নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
আগের পর্বঃ দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
ভারতের প্রায় বিশটির মত হিল ষ্টেশন বেড়ানোর পর আমি লক্ষ করেছি হিল ষ্টেশনগুলোর একটি কমন মিল রয়েছে রাস্তাগুলোর। তবে মুন্নার এর পর দার্জিলিং এ যাওয়ার সময় পেয়েছি চা-বাগান দিয়ে ঘেরা পাহাড়ি পথ যা সত্যিই অতুলনীয়। তো শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার দুটি রাস্তা আছে; একটি মিরিক হয়ে আর অন্যটি কুর্সেং হয়ে। আমরা যাওয়ার সময় সময় মিরিক হয়ে যে রুট সেটি ব্যবহার করেছিলাম। আর যেহেতু ফিরেছিলাম কালিম্পং থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি; তাই আমরা কুর্সেং দিয়ে না ফিরে ফিরেছিলাম সেভকে হয়ে। তো আমাদের টাটা সুমো আমাদের নিয়ে শিলিগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চললো মিরিকের দিকে। চমৎকার শীতল আবহাওয়া, বাতাসের আলতো পরশে শরীর মন নেচে ওঠে। প্রায় দুই ঘন্টার এই যাত্রাপথে আমাদের দলের বেশীরভাগই চোখ বুজে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আমি অসহায়; ঘুমের স্থান আমার আঙ্গিনায় খুব কম। তাই দেখতে লাগলাম চারিপাশটা ভালো করে। সমতল পথ ছেড়ে একসময় পাহাড়ি পথে চললো আমাদের গাড়ী।
মিরিক পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতার এই হিল ষ্টেশন পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। চমৎকার আবহাওয়া, পাইনের জঙ্গল এর সাথে মিরিক লেক; যা অতি অবশ্যই মিরিকের পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু বলা চলে। আমাদের গন্তব্য ছিল এই মিরিক লেক এর পাণেই। যেহেতু আমরা এখানে রাত কাটাবো না; সেহেতু মিরিকে ঘন্টা দুয়েক ঘোরাঘুরি করে আমরা চলে যাবো সোজা দার্জিলিং এর দিকে। আমরা গিয়েছিলাম বর্ষায়; কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকলে মিরিক লেক এর চারিধার জুড়ে থাকা প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলে দেখা যায় দূরে দিগন্তরেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘার উপস্থিতি; যা সত্যিই মুগ্ধ করে আগত পর্যটকদের। তবে এই রূপ খুব কম সময়ই দেখা যায়।
মিরিকের জনপদ গড়ে ওঠে মূলত চা বাগানকে কেন্দ্র করেই। এখানকার আশেপাশের গ্রাম এবং এখানকার চা বাগানে কাজ করা মানুষদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচার জন্য মিরিক বাজার গড়ে ওঠে। এখনকার লেকটির স্থানে ছিল্ল ‘বোজো’ নামক একটা জলাভূমি আর লেকের ধারের যে বাগানটি আছে, সেখানে ছিল বিস্তৃত মাঠ যেখানে ব্রিটিশরা পোলো খেলতো। ভারত স্বাধীনতা লাভের বহু পরে, ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘থুর্বো’ নামক চা বাগান এবং এর আশেপাশের প্রায় ৩৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে এবং পর্যটন দপ্তর এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে থাকে। ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মিরিকের পর্যটন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। মিরিকের লেকটির আসল নাম সুমেন্দু লেক; যাকে কেন্দ্র করে বর্তমান মিরিকের পর্যটন গড়ে উঠেছে।
