমানকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সকলকেই দ্বীনের সহিহ্ বুঝ ও তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন! আমীন!!
ওরস ও মাযার সম্পর্কে আরো কতিপয় জরুরী ফাতওয়া
প্রশ্ন: আজমীর, সিলেট ও অন্যান্য স্থানের পীর-আউলিয়ার মাযার যিয়ারতের জন্য সফর করা জায়েয কি না?
উত্তর: আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার যিয়ারত করা পুরুষদের জন্য যদিও জায়েয বরং ছওয়াবের কাজ, কিন্তু বর্তমান যুগে মাযারে র্শিক-বিদআত ও বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে ঐটা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয হবে না। কিন্তু মহিলাদের জন্য মাযার ও কবর যিয়ারত করা অর্থাৎ কবরের নিকট গিয়ে দন্ডায়মান হওয়া কিছুতেই জায়েয নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন।
কোন পীর বা বুযুর্গের মাজারে গিয়ে
কোন কিছু প্রার্থনা করা র্শিক
অনেক অবুঝ মুর্খ লোকেরা ভন্ডপীর ও বেশ্রা ফকীরদের প্ররোচনায় মৃত পীর বা বুযুর্গকে নিজের হাজত পূরণকারী মনে করে। তাদের কাছে যে কোন হাজত পূরণ করে দেয়ার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে। তাদেরকে মুশকিল কুশা, গাওসুল আজম ইত্যাদি উপাধী দিয়ে থাকে। আর এ আক্বীদা বা বিশ্বাসের কারণেই তারা মাজারে গিয়ে নিজেদের বিভিন্ন হাজত পূরণের জন্য মৃত ওলী ও পীরের কাছে প্রার্থনা করে থাকে। ইসলামী শরীয়তের আলোকে এই আক্বীদা বিশ্বাস ও এভাবে গায়রুল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করা সম্পূর্ণ হারাম ও র্শিক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্পাক রাব্বুল আলামীন বলেন
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ: এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকেও ডাকিবে না, যা তোমার উপকার ও করে না, অপকারও করে না। কারণ এটা করলে তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
অন্যত্র আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ
অর্থ:- ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক পথভ্রষ্ট কে যে আল্লাহ্র পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কেয়ামতের দিন পর্যন্তও তাকে সাড়া দিবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিতও নয়।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-
و إذا سألت فاسئل الله، و اذا استعنت فاستعن بالله، و اعلم ان الامة لو اجتمعت علي ان ينفعوک بشئ لم ينفعوک الا بشئ قد کتبه الله لک۔ و لو اجتمعوا علي ان يضروک بشئ لم يضروک الا بشئ قد کتبه الله عليک، رفعت الاقلام و جفت الصحف (رواه الترمذي في ابواب صفة القيامة)
অর্থ: যদি কোন কিছু প্রার্থনা করতে চাও তবে আল্লাহ্র কাছেই প্রার্থনা কর, যদি সাহায্য চাও তবে আল্লাহ্র কাছেই চাও। জেনে রাখ, গোটা জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্যে একত্রিত হয়, তবুও আল্লাহ্ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া তারা আর কোন উপকার করতে পারবে না। আর তারা যদি তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয় তবে আল্লাহ্ যা তোমার উপর লিখে রেখেছেন তা ছাড়া বিন্দুমাত্র ক্ষতিও তোমার করতে পারবে না।
সুতরাং কুরআন ও হাদিসের সুষ্পষ্ট বর্ণনা থেকে এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কোন পীর বা বুযুর্গ ব্যক্তিকে হাজত পূরণকারী, মুশকিল কুশা মনে করে কোন কিছু প্রার্থনা করলে তা র্শিক ও কুফরী। তাই মুর্খ লোকেরা পীর বা বুযুর্গদের মাজারে গিয়ে যেসব প্রার্থনা করে থাকে এসবই সরাসরি র্শিক।
