নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
১. জীবনের প্রথম রোজাঃ
তখন সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি; শিশুশ্রেণি বা ক্লাস ওয়ান হবে। জীবনে প্রথমবার রোযা রাখলাম, ভোররাতে ঢুলু ঢুলু চোখে সেহেরি খেলাম ঠিকই, কিন্তু ঘুম থেকে উঠে শুরু করে দিলাম কান্না, আমাকে কেন সেহেরিতে ডাকা হয় নাই। কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করার মাঝে জানলাম আমি ঘুম থেকে ভোররাতে উঠেছি এবং সেহেরীতে কি কি খেয়েছি। তখন আবছা আবছা যেন মনে হলো, হ্যাঁ, এরকম কিছু খাওয়ার কথা হালকার উপর ঝাপসা মনে পড়ছে। কিন্তু তা মুখে স্বীকার না করে আরও কিছুক্ষণ প্যাঁ পুঁ করে গেলাম। মজা লাগলো দুপুর বারোটার পর, বড়রা আমাকে পরামর্শ দিতে লাগলো ঘরের দরজা বন্ধ করে পানি খেয়ে নিতে, কেউ না দেখলে রোজা হয়ে যাবে। আরেক মুরুব্বী দাদী গোছের পরামর্শ ছিলো আরো সরেস, কলসের ভিতর রোজা বন্ধক রেখে খাওয়া দাওয়া করা যায়। আমি কোন কিছুতেই রাজী হচ্ছিলাম না, বরং এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনা “থুথু গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়” এই কথা মাথায় রেখে একটু পর পর মুখভর্তি থুথু বাথরুমে গিয়ে ফেলে আসছিলাম, আর ফলস্বরূপ গলা শুকিয়ে কাঠ। বিকেল বেলা খালা-ফুফু গোত্রীয় এলাকার মহিলারা আমাকে দেখে বার বার জিজ্ঞেস করছিলো, “তুমি সত্যিই রোজা রেখেছো?” তখন আমার বয়স পাঁচ বা ছয় বছর। সেদিন সারাদিন ঠিকঠাকভাবে কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে (শুধু বন্ধুর থুথু বিষয়ক পরামর্শ ছাড়া) জীবনের প্রথম রোজা রেখেছিলাম। সেদিনের স্মৃতি আজও মানসচক্ষে সুস্পষ্ট দেখতে পাই যেন।
২. ওঠঠো… রোজদারোঃ
খুব ছোটবেলায় রমজান মাসের রাতের বেলা আমাদের এলাকায় যারা কাসিদা গাইতে আসতো, তাদের কাছে লাঠিতে ঘুঙ্ঘুর জাতীয় কিছু থাকতো। মাটিতে ঠক ঠক করলে ঝনঝন শব্দ হত আর হাতে থাকা চোঙ্গা মাইকে হাঁক দিয়ে ডাকতো, “ওঠঠো… রোজদারো; রাত তিন বাজ গায়া, সেহেরী খা লো, এয় মোমিনো, ইমানদারো, সাহেরী কা ওয়াক্ত নিকাল রাহা হে…” তাদের এই হাঁকডাক ছোট্ট আমার শিশু মনে প্রচন্ড ভয়ের সৃষ্টি করতো। সবার আগেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত, অন্ধকার ঘরে বহুদূর হতে ভেসে আসা এই শব্দগুলো মনে হতো কোন ভূত প্রেতের শব্দ। কাউকে আমি আমার এই ভয়ের কথা কখনো জানাইনি। একটু বড় হওয়ার পর জেনেছি, এটা ঘুমন্ত সবাইকে সেহেরির জন্য মানুষের ডাক।
কাসিদা সম্পর্কে দু’লাইনে একটু বলি। কাসিদা একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ কবিতার ছন্দে কোন প্রিয়জনের প্রশংসা করা। কাসিদা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; এগুলোর প্রশস্তিমূলক, দর্শনতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, রমজান উপক্ষে রচিত প্রভৃতি ধরন রয়েছে। কাসিদা সাধারণত: দীর্ঘাকৃতির হয়; দৈর্ঘ্যে ৬০ হতে ১০০ লাইন; কখনও কখনও তা ২০০ লাইনেরও বেশি হয়। ফার্সিভাষী মোগলদের মাধ্যমে বাংলা অঞ্চলে কাসিদার প্রচলন ঘটে; আর এই সম্পর্কিত প্রাচীনতম তথ্যটি পাওয়া যায় ১৬০৮ সালে ইসলাম খান চিশতির সাথে নৌ-বহর নিয়ে যশোরে আগত মোঘল সেনাপতি মির্জা নাথানের 'বাহারিস্তান-ই-গায়বি' গ্রন্থে। বাংলাদেশে, বিশেষত: রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে রমজান মাসে সাহরী খাবার জন্য পাড়ায় পাড়ায় দলবেঁধে কাসিদা গেয়ে মুসলমানদের ঘুম থেকে উঠার জন্যে ডাকা হয়, যা এখানকার দীর্ঘদিনের একটি ঐতিহ্য। এটিকে তারা সওয়াবের কাজ মনে করেন এবং চানরাতের আগে হতে মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরানা তথা বখশিশ তোলেন। এশিয়াটিক সোসাইটির ঢাকা কোষ বইয়ে নবাবি আমলে মহল্লার সর্দারদের কাসিদার প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার কথা পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার কাসিদা গাওয়ার জন্য গড়ে ওঠে দু’টি দল। প্রথম দলের নাম ছিল ‘সুব্বাসি’ বা ‘সুখবাসী’। এরা ঐতিহ্যের উর্দু আর ফার্সি চর্চা করে কাসিদা গাইত। দ্বিতীয় দলের নাম ছিল ‘কুট্টি’। এরা বাংলার সাথে উর্দু ও হিন্দি ভাষা মিশিয়ে কাসিদা গাইত। আবার উর্দু ও ফার্সিতেও গাইত। এই দু’দলের হাত ধরেই ঢাকায় কাসিদার শুরু বলেই ধরে নেয়া হয়। একসময় ঢাকায় শুধু রমজানেই নয়, ঈদুল-ফিতর ও মহররম উপলক্ষেও কাসিদা রচনা করা হতো।
৩. বাংলাদেশ বেতারের কোরআন তেলাওয়াতঃ
আগে বাংলাদেশ বেতারে প্রতি রমজানে আসরের নামাযের পর ইফতারের ঘন্টাখানেক আগে কোরআন তেলাওয়াত প্রচারিত হতো আর ইফতারের আগে আগে প্রয়াত মরহুম মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহঃ) মোনাজাত করতেন, তার আবেগী কন্ঠের সেই মোনাজাত আজও কানে ভাসে। অন্তরের অন্তস্থল ছুঁয়ে যেতো তার সেই মহান রাব্বুল আল আমিন আল্লাহ্ তায়ালার কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠের প্রার্থনা। সেহেরীর সময়ও তার মুনাজাত প্রচারিত হতো। উল্লেখ্য, মাওলানা আমিনুল ইসলাম (রহঃ) ১৯৫০ এর দশক থেকে ঢাকা রেডিও সেন্টারে ও ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক ঢাকা টেলিভিশন কেন্দ্রের উদ্বোধনের পর থেকে টিভির ঢাকা কেন্দ্রে কুরআনের তাফসীর পেশ করেছেন। আজও আমি তার সেই মুনাজাত আর বাংলাদেশ বেতারের কোরআন তেলাওয়াত খুব বেশী মিস করি। এখন অবশ্য আমি ইউটিউবে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারে অবস্থিত মুফতি আবদুল কাইয়ুম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বল্লভদী আল ইসলামিয়া একাডেমির ছাত্র ক্বারী হাফেজ আবু রায়হান, যে কিনা ২০১৮ সালে কাতারে আয়োজিত তিজান আন নূর ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন এবং ক্বেরাত প্রতিযোগিতায়ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলো, তার কোরআন তেলাওয়াত ইউটিউব হতে ব্লুটুথ স্পীকারে নিয়ে আসরের পরে শুনে থাকি। আমার যাপিত রোযাবেলায় ইফতারের আগে কোরআন তেলাওয়াত শোনা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। যদিও আমি খুব ধার্মিক কোন ব্যক্তি নই।