আমরা বেলা এগারোটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম মিরিক লেক এর পাড়ে; গাড়ী পার্কিং করে রাখা হল প্রবেশমুখের পাশেই। আমরা দলবেঁধে ঢুঁকে পড়লাম মিরিক লেকে। সূর্যের কোন দেখা নাই, চারপাশ ধোঁয়ার মত ঢেকে রেখেছে কুয়াশা আর মেঘেদের দল। অদ্ভুত ঘুম পাড়ানো এক আবহাওয়া; ইচ্ছে হচ্ছিল মিরিক লেকের পাশে সবুজ দূর্বাঘাসে ঘুমিয়ে থাকি অনেকটা সময়। কিন্তু হাতে সময় তো নেই এখানে কাটাবার জন্য। সবাই নিজেদের মত করে ঘুরতে থাকলাম। লেকের স্বচ্ছ জলে চাষ করা মাছেদের দলের দেখা মিললো; লেকের উপরে তৈরী সেতুর উপর উঠে চললো ফটোগ্রাফী; কেউ কেউ সেতু পেড়িয়ে অপর পাড়ের পাইনের বনের কোল ঘেঁষে হাঁটতে লাগলো আপনমনে।
দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ আমরা সেখান হতে রওনা হলাম ভারত-নেপাল সীমান্ত এলাকার একটা স্পট, নাম “সীমানা ভিউ পয়েন্ট” এর দিকে। একটা পাহাড়ের উপরে ছোট্ট একটা স্পট; যার অপর পাশের ভূখন্ড নেপালের। মিরিক থেকে এখানে যাওয়ার পথের পুরোটা ছিল কুয়াশারূপী মেঘেতে ঢাকা। বৃষ্টি হচ্ছিল নাকি কুয়াশা ঝড়ছিলো এই ভেবে হলাম দ্বিধান্বিত। যাই হোক ঘন্টাখানেকের বেশী সময় পরে আমরা পৌঁছে গেলাম সেখানে।
চারিপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। কয়েকটি অস্থায়ী দোকান, যেখানে প্রতিটির দোকানি স্থানীয় মহিলারা; দারুন স্মার্ট নেপালী মহিলারা; উহু মেয়ে বলাই শ্রেয়; দোকানে নানান পণ্য নিয়ে বসেছিলেন এই আবহাওয়াতেও। আসলে আমরা সমতলের মানুষ, আমাদের কাছে এই আবহাওয়া বৈরী মনে হলেও তাদের কাছে এগুলোই নিত্যকার দিনমান। এখানে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম আমরা; যদিও ভিউ কিছুই পাই নাই। কিন্তু রহস্যময়তার চাদরে ঘেরা আবহাওয়ায় ভীষন ভালো লাগছিলো।
আর হ্যাঁ, এখানে দারুন কিছু লোমশ কুকুর ছিলো; সেগুলো খুবই শান্ত আর ভদ্র গোছের; শখ করে অনেকেই ছবি তুলছিলো তাদের সাথে। উপরে কয়েকটা ছবি শেয়ার করলাম। এখানকার দোকান হতে টুকটাক খাবার আর চা-কফি পাণ শেষে বেলা দুইটার দিকে আমরা রওনা দিলাম দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে।
দুপুর তিনটে নাগাদ পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং, চেক ইন করলাম আমাদের দু’রাতের আবাস, দার্জিলিং এর লিম্বুগাও এর গান্ধী রোডের ‘হোটেল মেঘমা’তে।
আমরা পৌঁছানোর আগেই আমাদের এজেন্ট শিলিগুড়ি হতে চলে এসেছেন দার্জিলিং এ। সবাইকে রুম বুঝিয়ে দেয়ার আগেই সেরে নিলাম লাঞ্চ; তারপর যার যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম। আজ আর কোন সাইট সিয়িং নেই; প্ল্যান রইলো সন্ধ্যের পর দার্জিলিং মল এ গিয়ে সদ্য ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া সালমান খান অভিনীত “সুলতান” সিনেমাটি দেখার।
ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬
পরের পর্বঃ দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন (কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ)
এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: হুম, আমিও দেখেছি মাছগুলো। আমার ভ্রমণেরও ছয় বছর হতে চললো। তবে মিরিকে এই লেক ছাড়াও অনেকগুলো দর্শনীয় পর্যটন স্পট আছে, সেগুলো দেখা হয় নাই। আমার একটা ইচ্ছে আছে ডুয়ার্স, মিরিক, রিম্বিক এবং লাভা একটা ট্যুর দেয়ার। আর যদি কখনো ফিটনেস ডেভেলপড হয়, আট দশ দিনের একটা ল্যাটানো সান্দাকফু ট্যুর দেয়ার। দেখা যাক, পৃথিবীটা সুস্থ হোক করোনার প্রকোপ থেকে।
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৩
সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:
