নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৫)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩০



আগের পর্বঃ মিরিকের জলে কায়ার ছায়া (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৪)

ভারতে বেড়াতে গিয়ে সিনেমা হলে মুভি দেখাটা একটা “মাস্ট ডু লিস্ট” এর অংশ। আমি মুম্বাই বেড়াতে গিয়ে সেখানেই মুভি দেখি নাই। অথচ কেরালাতে মুভি দেখেছি, দেখেছি নাগাল্যান্ড এ! পুরাই হাইস্যকর ব্যাপার স্যাপার। তো দার্জিলিং মল এ সেবার ঈদে মাত্র মুক্তি পাওয়া বলিউডের সালমান খান এর অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি সুলতান দেখে রাতে যখন হোটেলে ফিরবো, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। কোন গাড়ী না পেয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ মুভির কাহিনী নিয়ে কথা বলতে বলতে আমাদের দলটি ফিরে এলাম আমাদের হোটেলে। হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনারের জন্য হোটেল এর ডাইনিং এ এসে দেখি আমার এজেন্ট ব্যাটা আবার এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। আসলে সে খুবই মাইডিয়ার লোক, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্থান কাল পাত্র বুঝে না। তাকে দেখতে পেয়ে আমি পুরো দলকে একটা টেবিলে রেখে আলাদাভাবে তার সাথে অন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম, প্রায় আধো মাতাল এর মত কথা বলছে, আমি একবার তাকে দেখছি আরেকবার দলের বাকীদের। আসলে পাহাড়ি এলাকায় এলকোহল একটা সাধারণ পানীয় হলেও আমাদের কাছে তা নিশ্চয়ই নয়। সে এই সন্ধ্যা রাতেই মনে হয় অনেকটা গলা ভিজিয়েছে। যাই হোক তাকে বললাম, কোন সমস্যা নেই মামা, এভরিথিং ইজ ওকো, ইউ ক্যান গো নাউ। তাকে বিদায় দিয়ে ডিনার করে রুমে ফিরলাম। শীত মোটামুটি ভালোই আছে। ইচ্ছে ছিলো দ্রুত ঘুমিয়া পড়ার, কিন্তু টানা জার্নিতে ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও আমার ঘুম আসলো অনেক দেরীতে। এদিকে আবার ঘুম থেকে উঠতে হবে ভোররাতে, তখন রওনা হতে হবে টাইগার হিল, বিখ্যাত কাঞ্চনজঙ্ঘায় সুর্যোদয়ের রক্তিম আলোর খেলা দেখতে।

পরদিন ভোররাতে উঠে সবাই ঘুম ঘুম চোখেই তৈরী হয়ে নিলাম। আমাদের আজকের যাত্রার জন্য গাড়ী তার আগেই হোটেলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। সবাই গাড়ীতে উঠে বসলে গাড়ী রওনা হলো টাইগার হিল এর উদ্দেশ্যে। যথাসময়ে সেখানে গিয়ে দেখি সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে; আমরা অনেকটা পেছনেই গাড়ী হতে নেমে হেঁটে হেঁটে টাইগার হিলে গিয়ে দেখি চারিধার কুয়াশায় ছেয়ে আছে, বিশ মিটার দূরের জিনিসই দেখা যাচ্ছে না। আশায় ছিলাম সূর্যোদয়ের আগে কেটে যাবে কুয়াশা আর মেঘ এর দল। আমি ভুল করে কানটুপি নিয়ে যাই নাই, সেখানে বেশ কয়েকটা দোকান দেখে এগিয়ে গেলাম, সেখান হতে একটা কানটুপি কিনে নিয়ে মাথা আর কান ঢাকলাম। আমার যত ঠান্ডা মাথায়, মাথা ঢাকা থাকলে আমি অনেক ঠাণ্ডায়ও টিকে থাকতে পারি, কিন্তু মাথা খোলা থাকলেই কম্ম সারা।







