![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি নহ নিভে যাওয়া আলো, নহ শিখা । ফেইসবুকে ঃ https://www.facebook.com/abmhayat.ullah
ইদানিং প্রায়ই ঘুমের ঘোরে বাবাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখি।একরাশ কালো মেঘ আমার আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। মাঝ রাতে ঘুম থেকে জেগে অনুধাবন করার চেষ্টা করি; বাবা না থাকলে আমার জীবনে কতোটা শূন্যতার সৃষ্টি হবে।বাবা নেই কল্পনা করলেই আমার নিজের অজান্তে চোখের কোনে জল এসে যায় এবং চাপা কান্না শুরু হয়।আমি জানি সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার পর বাবা হয়তো তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কিন্তু না;বাবার সাথে কথা না বলে কিছুতেই থাকা যায়না, রাত যত গভীর হোক না কেন।অন্ধকার হাতড়ে সেলফোন দিয়ে বাবাকে ফোন করি।ফোন ধরেই বাবা অদ্ভুত রকমের বিচলিত কণ্ঠে জানতে চান''আমার কোনো সমস্যা হয়েছি কিনা''।''আমি ভালো আছি বললেই কেবলমাত্র বাবা শান্ত হন।গভীর রাতে আমার ফোন করার কারন জেনেই হয়তো তিনি বলেন ''তিনি ভালো আছেন।
ছেলেমেয়েদের আদর্শ মানুষ করার জন্যই বাবার যতসব নিরলস চেষ্টা।জীবনের উষালগ্ন থেকেই বাবাকে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়েছে।এ সংগ্রাম হলো নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম।বাবা ছিলেন পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান।তিনি যখন বুঝতে শিখলেন তখন দেখলেন ওনার বাবা(আমার দাদা) শয্যাশায়ী।পরিবারের চরম অভাব অনটনের কারনে তাকে বাল্যকাল থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু একটা করার তাগিদ প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেছিল।ম্যাট্রিক পাশ করার পরপরেই বাবা চাকরি শুরু করেন। তারপর ক্রমান্বয়ে আই এ, অনার্স সম্পন্ন করেন।
বাবা কখনো জীবন যুদ্ধে হারতে শিখেননি বলেই হয়তো জীবন যদ্ধে এখনো টিকে আছেন।জীবনের গোধূলি লগ্নে এসে বাবা কিছুটা ক্লান্ত।তবে এই প্রতিবন্ধকতা,জীবনের চরম অনিশ্চয়তা ও সময়ের দুষ্টচক্রের পরও তিনি সদা হাস্যোজ্জল।
বাবা, মানুষের চোখে তুমি হয়তো খুব সাধারন একজন,বাবা; আমার চোখে তুমি অসাধারন।তোমার্ আদর্শ,সরলতা,ত্যাগ,ধৈর্য্য আমার জীবনে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা।স্নেহ-মায়া মমতায় বাবা তুমি অতুলনীয়।আমার প্রতি তোমার প্রত্যাশার প্রতিফলনস্বরূপ তোমাকে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দিতে পারিনি।মাঝে মাঝে যা দিয়েছি তা প্রত্যাশার তুলনাই খুব নগন্য।
বাবা,তোমার যে আদর্শের কারনে আজ আমি প্রস্ফুটিত,সে আদর্শ প্রত্যাশার পাল্লাকে আরো ভারী করে তুলেছে।চিন্তা করোনা বাবা,আমি প্রত্যাশার চাপে কখনো নুইয়ে পরবোনা বরং কথা দিচ্ছি আমি
তোমার আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবোই এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ আর হিমেল হাওয়ার মাধ্যমে তোমাকে জানান দিতে চাই" তোমাকে ভালবাসি বাবা, অনেক ভালবাসি'' যা কখনো বলা হয়নি।মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে থেকেও মনে হচ্ছে,কত দূরে।বাবা তোমাকে ভীষণ রকম মিস করছি।তোমার মত বাবার সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত। ভালো থেকো বাবা, অনেক ভালো।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৪৩
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার চিঠি পড়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।মনের মধ্যে কতটা আকুতি, কতটা আবেগ, কতটা ভালবাসা থাকলে বাবাকে এ ধরনের চিঠি লেখা যায় !! আপনার বাবা ভাগ্যবান আপনার মত ছেলে পেয়ে। অসাধারন হয়েছে ব্রো ।আপনার বাবার জন্য শ্রদ্ধা। আপনার জন্য শুভকামনা।
কেনো পরিচিত হওয়া যাবেনা?? অবশ্যই যাবে।আপনার সাথে পরিচিত হতে পারলে আমারও ভালো লাগবে। ফেবুতে পাবেন;
https://www.facebook.com/abmhayat.ullah
২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:১৫
জাকির সজিব বলেছেন: খুব ভালো লাগল।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:২৪
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া, এত বড় লেখা পড়ার জন্য।
৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:২১
হাসনাত মহসীন বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে !! পৃখিবীর সকল বাবার প্রতি শ্রদ্বা।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৩
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাইয়া।
৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৮
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: ভাল লাগল । কিন্তু একটা কথা কি, কোন বাবাই সাধারণ না ।
সবাই অসাধারণ ।
আমার বাবা কবিতাটা সময় পেলে দেখবেন । ভাল লাগবে ।
কমেন্ট প্রত্যাশিত । তা সে যেই হোক না কেন
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৫
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া, অবশ্যই দেখবো, কমেন্ট ও করবো ।
৫| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৮
জিসান শা ইকরাম বলেছেন:
বাবাকে নিয়ে লেখাটি অন্তর স্পর্শ করে গেল.......