কোন পীর বা বুযুর্গ বা নবী করীম (সা.) কে
আলেমুল গায়েব বিশ্বাস করা র্শিক।
অনেক মূর্খ মাজার পুজারীগণ কোন পীর বা বুযুর্গকে এবং অতি ভক্ত আশেকে রাসূলগণ রাসূল (সা.) কে আলিমুল গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, আলিমুল গায়েব একটি পরিভাষা। এর অর্থ হলো ঐসত্ত্বা যিনি কোনরূপ মাধ্যম ছাড়াই সকল বিষয় সম্পর্কে অকাট্যভাবে সম্যক অবগত।
সুতরাং যিনি কোনরূপ মাধ্যম দ্বারা; কোন কিছু জানতে পারেন, যেমন নবীগণ ওহীর দ্বারা, ওলীগণ কাশ্ফ, ইলহামের দ্বারা অন্যান্যগণ নিজ প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি বা বাহ্যিক পঞ্চ ইন্দ্রিয় অথবা অভ্যন্তরীন ইন্দ্রিয় কিংবা বিবেক বুদ্ধির দ্বারা তাকে আলিমুল গায়েব বলা যাবে না। কেননা উল্লিখিত ব্যাখ্যানুযায়ী আল্লাহ্ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে আলিমুল গায়েব বলা ঠিক নয়। হন তিনি নবী, ওলী, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক বা আবহাওয়াবিদ। কারণ তাঁদের কারো ইলম মাধ্যম ছাড়া নয়। যদি তাদেরকেও আলিমুল গায়েব বলা হয়, তবে তা হবে আল্লাহ্র ইলমে র্শিকের শামিল।
এ জন্যই পবিত্র কুরআনো এরশাদ হচ্ছে-
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ
অর্থ: বলুন, আল্লাহ্ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানেন না।
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ: আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ্ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদ দাতা ঈমানদারদের জন্য।
এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ্ তায়ালা রাসূল (সা.) কে হুকুম করলেন যে, আপনি ঘোষণা করুন, আমি আলেমে গায়েব নই। আমার যদি গায়েবী জ্ঞান থাকতই, তবে আমি প্রতিটি লাভজনক বস্তুই হাসিল করে নিতাম, আর প্রতিটি ক্ষতিকর বিষয় থেকে সর্বদা রক্ষিত থাকতাম, অথচ এতদুভয়ের কোনটিই বাস্তব নয়।
সুতরাং রাসূল (সা.) বা কোন পীর সম্পর্কে আলিমুল গায়বের আক্বীদা রাখা সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট কুরআন বিরোধী মনগড়া বানানো আক্বীদা। যার সাথে ইসলামের বিন্দু মাত্রও সম্পর্ক নেই। এইরূপ আক্বীদা সুস্পষ্ট র্শিক। আল্লাহ্ সকলকেই ইসলামের সহীহ্ বুঝ দান করুন। আমীন।
ওরস ও মাযারে যবেহকৃত পশু ও মান্নতকৃত টাকা-পয়সা, মোমবাতি ইত্যাদির বিধান
আমাদের দেশে বিভিন্ন মাযারে মৃত পীর ও বুযুর্গের নামে পশু যবাই করা হয়, টাকা-পয়সা, মোমবাতি ও আগরবাতি ইত্যাদী জিনিসপত্রও মান্নত করা হয়। এসব পশু এবং জিনিসপত্র যা গায়রুল্লাহ্র নামে উৎসর্গ করা হয়। তার কয়েকটি পদ্ধতি নিম্নরূপ-
প্রথম পদ্ধতি: কোন প্রাণীকে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য মান্নত বা উৎসর্গ করা হয়। যেমন- কোন পীর, বুযুর্গ, পয়গম্বর বা দেব-দেবী প্রভৃতির নামে মান্নত করে তাদের নৈকট্য লাভের নিয়্যতে যবেহ করা হয়। এবং যবেহ করার সময় যার জন্য মান্নত করা হয়েছে তার নামও উল্লেখ করা হয়। অথবা তার নাম নেওয়া হয় না বরং যবেহ করার সময় আল্লাহ্র নামই নেওয়া হয়। কিন্তু ঐ যবেহের দ্বারা উদ্দেশ্য হল গায়রুল্লাহ্কে খুশি করা বা তার নৈকট্য অর্জন করা। এইরূপ প্রাণী ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম এবং এ কাজটি সুস্পষ্ট র্শিক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন-
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ
অর্থ: তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, আর যেসব জন্তু আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুফতি শফী (রহ.) লিখেন যে, আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত চতুর্থ হারাম বস্তু হচ্ছে ঐ জন্তু যা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। যদি যবেহ্ করার সময়ও অন্যের নাম নেয়া হয়, তবে তা খোলাখুলি শিরক। এরূপ জন্তু সর্বসম্মতভাবে মৃতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন আরবের মুশরিকরা মুর্তিদের নামে যবেহ্ করতো। অধুনা কোন কোন মুর্খ লোক পীর ফকীরের নামে যবেহ্ করে। যদিও যবেহ্ করার সময় আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করে, কিন্তু জন্তুটি যেহেতু অন্যের নামে উৎসর্গকৃত এবং তার সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করে, তাই সাধারণ ফেকাহ্বিদগণ একেও এই আয়াতদৃষ্টে হারাম বলেছেন।
অতএব আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ বা মান্নতকৃত পশু সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ্র নাম নিয়ে যবেহ্ করলেও হারাম। কেননা কোন বস্তু বা প্রাণী তার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারো নামে মান্নত বা উৎসর্গ করা জায়েয নেই। এরূপ পশু মৃতের চেয়েও নাপাক। যেহেতু মৃতের নাপাকীর কারণ হলো তার প্রাণ আল্লাহ্র নামে বাহির হয় নাই। আর আলোচ্য ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে তার প্রাণ গায়রুল্লাহ্র নামে মান্নত করা হয়েছে, যা খাঁটি শিরক ও কুফরী, কাজেই এই প্রাণী অতি মাত্রায় নাপাক। অতএব, নাপাক কুকুর, শুকর যেমন আল্লাহ্র নামে যবেহ্ করলেও পাক হবে না, তদরূপ গায়রুল্লাহ্র নামে মান্নতকৃত প্রাণীও আল্লাহ্র নামে যবেহ্ করলে পাক ও হালাল হবে না। এসম্পর্কে তাফসীরে বায়যাভীর হাশিয়াতে বলা হয়েছে-
فکل ما نودي عليه لغير اسم الله فهو حرام و ان ذبح باسم الله حيث اجمع العلماء لو ان مسلما ذبح ذبيحة و قصد بذبحها التقرب الي غير الله صار مرتدا و ذبيحته ذبيحة مرتد۔ (بيضاوي بقرة صفحة ۱۲۳)
অর্থ: যে প্রাণীকে গায়রুল্লাহ্র নামে উৎসর্গ করা হয়েছে তা হারাম-যদিও যবেহের সময় আল্লাহ্র নাম নেয়া হয়। ইমামগণের এজমা হয়েছে যে, কোন মুসলমান যদি গায়রুল্লাহ্র নৈকট্য লাভের নিয়তে কোন জন্তু জবেহ্ করে তবে সে মুরতাদ এবং তার যবেহ্কৃত পশু মুরতাদ কর্তৃক যবেহকৃত বলে গণ্য।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: গায়রুল্লাহ্র নামে উৎসর্গ করার দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো কোন পশুর কান কেটে বা অন্য কোন আলামত লাগিয়ে গায়রুল্লাহ্র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তা ছেড়ে দেওয়া। তা থেকে কোন কাজ লওয়া হয় না এবং তাকে যবেহ করারও ইচ্ছা থাকে না। বরং যবেহ্ করাকে হারাম মনে করে। এরূপ জন্তুকে কুরআনের ভাষায় “বাহিরা” এবং “সায়িবা” বলা হয়। এবং এরূপ কাজ কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম।
আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন-
مَا جَعَلَ اللَّهُ مِنْ بَحِيرَةٍ وَلَا سَائِبَةٍ وَلَا وَصِيلَةٍ وَلَا حَامٍ وَلَكِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
