নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ বলে কিছু নেই এখানেশুন্যের মাঝে চেতনারা সব জেগে থাকেঘুরে ফিরে সেইসব সুখ দুঃখফিরে ফিরে আসে চক্র পুর্ণ করhttps://www.facebook.com/herahemel
১.
রাশেদের জন্য একটি ভাল দিন আজ। আবার সে পড়ালেখা করবে এমন কোন আশা ছিল না, অনেক কালক্ষেপণ করে তার বাবা অবশেষে উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করতে রাজি হয়েছে। পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে রাশেদ জানে, তাই লেখাপড়া থেমে গেলেও বাবার উপর রাগ করতে পারেনি। হঠাৎ ভর্তির সুযোগ পেয়ে আনন্দে অভিভূত হয় সে।
আজ সে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কল্যাণপুর এসেছিল, ভর্তির কাজ শেষ হয়েছে। তাই আজ তার আনন্দের দিন। তাছাড়া ভর্তি শেষে ক্যাম্পাস থেকে বেড়নোর পর রিতার সাথে কথা বলেছে। কয়েকদিন ধরে রিতার সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল, আজ তার অবসান হয়েছে।
তাই সব দিক থেকেই আজ রাশেদের জন্য দিনটি শুভ।
ভর্তির পর অতিরিক্ত কিছু টাকা এখনো আছে, এমন দিনে দামী কোন রেস্টুরেন্টে বসে কিছু খরচ করা যেতেই পারে, এই ভেবে রাস্তার পাশের এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করল রাশেদ।
এইসব রেস্টুরেন্টের ভিতরটা কেমন জানি নিস্তব্ধ আর কিছুটা অন্ধকারচ্ছন্ন হয়।
প্রায় সবগুলো টেবিলই ফাকা, ডান পাশের কোণার এক টেবিলে দুইজন ছেলে মেয়ে, নীচু গলায় কথা বলছে।
বাম পাশের এক খালি টেবিলে বসে পড়ল সে। কাস্টমার কম বা বেশি হোক, এইসব রেস্টুরেন্টে অর্ডার নিতে ওয়েটার সবসময় দেরিতেই আসে।
পাশের টেবিল থেকে মেয়েটির রিনরিনে হাসির শব্দ কানে আসে।
রিতাও এভাবেই হাসে, বেশ লাগে দেখতে। নিজের অজান্তেই রাশেদের ঠোঁটজোড়া প্রসারিত হয়।
" স্যার, আপনার গ্রিল চিকেন", ওয়েটারের কথায় বাস্তবে ফিরে রাশেদ।
"কিন্তু আমি তো কোন অর্ডার করিনি এখনো", অবাক হয়ে ওয়েটারের দিকে তাকায় সে।
সামনের টেবিলের এক ভদ্রলোকের দিকে ইশারা করে দ্রুত প্রস্থান করে ওয়েটার।
সামনের ভদ্রলোককে রাশেদ লক্ষ্য করেনি আগে, হঠাৎ যেন কংক্রিট ফুঁড়ে উদয় হয়েছে।
"আপনাকে বেশ ভাল লেগেছে আমার", বলতে বলতে রাশেদের টেবিলে এসে বসে ভদ্রলোক। কালো প্যান্ট, চকচকে চকলেট রঙ্গা বুটজোড়া, ক্যাটক্যাটে হলুদ শার্টের উপর বেমানান লাল টাই। মুখের ভিতর কিছু একটা অস্বাভাবিকতা আছে যা রাশেদ ধরতে পারছে না।
"কি হল, খাচ্ছেন না কেন? ভয়ের কিছু নাই", হাসিমুখে তাকাল ভদ্রলোক।
বিস্মিত রাশেদ ভীত গলায় বলল, " আপনাকে চিনতে পারছি না, স্যার। আমার জন্য খাবারের অর্ডার করলেন, বুঝতে পারছি না কিছু"
"আপনাকে আমার খুব ভাল লেগেছে, তাই খাবারের অর্ডার করলাম। গ্রিল আপনি খুব পছন্দ করেন। আমিও করি, তবে মুরগির নয়।", বলে গা দুলিয়ে হাসতে লাগল ভদ্রলোক।
রাশেদের মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। লোকটি গে নয় তো! এরা খুব ভদ্রভাবে ভাব জমাতে চেষ্টা করে। রাশেদের এক বন্ধু একবার ঝামেলায় পড়েছিল। সতর্ক হয় সে।
"আমার অনেক কাজ আছে, আপনি খান। বিল পে করেছি, পরে আবার দেখা হবে", বলেই দ্রুত বেড়িয়ে গেলেন ভদ্রলোক।
রাশেদের মাথা আবার ঝিম ঝিম করতে লাগল, না খেয়েই বেড়িয়ে এল সে।
২.
