নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুম মনেস্ট্রি হয়ে রক গার্ডেন (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৬)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৭



আগের পর্বঃ কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৫)

টাইগার হিল হতে আমরা যখন রওনা হলাম বাতাসিয়া লুপ তখনো আকাশে কুয়াশা আর মেঘেদের বেশ রাজত্ব থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে কিছুটা কমা শুরু হলো তাদের দৌড়াত্ম। বাতাসিয়া লুপ থেকে যখন ঘুম মনেস্ট্রি রওনা হলাম তখন আকাশ বেশ কিছুটা পরিস্কার হলে পাহাড়ি পথে ধরে যাত্রাটা উপভোগ্য ছিলো। পাহাড়ের ঢালে ঢালে মাঝে মাঝেই দেখা পাচ্ছিলাম চা-বাগান এর। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত ঘুম ছোট্ট একটি পার্বত্য শহর। পাহাড়ের ভাঁজে দাঁড়িয়ে থাকা এই পাহাড়ি জনপদটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টয়ট্রেন এর ষ্টেশন এর জন্য ভুবনখ্যাত। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টয়ট্রেন এর রেল স্টেশন ঘুম, ভারতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত রেলস্টেশন। ভারতের নানান চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারি চিত্রায়িত হয়েছে এই ঘুম শহরেই। আমাদের সেবারের ট্যুরের পরের গন্তব্য ছিলো ঘুম মনেস্ট্রি।







ঘুম মনেস্ট্রি স্থানীয়দের কাছে ইগা চেওলিং মঠ বলে পরিচিতো। তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের একটি অন্যতম শাখা হলো ‘গেলুগ’; আর এই গেলুগ শাখার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের ধর্মীয় একটি পবিত্র স্থান হলো এই ঘুম মনেস্ট্রি। ১৮৫০ সালের দিকে মঙ্গোলিয়ান জ্যোতিষ এবং ধর্মীয় নেতা লামা শেরাব গ্যাতসো এই মঠের গোড়াপত্তন করেন এবং ১৯০৫ সাল পর্যন্ত এই মনেস্ট্রির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উনার দেহাবসানের পর লামা দোমো গেসে রিনপোচে ১৯০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তা পালন করেন। ১৯৫৯ সালে যখন চীন তিব্বত আক্রমন করে তখন বহু তিব্বতীয় ভারতে এসে এখানে রিফিউজি হিসেবে আশ্রয় নেয়। ঘুম শহরে বর্তমানে তিনটি মঠ রয়েছে যার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত। এখানে ১০৮ খন্ডের তিব্বতীয় বৌদ্ধ শাস্ত্র ‘কাংগ্যুর’ নামক বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম গ্রন্থ সংরক্ষিত আছে। এখানে প্রার্থনায় রীতিনীতি তিব্বতীয় প্রথা পরিলক্ষিত হয়, এখানকার ধর্মীয় গুরুগণ তিব্বতীয় প্রথায় এখনো প্রার্থনা পতাকা উড়িয়ে থাকেন।









ঘুম মনেস্ট্রির ভেতরে ঢুঁকে সবাই দেখে এলে এর চত্বরে দাঁড়িয়ে চললো কিছু ছবি তোলার পালা। এখান থেকে পাহাড়ি ঢালে মেঘেদের দলের ছোটাছুটি দেখাটা ছিলো দারুন উপভোগ্য। এরপর এখান থেকে আমরা রওনা দিলাম রক গার্ডেন। ইতোমধ্যে পেটে ছুঁচো ডাকছে সবার, তাই রক গার্ডেন পৌঁছে সেখানে থাকা একটা ছাউনি দেয়া দোকানে আমরা গরম গরম মোমো খেয়ে নিলাম, কেউ কেউ ম্যাগি নুডুলস; সাথে নিলাম চা-কফি; আপাতত উদরখানা কিছুটা শান্ত থাকুক। এই ফাঁকে আমরা ঘুরে দেখি রক গার্ডেন।