শুভকামনা আপনার বাবা ও আপনার প্রতি........
২০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৪২
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৪
নিমচাঁদ বলেছেন:
আপনাদের দুই জনের বাবার প্রতি ভালোবাসা ,আমাকে ছুয়ে গেলো ভীষণ ভাবে । আমার ৮০ উর্ধ্ব বাবার সাথে আমি এখন ও বসবাস করি । বয়স আমার ওঁ ৪০ ছুয়ে গেলো , কিন্তু কেনো জানি , বাবা মা হতে দূরে থাকতে পারি না ।আজকে দুপুরেও মা, শীতের পিঠা বানিয়ে আমাকে দিয়ে গিয়েছেন । এটা বিরাট ব্যাপার । কারণ আমি ৫ তালায় থাকি , বাবা মা ৪ তালায় থাকেন । মায়ের সিড়ি বাওয়া নিষেধ, তাও তিনি এসেছেন । কারণ , ভালোবাসা না সন্তানের প্রতি কর্তব্যবোধ , জানি না । বাবা মা র দোয়া বিরাট জিনিশ । এই টাই এই জীবনের আপনার আমার চলার পাথেয় ।
ভালো থাকবেন ।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:৪৮
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ভাইয়া, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার বাবা-মাকে আমার শ্রদ্ধা ।মা এসেছেন তাঁর প্রিয় ছেলেকে একনজর দেখতে, দায়িত্ববোধ থেকে নয়। আমার বয়স আপনার অর্ধেক। আমি চাই আপনার মত আজীবন বাবা-মাকে ভালবেসে যেতে। ভালো থাকবেন ভাইয়া, অনেক ভালো।
৭| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:২৯
নিশাচর ভবঘুরে বলেছেন: বাবারা সন্তানের কাছে অনেক বড় একটা অনুভূতি!
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৩
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: জী ভাইয়া, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৮| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২৮
আরজু পনি বলেছেন:
কিছু ব্যাপার থাকে যা শুধু অনুভব করলেই ভালো লাগে...তারপরও পোস্ট এবং মন্তব্য মিলিয়ে একটা কথাই বলবো....
অদ্ভুত!!!-ভীষণ রকম ছুয়ে গেল......
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৫
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ আপু,
৯| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৬
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: শুভকামনা।
আপনার সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভাললেগেছে।
ভাল থাকুন।
২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৭
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমারও অনেক ভালো লেগেছে।
১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২১
চাটিকিয়াং রুমান বলেছেন: বাবাকে নিয়ে আবেগী লেখাটা মন চুয়ে গেল!