৪. অ্যায় পাহাড়ি বরফঃ
ছোটবেলা আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিলো না। বাসা হতে মিনিট দশেকের দূরত্বে এক আত্মীয়র বাসায় ফ্রিজ ছিলো। ছোট্ট আমার একটাই ডিউটি ছিলো রমজানে, প্রতিদিন সেই বাসা হতে এলুমিনিয়ামের টিফিন ক্যারিয়ারের বাটিতে জমানো বরফ নিয়ে আসা এবং খালি একটা বাটি দিয়ে আসা। এই আসা যাওয়ার পথেই বেশ কিছু জায়গায় চটের বস্তায় ইয়া বড় বরফের পাটা গুঁড়ো ভুষি দিয়ে ঢেকে রেখে টুকরো টুকরো বরফ বিক্রি করতে দেখতাম, চলতো তাদের হাঁকডাক, “অ্যায় পাহাড়ি বরফ… অ্যায় পাহাইড়া বরফ…” বলে। শিশুমনে খেয়াল জাগতো আমি বড় হয়ে অনেক টাকা পয়সা আয় করলে প্রতিদিন এরকম বড় পাহাড়ি বরফের পাটা কিনবো। শিশুমনে আজব চিন্তা, ফ্রিজ কেনার চিন্তা কেন মাথায় আসলো না। এখন আর এই পাহাড়ি বরফ তেমন বিক্রি করতে দেখা যায় না। পুরাতন ঢাকায় দু’এক জায়গায় কদাচিৎ চোখে পড়ে এই পাহাড়ি বরফের হাঁকডাক।
৫. মুড়িভর্তাঃ
রমজানের আরক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মুড়িভর্তা, আপনারা বেশীরভাগ যাকে চেনেন ‘মুড়ি মাখানো’ নামে। রমজানে আমাদের বাসায় ইফতারের নিয়ম ছিলো সরবত, ফল, নানান ভাঁজা পোড়া আলুচপ, পেঁয়াজু, বেগুনী এগুলো খেয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেয়া। নামাজের শেষে শুরু হতো মুড়িভর্তার আয়োজন। প্রথমেই পেয়াজ কুঁচি, মরিচ কুঁচি, ধনেপাতা কুঁচি, কেউ কেউ সাথে পুদিনাপাতা কুঁচি, আদা কুঁচি আর লেবুর খোসা কুঁচি দিয়ে থাকেন; ভালো মত লবন সহযোগে ডলে নিয়ে তাতে আলুচপ, পেঁয়াজু, গুঁড়ো করে তার সাথে ছোলা আর ঘুঘনি ভালোমতে মিশিয়ে নিয়ে মুড়ি মাখানো আর সেই মাখানোর সময় এক গাঁদা ঝাঁঝালো সরিষার তেল এর ব্যবহার। আহ, কি ছিলো সেই স্বাদ, এখনও মনে হয় জিহবায় লেগে আছে। এখন সবাই স্বাস্থ্য সচেতন, সাথে খাবারে নানান ভেজাল; ফলে অনেকটাই হারিয়ে গেছে এই মুড়িভর্তার ঐতিহ্য। তবে এখনও পুরাতন ঢাকার বেশীরভাগ পরিবারে মুড়িভর্তা খাওয়ার চল রয়েছে।
৬. লেবু পুদিনাপাতার দোকানঃ
ছোটবেলায় শুনতাম রমজান হলো বরকতের মাস, এই মাসে পথের ধারে কোন কিছু নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বসলে সব বিক্রি হয়ে যায়। আর এই কথার জেরেই কি না কে জানে প্রতিটি পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে একাধিক লেবু, পুদিনাপাতা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, ক্ষিরা বা শশা নিয়ে ছোট্ট একটা চারপায়া টুলের উপর এলুমিনিয়ামের চওড়া থালা বিশেষে সাজিয়ে দোকান দিয়ে বসতো এলাকার বেকার ছেলে ছোকরা থেকে যুবকের দল। আর এই কারনেই বুঝি, লেখক ও গবেষক হাকিম হাবিবুর রহমান তার বইয়ে লিখেছিলেন, "যে মৌসুমেই রমজান হোক না কেন, ঢাকায় পুদিনাপাতা, ক্ষিরা আর ধনেপাতা পাওয়া যাবেই। আর পাওয়া যেত আখ। গোলাপ বা কেওড়া ফুলের পাপড়ি দিয়ে সুবাসিত করা হতো এগুলো।" একই পাড়ায় তিন চারজনের দোকান দেয়ার ঘটনাও ঘটতো। মহল্লাবাসী কনফিউজড থাকতো কার থেকে কিনবে, কেননা একজন থেকে কিনলে অন্য বাকীরা অসন্তুষ্ট হবে।
