![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘গেছো-মানবী’ নামে রহস্যময়ী এক নারীকে নিয়ে
তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সাভারে। তাকে উদ্ধার করতে
গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও
দমকল বাহিনীর সদস্যরা। তবে গাছে বসবাসকারী ওই নারীর
শাপ-শাপান্তে বেশি দূর এগোয়নি উদ্ধার অভিযান। রণে
ভঙ্গে দিয়ে গেছো-মানবীকে উদ্ধার না করেই
ফিরেছেন তারা।
এলাকাবাসী জানান, রাত হলেই এলাকার কোনো না
কোনো গাছ থেকে নারী কণ্ঠ শুনতে পান তারা। গাছের
মগডালে বাস করা ওই নারীর ভয় দেখিয়েই সন্তানদের ঘুম
পাড়ান এলাকার মায়েরা। অনেকে রোগ-ব্যাধি থেকে
সেরে ওঠার জন্য তার কাছে মিনতিও করছেন।
অদ্ভুত এই নারীকে ঘিরেই বৃহস্পতিবার নির্ঘুম রাত
কাটাতে হলো সেনা, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যদের।
এলাহিকাণ্ড বাঁধিয়েও শেষ পর্যন্ত তাকে নামানো
যায়নি গাছ থেকে।
শত শত মানুষের উপস্থিতিতে গেছো-মানবী উদ্ধারের
ব্যর্থ প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছে
মিথ। রূপকথার গল্পের মতোই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে ওই
নারীর অদৃশ্য শক্তির কথা।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। আটটার দিকে
সাভারের সামরিক খামারের একটি গাছের নিচ দিয়ে
এক পথচারী রাস্তা অতিক্রম করার সময় গাছ থেকে
ভেসে আসা নারীকণ্ঠ শুনেই চমকে ওঠেন।
কেরামত আলী নামে ওই পথচারী বাংলানিউজকে
জানান, গল্পে অনেক ভূত-প্রেতের কথা শুনেছি। মনে
হচ্ছিলো বাস্তবে আমিও ভূতের পাল্লায় পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, মনে মনে আমি খোদাকে ডাকতে
থাকি, আর জোর কদমে পা চালাই। যতই পায়ের জোড়
বাড়ে ততই যেন কাছে আসে নারীর কণ্ঠস্বর। ভাবছি এই
বুঝি আমাকে ধরে ফেলে। দৌড়ে কোনো মতে রেডিও
কলোনির কাছাকাছি পৌঁছে বিষয়টি নিকটজনদের
জানাই। এরপর এ-কান ও-কান করে তা রাষ্ট্র হয়ে যায়।
কেরামত আলী আরও বলেন, পরে আরেক পথচারীর একই
অভিজ্ঞতার খবর শুনে প্রথমে পুলিশ, পরে ফায়ার ব্রিগেড
ও সেনা সদস্যরা যান ঘটনাস্থলে। তাদের দেখে সাহস
নিয়ে আমিও ভয়ে ভয়ে যাই সেখানে। টর্চের আলোতে
দেখি জলজ্যান্ত এক নারীর প্রতিচ্ছায়া ভর করেছে
গাছের মগডালে।
আর তাকে নিচে নামিয়ে আনতে কতই না তৎপরতা। হুলস্থূল
কাণ্ড! এ পর্যন্ত বলেই হাঁপ ছাড়েন কেরামত আলী।
কেবল কেরামত আলী একাই নন, গেছো-মানবীর ছায়া
মাড়িয়েছেন অনেকেই। তবে কেউ বিভ্রম কেউ বা ভূত
বলেই বিষয়টি নিজেদের মধ্যে রেখেছেন এতদিন।
তবে বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় ওই নারীকে গাছ
থেকে নামানোর ব্যর্থ চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ভূত পরিচয়
থেকে রক্ষা করে ওই নারীকে। বেড়িয়ে আসে তার
মানবী পরিচয়।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক কুমার সাহা
বাংলানিউজকে জানান, গেছো-মানবীর খবর পেয়ে
রাত রাত ৯টায় ঘটনাস্থলে পুলিশ নিয়ে যাই আমরা।
নিজেরা অনেকক্ষণ ডাকাকাকি করে তাকে গাছ
থেকে নেমে আসতে বলি। পরে তার নাম জানা যায়
আমেনা (৪০)।
এক পর্যায়ে নিজেকে জিন দাবি করে ওই নারী হুমকি
দিয়ে বলেন, তাকে গাছ থেকে নামানোর চেষ্টা
করলে তিনি ঘাড় মটকে দেবেন। হাজার হোক একজন
নারী। এই অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আমরা তাকে
উদ্ধারের জন্যে খবর দেই ফায়ার ব্রিগেডে। সাইরেন
বাজিয়ে তারা আসতে না আসতেই সেখানে চলে
আসেন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা।
স্থানটি সেননিবাস এলাকায় হওয়ায় বিব্রত হন
সেনাসদস্যরা। কিভাবে ওই নারী নিরাপত্তা
ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে সেনানিবাস এলাকায় প্রবেশ
করে একটি গাছে রাত্রি যাপন করে, সে ব্যাপারে
অনুসন্ধান শুরু করে তারা। এতে দায়িত্ব পালনে
নিরাপত্তাকর্মীদের কারো গাফলতি থাকলে তার
ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা।
সাভার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শাহাদাৎ
হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ওই নারীকে গাছ
থেকে নেমে আসতে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি গর্জন
করে আমাদের শাপ-শাপান্ত করতে থাকেন। নিজেকে