দার্জিলিং শহর হতে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিলের অবস্থান। দার্জিলিং বেড়াতে আসা পর্যটকদের অতি অবশ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে টপ প্রায়োরিটিতে থাকে এই টাইগার হিল। ২,৫৯০ মিটার উচ্চতার এই পাহাড়ি চূড়া হতে দেখা যায় এভারেস্ট এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা, যদি আকাশ পরিস্কার থাকে। আর সূর্যোদয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার লালিমায় মাখা রূপ তো পরম আকাঙ্খার বস্তু পর্যটকদের জন্য। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে দক্ষিণের দিকে কার্শিয়াং শহর, তার কিছু দূরে তিস্তা, মহানন্দা, বালাসোন এবং মেচি নদী দেখা যায়। আমাদের মন্দ ভাগ্য, এসব তো দূরের কথা, বর্ষায় দার্জিলিং বেড়ানোর খেসারত হিসেবে দশ-বিশ হাত দূরে থাকা নিজের দলের লোকদেরই দেখতে পাচ্ছিলাম না। এই ফাঁকে সেখানে কিন্তু নানান দোকানের পসরা ঠিকই বসে গেছে। আমরা সবাই এক নেপালী ভদ্রমহিলা’র দোকানে কফি পাণ করলাম কিছুটা উষ্ণতার খোঁজে।









পরে গাড়ীতে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, সূর্যই তো দেখলাম না, কাঞ্চনজঙ্ঘা তো পরের কথা। সে জানালো গত প্রায় এক মাস হতে চললো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় নাই, ঘন মেঘ আর কুয়াশার কারণে। আমি অবাক হলাম সে এটা জানতো! আসলে ভারতের ট্যুরিজম অনেক সুন্দর করে ছকে সাজিয়ে নিয়েছে প্রতিটি প্রাদেশিক সরকার, হোটেল এবং পর্যটন ব্যবসায়ীরা। প্রায় হাজার খানেক ট্যুরিস্ট এই শীত উপেক্ষা করে ভোররাতে আরামের ঘুম নষ্ট করে প্রায় দশ এগারো কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে দার্জিলিং শহর থেকে টাইগার হিল যাচ্ছে শুধুমাত্র সূর্যোদয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ শোভা দেখতে। অথচ এজেন্ট, হোটেল কর্তৃপক্ষ, ড্রাইভার সবাই জানে সেখানে গিয়ে কিছু দেখা যাবে না। অথচ, তারা শয়ে শয়ে পর্যটক প্রতিদিন পাঠাচ্ছে সেখানে; কারণ আর কিছুই নয়, পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা রাখতে হবে তো। আবার টাইগার হিলে কতগুলো দোকানী ঠিকই ভোররাতে দোকান খুলে বসে পড়ছে; তারাও জানে আকাশের অবস্থা যাই হোক, পর্যটক তো আসবেই। তাদের দিক থেকে ঠিক আছে, কিন্তু আমি বিরক্ত এজেন্ট এর উপর, সে তো আমাদের বললেই পারতো; তাহলে এই ঘুম নষ্ট করে এতদূর বৃথা আসতে হতো না। মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো, একদিকে আমার সারাদেহ ক্লান্তিতে একসার, সাথে ঘুম পুরো না হওয়ায় মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিলো, এখন উঠে গেল একেবারে সপ্তমে। অনেকটা সময় অপেক্ষার পর যখন সূর্যোদয়ের সময় শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ হলো, আমরা নেমে এলাম টাইগার হিল থেকে। গাড়িতে বসতে এর মাঝে দলের দুয়েকজন আমার সাথে খুনসুটি করার চেষ্টা করাতে আমার মেজাজ গেল আরও খারাপ হয়ে। মন চাচ্ছিলো ধুত্তরি ছাই ট্যুর, এখনি বাসায় ফিরে যাই। তাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে গাড়িতে পেছনে গিয়ে বসে রইলাম রাগ করে। আর আমার এহেন আচরণে দলের সবারও মন গেল খারাপ হয়ে। আর এই মন খারাপ আবহ নিয়েই গাড়ীতে উঠতেই গাড়ী রওনা হল পরবর্তী গন্তব্য, বাতাসিয়া লুপ এর উদ্দেশ্যে।