৭. মসজিদে ইফতারঃ
আগে পুরাতন ঢাকায় প্রতিটি পরিবারে একটা প্রচলন ছিলো রমজানের শুরুর দিকে একদিন মসজিদে ইফতার পাঠানো। বড় এলুমিনিয়ামের থালায় সাজিয় নানান ফলফলাদি, ভাঁজাপোড়া সাথে শরবতের জগ দিয়ে আমাদের ছেলে ছোকরাদের পাঠানো হতো মসজিদের খাদেম বা মুয়াজ্জিন এর হাতে সেই ইফতার তুলে দেয়ার জন্য। ধনী গরিব প্রতিটি পরিবারই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এই কাজটি করতো। অধুনা এই জিনিসটা আর চোখে পড়ে না।
৮. ইফতারের ডালাঃ
পুরাতন ঢাকার রমজানের আরেক প্রথা ছিলো মেয়ের শ্বশুর বাড়ীতে ইফতারের ডালা পাঠানো। অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো কয়েকটা ভ্যানগাড়ীতে করে নানান ফলের ঝুড়ি, ভাঁজাপোড়া ইফতার আইটেম রঙিন জরি কাপড়ে ঢেকে দিতো, অনেকে ডেচকি ভরে বিরিয়ানি, মোরগপোলাও এমনকি আস্ত খাসির কাবার দিয়ে ইফতারের ডালা সাজিয়ে পাঠিয়ে দিতো মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে। আমরা ছেলে ছোকরার দল যদি খবর পেতাম অমুক বাড়ি হতে আজকে ইফতারের ডালা যাবে, তাহলে সারাদিন সেই বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম, আয়োজন দেখতাম, তারা না চাইলেও তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে যেতাম, ডানপিটে কিছু ছেলেপেলে সেই ডালার সাথে হেঁটে হেঁটে শ্বশুর বাড়ির গেট পর্যন্ত চলে যেত। এই ডালা নিয়ে আমার একটা দুঃখের স্মৃতি আছে। আমার খুব কাছের এক আত্মীয় তার মেয়ের বাসায় ইফতারের ডালা পাঠানোর জন্য রোজা থাকা অবস্থায় বাজার করে বাসায় ফিরে গরমে হার্ট ফেইলের করে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বারো ঘন্টারও কম সময়ের ব্যবধানে মারা যান। আল্লাহ্ উনার দুনিয়াবি সকল ধরনের ভুলত্রুটি গুনাহখাতা মাফ করে কবের আজাব থেকে রক্ষা করুন এবং কেয়ামতের দিবসে তাকে জান্নাত নসীব করুন। আমীন।
আর হ্যাঁ, সাথে এক পরিবার থেকে আরেক পরিবারে, এক বাসা থেকে আরেক বাসায় সারা মাস জুড়েই চলতো ইফতারের আদান প্রদান। যা এখন এক্কেবারেই দেখি না। বাচ্চা কাচ্চার দলের আগ্রহ থাকতো এই ইফতার বিনিময়ের প্রথায় আজকের দিনের "ফুড ডেলিভারী বয়" এর ভূমিকা পালনের জন্য।
৯. কচু চাপরির ২০ রোজাঃ
পুরাতন ঢাকায় একটা রীতি আছে ২০ রমজানে তাঁরা কচুর তরকারী আর চাপরি (চালের গুড়োর সাথে ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, পেয়াজ কুঁচি পানি দিয়ে মাখিয়ে সরিষার তেলে রুটি/পরোটার মত তৈরী একটা পদ) খাওয়ার চল ছিলো। এখন প্রায় নাই বললেই চলে। কিন্তু ছোট বেলায় দেখতাম সারা বছর কচুর দেখা না মিললেও ২০ রোজার আগের দিন থেকে বাজারের কচুর সয়লাব, এমন কি মাথায় করে ফেরিওয়ালারা কচু বিক্রি করতো।
