নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বাংলার জমিদার বাড়ী" - পর্ব ১ (বালিয়াটি জমিদার বাড়ি)

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬





আমাদের বাংলাদেশের আনাচে-কানাচেতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের এক মহান সাক্ষ্যি হয়ে জমিদার বাড়িগুলো। এই জমিদার বাড়িগুলোর প্রতিটির সাথে রয়েছে হাজারো জানা-অজানা ইতিহাসের ডেলা। অনেক দিন ধরেই ভাবছি এই জমিদার বাড়িগুলো নিয়ে একটি সিরিজ লেখা লেখব। কিন্তু লিখি লিখি করেও আর লেখা হয় না। অবশেষে আজ থেকে শুরু করলাম "বাংলার জমিদার বাড়ী" সিরিজ। আজ আমরা দেখব “বালিয়াটি জমিদার বাড়ি” এবং তার ইতিহাস। আশা করি আমার এই সিরিজের সাথে আপনাদের সবাইকে সবসময় কাছে পাবো। আমাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদেরই করতে হবে। তবে আসুন শুরু করা যাক।







মানিকগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তরের দিকে এগিয়ে গেলে শান্ত, কোলাহলমুক্ত একটি গ্রাম, “দরগ্রাম” যার নাম। এই গ্রামেরই এক নিম্নবিত্ত সাহা পরিবার। সাটুরিয়া উপজেলাস্থিত এই গ্রামটি আজ বালিয়াটি নামে সর্বাধিক পরিচিত। বালিয়াটির জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা, যিনি লবন ব্যাবসার দ্বারা তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ীর হাত ধরেই বালিয়াটি জমিদারদের উত্থান ঘটে। বলিয়াটি জমিদার বাড়ির উত্তর পশ্চিম অংশে ছিল একটি বড় লবনের গোলাবাড়ি, যার কারনে গোবিন্দ সাহার এই বাড়ি পরিচিতি পায় গোলাবাড়ি নামে। এই গোলাবাড়ি একসময় অত্র এলাকার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়। সেই সময় এই গোলাবাড়ির চত্বরে বারুনির মেলা বসত এবং এর পশ্চিম দিকে তাল পুকুরের ধারে অনুষ্ঠিত হত রথ উৎসব আর বসত রথের মেলা। এখনো এই রথ উৎসবটি উদযাপিত হয় বালিয়াটি গ্রামের পুরান বাজারের কালী মন্দিরের পাশে।







পরবর্তীতে এই গোবিন্দ রায় সাহা’র বংশের উত্তরাধিকারদের কেউ একজন জমিদারি লাভ করেন। বালিয়াটিতে জমিদার হিসেবে জমিদারি করেছেন - হরেন্দ্র কুমার রায় বাহাদুর, জ্ঞানেন্দ্র কুমার রায় বাহাদুর এবং ঈশ্বরচন্দ্র রায় বাহাদুর। এরাই পরে নির্মাণ করেন বহুল প্রসিদ্ধ “বালিয়াটি জমিদার বাড়ি”। গোবিন্দ রায়ের পরবর্তী বংশধররা ছিলেন দাধী রাম, পণ্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রাম। এই পরিবারে স্মরণীয় অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন— নিত্যানন্দ রায় চৌধুরী, বৃন্দাবন চন্দ্র, জগন্নাথ রায়, কানাই লাল, কিশোরি লাল, যশোর্ধ লাল, হীরা লাল রায় চৌধুরী, ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী, হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী প্রমূখ। ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এদেরই বংশধর বাবু কিশোরীলাল রায় ।







মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ভূমি অধিকর্তা ছিল বালিয়াটির রায় বাহাদুর পরিবার। তিন পুরুষ ধরে প্রবল দাপটের সঙ্গে জমিদারি চালানোর পর ভারত বিভাগের সময় তাদের পতন হয়। আঠারো শতকের সময় অগাধ বিত্তের অধিকারী এসব জমিদার গড়ে তোলেন তাদের প্রাসাদোপম আবাসিক ভবন। লন্ডন ও কলকাতা থেকে আনা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয় তিন তলাবিশিষ্ট বেশ কয়েকটি অট্টালিকা। এই জমিদারবাড়ির দুইটি অংশ_একটির স্থানীয় নাম দশআনি জমিদার বাড়ি এবং অপরটির নাম ছয়আনি জমিদার বাড়ি। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির দশআনি অংশটুকুর চারটি ভবন টিকে আছে আজও অবিকৃত অবস্থায়। ছয়আনি অংশের সব ভবনই হয়ে গেছে বিধ্বস্ত, ব্যবহারের অনুপযোগী।







বালিয়াটির এই জমিদারবাড়িটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে নানা কথা লোকমুখে চালু আছে, যার বেশিরভাগই শোষণ এবং ত্রাসের। আজ থেকে ১০০ বছর আগে এই বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ জুতা পায়ে বা ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করতে পারত না। আদেশ অমান্য করার সাধ্য ছিল না কারো। লাঠিয়ালদের খড়্গ ছিল বড়ই সজাগ। তাছাড়া এরা নাকি খাজনা আদায়ে ছিল বড়ই নির্মম। ব্রিটিশদের চোখে এটাই ছিল সাফল্য। আর এ কারণে বালিয়াটির জমিদারদের দেওয়া হয় রায় বাহাদুর খেতাব। পূর্ববঙ্গের প্রতাপশালী হিন্দু জমিদারদের মধ্যে বালিয়াটির রায় বাহাদুররা বিত্ত-প্রতিপত্তিতে প্রায় শীর্ষস্থানীয় ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এরা প্রবল গণরোষের শিকার হয়। জনতার আক্রোশে অট্টালিকায় চলে ভয়াবহ ভাংচুর ও লুটপাট। গণরোষে ১৯৪৮ সালে বালিয়াটির জমিদাররা সপরিবারে পালিয়ে যায়, পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকার যা পরবর্তী সময়ে অধিগ্রহণ করে। ভূমি অধিদপ্তর থেকে ২০০৪ সালে জমিদার বাড়ির এসব ভবন পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা এসব ভবনের অবকাঠামোর কোনো উন্নয়ন করেনি। পরে ২০০৭ সালের দিকে এসব ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর থেকে শুরু হয় সংস্কার কার্যক্রম। এ পর্যন্ত জমিদারবাড়ির সংস্কার কাজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। চেষ্টা চলছে জমিদারবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় লুট ও স্থানান্তর হওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনার।







