![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শরৎ পেরিয়ে শীত দ্বারপ্রান্তে, বাসার পিছনে বাগানের দিকে তাকিয়ে বসে আছি, সব ঘাস মরে গেছে, নেই খরগোশের ছুটাছুটি, লাউ গাছ শুকিয়ে মাচায় মিশে গেছে, আমার প্রিয় সিম গাছটা বাতাসে আর দুলে না, করলা আর শসা খাবার জন্য কাঠবিড়ালি আর চিপমান্করাও আর আসে না। মনে একধরণের ডিপ্রেশন ভর করে, মোবাইল ফোনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ চোখে পড়ে একটা লেখার দিকে,
রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো চা খেতে আসেননি
লেখা দেখতেই মনে হলো এক কাপ নিয়েই লেখাটি পড়ি। চায়ে কয়েক চুমুক দিতেই ডিপ্রেশন কেটে যেয়ে ব্রেনে এনার্জেটিক শিহরণ ডোপামিন আর সিরোটোনিনের ছুটাছুটি। চা খেতে খেতে মনে হলো রবিবাবু তাঁর সময়ে কি চা খেতেন, কোন ছবি কি চায়ে চুমুক দিতে দিতে এঁকেছিলেন অথবা কোন গান রচেছিলেন? খুঁজতে যেয়ে পেয়ে গেলাম তিনি জাপানি চায়ের ভক্ত ছিলেন, সেইসময় চায়ের বিজ্ঞাপনেও ছিলেন।
যাক সেসব কথা, চায়ে ফিরে আসি। চা এখন আর অতটা খাই না, এসিড বেড়ে যায়, পেটে জ্বালাপোড়া করে। ইদানিং লেবু দিয়ে খাই, তাতে এসিড অনেক কম হয়। সেবার দেশে বেড়াতে গেলাম, বন্ধুদের সাথে হাঁসের ঝোল আর ভাত খাবার পর চা খেতে গেলাম রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টের কাছে, দুধ ছাড়া লাল চা, দেখি লাল পানির উপর কাঁচা মরিচ ভাসছে, সে এক অন্য স্বাদ, মিস্টি আর ঝালের সাথে আনবিক এনার্জির হলকা, শীতের রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় অন্য এক মাত্রা এনে দেয়।
টেবিলে বসে আছি, ভাবছি একটা কবিতা লিখবো, মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, "আমি নাব্য মহাকাব্য সংরচনে ছিল মনে", কিন্ত যুৎসই শব্দ আসছে না, পায়চারি করি আর ভাবি কিন্ত কোন পংক্তি আসে না, পংক্তিমালা তো বহুদূর!!! শেষে এক কাপ চা নিয়ে বসি। আমার আর কবিতা লেখা হয় না, তার চেয়ে বরং কবিতা শুনতে থাকি
"জানেন দাদা- আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না
কোনো কোনো সময় অফিসে সহকর্মীর খোঁচামারা কথায় মর্মাহত হই, কথাগুলো সারাক্ষন পিনের মত খোঁচায়, মনে হয় বেটাকে নায়াগ্রার উপর থেকে ফেলে দিই, চোখের উপর ভেসে উঠে ওই বেটা চ্যাংদোলা হয়ে পড়ছে আর আমিও তা কল্পনা করে একটা প্রশান্তি অনুভব করি। টেলিফোন করে বন্ধুর কাছে জ্বালার কথা বলবো ভাবি, এক কাপ চা হাতে নিয়ে কথা শুরু করি, যে কথাগুলো কিছুক্ষণ আগে অশান্ত করে রেখেছিল তা চায়ের কাপে কয়েক চুমুক দিতেই কখন ভুলে যাই মনেও আনতে পারি না।
ছুটির দিনে নেটফ্লিক্সে একটা মুভি বা শো দেখবো বলে বসে আছি, ভাবছি কি দেখবো, একটার পর একটি মুভি আর শো স্ক্রোল করছি, কখনো মনে হচ্ছে রোমান সাম্রাজ্যের মুভি (Troy) দেখি, কখনো মনে হচ্ছে ভিক্টোরিয়ান সময়কার (Merlin) দেখি, কখন মনে হচ্ছে থ্রিলার দেখি (The perfect mother)। শেষে এক কাপ চা নিয়ে বসলাম, দেখি কন্যাদ্বয়ও এসেছে। একসাথে পরিবার নিয়ে শুরু করলাম, Indian Matchmaking.
হাল আমলে আর একটা নতুন চা খাওয়া শিখলাম, বাবল চা, তাইওয়ান থেকে আসা। আমার কন্যা দ্বয়ের খুব পছন্দের। এই চা ঠান্ডা খেতে হয় এবং তলানিতে ট্যাপিওকা নামক কালো মুক্তার মত নরম জিনিস থাকে, খেতে বেশ ভালো লাগে।
(ছবি:https://en.wikipedia.org/wiki/Bubble_tea)
দুপুরে ঘুমাই না, কখনসখনো ন্যাপ নিতে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। বিকালে ঘুম থেকে উঠলে মনটা বিষণ্ন লাগে, একটু মাথা ধরে, ব্যাথায় বেতের ফলের মতন চোখটা ম্লান হয়ে আসে। অতীতের স্মৃতি মনে আসে, "কি করিলে কি হয়তো" এসব হিজিবিজি চিন্তা মাথায় আসে, এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এক কাপ চা নিয়ে বসে পড়ি, মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠে, মনে হয় ট্রেডমিলে দাঁড়িয়ে পড়ি, হিরো আলমের একটা ভিডিও ছেড়ে দিয়ে নিচের কমেন্টগুলো পড়তে থাকি, আসল মজাটা সেখানেই।
একজন লিখেছেন, "আমার খুব প্রিয় শিল্পী। মন খারাপ হলে তার গান শুনে কিছুক্ষণ বেহুশ থাকি"
আরেকজন লিখেছেন, "পায়খানা কষা ছিল গানটি শুনার পর সুস্থ হয়েছি"
চা খাওয়া শেষে কোন কোন সময় অনেক ঘাম হয়, অহেতুক উত্তেজনা আসে, মনে হয় রাজ্য অভিযানে বের হতে হবে, "Either you occupy or get occupied", পাড়ার মনু পাগলার মত মাথা গরম হয় (গরমে মনু পাগলা লুঙ্গি খুলে দৌড়াতো), তখন আমি এই গানটা শুনি
"তোরা বাতাস কর বাতাস কর বাতাস কর সখি মাথায় পানি ঢাল তোরা"
২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:২৯
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ রাজীব-ভাই, সময় করে মন্তব্য করার জন্য।
৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮
নীল আকাশ বলেছেন: এইধরণের লেখাগুলো আত্মকথন সিরিজ নামে প্রকাশ করতে পারেন। পরে দেখবেন দারুণ একটা সিরিজ হয়ে গিয়েছে।
১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:৪৩
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: ধন্যবাদ, দেখা যাক কতটুকুন লিখতে পারি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: সব মিলিয়ে পোষ্ট টি ভালো লিখেছেন।