আপনার বাবার জন্য শুভকামনা।
২০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৪২
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। শুভকামনা নিরন্তর।
১১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫১
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: তোমাকে জানান দিতে চাই" তোমাকে ভালবাসি বাবা, অনেক ভালবাসি'' যা কখনো বলা হয়নি।
শোকেসে তুলে রাখলাম। বাবা ভাল থাক, সবথেকে ভাল।
২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৮
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার বাবাকে শ্রদ্ধা ।
১২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:১৭
কাউন্সেলর বলেছেন:
সত্যিই বাবারা এমন করেই সন্তানের হৃদয়ে থাকুক পরম শ্রদ্ধায়।
আপনার জন্যও রইলো সালাম, এমন সুন্দর একটি লেখা আমাদের দিলেন বলে।
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৩৮
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
১৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৪৮
কামরুল হাসান শািহ বলেছেন: তোমাকে ভালবাসি বাবা, অনেক ভালবাসি'' যা কখনো বলা হয়নি
আমারও কখনও তাকে এই কথা বলা হয় না
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৩৯
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: এখনি বলে ফেলুন । পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
১৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:০১
ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:
আপনার মত করে বাবাকে বলা হয়নি
না বলা অনেক কথা ।
আপনার অনুভূতি অসাধারন ।
২০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
১৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫০
নিমা বলেছেন: মন স্পর্ষ করে গেল লেখাটা
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৫
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: হুম ভাইয়া, বাবা-মাকে নিয়ে সব লেখাই হৃদয় স্পর্শ করা।
১৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৫
বাঘ মামা বলেছেন: ভালো লাগা
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১২
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।
১৭| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০৯
ছাইরাছ হেলাল বলেছেন:
ধূর ,
আমার সাথে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই ।
মনের কাছে জিজ্ঞেস করুন ,
মন কী বলে ?
তেমনই হবে , আমার দিকে কোন সমস্যা নেই
তা বোধ হয় আপনি বুঝতে পারেন ।
২০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:৪৪
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ওকে ।।
১৮| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৪৬
অপরাজিতার কথা বলেছেন: ভালো লাগল।বাবা-মা'কে সময় থাকতেই ভালোবাসার কথা বলা উচিত।তারা বিনিময়ের আশা না রেখেই আমাদের জন্য অনেক কিছু করেন।আমরা তো এইটুকু অন্তত পারি যে দিনে একবার হলেও বলা"ভালোবাসি"!
১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১০
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। হুম, সময় থাকতেই বলা উচিত, আমি বলে ফেলেছি, আপনিও বলে ফেলুন । ভালো থাকবেন।
১৯| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৪৯
তিথির অনুভূতি বলেছেন: খুব ভাল লাগল , আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল **
১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৩
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ। বাবাকে ""ভালোবাসি"" বলে দিন যদি পরবাসী না হয়ে থাকেন।
