নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনে করো জুতো হাটছে,পা রয়েছে স্থীর

এইচ তালুকদার

I am drunk,officer.punish me when I am sober.(Zahir ud din Muhammad,Babur)

এইচ তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

থাম লুয়াং উদ্ধার অভিযান

০৭ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:১৯


(লেখাটা দুইবছর আগে লিখেছিলাম তবে ব্লগে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম,তাই এখন দিচ্ছি)

১০ জুলাই মঙ্গলবার আটকে থাকা সর্বশেষ ৫ থাই কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারের মদ্ধ্য দিয়ে শেষ হল থাইল্যাণ্ড এর থাম লুয়াং গুহায় পরিচালিত চাঞ্চল্যকর উদ্ধার অভিযান।প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্গমতা বিবেচনায় নিলে এটা পৃথিবীর ইতিহাসেই অন্যতম সফল একটা উদ্ধার অভিযান।চলুন জেনে নেই এই উদ্ধার অভিজানের খুঁটিনাটি।

ব্রিটিশ ডাইভারদের তোলা ছবি,এই ছবিই নিশ্চিত করে গুহার ভেতরে আটকে পরা ফূটবলাররা এখনো জীবিত।

ঘটনার সুত্রপাত ২৩ জুন যখন থাইল্যান্ড এর ওয়াইল্ড বোর অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল দলের ১৩ সদস্য উত্তর থাইল্যান্ড এর মিয়ানমার সিমান্ত সংলগ্ন চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় ঘুরতে যায়।দুর্ভাগ্যজনকভাবে দলটি গুহায় প্রবেশের প্রায় সাথে সাথেই তীব্র বৃষ্টি শুরু হয় আর গুহার ভেতরে পানি জমে তাদের ফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।পানি বাড়তে থাকলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা গুহার আরও ভেতরে চলে যায়।পুরো একদিন নিখোঁজ থাকার পর একজন আটকে পরা কিশোরদের একজনের অভিভাবক পুলিশে খবর দেয়,গুহার প্রবেশ মুখেই কিশোরদের সাইকেল,ফুটবল বূট দেখে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় এই গুহাতেই আটকে পড়েছে কিশোর ফুটবলাররা।শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর এক উদ্ধার অভিযান।


আটকে পড়া কিশোর দের সাইকেল এবং ব্যাকপ্যাক

থাম লুয়াং গুহাটা চিয়াং রাই প্রদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। প্রায় দশ কিলোমিটার গভীর গুহাটি এর গভীর খাঁজ আর প্রচন্ড রকমের সরু প্রবেশ পথের জন্য স্থানীয় ভাবে কুখ্যাত।তাই এই উদ্ধার অভিযান যে খুব সহজ হবে না সেটা প্রথমেই অনুমান করা গিয়েছিল,মৌসুমী বৃষ্টি এই উদ্ধার অভি্যানে বাগড়া দিয়েছে বার বার।এমনকি গুহার পানি সেঁচে ফেলে দিয়ে আটকেপড়া দের বের করে আনার প্রথম প্রচেষ্টাটিও ব্যার্থ হয়ে যায় বৃষ্টির কারনে।থাই নেভী সিল প্রথমেই এই উদ্ধার অভিযানে এগিয়ে আসে এছাড়াও ২৭ জুন নাগাদ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০ জন কেভ ডাইভিং এ অভিজ্ঞ ডাইভার এখানে এসে জড় হন।২রা জুলাই দুই জন ব্রিটীশ স্পেলিওলজিষ্ট প্রথম এই গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন গুহার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে পাতায়া বিচ নামক্ সামান্য উঁচু এক জায়গায় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় ,তাদের ধারন করা ভিডিও ও ছবি দেখে প্রথম বারের মত নিশ্চিত হওয়া যায় আটকে পড়া সবাই বেঁচে আছে।

আটকে পড়া সবাই এখনো বেঁচে আছে এটা নিশ্চিত হবার পর উদ্ধার কাজ নতুন গতি পায়,অন্যদিকে বর্ষাকাল ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকায় খুব শিঘ্রই এদের উদ্ধার করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল কারন ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে এই গুহার পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যাবে।তবে উদ্ধায় অভিযানের চেয়েও যে বিষয় তাদের ভাবিয়ে তুলেছিল তা হচ্ছে আটকে পড়াদের স্বাস্থ্য,খাবার,বিশুদ্ধ পানি এবং সবচেয়ে জরুরি অক্সিজেন।গুহার অভ্যন্তরের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান কমতে কমতে নেমে গিয়েছিলো মাত্র ১৫% এ অক্সিজেন সরবরাহই ছিল অভিজানের অন্যতম সবচেয়ে কঠিন কাজ।এমনকি এই অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে যেয়েই মৃত্যু হয় সাবেক নেভী সিল সদস্য সার্জেন্ট সামান গুনান এর