১০. তারাবিহ, ফাকি, আম চুরি, সাইকেল চালানোঃ
একটু বড় হলে মসজিদের তারাবিহ পড়তে গিয়ে চলতো দূরন্তপনা। নামাজ না পড়ে দুষ্টামিতে মেতে থাকতাম সমবয়সী সবাই। আরেকটু বড় হলে কোথায় আম গাছ আছে তার খোঁজ করে আম চুরি করতে দলবেঁধে রওনা দিতাম। যখন প্রথম সাইকেল চালানো শিখলাম, তখন স্কুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখতাম, রমজানে রাতের বেলা ভাড়ায় সাইকেল নিয়ে আজিমপুর কলোনীর দিকে দাপিয়ে বেড়াতাম। আগে আজিমপুর কলোনির দিকে প্রচুর গাছ ছিলো, সেগুলোর ফলচুরি’ও এসব সাইকেল চালানোর মিশনের অন্তর্গত থাকতো।
এর বাইরে একটা স্মৃতি মনে আছে। স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন, আমাদের স্কুল হতে একটা ইফতার পার্টিতে নিয়ে যাওয়া হয়ে, পান্থপথে। পান্থপথে তখন রাস্তাটা হয় নাই। বসুন্ধরা মার্কেট আর এপাশের ফার্নিচারের মার্কেটের এলাকায় ময়লা পানির ডোবা ছিলো। আমাদের স্কুলটা ছিলো জামাত শিবির ঘেঁষা, সেই ইফতার মাহফিল ছিলো ছাত্র শিবিরের। স্কুলে কিছু টিচার আর কিছু বড় ভাইদের সাথে যাওয়া সেই সিকি শতাব্দীরও বেশী সময় আগের ইফতার পার্টিতে দুটো বিষয় মনে আছেঃ প্রথমত ইয়া বড় বড় মশার কামড়ে সারক্ষণ অতিষ্ঠ হওয়া আর ইফতারে পানি চাইলে পাতলা গোলাপী রঙের রুহ আফজার শরবত ধরিয়ে দেয়া।
এখন রমজানে আমি মিস করি হালিম। আগে রমজানে আমার পছন্দের হালিম ছিলো ঘরোয়া, ডিসেন্ট, রয়েল, মদিনা, নিরব এর হালিম। এগুলোর মধ্যে ডিসেন্টের হালিম ছিলো ব্যতিক্রম, এখনও আছে। মদিনা ছিলো এর পরের প্রিয় হালিম, এবারের রমজানে তারা হালিম বানাচ্ছে না। মতিঝিলের ঘরোয়াতো কি এক খুনের ঘটনায় বন্ধই হয়ে গেল। নিরবের হালিম আর আগের মত নেই। তবে রয়েলের হালিম এখনও বিক্রি হচ্ছে। মজার ব্যাপার এদের মধ্যে ডিসেন্ট, রয়েল, মদিনা এরা কিন্তু সারা বছর হালিম বিক্রি করে না, শুধুমাত্র রমজানেই এই অতি সুস্বাদু হালিমগুলো পাওয়া যায় বা যেত।
এই তো, স্মৃতির খাতায় তুলে রাখার জন্য রমজানের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু স্মৃতি তুলে রাখলাম আগত দিনে নস্টালজিক হওয়ার জন্য।
রামাদান মুবারক হো।
বোকা মানুষের আরও কিছু স্মৃতিচারণ লেখাঃ
সুবরাইত, মোররা, হালুয়া-রুটি আর সিন্নির কিসসা (শবে বরাত এর স্মৃতিচারণ গল্প)
পুরাই চাঁন রাইত!!!
বদলে গেছে আমার প্রিয় ঈদ
ফিরবে না মোর সেই ঈদের দিনগুলো
কোরবানির পশুর হাটের খোঁজে ঈদের ইতিহাসে পরিভ্রমণ এবং আমার আক্কেলগুড়ুম
স্মৃতির পাতায় পুরাতন ঢাকার “কুরবানীর হাট”
বকরির ঈদ!
চকবাজারের ঈদমেলা – হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি’র ডালা
সময়ের পরিক্রমা মহররমের তাযীয়া মিছিল এবং একটি শোকগাঁথা’র উৎসবে রূপান্তর
হারিয়ে যাওয়া শৈশবের মজার খাবারগুলো
ডানপিটে ছেলেদের হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলো...