২০| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০০
চেয়ারম্যান০০৭ বলেছেন: বাবাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।দেশের বাইরে আছি ৩বছর,বাবাকে দেখি না।খুব ফিল করি।
২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪২
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: বাবাকে মিস করাটাই স্বাভাবিক।। সময় করে দেশে এসে বাবাকে দেখে যেতে পারেন।। শুভকামনা নিরন্তর ।।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:০৪
হোসাইন সাজ্জাদ বলেছেন: ভাই অসাধারণ হইছে। বাবাকে এত feel করেন। দোয়া করি যেদিন আপনি বাবা হবে সেদিন আপনার সন্তানরাও আপনার জন্য এতটা পাগল থাকে যেন। আমার একটা লেখা বাবাকে লেখা তার চাকরি জীবনের শেষ চিঠি ।
আমার বাবা একজন পোষ্টমাস্টার: তাকে লেখা জীবনের দুটি চিঠি
০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:২৪
শেয়ারঃ
0
0
0
বাবাকে লেখা হল জীবনের প্রথম চিঠি:
প্রিয় বাবা,
আশা করি ভাল আছ। আজ ২৭ আষাঢ়। বর্ষার একমাস বিদায় নিল।
বাবা, কিভাবে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের ঝড়ো দিন পার হয় আর কীভাবে বসন্তের ফুলের মেলা পার হয় ইট পাথরের এই শহরে বোঝা যায় না। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রকৃতি ছয়টি রূপে-রঙে ধরা দেয় এদেশের মানুষের রোজকার কাজ-কর্মে, আচার-অনুষ্ঠানে। এক সময় বর্ষা হলে ভেলা বা নৌকা বিচরণ করত, তখন বুঝতাম এখন বর্ষাকাল। অথচ দেখ, শীত কীভাবে বিদায় নিল বুঝতেই পারলাম না। প্রকৃতির যে আবহমান রূপ, তা সে বদলিয়েছে। বাবা, প্রকৃতির মত মানুষও বদলিয়েছে, বদলে যাচ্ছে, আরো দ্রুত। মানুষের কথা শুনে তার ভিতরের ব্যথা বুঝবার উপায় নেই। প্রকৃতি বদলিয়েছে মানুষের বিরূপ আচরণে আর মানুষ বদলিয়েছে তার নিজের কারণে; নৈতিকতা বির্সজন দিয়ে। বন্দে আলী মিয়ার
লেখা- “আমাদের ছোট গ্রাম ছোট ছোট ঘর থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর" । একথায় আশ্বস্ত হয়ে বিশ্বাস করার যোগ্যতা আমি হারিয়ে ফেলেছি। মানুষের সাদা চামড়ার ভিতরে একটি কুৎসিত-কালো মন থাকতে পারে তা আমি আজ বুঝি। গ্রামের সেই মেধাবীরা আজ কোথায় বাবা? যারা গ্রাম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সোনালী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখত। পরীক্ষার খাতায় কচি হাত দিয়ে লিখত-“চল গ্রামে ফিরে যাই” সাবলীল ভাষার রচনা। বাবা, প্রকৃতির সাথে আমিও বদলিয়েছি। কিশোর সাজ্জাদ রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- “বালাই সাজ্জাদ ”এর সাথে এসএম হলের ১৫৯নং রুমে থাকা সাজ্জাদের পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে বাবা, আমি একটি দিক থেকে বদলাইনি আর তোমরা আমাকে বদলাতেও দাওনি। তা হল পরিবারের ভালবাসা থেকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে সুখ-দুঃখের আলো-আধারির খেলা প্রতিনিয়ত সংসারকে দোলা দিলেও কোন কষ্ট; সেটা হোক আর্থিক বা মানসিক তোমরা আমাকে পেতে দাওনি। যাদের কারণে আজকে আমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা হয়ত জানে না, হৃদয়ের কতটা গভীর থেকে তাদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। কোনদিন কষ্ট পাব বলেও চিন্তা নেই আমার। তবে মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয়, পরিবারকে কিছু দিতে পারিনি এই বেদনা থেকে মাকে নিয়ে একটা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম এই মাসে। মা কে কিছু দিতে পারি নাই বাইশ বছরের এই জীবনে। কালি আর কাগজে একটা রচনা লিখেছি তাকে জনতার স্মরণীতে পরিচয় করার ব্যর্থ প্রচেষ্টাতে। বাবা, আমি খুব ভয়-ডর কম করতাম ছোটবেলা থেকে। সেই ছোটসময়ে রাতে চুরি করে অন্য গ্রামে ভিসিআর দেখতে যেতাম একাই; সাপ, বিচ্ছু, ভূতের ভয় উপেক্ষা করে। এ কারণে অবশ্য মার কম খাইনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাউকে ভয় না পেলেও আমার মত সবাই একটা জিনিসকে চরমভাবে ভয় পায়। সেটা কী জান বাবা, রক্তচোষা ছারপোকা!! ওর ভয়ে আমি ভীত থাকি সবসময়। সত্যি! এক হাস্যকর ব্যাপার বাবা, তাই না? ছারপোকা নিয়ে একটা লেখা লিখলাম গত সপ্তাহে, পত্রিকায় ছাপা হলে তোমাকে জানাব।
ইতি
তোমার স্নেহের
সাজ্জাদ
বাবাকে লেখা তাঁর চাকরি জীবনের শেষ চিঠি
২৭/১২/২০১০
প্রিয় বাবা,
কেমন আছ? আমার এ চিঠি যখন তোমার কাছে পৌঁছাবে, তখন হয়ত তুমি আর পাকুটিয়ার সাব-পোষ্টমাস্টার নাও থাকতে পার। চাকরি জীবনের এতগুলো বছর যে চেয়ার টেবিলে বসতে, সে টেবিলে অন্য কেউ বসবে। নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়া মনে হয়, দুনিয়ার চিরায়ত নিয়ম। তোমার সিল গালার জন্য আমাকে আর পুরাতন কলম যোগাড় করতে হবে না। তোমার অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আর পিয়নকে দেওয়া বকুনি শুনতে পাব না। শুনতে পাব না, তোমার কঠিন হাতে চিঠির উপর সিল মারার শব্দ। কি আশ্চর্য! একজন মানুষ ত্রিশটি বছর যে কাজ করতে অভ্যস্ত, হঠাৎ করে তার ডেইলি রুটিন চেঞ্জ হয়ে যাবে। আমি পাগল মানুষ কী না কী বলছি এসব মনে নিও না। তোমার এ পেশা জীবন আমি খুব কাছ থেকে অনুভব করছি। একজন মানুষ সকল যোগাযোগের মাধ্যম। কত সুসংবাদ আর দুঃসংবাদ বার্তা তোমার হাত দিয়ে পৌঁছেছে মানুষের কাছে। তুমি কখনো বুঝতেও পারনি। কোন চিঠি বয়ে এনেছে অনাবিল সুখ আর কোনটি পাহাড় সমান দুঃখ। যাদের চিঠি আসার কথা তারা তোমার কাছে কত আপন ভাবতে পার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিন-তিনটে বছর পার করলাম। অর্জন বলতে তেমন কিছু না হলেও, এতটুকু বলতে পারি আমি উপলব্ধি করতে পারি আমার আব্বুকে। একজন পোস্টমাস্টারের দূরদর্শিতাকে। গ্রামে থাকলে হাজার নালিশ তোমাকে বিরক্ত করত। বিগত সাত বছরে এ নালিশ তোমাকে শুনতে হয়নি। এ আর কম কী। এটাও তো আমার অর্জন; তোমাকে কষ্ট না দেওয়া। তাই না? সকাল আটটা-পাঁচটা অফিস তোমাকে তোমার অনেক কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আব্বু, একজন রসিক মানুষের ঘরকন্না মানায় না। এবার আর গল্প করতে পাড়ায় গেলে বার বার তোমার ঘড়ি দেখতে হবে না, অফিসের সময় হয়ে এল বলে। কেউ আর অপেক্ষা করবে না, তোমার জন্য পোষ্টঅফিস এর বারান্দায়। অবাক হচ্ছ, তোমার এ ছোট পাগল ছেলেটি এত পাকা কথা শিখল কোথা থেকে? আব্বু বিশ্বাস কর, তোমার পকেট থেকে টাকা চুরি করা সেই ক্লাস ষষ্ঠ শ্রেণীর সাজ্জাদ, আর আজকের এ সাজ্জাদের পার্থক্য অনেক বলতে পার। আমি আমাকে প্রকাশ করার ক্ষমতা কোথায় পেলাম জানি না। শুধু এতটুকু জানি, আমি আমার সৃষ্টিকর্তার কৃপায় লিখতে পারি। আব্বু, তুমি বলতে আমার কবিতা কেউ পড়বে না, অথচ দেখ আমার লেখার কত পাঠক। অনেকের কাছে আমি আইডল। সাংবাদিকতার চাকরিটা আমার হয়েছে শুধু আমার লেখায় আবেগ থাকে বলে। আমার লেখা পাঠক ধরে রাখতে পারে। এটা আমার কথা না, আমার বন্ধুরা বলে। অথচ তুমি আমার আবেগপ্রবণতাকে খামখেয়ালিপনা বলতে। আমার লেখা অনেকে পত্রিকা থেকে কাটিং করে জমা করে রাখে। কী থেকে যে কী লিখছি বুঝতে পারছি না। লোকে আমাকে নাকি আব্বু পাগল বলে। তাদের বলো তোমার এ পাগল ছেলেটি দেশবরেণ্য সাংবাদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে- আব্বু, আমার মধ্যে জীবনবোধ এতটা কাজ করত না। একটা ব্যাপারে আমি বেহিসাবী। টাকা খরচের ব্যাপারে। কেন জানি আমার হাতে টাকা থাকে