প্রায় একশোটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সার্বক্ষণিক গুহার অভ্যন্তরে অক্সিজেন সরবরাহ করে গেছে।

সার্জেন্ট সামান এর শেষকৃত্ব
আটকে পরাদের উদ্ধারের দুটি সম্ভাব্য উপায় নিয়ে কাজ শুরু করে উদ্ধারকারি রা তার প্রথমটি হচ্ছে গুহার সবাই সাঁতরে বেরিয়ে আসবে,কিন্তু আটকেপড়াদের মদ্ধে কেউ সাতার জানতো না তাই এটা ছিলো সবচেয়ে কঠিন অপশন। দ্বিতীয় সম্ভাব্য অপশনটি ছিলো পাহাড়ের উপর থেকে ড্রিল করে নিচে নেমে উদ্ধার করা।কিন্তু ভূমিধ্বস এর আশংকায় সেটি বাতিল হয়ে যায়।উদ্ধারকারীরা অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রথম অপশনটাই বেছে নেন।এরপর শুরু হয় প্রস্তুতি।

কিশোরদের অনভ্যস্ততার কথা চিন্তা করে এই ধরনের ফুল ফেসমাস্ক ব্যাবহার করা হয় যাতে তাদের শ্বাস প্রশ্বাস এ কোন অসুবিধা না হয়।

ঠিক এভাবেই দু জন ডাইভার একজন করে কিশোর কে নিয়ে সাতরে বেরিয়ে আসে।
জুলাই এর আট তারিখে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষন স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে প্রথম চার কিশোরকে গুহার বাইরে বের করে আনা হয়,এবং প্রায় সাথে সাথেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে এবং ডাইভারদের বিশ্রাম এবং এই উদ্ধার অভিযানের লাইফলাইন অক্সিজেন ট্যাংকগুলো পরিষ্কার এবং রিফিল করার জন্য সেই দিনের মত উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।এরপর নয় তারিখে আরও চারজন এবং সর্বশেষ ১০ তারিখে অবশিষ্ট পাচজনকে উদ্ধারের মদ্ধ্য দিয়ে শেষ হয় বাহাত্তর ঘন্টার এই শ্বাসরুদ্ধকর অভি্যানের। সবার শেষে গুহা থেকে বেরিয়ে আসে তিন নেভি সিল সদস্যও তাদের ডাক্তার

মিশন একমপ্লিশড,সবার শেষে বেরিয়ে আসা উদ্ধারকারী চার নেভি সিল

এই উদ্ধার অভিযানে অনেকেরই কৃতিত্বপূর্ণ অবদান আছে তবে এই অভিযানের আসল হিরো কিন্তু আটকে পরা কিশোররাই,যারা এক মুহূর্তের জন্যও মনোবল হারায় নি,পুরো নয় দিন পৃথিবীর সবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও তারা যে সাহস আর একতা দেখিয়েছে তা সত্যিই বিরল।নিখোঁজ হবার প্রায় নয় দিন পর যখন তাদের খুঁজে পাওয়া যায় তখন শারিরিক ভাবে সবচেয়ে দুর্বল ছিলো তাদের ২৫বছর বয়সী কোচ একাপল চান্তাওং যিনি এই কিশোরদের কাছে থাকা অল্পপরিমান খাবার খেতে অস্বীকৃতি জানায়,আর এই খাবার তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছিলো এই কীশোরদের মদ্ধে সবচেয়ে বয়স্ক পিরাপাত এর জন্মদিন এর উৎসব করার জন্য যে কিনা ঐ দিনই ১৭ বছরে পদার্পণ করে,উদ্ধারকারীদের মধ্যে সবার আগে পৌছানো ব্রিটিশ দলটিকে তাদের সার্বিক অবস্থার কথা জানায় আদুল-সাম-অং,যে কিনা ইংরেজি ছাড়াও কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে পারে।

কিশোরদের একজনের হাতে লেখা চিঠি,চিঠির বক্তব্য আমরা ভালো আছি,চিন্তা করো না

মিশন একমপ্লিশড থাই নেভির টুইট
We are not sure if this is a miracle, a science, or what. All the thirteen Wild Boars are now out of the cave.