একটি তথ্যসূত্র মতে ধারণা করা হয় ১৭৯০-১৮০০ সালের দিকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। আবার আরেকটি সূত্র বলছে ১৩০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ এই বাড়ির জমিদারগণ গৃহপ্রবেশ করে বলে জানা যায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে আনুমানিক দেরশ বছরের কম নয় এই বাড়ির ইতিহাস। ৫.৮৮ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে এই জমিদার বাড়িটি। এই প্রাসাদের আয়তন প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার।







জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি বড় পুকুর। বাড়িটির সম্মুখভাগে চারটি সুবিন্যস্ত সিংহদ্বার সমৃদ্ধ চারটি বিশাল প্রাসাদ পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যমত্ম এমন সুদৃশ্যভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে এই পুকুরের ঘাটগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখানে ৭টি প্রাসাদতূল্য ইমারতে মোট ২০০টি কক্ষ আছে।

বর্তমানে জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকদের মতে, এর মূল প্রবেশদ্বার কাঠের তৈরি ছিল। এই রাজবাড়ির প্রথম সারিতে চারটি প্রাসাদ রয়েছে। এর সবগুলোর নির্মাণ শৈলী মোটামুটি একই রকম। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মিশ্রণ এই প্রাসাদগুলো তৈরি করা হয়েছে। ফ্লোরাল টপ সহ কোরেন্থিয়ান ধাচের পিলার আছে চারটা প্রাসাদেই। এর মাঝখানের দুটি প্রাসাদ দুই তলা এবং দুই পার্শ্বের দুটো প্রাসাদ তিন তলা। এরমধ্যে ১টি প্রাসাদে আগে কলেজ ছিল, বর্তমানে তা এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।







একটি প্রাসাদকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এর দ্বিতীয় তলায় একটি রংমহল রয়েছে। এখানে জমিদারদের ব্যবহৃত নির্দশনাদি দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত অসংখ্য সিন্দুক, ছোট বড় আয়না, ঝাড়বাতি, লণ্ঠন, শ্বেত পাথরের ষাঁড়, শ্বেত পাথরের টেবিল, পালঙ্ক, আলনা, কাঠ এবং বেতের চেয়ার সহ আরও অনেক নিদর্শন। মজলিস কক্ষে মূল্যবান ঝাড়বাতি রয়েছে। মজলিস কক্ষটির দেয়ালে হাতে আঁকা ছবি আছে। এর অন্দর মহলে রয়েছে তিনটি অট্টালিকা। এখানে ছিল অতিথিদের থাকার জায়গা, রন্ধনশালা, সহিস আর পরিচারকদের থাকার ঘর।





ইনফো অ্যান্ড ফটো কার্টেসিঃ

Click This Link

http://www.manikganj.gov.bd/node/445039

Click This Link

http://www.travelobd.com/spots/150- বালিয়াটি জমিদার বাড়ী?

http://www.bd-pratidin.com/i

Click This Link

Click This Link

http://www.bangla24bdnews.com/?p=2007





মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ পোস্ট।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ প্রোফেসর সাহেব।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৩

তৌহিদুল ইসলাম তুহিন বলেছেন: ভালো উদ্যোগ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সাথে থাকুন সবসময়।

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: পোস্ট এ ভাল লাগা :)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা সুলতানা। ভাল লাগা জেনে ভালো লাগল।

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৯

মি. হুমায়ুন কবির বলেছেন: Valo laglo

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: জেনে খুশি হলাম। আপনাকে স্বাগতম আমার লেখালেখির ভুবনে।

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

মাদিহা মৌ বলেছেন: ছবি অনেক কম।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ছবি অনেকগুলো তুলেছিলাম, কিন্তু তখন আপলোড করা হয় নাই। প্রথম পর্ব ছিল তো, তাই? এখন চেষ্টা থাকে বেশী পরিমান ছবি দেয়ার। :)

৬| ০১ লা মার্চ, ২০২২ রাত ৯:১০

গরল বলেছেন: এই জমিদার বাড়িতে একটা সরকারি এতিমখানা ছিল এবং আমার দাদা ছিলেন ওটার সুপারিন্টেনডেন্ট। উনার কোয়ার্টার ও ছিল সর্বাধিক বামের দালানটিতে। অনেক থেকেছি ওখানে, স্কুল ছুটি হলেই চলে যেতাম, পুকুর গুলোতে সাঁতার কাটতাম। অনেক স্মৃতি আছে এই জমিদার বাড়িতে।

০২ রা মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৫৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ইসসসস... এত্তগুলান হিংসা আপনাকে... আপনি কত ভাগ্যবান, কত আনন্দদায়ক ছিল সেই শৈশব এর সময়গুলো.... +++ ♥♥♥

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.