অর্থ: আল্লাহ্ “বাহিরা” “সায়েবা” “ওসীলা” এবং “হামীকে শরীয়ত সিদ্ধ করেননি। কিন্তু যারা কাফের, তারা আল্লাহ্র উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে। তাদের অধিকাংশেরই বিবেক বুদ্ধি নেই।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুফতি শফী (রহ.) সহীহ্ বুখারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “বাহিরা” এমন জন্তুকে বলা হয়, যার দুধ প্রতিমার নামে উৎসর্গ করা হত এবং কেউ নিজের কাজে ব্যবহার করত না। “সায়িবা” ঐ জন্তু যাকে প্রতিমার নামে আমাদের দেশের ষাঁড়ের মত ছেড়ে দেয়া হত।
মক্কার মুশরিকরা জাহেলি যুগে এসব শিরকী কাজ করত এবং নিজেদের মুশরেক সুলভ এসব কাজকে আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উপায় বলে মনে করত। আয়াতে সুষ্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ্ তায়ালা কখনও এসব প্রথা নির্ধারণ করেননি। বরং তাদের পূর্ব পুরুষরা আল্লাহ্র প্রতি এ অপবাদ আরোপ করেছে এবং অধিকাংশ নির্বোধ জনগন তা গ্রহণ করে নিয়েছে। সুতরাং কোন পীর বা মাশায়েখের নামে ছাগল, হাঁস, মোরগ ইত্যাদী ছেড়ে দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কেউ ছেড়ে দিয়ে থাকলে এগুলো তার মালিকানাভুক্তই থাকবে। সে নিজের জন্য হারাম মনে করার দ্বারা তা হারাম হয়ে যাবে না।
তৃতীয় পদ্ধতি: গায়রুল্লাহর নামে কোন কিছু উৎসর্গ করার তৃতীয় পদ্ধতি হলো-প্রাণী ছাড়া অন্য বস্তু যেমন হালুয়া, মিষ্টি, শিরনী, মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদী কোন পীরের নামে বা মাযারে মান্নত করা। যেমনটি মূর্খ লোকেরা বিভিন্ন মাযারে করে থাকে। একাজটিও যেহেতু গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য করা হয় তাই তা (ما اهل لغير الله به) আয়াতের হুকুম অনুযায়ী হারাম। এসব জিনিষ খাওয়া, পান করা, ব্যবহার করা, অন্যকে দেওয়া অথবা বিক্রি, ক্রয় করা এসবই হারাম।
এক্ষেত্রে সার কথা হল এই যে, নজর বা মান্নত করা একটি ইবাদত। আর প্রত্যেক ইবাদতই আল্লাহর জন্য খাস। অন্য কারো জন্য জায়েয নেই। তাই গায়রুল্লাহর জন্য কোন মান্নত করাও জায়েয নেই। এইরূপ মান্নত করা এবং তা আদায় করা, অন্যকে খাওয়ানো বা নিজে খাওয়া সবই হারাম।
তবে যদি কেউ কোন প্রাণী বা বস্তু গায়রুল্লাহর নামে মান্নত করার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে খাঁটি দিলে তাওবা করে নেয় এবং নিজের নিয়্যত সংশোধন করে তাহলে তা হালাল হবে।
মাযারের দান বক্সের হুকুম
বিভিন্ন মাযারে দান করার জন্য রাস্তার পার্শে বা দোকানসমূহে দান বক্স রাখা হয়। এসব দান বক্সে টাকা পয়সা দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। এসব দান বক্স থেকে প্রাপ্ত টাকার মালিক দাতাগনই। সম্ভব হলে তাদেরকে ঐ টাকা ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় ফকীর মিছকীনকে ছওয়াবের নিয়্যত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে। সেখান থেকে কারো জন্য খরচ করা বা মসজিদ মাদ্রাসায় খরচ করা জায়েয নেই। ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ আছে,
و ما يؤخذ من الدراهم و الشمع و الزيت و نحوه الي الاولياء الکرام تقربا اليهم فهو بالاجماع باطل و حرام۔ و لا يجوز ان يصرف ذلک لغني و لا شريف و لاذي نسب او علم ما لم يکن فقراء۔ (رد المحتار، کتاب الصوم، فصل في العوارض)
অর্থঃ- ওলীগণের নৈকট্য অর্জনের জন্য টাকা-পয়সা, মোমবাতি, তৈল ইত্যাদী যা দেওয়া হয় তা ইমামগণের ঐক্যমতে বাতিল এবং হারাম। ফকীর ব্যতীত কোন ধনী-ভ্রদ্র, সম্ভ্রান্ত বংশের লোক বা তালিবে ইল্ম এসব জিনিষ ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রশ্ন: মাযার ও ওরসের জন্য চাঁদা তোলা, সেখানে সাহায্য ও সহযোগীতা করা ও কোন কিছু ক্রয়-বিক্রয় করা এবং ওখানে কাজ করা ও উহার বিনিময় নেয়া জায়েয হবে কি না?