সারা পৃথিবী থেকেই ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা পাচ্ছে থাই কিশোর ফুটবল দল।প্রযুক্তি পন্যের উদ্দোক্তা এ্যলান মুস্ক এগিয়ে এসেছিলেন তার ক্ষুদ্র উদ্ধারকারী সাবমেরিন নিয়ে।ফিফা সভাপতি কিশোরদের দলটিকে আমন্ত্রন জানিয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা উপভোগ করার জন্য।ফ্রান্স ফুটবল দল তাদের সেমিফাইনাল জয় উৎসর্গ করেছে এই থাই ফুটবলারদের।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


সরকার ও জাতি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছিলেন।

০৭ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

এইচ তালুকদার বলেছেন: সঠিক,আমাদের দেশেও সরকার এবং এর বিভিন্ন সংস্থা উদ্ধারকার্‍্যে বেশ উন্নতি করেছে।রানা প্লাজা,চট্টগ্রাম পাহাড় ধ্বসের সময় সেনা বাহিনী,ঘুর্নীঝড়ের সময় কোষ্ট গার্ড নৌ বাহিনী বেশ ভালো ভুমিকা রেখেছে,তবে ফায়ার সার্ভিসের কোন উন্নতি চোখে পড়ে না,নিমতলী+চুড়িহাট্টায় পুড়ে খাক হয়ে যাওয়াদের কথা মানুষ এখন ভুলে গেছে

২| ০৭ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৪৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ঘটনাটা যখন ঘটছিল তখন সারা পৃথীবির লোক উৎকন্ঠার সাথে ঘটনাটাকে ফলো করছিল।কি জানি কি হয়।

০৭ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

এইচ তালুকদার বলেছেন: আমার বাবা বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে পরিস্থিতি পর্‍্যবেক্ষন করছিলেন,সারাদিন বিবিসি,সি এন এন দেখতেন

৩| ০৭ ই জুন, ২০২০ ভোর ৬:৩৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: চিলিতে কয়লা খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকরা ও থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবলাররা একই রকম বিপদে পড়েছিলেন।

০৭ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮

এইচ তালুকদার বলেছেন: জি,ভাই একমত।তবে চিলির খনি শ্রমিকদের চেয়েও এই কিশোররা বেশি ঝুকিতে ছিলো।

৪| ০৭ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: সেসময় আরো কয়েক জন ব্লগার এ লেখাটা ব্লগে দিয়েছিলেন।

০৭ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৪:০৯

এইচ তালুকদার বলেছেন: যেহেতু আসল ঘটনা এক,সেক্ষেত্রে অনেকের সাথে তথ্যগত মিল থাকতেই পারে।তবে আপনি যদি লেখাচুরি বা কপি পেষ্ট এর দিকে ইঙ্গিত করেন সেটা আমার জন্য দুঃখজনক কারন আমার অনুপ্রেরনা শ্রদ্ধেয় ঈমন জুবায়ের,শের শায়েরী,সত্যপীর(সচল) এর মত ব্লগাররা,লেখাচুরি বা সেরকম কোন কিছু করার ইচ্ছা আগ্রহ কিছুই আমার নেই।আর এই লেখাটা 'রোর বাংলার" জন্য লিখেছিলাম কিন্তু তখন আমি ব্যাক্তিগত দুঃসময় এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই রোর বাংলা বা ব্লগ কোথায়ই লেখাটা দেয়া হয় নি।বেয়াদবি হলে নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন

৫| ০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭

জুন বলেছেন: view this link আটকে পড়া থেকে উদ্ধার পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে লিখেছিলাম ব্লগে আমার কাছে প্রচন্ড আবেগময় একটি লেখা। আপনার লেখাটি দেখে আমার লেখাটির কথা মনে পড়ে গেল :)

০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৩

এইচ তালুকদার বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ,আপনার লেখাটা পড়ে এলাম,সমস্ত নতুন ইভেন্টের আপডেট দিয়ে গেছেন গভীর আবেগে আসলে সারা পৃথিবীই আপনার আমার মত অধীর আগ্রহে এই ঘটনা পর্‍্যবেক্ষন করেছে এমনকি আমার প্রয়াত দাদা (এই ঘটনার কয়েকদিন পরই ইন্তেকাল করেছেন) প্রায় সারাদিনই টিভির সামনে বসে থাকতেন বিবিসি তো প্রায় সারাক্ষনই লাইভ টেলিকাস্ট করতো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.