নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সর্বং অনিত্যম

আমার কবিতারা ঘাস খায় বিষণ্ণ নদীর তীরে

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড

শেষ বলে কিছু নেই এখানেশুন্যের মাঝে চেতনারা সব জেগে থাকেঘুরে ফিরে সেইসব সুখ দুঃখফিরে ফিরে আসে চক্র পুর্ণ করhttps://www.facebook.com/herahemel

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেসলিংঃ নৃশংসতার ছদ্মবেশী ভাইরাস

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১১

রেসলিং কিশোর-তরুনদের মাঝে বেশ জন প্রিয় একটা স্পোর্টস প্রোগ্রাম। ছোটবেলা থেকেই আমি এই খেলাটা পছন্দ করতাম না।যদিও এটা একটা ফেক ফাইট, কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে রেসলিং রিয়াল ফাইট।



তবে আমি এই প্রসঙ্গে আলোচনা করব না। একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টা পর্যালোচনা করব। এটা সম্পূর্ণই আমার ব্যাক্তিগত চিন্তা ধারা।



রেসলারেরা একজন অপরজনকে শারীরিক ভাবে আঘাত করে। কখনো কখনো চেয়ার, মই বা অন্য কোন হ্যান্ডটুলের সাহায্য অন্যজনের মাথায়, বুকে, পেটে, পিঠে আঘাত করে রক্তাক্ত করে।দৃশ্যটা বেশ ভায়োলেন্ট।



একটা মানুষ আর একটা মানুষকে আঘাত করছে কোন কারন ছাড়ায়, এটা দেখে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কিভাবে আনন্দ পেতে পারে এটা আমার মাথাতেই আসে না।একজন মানুষ শুধু একটা পদকের জন্য অন্য একজনকে রক্তাক্ত করছে, আর সেই নিষ্ঠুর দৃশ্য দেখে আমরা বিমলানন্দ ভোগ করছি। এটা আবার কোন ধরণের বর্বর খেলা?



বিষয়টা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে সেই প্রাচীন রোম আর সেই বিখ্যাত কলাসিয়ামের কথা, যেখানে গ্লাডিয়েটরেরা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে লড়ত, খুন হয়ে যেত শুধু মাত্র রাজা আর দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য।কি নিষ্ঠুর ছিল সেই মানুষদের হৃদয়!



প্রাচীন যুগ থেকে মধ্য যুগ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডুয়েল লড়ার মত একটা বিষয় ছিল, যেখানে একজন অপরজনকে বিভিন্ন অস্ত্রের মাধ্যমে ডুয়েল লড়ার প্রস্তাব করত। সেটা হতে পারে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করতে কিংবা শত্রুতামূলক কারণে অথবা অন্য কোন কারণে।লড়াই শেষে যে বেঁচে থাকত সেই হত বিজয়ী।দর্শকেরা ডুয়েল দেখত, মজা পেত, বিজয়ীদের অভিনন্দন জানাত।সেই সময়ে সমাজে এসব ভায়োলেন্ট দৃশ্য ছিল খুব স্বাভাবিক।



কিন্তু আমরা সেই সময় পেড়িয়ে অনেকদুর চলে এসেছি সভ্যতার উত্কর্ষের পথ ধরে।নীতি নৈতিকতার সংজ্ঞা পাল্টেছে, পাল্টেছে মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, মায়া-মমতা, ভালবাসার স্বরূপ। হানাহানি, রক্তপাত, মানুষের মৃত্যু এসব দেখে আমরা বিচলিত হয়ে যাই, হৃদয়ের মাঝে ব্যথা অনুভব করি

একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে আঘাত করবে, রক্তপাত ঘটাবে, হত্যা করবে, এসব দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না, মেনে নিতে পারি না কোন মানুষের নৃশংস মৃত্যু।যদি হটাৎ করে চোখের সামনে এসব ঘটতে দেখি তাহলে আতংকিত হই, ভয় পাই, দুঃখে ভারাক্রান্ত হয় মন। এমনকি এসবের সংবাদও আমাদের বিচলিত করে।



১০০ বছর আগেও আমেরিকায় গান ফাইটের প্রচলন ছিল। এমনকি কোথাও কোথাও গান ফাইট টুর্নামেন্টও হত। যারা ওয়েস্টার্ন বই বা মুভির ভক্ত তারা এটা ভালভাবেই জানেন।পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই এই নিষ্ঠুর ডুয়েলের প্রচলন ছিল। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এটার প্রচলন খুব একটা ছিল না। আমরা বরাবরই অন্যদের চেয়ে মানুষের কষ্টের প্রতি বেশি অনুভূতিশীল, রক্তপাত আমাদের রক্তে ছিল না কখনোই।



এই সভ্য যুগেও আরব ও মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি হিসেবে প্রকাশ্য শিরশ্ছেদ করা হয়, পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়, যার দুই একটা ভিডিও চিত্র দেখে আমার মত অনেকেই শিউড়ে ওঠে। অথছ সেখানে উপস্থিত নারী, শিশু, পুরুষেরা নির্লিপ্ত ভাবে সেই বিভত্স দৃশ্য অবলোকন করে। হাজার বছর ধরে তাদের বর্বর পূর্বপুরুষদের নিষ্ঠুর রক্ত ধমনীতে প্রবাহমান থাকায় এই নির্লিপ্ততার কারন।



পৃথিবীর অনান্য দেশগুলো এইসব নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের উত্তরণ করতে পারলেও, তারা পড়ে আছে সেই মধ্যযুগেই।