আশেপাশে ভদ্রলোককে দেখবে বলে সে আশা করেছিল, কিন্তু কোথাও নেই। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রাশেদ, রাত হয়ে যাচ্ছে, তারাতারি বাসায় ফেরা দরকার। কল্যাণপুরের এদিক থেকে বাড্ডা যাওয়ার মোটেই একটাই বাস, বৈশাখী পরিবহন। এদের বাসও খুব বেশি নয়।
রাত প্যায় ন'টা বাজে, বাস পেলেই হয় এখন।
বাসের অপেক্ষা করতে করতে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে দাঁড়ায় সে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একবার চুমুক দিতেই দেখতে পায় বৈশাখী পরিবহনের বাস, চা রেখে খুচরা পাঁচ টাকা দিয়েই ছুটে যায় সে বাসের দিকে।
কাছে গিয়েই দেখে লোকজন হুটোপুটি করে বাসে উঠছে, গেট ব্লক। ওঠার সুযোগ তো দূরে থাক, ঠেলাঠেলি করারই সুযোগ পেল না সে।
হতাশ হয়ে পড়ল রাশেদ, তার শুভ দিনটা এভাবে অশুভ হয়ে যাবে কে জানত। মেজাজ খারাপ করে আবার চায়ের দোকানের দিকে যেতে লাগল এমন সময় রাস্তায় আবার একটি বৈশাখী পরিবহনের বাস দেখতে পেল সে। এবার আর কোন ভুল নয়, বাস স্টপেজের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু আশ্চর্য্য, কোন যাত্রী নেই ওঠার জন্য। তবু সে তার দ্রুত বাসে উঠে পড়ল। উঠেই আরো অবাক হয়ে পড়ল, সে ছাড়া আর কোন যাত্রী নেই বাসে।
মনে মনে বেশ খুশিই হল রাশেদ, লোকাল বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা পায় না, আজ সে আস্ত একটা বাসই পেয়ে গেল। দিনটা হয়ত অতটা খারাপ নয় তার জন্য।
৩.
সামনের এক সিট পিছনে বসে পড়ল রাশেদ, সাথে সাথে ছেড়েদিল বাস। ড্রাইভার, কন্ডাকটর, হেল্পার ছাড়া আর কেউ নেই।
একা একটু অস্বস্তি লাগছিল তার, সামনেই শ্যামলী, ওখানে কেউ উঠবে হয়ত।
কিন্তু না থেমেই শ্যামলী পার হয়ে গেল বাস। এসময় কন্ডাকটর এগিয়ে এল, রাশেদ ৫০ টাকার নোট বেড় করে দিতে গেল।
হঠাৎ পিছন থেকে কন্ঠস্বর, "ভাড়া দিতে হবে না"
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পিছনে তাকিয়ে রাশেদ যাকে দেখল, তাতে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। সেই ভদ্রলোক, রেস্টুরেন্টে যে তার খাবার অর্ডার করেছিল।
লোকটি তার দিকে এগিয়ে আসে, রাশেদ বাস থেকে নামার জন্য উঠে দাঁড়ায়।
"আমি এখানেই নেমে যাব, বাস থামান", উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে সে।
ড্রাইভার তার দিকে ঘুরে তাকায়, ড্রাইভারের মুখের দিকে চেয়েই রাশেদ গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বেড় হয় না, বুকের ভিতর থেকে হৃৎপিণ্ড ছুটে বেড়িয়ে যাবে যেন।
ড্রাইভারের মুখে কোন মাংস নেই, ঝকঝকে সাদা খুলি, কপালের নিচে দুটো জীবন্ত চোখ জ্বল জ্বল করছে।
জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে গেল, কিন্তু বাহিরে তাকিয়ে জমে গেল সে। অন্ধকার ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলছে বাস, অথচ সে ঢাকা শহরের মধ্য ছিল কিছুক্ষণ আগেই।
এই সময় লালটাই পড়া ভদ্রলোক তার কাঁধে হাত দিয়ে জোর করে বসিয়ে দিল, "বললাম তো ভয়ের কিছু নাই"
আতংকিত গলায় রাশেদ জিজ্ঞেস করে, "আপনারা কারা, আমার পিছনে লেগেছেন কেন?"