তাই তো বলি, আপনি সদ্যমুক্তি পাওয়ার সালমান খানের 'সুলতান' মভিরে কেমনে ধরেন! ভ্রমণটা অনেক আগের হলেও মনে হচ্ছে সদ্য করা ভ্রমণের কোন রিপোর্ট । পাশাপাশি কুয়াশা একেবারে মিলিয়ে দিয়েছে। তবে তখন মনে হয় তেমন ঠাণ্ডা ছিল না। না হলে উহু মেয়েরা হাতে মোজা পড়তো।
আপনালে দেখাচ্ছে মনে হয় দোকানের উপরে? মেঘ ও কুয়াশার এমন মিলনমেলার দৃশ্য আসলেই চমৎকার। আমি সিলেটের চা বাগানকে কল্পনা করছি আপনার বাস্তবে গাড়ি নিয়ে চলা মিরিকের পথের সাথে।
সুন্দর ভ্রমণ ব্লগটি প্রকাশের জন্য ভালোবাসা জানবেন।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: হা হা হা, মাঝে তিন চার বছর এতো আলসেমী ছিলো যে, শ'দুয়েক ভ্রমণ পোস্ট বকেয়া পড়ে আছে। এই ট্রিপ সিরিজ এর পর দিল্লী-আগ্রা-জয়পুর সিরিজ, কোদাইকানাল-উটি-ব্যাঙ্গালুর-মাইসুর সিরিজ, দেরাদুন-নাইনিতাল-জিম করবেট-মুসৌরী-দিল্লী ট্রিপ, দিল্লী-ধর্মশালা-ডালহৌসী-পালামপুর-দিল্লী ট্যুর, মেঘালয়-আসাম-কলকাতা ট্যুর, কলকাতা-উড়িষ্যা-আসাম-নাগাল্যান্ড-আসাম-কলকাতা ট্রিপ কত কত লেখা চিন্তা করেন। যেহেতু আমি বর্ননার সময় সেই সময়ে লিখছি ধরে লিখি, তাই এই কনফিউশন তৈরী হয়। তাই প্রতিটি লেখার শেষে সময়কাল এখন উল্লেখ করে দেই।
দোকানের উপরে আমি না, সেই একজন, যে এই ট্যুরে আমাকে প্রচুর প্যারা দিয়েছিলো; আমার বন্ধুর কলিগ। হ্যাঁ, সিলেট-মৌলভীবাজার এর চা-বাগানের কথা মনে পড়বে। তবে দার্জিলিং বা মুন্নার এর পাহাড়ের তুলনায় সিলেটের টিলাগুলো খুব বেশী নিচু তথা প্রায় সমতল বিধায় কিছুটা ভালোলাগায় পার্থক্য হয় দার্জিলিং সাইডের চা-বাগান দেখে। তবে শিলিগুড়ি টু মিরিকের পথে দেখা চা-বাগানের সাথে সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
সিরিজের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রইবে। ভালো থাকুন সবসময়, আপনার জন্যও রইলো ভালবাসা এবং শুভকামনা।
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৬
সোবুজ বলেছেন: দার্জিলিং ঘুরেও এতটা আনন্দ পাইনি যতটা পেলাম আপনার লেখা পড়ে।তখন দার্জিলিং ছিল অশান্ত।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: দার্জিলিং তো সবে মাত্র পৌঁছলুম দাদা, ঘোরাঘুরি তো শুরু হবে আগামী পর্ব থেকে। সাথেই থাকবেন আশা করি।
পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট। এবছর দার্জিলিং যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মনে আছে, আপনি এবছর দার্জিলিং যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছেন এবং বোকা মানুষ দার্জিলিং ভ্রমণের গাইড হিসেবে "কম খরচে ঘোরাঘুরি" সিরিজে দার্জিলিং নিয়ে একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছে পোষণ করেছেন।
৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৩
সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:
এতো দেখি লিখার পাহাড় পড়ে আছে। অপেক্ষায় না থেকে সময় বের করে লিখে চলুন। প্রতিমন্তব্যে ভালোবাসা।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ইচ্ছে আছে এই ২০২২ এর মধ্যেই এক এক করে সকল বকেয়া লেখা লিখে শেষ করা। দেখা যাক কতটুকু পারা যায়। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রইবে।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অনেক বছর আগে একবার গিয়েছিলাম আমি মিরিকে। তবে ঘুরে দেখা হয়নাই। সেই সময় প্রচুর রঙ্গিন মাছ দেখেছি আমি লেকে। সামান্য খাবার দিলে তারা এক সাথে সবাই হামলে পরে।