কিন্তু আমাদের রক্তে নিষ্ঠুরতা আগেও ছিল না, এখনও নেই। তবে আমাদের এই প্রজন্মের কিছু কিশোর-তরুনদের মানসিকতা দেখে আমি আতংকিত হয়ে যাই। একটা ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি, তাহলেই বিষয়টা পরিস্কার হবে।

আমার এক বন্ধুর কম্পিউটারে একটা ফোল্ডার দেখলাম 'ফান' নামে সেইভ করা। ভিতরে প্রবেশ করে একটা ভিডিও প্লে করতেই আমি চমকে উঠি। সেখানে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফাইল ছিল যেগুলিতে দেখানো হচ্ছিল তালেবান জঙ্গিদের দ্বারা মানুষ জবাই করার দৃশ্য আর অ্যারাবিয়ানদের শিরশ্ছেদের দৃশ্য।



আমার পরিচিত, অল্প পরিচিত, অপরিচিত এরকম অনেক তরুনদের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে এই রকম ভিডিও চিত্র আমি দেখেছি। এইসব ভায়োলেন্ট দৃশ্য সংগ্রহে রাখা আর 'ফান' হিসেবে নামকরন করা যে কতটা ভয়ংকর ব্যাপার, তার আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে আশার কথা হল যে, এই প্রবণতা খুব কম সংখ্যক তরুনদের মাঝেই আছে।

কিন্তু দিন দিন আমাদের রেসলিং আসক্তি আমাকে চিন্তিত করে। এক রেসলার যখন আর এক রেসলারকে নিষ্ঠুর ভাবে আঘাত করে তখন আমরা খুব আঘাতের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে যাই। কেউ কেউ এক কাঁঠি সরস হয়ে বলে ফেলি, “ব্যাটা বাঘের বাচ্চা, ভালমত পিডা অইডারে”।



খুব অল্প পরিসরে হলেও কি এটা আমাদের রক্তে নিঃশব্দে নিষ্ঠুরতার উপাদান ঢুকিয়ে দিচ্ছে না? আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিলেই বৃহৎ এর সৃষ্টি হয়। এবং এই কারনেই তরুনদের রেসলিং প্রীতি আমাকে ভাবিত করে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:২৬

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: বিষয়টা আসলেই অমানবিক......।আর এটাই আমাদের ভায়োলেন্ট মনোভাব শিখায়....

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫১

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: আমাদের ছোট ভাই-বোনদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা উচিত বলে মনে করি।

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৬

হাসান রেজভী বলেছেন: মানুষ মাত্রেই নিষ্ঠুরতা আর মায়ামমতার এক জটিল কম্বিনেশন .....


আর রেসলিং কিন্তু একটা বয়স পর্যন্তই ভাল লাগে .... এরপর আর তেমন টানে না ... তাই মে বি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৬

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: এটা ঠিক যে রেসলিং একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্তই ভাল লাগে। তারপরে হয়ত এটাতে আগ্রহ থাকে না। কিন্তু মানসিক সেটআপ যদি এই সময়েই হয়ে যায় তাহলে সেটা কাজ করতেই থাকবে নিজের অজান্তেই। আপনার কথা সত্যি হলেই ভাল। ধন্যবাদ :)

৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪২

তোহা ভাই বলেছেন: হয়ত সত্যিকার অর্থে আমরা সভ্য হতে পারিনি। সভ্যতার সংঙ্গা পাল্টে নিজেদের মনের মত করে নিয়েছি আর নিজেদেরকে সভ্য বলে পরিচয় দিচ্ছি।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৬

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: সভ্যতার নির্দিষ্ট কোন মানদন্ড নেই, নেই নৈতিকতার কোন পরম রূপ, ভাল-মন্দের সংজ্ঞা বদলাবে। এই বিষয়টা দীর্ঘ আলোচনার দাবী রাখে।

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০

বাবুল হোসাইন বলেছেন: My Post about wrestling

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৯

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৩

মোঃ তায়িফ-বিন-তোফা বলেছেন: সব কিছুই যেন ঘুরে ঘুরে আগের অবস্থায় ফিরে আসে, আমরাও কি ফিরে যাব? ভালো লিখেছেন।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: শেষ বলে কিছু নাই এখানে
শুন্যর মাঝে চেতনা জেগে থাকে
ঘুরে ফিরে সেই সব সুখ দুখ
ফিরে ফিরে আসে চক্র পুর্ণ করে

৬| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২১

তিক্তভাষী বলেছেন: আপনার ভাবনা মোটেই উদ্ভট নয়, বরং একেবারে সঠিক। মুষ্টিযুদ্ধ আর ফ্রিস্টাইল কুস্তির অমানবিক দিকগুলোর কারনেই এ খেলাদুটি(!) এখন প্রায় অবলুপ্ত। টিভিতে আমরা যেটা দেখি সেটা কৃত্রিম, অভিনয়। কিন্ত এগুলোর উদ্যোক্তারা মানুষের মধ্যকার পাশবিক অংশকে ব্যবসায়িক মুনাফার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে সম্পূর্ণ সফল। তাই এসব টেবিল-চেয়ার ম্যাচ।

নিঃসন্দেহে এটা আমাদের রক্তে নিষ্ঠুরতার উপাদান ঢুকিয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: কর্পোরেট দুনিয়ায় নীতি-নৈতিকতা, মুল্যবোধ, মানবতা, শ্রদ্ধা এসবের কোন মুল্য নেই। মুনাফার জালে বন্দী মানবতা।

ভাল বলেছেন।

৭| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:১২

অপ্রচলিত বলেছেন: উঠতি বয়সের ছেলেপেলে যারা রেসলিং দেখে তাদের এই মুভিটা অবশ্যই দেখা উচিত।
The Wrestler

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.