নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হিমু আজাদ।প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর সৃষ্ট চরিত্র হিমুকে আঁকড়ে ধরার তীব্র ইচ্ছা থেকেই হিমু আজাদ হয়েছি।

হিমু আজাদ

একুশ শতকে এসে নব্বই দশকের ভালোবাসা খুঁজছি

হিমু আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমরেড স্বপনের বিপ্লবীদের চা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩২

মাত্র ক'দিন আগে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের উপর শান দেওয়ার জন্য কমরেড স্বপন ভাইয়ের 'বিপ্লবীদের চায়ের ' দোকানে গিয়েছিলাম। ওহু! এটা তো চায়ের দোকান না, সত্যি সত্যিই এইটা আস্ত একটা পলিটিক্যাল অফিস।

রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে 'বিপ্লবীদের চা'য়ের দোকানে চা বিক্রি করেন কমরেড স্বপন। পড়নে তাঁর লাল শার্ট ও মাথায় লাল ক্যাপ, যেন মনে হয় একজন বিপ্লবী। চায়ের কাপে বিপ্লবী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন লোকজনের কাছে। মধ্যবয়সী এই বিপ্লবীর পুরো নাম কমরেড ইয়াসিন স্বপন। কমরেড স্বপন শুধুমাত্র ভালো মানুষদের কাছেই চা বিক্রি করেন, চোখের এক পলকেই তিনি নাকি ভালো মানুষ আন্দাজ করতে পারেন।

কৌতূহল বশত তাই কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম উনার এই পলিটিক্যাল অফিসে।সোজা উনার অফিসে গিয়ে কমরেডকে বললাম, কমরেড এক কাপ চা হবে কী? আবিষ্কার করলাম যেন এক সাদামাটা জ্যান্ত মাটির মানুষ হাস্যোজ্বল ভঙ্গিমা নিয়ে চায়ের কাপটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি ঠিক ভালো মানুষ কিনা সেটা জানিনা, তবে কমরেডের চা এগিয়ে দেওয়ার রহস্যটা আজও উন্মোচন করতে পারলাম না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আড্ডা দিলাম ঘন্টাদুয়েক।

প্রেম-সমাজ-রাজনীতি-পুঁজিবাদ কোনোকিছুই বাদ যায়নি। উনার চিন্তাশক্তি, জ্ঞান আমায় প্রবলভাবে মুগ্ধ করল াআাকরল। কৌতূহল বশত প্রশ্ন করলে জানতে পারলাম বেশিদূর লেখা পড়া করেননি তিনি, তবে ব্যাক্তিগতভাবে যতটা সম্ভব পড়াশোনা করেছেন। লক্ষ্য করলাম দোকানের ছোট্ট একটা টেবিলের উপর পত্রিকা রাখা, সেহেতু সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে উনি আসলেই একজন বিদ্যান।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সিপিবি'র রাজনীতি করছেন বহুদিন ধরে। নিজেকে সর্বহারা শ্রেণীর একজন মানুষ বলে পরিচয় করিয়ে দিতে ভালোবাসেন। মার্ক্স-লেনিনের মতাদর্শে তিনি প্রবলভাবে প্রভাবিত। হঠাৎ চোখ পড়ল দেয়ালে সাঁটানো তিনটি ছবির উপর; ছবিগুলো কার্ল মার্কস, ভ্লাদিমির লেনিন ও বিপ্লবী চে গুয়েভারার। দুঃখ হলো এই ভেবে যে এখানে কোনো বাঙালি কমরেডের ছবি নেই, সেই বিষয়টা আমাকে ভীষণভাবে ব্যাথিত করল।
আমি উনাকে একজন বাঙালি কমরেডের বাঁধাই করা ছবি পাঠিয়ে দিবো এরূপ প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি, জানি না সেটা আসলে করতে পারব কিনা। যদি একজন বাঙালি কমরেডের ছবি প্রদানের মাধ্যমে এই বিপ্লবে শামিল হতে পারতাম তাহলে নিজেকে নিয়ে সত্যিই গর্ববোধ করতে পারতাম।

কমরেড স্বপন আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে জনগণের কাছে জনসাধারণের মধ্যে ছোট্ট একটা কাজের মাধ্যমে মুক্তির বার্তা পৌঁছানো যায়। একজন সর্বহারা কমরেড প্রতিদিন চায়ের কাপে বিপ্লবী দাওয়াত দিচ্ছেন, শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। তাঁর এই কৌশল যদি দেশের বাম সম্প্রদায়ের নেতারা রপ্ত করতো, তাহলে আজ বাম রাজনীতির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য নাম মাত্র চেষ্টা করা লাগতো না।

কমরেড স্বপন আমার চোখে বিদ্রোহীর আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। ঘন্টাদুয়েক হয়ে গেলো উঠতে মন চাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল আরো কিছুক্ষণ আলোচনা জারি রাখা যাক। কিন্তু ঐ যে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়লো, কমরেডকে লাল সালাম জানিয়ে এবার বোধহয় বিদায় দেবার পালা। না এটা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিদায় নয় বরং রাজপথ রাঙানোর জন্য বিদায় নেয়া। দেখা হবে কমরেড এই শহরেরই রক্তাক্ত রাজপথে লাল ঝান্ডা হাতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.