আমার শৈশবের কিছু প্রিয় অর্থহীন ছড়া (পড়লে সময় নষ্ট, না পড়লে আমার কষ্ট)
আমার স্মৃতিবেলা - বিজয় দিবসের যাপিত দিনগুলো
বহুদিন পর দোলা দিয়ে গেল আমার প্রথম প্রেম
আমার স্মৃতিবেলা – ফুটবল বিশ্বকাপ
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:০৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। অনেকদিন পর আপনাকে আমার ব্লগ বাড়িতে পেয়ে ভালো লাগলো। আসলে আমাদের সকলের শৈশবের রমজানের স্মৃতি কমবেশি একই ধরনের। মধ্য রাতের পরের কাশিদা বা মসজিদের মাইক হতে৷ সাইরেন বা হুজুরের ডাক, পাহাড়ি বরফের স্মৃতি, রোজা রাখা, রোজা ভাংগা, ইফতারের নানান খানাপিনা এসব।
আপনার বাচ্চাদের ছোট বয়স থেকেই রোজা রাখার অভ্যাস করাচ্ছেন জেনে ভালো লাগলো। আল্লাহ তাদের নেক হায়াত দাণ করুন, আমীন।
ভালো কাটুক অবশিষ্ট রমজানের সময়টুকু। ভালো থাকুন সবসময়। শুভকামনা।
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
৮ টা পয়েন্ট মিলেছে।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৫১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: কোন দুটো মিলে নাই, খুব জানতে ইচ্ছে করছে। জানতে পারি কি?
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:০৩
শেরজা তপন বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারন- অনেকগুলো মিলে গেল নিজের সাথে।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:০২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: প্রশ্ন সবার কমন পড়ছে, এবার জিপিএ ফাইভ ১০০%
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৫২
অপ্সরা বলেছেন: আহা আমাদের ছোটবেলার রোজাবেলা।
সব হারিয়ে গেলো!
২০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:২৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সব কি আসলেই হারায়? নিউরনের অলিগলি হয়ে নিলয়-অলিন্দের কোন চোরাকুঠিতে স্মৃতি হয়ে অনেক কিছুই রয়ে যায়। শুধু তা চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৩২
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আসলে ছোট বেলার রোজা রাখার বিষয়গুলো চমৎকার।
২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:০১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার ভাই। ভালো থাকুন সবসময়।
৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
ছোটবেলার রমজান মাস মনে করিয়ে দিলেন।
২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর। ঈদ কেমন কাটলো?
৭| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৫৯
রানার ব্লগ বলেছেন: ছোট বেলার রোজার স্মৃতির সাথে আপনার স্মৃতি মিলে যাচ্ছে। আহা! সেই দিন ছিলো একটা।
২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:২২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আমাদের সকলের রোযা বা ঈদের স্মৃতিগুলো কমবেশি অনেকটাই কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। আহা, সেইসব হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো...
ধন্যবাদ রানার ব্লগ। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৫২
নীল আকাশ বলেছেন: আমরা ছোটবেলায় রোজা রাখার সময় যা যা দেখতাম বা শুনতাম তাকে অনেক কিছুই এখন আর প্রচলিত নেই। আগে রাতের বেলা কাশি তারা আছে ঘুম ভেঙে যেত সেহরি খাওয়ার জন্য যেটা এখন আর একেবারেই অপ্রচলিত
রেডিওতে ইফতারের আগে যে মোনাজাতের কথা বলেছেন সেটার কথা আমার এখনো স্মরণ আছে। তবে এখন সেটা আর প্রচারিত হয় না।
আমার বাসায় খুব ছোটবেলা থেকে রোজা রাখার প্রচলন ছিল যার প্রচলন এখন আমি আমার নিজের বাসায় রেখেছি আমার ছোট ছোট বাচ্চারা এখনই এই বয়স থেকে রোজা রাখা শুরু করেছে। বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে অভ্যাস করলে বড় হয়ে আর রোজা রাখতে কষ্ট হয় না।
আমার এখনো মনে আছে ইফতারের আধা ঘন্টা বা ১ ঘন্টা আগে আম্মু আমাকে টাকা দিয়ে বলতেন বরফ কিনে নিয়ে আসতে। আমি বড় একটা বাটি বা এই ধরনের কিছু একটা নিয়ে যেয়ে সম্ভবত ২৫ পয়সা বা ৫০ পয়সা অথবা ১ টাকা দিয়ে একটা বড় বরফের টুকরা কিনে নিয়ে আসতাম যেটা শরবতের মধ্যে দেওয়া হতো।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়ে খুব চমৎকার লাগলো।
নিশ্চয়ই ভালো আছেন আল্লাহর রহমতে। মাহে রমাদানের পবিত্র শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য।