উত্তর: প্রশ্নে উল্লেখিত কোন একটিও শরীয়ত মতে জায়েয নেই বরং এ সবগুলো হারাম। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন যে, তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করোনা।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ঈসালে সওয়াব ও তার মাসনুন তরীকা
মৃত ব্যক্তির কাছে সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যে কোন নেক আমল করে ঈসালে সওয়াব করা জায়েয। এটাই জমহুর উলামায়ে কেরামের মত। শারিরীক বা আর্থিক সর্বপ্রকার এবাদতের মাধ্যমে মায়্যিতকে ঈসালে সওয়া করা যায়।
তবে এই ঈসালে সওয়াবের ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু শর্তের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় সকল শ্রমই পন্ড ও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। নিম্নে শর্তগুলো সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হলো।
১। এক্ষেত্রে সর্ব প্রথম শর্ত হলো মায়্যিত মুমিন এবং বিশুদ্ধ আক্বীদায় বিশ্বাসী মুসলমান হতে হবে। তেমনিভাবে ঈসালে সওয়াবকারীকেও সঠিক আক্বীদা সম্পন্ন মুমিন হতে হবে। কেননা বিশুদ্ধ ঈমান ব্যতীত সর্বপ্রকার আমলই বাতিল বলে গণ্য হবে। যা কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও অনেক সহিহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
২। ঈসালে সওয়াবকারীর নিয়্যত শুদ্ধ হতে হবে। অর্থাৎ এবাদতের দ্বারা একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনই উদ্দেশ্য হতে হবে। কোনরূপ দুনিয়াবী উদ্দেশ্য যেমন, লোক দেখানো, নাম কামানো, প্রসিদ্ধি লাভ, সম্মান অর্জন, লজ্জা এড়ানো ও মানুষের গাল-মন্দ থেকে বাঁচা ইত্যাদি উদ্দেশ্য হলে সেই ঈসালে সওয়াব হারাম ও র্শিকে পরিণত হবে।
৩। যদি আর্থিক এবাদত অর্থাৎ মাল সম্পদ সদকা করার মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা হয়, তবে সেই মাল অবশ্যই হালাল ও পবিত্র হতে হবে। কেননা অপবিত্র হারাম মালের সদকা আল্লাহ্ কবুল করেন না। হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-
لا يقبل الله صدقة من غلول۔ )ترمذي جلد۱ صفحه۲(
অর্থাৎ- কোন হারাম মালের সদকা আল্লাহ্ কবুল করেন না।
৪। ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে মৃত ব্যক্তির মাল থেকে সদকা করতে চাইলে ওয়ারিসদের মধ্যে কেউ নাবালেগ বা অনুপস্থিত না থাকতে হবে। কেননা মৃত ব্যক্তির সম্পদে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের অনুমতি ছাড়া মাল সদকা করা হারাম। আর বালেগ হওয়ার পূর্বে কোন নাবালেগের অনুমতি দানও শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
৫। কোন এবাদতের মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করতে চাইলে তার বিনিময়ের আদান প্রদান না হতে হবে। যেমন ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করে তার বিনিময় গ্রহণ করা। এই রূপ এবাদতের বিনিময় দেয়া ও নেয়া উভয়টিই হারাম। কেননা এবাদত একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই হতে হয়। দুনিয়াবী কোন হীন স্বার্থে, মাল সম্পদের বিনিময়ে এবাদত করলে তা আর এবাদত থাকেনা বরং হারাম কাজে পরিণত হয়। এইরূপ হারাম কাজের দ্বারা আবার ঈসালে সওয়াবের নিয়্যত করা জঘন্যতম অপরাধ। একেই বলে “চুরি আবার সিনাজুড়ি”।
হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) এরশাদ করেন,