১৮৩৫ সালে ব্রিটিশরা সিকিমের রাজা হতে দার্জিলিং অধিগ্রহণ করার পর থেকে এই অঞ্চলে তারা নগর পত্তন করে এবং এখানকার পর্যটন দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে। চা-বাগানকে কেন্দ্র করে এখানে ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে থাকে। গত শতকের আশির দশকে স্বাধীন ভারতে দার্জিলিং এর রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠে এবং ১৯৮৮ সালের দিকে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ (ডিজিএএইচসি) প্রতিষ্ঠীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসে। সেই দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ এর পর্যটন বিভাগ নির্মান করে এই রক গার্ডেন। দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ঘুম স্টেশনের পূর্বে ডানদিকে মোড় নিয়ে এই রক গার্ডেনের অবস্থান। এটি মূলত একটি পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পিকনিক স্পট। পাহাড়ের গা বেয়ে যে পথে জলধারা নেমে এসেছে সেখানে অনেক পাথুরে পথের চারিধারা বাগান এবং বসার জায়গা, ছোট্ট সেতু জুড়ে দিয়ে ঝর্ণার দুপাশে যাতায়াতের রাস্তা এবং কিছু কৃত্রিম সজ্জা এই জায়গাটিকে দিয়েছে অন্যরকম একটা ইমেজ যা খুব সহজেই এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এই রক গার্ডেন হতে তিন কিলোমিটার দূরেই রয়েছে গঙ্গামায়া পার্ক, যদিও আমাদের সেবারের ভ্রমণ তালিকায় তা ছিলো না।











টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতেই পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তখনও চলা মেঘেদের টুকরোর ছুটে চলা আর তার মাঝে সবুজের বুক বেয়ে পাথুরে পথে নেমে আসা ঝর্ণার রূপে সত্যিই মুগ্ধ হলাম। একেবারে ঝর্ণার পাদদেশে কৃত্রিম বিশাল এক পদ্মফুল এবং তাকে ঘিরে গোলাকারের চত্বর মত জায়গায় বেশ কিছু বসার জন্য ধাতব বেঞ্চ রাখা আছে। সেখানে থেকে দুপাশ দিয়ে ঝর্ণার চলার পথ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে উপরের দিকে; পর্যটকের দল সেই পথে উঠে চলেছে। আমি গিয়ে বেঞ্চিতে বসে পড়লাম, ঝর্ণার কলকল ধ্বনি এই নিশ্চুপ পাহাড়ি উপত্যকার নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে অদ্ভুত এক সুরেলা ঝংকার তৈরী করে চলেছে; অনেকটা সময় বসে রইলাম একাকী, দলের সবাই তখন ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। অনেকটা সময় এখানে কাটিয়ে আমরা রওনা দিলাম হোটেল অভিমুখে। সকালের নাস্তার পর্ব হোটেলে সেরে নিয়ে বের হয়ে যাবো দিনব্যাপী দার্জিলিং ট্যুর এর বাকী অধ্যায় সমাপ্ত করার জন্য। আসুন দেখি রক গার্ডেন এর কিছু ছবিঃ





















ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬

এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
দার্জিলিং মেইল এর যাত্রা শেষে মিরিকের পথে (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৩)
মিরিকের জলে কায়ার ছায়া (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৪)
কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা টাইগার হিল হতে বাতাসিয়া লুপ (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০৫)

এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪২

সোনাগাজী বলেছেন:


দার্জিলিং'এর মানুষের আয়ের পথগুলো কি কি?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:২২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। দার্জিলিং এর মানুষের জীবিকা নির্বাহের পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম চা উৎপাদন, বন হতে কাঠ এবং অন্যান্য বনজ সম্পদ আহরণ, কৃষিকাজ এবং অতি অবশ্যই পর্যটন।