সারা ভারতবর্ষে টয় ট্রেন আছে পাঁচ ছয়টি জায়গায়, যার মধ্যে জলপাইগুড়ি-দার্জিলিং এর মাঝে চলমান টয়ট্রেন এর খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। আর এই বাতাসিয়া লুপে এসে টয়ট্রেনগুলো বাঁক ঘুরে দিক পরিবর্তন করে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে চলে যায়। দার্জিলিং শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘুম নামক রেলষ্টেশন এবং এর সন্নিকটেই এই বাতাসিয়া লুপ এর অবস্থান। ব্রিটিশ শাসন আমলে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য দার্জিলিংকে যখন বেছে নেয় তখন এই টয়ট্রেন এর স্থাপন করা হয় যা এখন ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব হেরিটেজ এর অংশ। সেই টয়ট্রেন এর বাঁক নেয়ার জায়গা এই বাতাসিয়া লুপ। বাতাসিয়া শব্দর অর্থ প্রবাহমান বাতাসের জায়গা আর লুপ অর্থ বাঁকানো ঘের বা পথের বাঁক। এই বাতাসিয়া লুপ ১৯১৯ সালে বৃটিশ কর্তৃক স্থাপিত রেল লাইনের বাঁক যেখানে ১৯৮৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মৃতিতে একটি গোলাকার চত্বর নির্মান করা হয়। সারা বিশ্ব থেকে দার্জিলিং এ বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষন এই বাতাসিয়া লুপে যখন টয় ট্রেনগুলো বাঁক নিয়ে চলে যায় তা অবলোকন করা।







আকাশ পরিস্কার থাকলে এই বাতাসিয়া লুপ থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়, বিশেষ করে বাতাসিয়া লুপের চত্বরের মাঝে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিকের মূর্তিটির পেছনে কাঞ্চনজঙ্গার পটভূমি, অদ্ভুদ সুন্দর একটি দৃশ্য। কিন্তু এখানেও মেঘ কুয়াশার দল আমাদের পিছু ছাড়লো না। গাড়ী হতে নেমে নিজেদের মত করে ঘুরে দেখতে লাগলাম চারিপাশ। কেউ কেউ স্থানীয়দের পাহাড়ি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছবি তুললো। বেশ কিছুটা সময় এখানে থেকে আমরা রওনা দিলাম “ঘুম মনেস্ট্রি”র দিকে।





নীচে দেখুন পরিস্কার দিনে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সুর্যোদয়ের লাল কিরণ এবং পরের ছবি দুটোয় বাতাসিয়া লুপ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (এই ছবি কয়টি সংগৃহীত)









ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬

এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
মিরিকের জলে কায়ার ছায়া (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৪)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভারতে গেলেও আমিও সিনেন্মা দেখি।

আচ্ছা, দার্জিলিং সুন্দর না আমাদের বান্দরবান?

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আসলে আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর সৌন্দর্য একরকম আর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর আরেকরকম। আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের উচ্চতা ২০০০-৩৪০০ ফুট এর মধ্যে অন্যদিকে দার্জিলিং, সিকিম, সিমলা,কাশ্মীর,মুসৌরী এসব এলাকার পাহাড়ের উচ্চতা ৫০০০-৬০০০ ফুট থেকে শুরু হয়। আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের সৌন্দর্যে এর দুর্গমতা, বুনো পরিবেশ, ট্রেইল ধরে ট্রেকিং করে যাওয়া এসব অন্যরকম একটা আবহ তৈরী করে। অন্যদিকে ভারতে রোহটাং পাস ১৩৫০০ ফুট, খারদুংলা পাস ১৭,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, কিন্তু সেটা মোটরেবল রোড সংযুক্ত, সহজেই গাড়ী দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়। আর ঐরকম উচ্চতার পাহাড়ের রূপ একরকম আর আমাদের পাহাড়ের রূপ আরেকরকম। তাই, কোনটা বেশী সুন্দর এটা আপেক্ষিক। আমার কাছে মুন্নার, মুসৌরী, রোহটাং এগুলো বেশী সুন্দর লেগেছে।

এবার আপনি দার্জিলিং বেড়িয়ে এসে বলবেন, আপনার কাছে কেমন লাগলো। বান্দরবান বেশী সুন্দর না দার্জিলিং সেটাও জানাতে ভুলবেন না।

ভালো থাকুন।

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৫২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কী সুন্দর জায়গা।
জীবনে এসব দেখতে পাবো কিনা কে জানে। আল্লাহ ভরসা

+

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ইনশাআল্লাহ্‌, করোনার দূর্যোগটা কেটে গেলেই দেখতে যেতে পারবেন। কম খরচে ঘোরাঘুরি সিরিজে দার্জিলিং ভ্রমণের উপর একটা লেখা থাকবে এই ভ্রমণ সিরিজ শেষ হলেই।

ধন্যবাদ আপনাকে, সিরিজের সাথে থাকার জন্য। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.