من قرأ القران يتاکل به الناس جاء يوم القيامة و وجهه عظم ليس عليه لحم۔ (شعب الايمان للبيهقي جلد۲ صفحه۵۳۲ رقم ۲٦۲۵)
অর্থ:- যে ব্যক্তি মানুষের নিকট থেকে খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত করে, কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আসবে যে, তার চেহারায় শুধুমাত্র হাড্ডি থাকবে যার উপর কোন গোশত্ থাকবে না।
হাদিসের উদ্দেশ্য হলো- যে তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য দুনিয়া অর্জন হয় সে তেলাওয়াতের দ্বারা আখেরাতে পাওয়ার মত কোন সওয়াব অর্জিত হয় না। বরং একটি অতি উত্তম আমলকে হীন স্বার্থে করার কারণে তাকে নিকৃষ্ট শাস্তি পেতে হবে। অতএব যে তেলাওয়াতের দ্বারা সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ্ অর্জিত হয় তার দ্বারা ঈসালে সওয়াবের আশা করা আহাম্মকী ছাড়া আর কিছুই নয়।
হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফাতাওয়া গ্রন্থ “ফাতাওয়ায়ে শামী"তে উল্লেখ আছে-
قال تاج الشريعة في شرح الهداية إن القران بالأجرة لا يستحق الثواب لا للميت و لا للقاري قال الإمام العيني في شرح الهداية و يمنع القاري للدنيا، و الاخذ و المعطي اثمان، فالحاصل أن ما شاع في زماننا من قرائة الأجزاء بالأجرة لا يجوز۔ (فتاوي شامي جلد۵ صفحه٤۷ مصري)
অর্থ:- হিদায়া কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম তাজুশ শরীয়াহ্ বলেন, বিনিময়ের পরিবর্তে কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যায় না। না মৃত ব্যক্তি পাবে, না তেলাওয়াত কারী। হিদায়ার ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম আইনী (রহ.) বলেন, দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত নিষেধ। এক্ষেত্রে বিনিময় দাতা ও গ্রহিতা উভয়ই গোনাহগার। সারকথা হলো, বর্তমান যমানায় ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় দিয়ে পড়ানো প্রচলিত খতমে কুরআন নাজায়েয, অবৈধ।
অতএব সকল মুসলমানের কর্তব্য হলো ঈসালে সওয়াবের মত ভাল নেক কাজ করতে গিয়ে এরূপ ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করে হারাম কাজে লিপ্ত না হওয়া, এর দ্বারা উপকারের পরিবর্তে নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। এর চেয়ে বরং সঠিক পদ্ধতিতে সাধ্যানুযায়ী অল্প আমল করলেও লাভ। আল্লাহ পাক আমাদেরকে দ্বীনের সহিহ্ বুঝ দান করুন! আমীন!!
৬। ঈসালে সওয়াব সহিহ্ হওয়ার জন্যে আরেকটি শর্ত হলো, যেহেতু শরীয়তের পক্ষথেকে এর জন্য কোন দিন তারিখ ও নির্দিষ্ট পদ্ধতি বিশেষ ভাবে নির্ধারিত নেই, তাই নিজেদের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের জন্যে কোন বিশেষ পদ্ধতি বা দিন তারিখ নির্ধারণ করা ও এভাবে করার মধ্যে কোন ফযীলত মনে করা বা একই দিন তারিখ বা পদ্ধতিকে সর্বদার জন্যে নিয়ম বা রুসম বানিয়ে নেয়া যাবে না। কেননা শরীয়তের মূলনীতি হলো আল্লাহ্ তায়ালা বান্দাকে যে কাজ যেভাবে করতে আদেশ করেছেন ঠিক তেমনিভাবে করা। এতে নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু না বাড়ানো। অতএব যে কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপকতা আছে, যে কোন দিনে যে কোন সময় করা যায়, তাকে কোন বিশেষ দিন তারিখের সাথে খাছ করে নেয়াই হলো নিজের পক্ষ থেকে বাড়ানো। যা বিদআত। এরূপ কাজ থেকেও রাসূল (সা.) উম্মতকে নিষেধ করে গেছেন। মুসলিম শরীফে সহীহ্ সনদে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-