জিন দাবি করে তিনি বলতে থাকেন, কেউ জোর করে
তাকে নামানোর চেষ্টা করলে তার পরিবারের অমঙ্গল
হবে।
লাফিয়ে পড়ারও হুমকি দিতে থাকেন তিনি।
অসাবধানতায় গাছ থেকে পড়ে যেতে পারেন এই
আশংকায় আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাত পার করে দিই,
বলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।
এরপর খবর পেয়ে ওই নারীর ছেলে মঞ্জিল হোসেন
ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আমাদের জানান, সময় হলে তিনি
নিজের ইচ্ছায় গাছ থেকে নেমে আসবেন।
রেডিও কলোনির বাসিন্দা মঞ্জিল হোসেন
বাংলানিউজকে বলেন, গাছ থেকে ভূত নামানোর খবর
শুনেই আমি ছুটে যাই সামরিক খামারে। মাকে নেমে
আসতে বলি। কিন্তু কোনো কথাই শোনে না মা। যদিও
আমরা অবাক হইনি। শান্ত হয়েই আমরা পরিস্থিতিকে
স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।
মঞ্জিল জানান, আমরা জানতাম মা দীর্ঘদিন ধরেই
রাতে গাছে বসবাস করেন। তবে চক্ষু লজ্জায় বিষয়টি
আমরা কাউকে প্রকাশ করিনি এতদিন। প্রায় এক যুগ ধরে
প্রায়শই গাছে রাত্রিযাপন করছেন আমার মা। এক বেলায়
গাছে উঠলে পরের বেলায় নির্দিষ্ট সময়ে নেমে আসেন
তিনি।
‘ধরেন যদি বিকেল ৪টায় গাছে ওঠেন তাহলে গাছ
থেকে নামবেন ঠিক ভোর ৪টায়। এটাই মায়ের নিয়ম।
আমরা প্রথম প্রথম খোঁজ নিতাম। গাছে গাছে টর্চ
লাগিয়ে মাকে খুঁজতাম। এখন বিষয়টি গা সওয়া হয়ে
গেছে’, বলেন মঞ্জিল হোসেন।
তিনি আরও জানান, অনেক বলেছে মানসিক ব্যাধি।
আধুনিক চিকিৎসা করানোর সামর্থ আমাদের নেই।
কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছি, তাবিজ-কবজ দিয়েছি।
কিন্ত তিনি এখনো জিনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে
পারেননি।
গেছো-মানবী আমেনার মেয়ে রুবিনা বেগম
বাংলানিউজকে বলেন, মাকে যখন জিনে আছড় করে, তখন
আর তাকে ঘরে রাখা যায় না। ছুটে যান গাছে গাছে।
সেখানেই বিড় বিড় করে কথা বলতে শোনা যায় তাকে।
গাছ থেকে জোর করে নামালেই তিনি অজ্ঞান হয়ে
পড়েন। যদিও কিছুক্ষণের বিশ্রামে তিনি আবার
স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন। সঙ্গী জিনের টানেই মা রাত-
বিরাতে গাছে ছুটে যান। গাছেই রাত কাটে তার। এ
সময়টা মায়ের কথার সুর নাকি নাকি গলায় শোনা যায়।
পরিবর্তিত সুর শুনে আমরা মনে করি মা জিনের সঙ্গে
কথা বলছেন।
রুবিনা বেগম আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আচরণে
হঠাৎ পরিবর্তন আসে মায়ের। পরিবর্তন হতে থাকে গলার
সুরে। তখন যেন মাকে আর চেনাই যায় না। আমরা বুঝতে
পারি তার ওপর জিন ভর করেছে। বিকেল ৩টা নাগাদ ঘর
থেকে বেরিয়ে যাবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়েন তিনি।
এক পর্যায়ে আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়েই উধাও হয়ে
যান মা। পরে রাতে আবিষ্কার করি গাছের মগডালে
রয়েছেন তিনি।
রাতে টহলে থাকা এক পুলিশ সদস্য বাংলানিউজকে
জানান, সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে আমরা নিজেরা এক পর্যায়ে
পদক্ষেপ নেই ওই নারীকে গাছ থেকে নামিয়ে আনতে।
একজন গাছে ওঠামাত্রই প্রচণ্ড শক্তিতে তিনি গাছে
ঝাঁকুনি দিতে থাকেন।
শেষে ভোরে উপস্থিত অনেকের চোখকে কপালে তুলে
শান্ত আর স্বাভাবিকভাবে গাছ থেমে নেমে আসেন
গেছো-মানবী। এরপর ছেলে আর মেয়ের হাত ধরেই
বাড়ির পথে হাঁটা দেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে এনাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের সাইকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক
আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, এটা অসুখ,
প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ওই নারী সিজোফ্রেনিয়ায়
আক্রান্ত। গ্রামে অশিক্ষা আর কুসংস্কারের প্রভাবে
এসব রোগীদের অনেকেই জিনে ধরেছে বলে মনে করেন।
সিজোফ্রেনিক রোগী যথাযথ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন
বলেও জানান চিকিৎসক আব্দুর রহিম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২২
আলপিন ম্যান বলেছেন: রাতে গাছে ঘুমানো ঠিক না, বইয়ে পরেছিলাম রাতে গাছ কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস ছাড়ে। উনাকে দিনে থাকতে বলবেন। কারণ দিনে গাছ অক্সিজেন ত্যাগ করে।