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:১৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এসব দেখলে আমারও ইচ্ছে করে বোকা মানুষ সাজতে :-B

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সাদা মনের মানুষ আছেন, এটার চাইতে ভালো আর কি হতে পারে? হুদাই বোকা মানুষ সাজার কুনু দরকার নাই, বুইজছেন? :-B

৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:০৬

জুন বলেছেন: বেশ কয়েক বছর আগে দার্জিলিং গিয়েছিলাম। আমার হাজবেন্ড পাহাড় পছন্দ করে না তাই দ্বিতীয় বার আর যাওয়া হয় নি। তার এক এবং অদ্বিতীয় পছন্দ সমুদ্র :(
দার্জিলিং এ আপনার দেখা স্থানগুলো আমিও দেখেছি। অসাধারণ সুন্দর এক মায়াবী পাহাড় যা বর্ননা আর ছবিতে আপনি তুলে এনেছেন ব্লগের পাতায়।
+

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ জুন আপু। আমিও দার্জিলিং সেই ভ্রমণের পর আর ভ্রমণ করতে পারি নাই। আর আমার কাছে সমুদ্র প্রিয় হলেও পাহাড়ে বৈচিত্র বেশী, সেই প্রেক্ষাপটে সমুদ্র কিছুটা পিছিয়ে আছে পছন্দের তালিকায়।

পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো।

৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৮

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আমি দার্জিলিং যাই নাই। আপনার চোখে দেখলাম এক বসায় ৬টি পর্ব পড়ে। ছবি ও লেখা দুটিই ভালো লেগেছে।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:১০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল ভাই। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। পরের পর্বগুলোতেও সাথে থাকবেন। পরবর্তী পর্ব আজ পোস্ট করলাম। আগ্রহ এবং হাতে সময় থাকলে বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা গিয়ে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্ট পড়ে দেখতে পারেন, আশা করি ভালোই লাগবে।

ভালো থাকুন সবসময়।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১০

সোহানী বলেছেন: এমনিতে করোনার কারনে বন্দী জীবন, তার উপ্রে যদি এইসব পোস্ট দেখি তাহলে মেজাজ খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

যাবো নিশ্চয় একদিন। কিন্তু কবে জানি না..............

বাকি পোস্টগুলো পড়েছিলাম অফলাইনে তাই মন্তব্য করা হয়নি।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আর আমি যে গত তিন বছর যাবত বন্দী থেকে পুরাতন স্মৃতি জাবর কেটে চলেছি সেটার কি? আমার মেজাজ আরও বেশী খারাপ বলেই গত চার পাঁচ বছরে জমানো সকল ভ্রমণ কাহিনীর ডিব্বা খালি করার মিশনে নেমেছি। বুঝলেন?

অনলাইন অফলাইন বড় কথা না, বড় কথা হচ্ছে আমি জানি, আমার লেখা পড়ে কারো কারো দিন শুরু হয়। তাই প্রিয় পাঠকদের কথা মনে হলেই এখন লিখতে মন চায়। যদিও সুমন কর, বিদ্রোহী ভৃগু সহ আরো অনেকের এখনো দেখা পাই নাই এই ফিরতি যাত্রায়। দেখা যাক সামনে তাদের দেখা মেলে কি না। আপাতত দোস্ত ব্লগার থুক্কু মুরুব্বী ব্লগার এর মন্তব্যে খুশী থাক বোকা মানুষ। :)

আহা কবে যে আবার বেড়াতে পারবো, ভারতে আর চার পাঁচটি ডেস্টিনেশন কাভার করা বাকী ছিলো। তারপর ইচ্ছে ছিল ভারতের বাইরে ঘোরাঘুরির চেষ্টা করা। করোনা দিল সব ভুন্ডুল করে। আপাতত দেশেই ঘুরাঘুরি করতে হবে।

৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি গুলো দেখে ভালো লাগলো।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.