لا تختصوا ليلة الجمعة بقيام من بين الليالي و لا تختصوا يوم الجمعة بصيام من بين الأيام (مسلم شريف جلد۱ صفحه۳٦۱)
অর্থ: তোমরা জুমার রাত্রিকে নফল এবাদতের জন্যে এবং জুমার দিনকে নফল রোযার জন্যে খাছ করে নিওনা।
অর্থাৎ জুমার দিনের বিশেষ ফযীলত জুমার নামাযের জন্যে। এছাড়া নফল এবাদতের জন্যে কোন দিন তারিখ নির্ধারিত নেই। তাই নফল এবাদতের জন্যে জুমার রাত ও রোযার জন্যে জুমার দিনকে নির্দিষ্ট করে নেয়া নাজায়েয ও বিদআত। অতএব কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তিন তারিখ, চার তারিখ, সাত তারিখ বা চল্লিশ তারিখ ইত্যাদিকে ঈসালে সওয়াবের জন্যে বিশেষ দিন মনে করে মেজবানী করা, যিয়াফত করে লোকজনকে খাওয়ানো অথবা বৎসরের কোন এক তারিখকে নির্ধারিত করে সদা ঐ তারিখে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে ওরস মাহ্ফিল করা সম্পূর্ণ শরীয়ত বহির্ভূত সহিহ্ হাদিস অনুযায়ী নিষিদ্ধ গর্হিত বিদআত কাজ। অতএব এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকল মুসলামানের অবশ্য কর্তব্য।
এ সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমাম আল্লামা হাফিজুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে শিহাব কুরদুরী (রহ.) “ফাতাওয়ায়ে বাযযাযিয়া” তে লিখেন।
و يکره إتخاذ الطعام في اليوم الأول و الثالث و بعد الأسبوع و الأعياد و نقل الطعام إلي القبر في المواسم۔ (فتاوي بزازيه جلد ٤ صفحه۸۱ مصري)
অর্থ: মৃত্যুর ১ম দিন, তৃতীয় দিন, সপ্তাহের শেষ দিন ও ঈদের সময় (ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে) খানা তৈরী করা মাকরূহ। আর বিভিন্ন মৌসুমে কবরে খানা নিয়ে যাওয়াও মাকরূহ।
মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) মিরক্বাত গ্রন্থে লিখেন-
قرر أصحاب مذهبنا من أنه يکره إتخاذ الطعام في اليوم الأول و الثالث و بعد الأسبوع۔ (مرقات جلد۵ صفحه ٤۸۲)
অর্থ: হানাফী মাযহাবের ইমামগণ একথা প্রমাণ করেছেন যে, মৃতের জন্যে ১ম, ৩য় ও সপ্তাহের শেষ দিন খানা তৈরী করা মাকরূহ।
অতএব বর্তমান সমাজে বিভিন্ন জায়গায় যেসব রুসম প্রচলিত আছে, যেমন- মৃতের মাগফিরাত ও ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে ১ম, ৩য়, বা ৭ম অথবা ৪০তম দিনে অনুষ্ঠান করে, যিয়াফত করে গরীব-ধনীসহ সকলকেই খানা খাওয়ানো অথবা বাৎসরিক কোন নির্ধারিত তারিখে এ উদ্দেশ্যে ওরস করা ইত্যাদি। এসবই শরীয়ত বহির্ভূত ও বিদআত কাজ। এসব করলে সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহ্ অবশ্যম্ভাবী। তাই প্রচলিত এসব কুরসম ও প্রথা পরিহার করে সঠিক পদ্ধতিতে ঈসালে সওয়াব করতে হবে। তাই উপরোল্লিখিত ৬টি শর্ত এক্ষেত্রে অবশ্যই পালন করতে হবে। পাশাপাশি শরীয়তে নিষিদ্ধ অন্য বিষয়সমূহ থেকেও মুক্ত হতে হবে। সঠিক পদ্ধতি ও সুন্নত নিয়ম ছাড়া মানুষের সকল আমলই ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সকলকেই দ্বীনের সহিহ্ বুঝ দান করুন! আমীন!!
লেখক
মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী, নেত্রকোনা
তাখাস্সুস ফিল ফিক্বহি ওয়াল হাদীস
দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী
# ০১৯২০-৬৬৬৮১১
তাং-০১/০৬/২০১১ইং
©somewhere in net ltd.