না। একটা ব্যাপার বলি শুন তাহলে। আমি কিন্তু টিউশনি করাই। কিন্তু তোমাদের বলি না। তুমি আবার রাগ কর। আজ বলে ফেললাম সত্যিটা। আমার যে কখন টাকার দরকার হয়, আমি নিজেও বুঝতে পারি না।। আব্বু সাইকেলটা কিনেছি আমার টিউশনির টাকা দিয়ে। ওটার প্রতি আমার অনেক দরদ। পারতপক্ষে কাউকে চালাতে দেই না। সত্যি বলতে কী জান আব্বু, সাইকেলের প্রতি আমার আবেগ এতই বেশি যে, আমি আমাকে চিনতে পারি না। যেদিন আমি সাইকেলটা কিনলাম, তোমাকে ফোনে কেনার কথা বলেছিলাম। আমাকে লক্ষ টাকা দিলেও এত খুশি হতাম না, যতটা খুশি আমি সাইকেল কিনে হয়েছিলাম।
ইদানিং মোটর সাইকেলের প্রতি একটু ঝোঁক হয়েছে, তবে সাইকেলের কদর কিন্তু কমেনি। আমি অতি অল্প বয়সে সাইকেল চালানো শিখেছিলাম। মেজ আর বড় আমাকে ওদের নতুন সাইকেল চালাতে দিত না। আমি তোমার পুরনো ফনিক্স সাইকেলটা তেল দিয়ে মুছতাম। তোমার সাথে সাইকেলে চড়ে শুক্রবারের হাটে যেতাম। অথচ আমার এ সাইকেলটা আমার একার। মেজ আর বড় এখন আমাকে আর মানা করে না।
অথচ দেখ, সে সময় আমি কতই না কষ্ট পেতাম। একটা নতুন সাইকেলের স্বপ্ন আমার সারা জীবনের। আর একটা ব্যাপারে আমি খুব উদাসীন, তা হল সময়। সময়মত আমি কাজ করতে পারি না। সময় অসচেতন বলে তুমি আমাকে ঘড়ি কিনে দাওনি। আমার হাতে যে ঘড়িটা তুমি দেখলে সেটা অনেক দামি, তবে ছোট বেলার মত সে আনন্দ নাই। ঘড়িটা আমার এক ছাত্রী পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। মেয়েটার নাম রবি। অনেক মেধাবী, খুবই ধৈর্যশীল। আমার ঠিক বিপরীত, চঞ্চল বা অস্থির নয়। আব্বু, আজ হঠাৎ আমার সেই বাল্যকালের সন্ধিক্ষনের সময়গুলো খুব মনে পড়ছে। কৈশোরের শুরুটা আর কী। আমি তোমার পকেট থেকে টাকা মারতাম। ধরা খেতাম মাঝে মাঝে। প্রাপ্য হিসেবে মেজ আমাকে মারত। তুমি কম মারতে। অথচ দেখ, তুমি আজ আমাকে বাড়ি যাওয়ার সময় পাঁচশত টাকা অযথাই দিয়ে গেলে। সে দিনগুলোর কথা মনে হল আমার খুব কষ্ট হয়, কান্না পায়। এ কান্না আবার ভেব না, আমাকে তোমরা কেন মারছ এজন্য। কষ্ট হয় কেন আমি একদম পড়াশোনা করতাম না। একঘন্টা টেবিলে বসে থাকাকে আমার কাছে একশত ঘন্টা মনে হত। অথচ আমি সারা রাত খোলা আকাশের নিচে অন্যের বাসায় ভিসিআর দেখতাম। একটা টেলিভিশন আমারা ভাই-বোনরা খুব অনুভব করতাম। তুমি বলতে, টাকা রোজগার করে যে যার টেলিভিশন কিনবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই আমি টিউশনির পনের হাজার টাকা আর তোমার বেতনের টাকা দিয়ে চল্লিশ হাজার টাকায় কম্পিউটার কিনলাম। টেবিলে সবসময় এমনিতে পড়ে থাকে। ছোট বেলার সে আবেগটা আমি পাই না আব্বু। মার কথা কী বলব জানি না। শুধু অতটুকুই জানি তার সমস্ত imotional quality আমার মধ্যে বিদ্যমান। আমি আবেগী হবার গুণ মনে হয় মার কাছ থেকে পেয়েছি। মার জন্য আমার মন খুব কাঁদে। আমার তো আর শহুরে মা নয়। মোবাইলে আমার নিয়মিত খোঁজ নেবে; আমি খেয়েছি কিনা, ক্লাসে গিয়েছি কিনা। মা আমাকে বেশি দেখতে পারত না যখন আমি গ্রামে ছিলাম। কথাটা মনে হয় ভুল বলে ফেললাম। অথচ দেখ সবচেয়ে বেশি ভালবাসায় সিক্ত আমি ঢাকায় আসার পর। আমি বাড়ি গেলে তার জমানো সমস্ত টাকা আমি পেয়ে যাই। আসার সময় শেষ সঞ্চয়টুকু আমার পকেটে দিয়ে দেয়। একজন মার চেয়ে অনেক বেশি আবেগী আমার মা, আমি একবাক্যে স্বীকার করি।
জানি না তাকে কতটুতু সুখী করতে পারব। আব্বু অনেক লিখে ফেলেছি। আমার না বলা কথা, যা আমি কখনো তোমাকে বলতে পারতাম না। ভাল থেকো। দোয়া কর, তোমার স্বপ্নকে সার্থক করার ক্ষমতা যেন বিধাতা আমাকে দেয়।
সাজ্জাদ
১৫৯, এসএম হল
আপনার সাথে পরিচিত হবার তীব্র আশা তাকলেও হবে কিন জানি না। আমি ফেসবুকে sazzad_du07@yahho id তে আসি request পাঠালে খুশি হব।