"আপনারা যাদের অন্ধকারের প্রানী বলে জানেন, আমরা তারা", শান্ত গলায় বলল ভদ্রলোক। রাশেদ তাকে আর ভদ্রলোক বলে ভাবছে না, সে ভেবেছিল কোন সমকামী শয়তান হবে, কিন্তু কি সর্বনাশ, এরা মানুষই নয়। ভয়ে ভয়ে বলল, "আপনারা কি চান?"
না মানুষ জীবটি বলল, " আমরা রক্ত চাই, তবে আপনাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে, রক্ত খাওয়ার পরে আপনাকে আমাদের মত করে দিব"
"আমি কি মারা যাব তখন"
"মারা যাবেন না, তবে বেঁচেও থাকবেন না, আপনার রক্তে জীবন্মৃত ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিব, তখন আমাদের মত হয়ে যাবেন, না জীবিত, না মৃত।" বলে হাসতে লাগল লাল টাই। হাসির সাথে তার দাঁত দেখতে পেল রাশেদ, উপরের সারির দুইপাশে দুটো শ্বদন্ত।
চিৎকার করে উঠল রাশেদ, "আমাকে যেতে দিন, আমি মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই"
ধমকে উঠল লাল টাই, "মানুষের জীবন কি এমন সুস্বাদু রক্ত যে মানুষ হিসেবেই বাঁচতে হবে। মায়াহীন পিচাশের মত বাঁচার সুখ কোথাও নেই আর"
লোকটি এবার দুইহাতে রাশেদের কাঁধ চেপে ধরে, বরফের মত ঠাণ্ডা হাত। ড্রাইভার, হেল্পার আর কন্ডাকটর এগিয়ে আসে তার দিকে, স্বদন্ত বেড়িয়ে পড়েছে সবার, চকচক করছে চোখ।
একজোড়া স্বদন্ত তার ঘাড় বরাবর নেমে আসে। আতংকে বিকট চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো রাশেদ।
৪.
ধীরে ধীরে চোখ খুলল রাশেদ, রাস্তার পাশের ইলেকট্রিক খুটির নরম আলো এসে লাগল চোখে। মাথায় হালকা যন্ত্রণা, উঠতে গেল সে। ঘাড়ের উপর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল, হাত দিয়ে শুকনো রক্তের দাগ খুজে পেল। সাথে সাথে মনে পড়ল কি হয়েছিল তার সাথে। কিন্তু তার মুখে ভয়ের কোন চিহ্ন ফুটল না, সব কিছুই বুঝতে পারছে সে।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখল রাশেদ, রাস্তার পাশে এতক্ষণ পড়েছিল সে। রাত শেষ হয়নি এখনো, নির্জন রাস্তায় উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে রাশেদ, একটা লোক এদিকে আসছে।
লোকটিকে দেখেই ক্ষুধা পেল তার, মনেহয় কতকাল খায়নি।
চকচকে লোভাতুর দৃষ্টিতে লোকটির দিকে এগিয়ে গেল জীবন্মৃত, প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত সে।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৪
ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড বলেছেন: কাঁচা হাতের লেখা, তাই ভয়টা ফুটাতে পারিনি। পরবর্তীতে চেষ্টা করব। শুভ কামনা।
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৬
মেহেদী হোসেন লিমন বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে
৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০১
হাসান মাহবুব বলেছেন: বেশ একটা ভয় ভয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। ভালো লাগলো।
৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৫৪
Nazrul TheBrownFish বলেছেন: আমাকে অনুসরন করুন আমিও আপনাকে অনুসরন করছি
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৫
সুমন কর বলেছেন: কমন প্লট তবে আপনার বর্ণনা ভালো লেগেছে। আরো ভয়ংকর করে তুলতে পারতেন।
শুভ রাত্রি।