নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছেঁড়াপাতা

হাসান জামাল গোলাপ

ম্যাপল

হাসান জামাল গোলাপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শনিবারের চিঠি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:২০

অত্র সকালে সাতটাই ঘুম ভাঙিয়া গেল, শনিবারে সচরাচর দেরি করিয়া উঠি। কি করিব ভাবিতেছিলাম। মনে পড়িয়া গেল "সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, আমি যেন সারাদিন সৎপথে চলি"। কম্মিনকালে বলিয়াছি বলিয়া মনে পরিল না।আজিকে বলিলে মন্দ কি!
এইক্ষণে আজিকার কাজের ফর্দ ভাবিতে লাগিলাম।

(নিম্নে উল্লেখিত সময়সমূহ আন্দাজ মাত্র)

সকাল ৯:০০- কনিষ্ঠ কন্যাকে কুমন টিউশনিতে ড্রপ করিয়া বাজারে গমন।
সকাল ১০:৩০- বাজার সারিয়া কনিষ্ঠ কন্যাকে লইয়া বাড়ি ফেরত। গিন্নীর মৃদু ভর্ৎসনা, গুটিকয়েক জিনিস বাজার হইতে লইতে ভুলিয়া যাওয়া। (ইহার ব্যতয় কম ঘটিয়া থাকে)
সকাল ১১:০০ - মৃদু ভর্ৎসনা শুনিয়া কিঞ্চিত নিজের উপর অভিমান। জ্যেষ্ঠ কন্যাকে টেক্সট করিলাম, কহিলাম ধনেপাতা বাদ পড়িয়াছে, উহা ছাড়া রন্ধনকার্য না হইবার লয়, একটু লইয়া আসো না মা? কন্যা মেসেঞ্জারে মাথা উচুঁ করিলো, কয়েক মিনিট অপেক্ষা করিলাম, উত্তর না পাইয়া বুঝিলাম আমাকেই যাইতে হইবে।
দুপুর ১২:০০- বাজার হইতে দ্বিতীয়বার ফিরিয়া আসিলাম। বাজার হস্তান্তরের সময় মাখন মাখা গলায় গিন্নির নিকট সবিনয় নিবেদন - আজিকার দুপুড়ের খাবারের সহিত শুকনা মরিচ ও সরিষা তেল সহযোগে সিদ্ধ ডিম-আলুভর্তা কি সম্ভব? গিন্নি তিরস্কারের স্বরে বলিলো "আজিকে দেরী করিয়া ফেলিয়াছো, অনেক কাজ জমিয়াছে, পারিলে নিজে করিয়া লও"। মনটা দুঃখ ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিলো, তাঁহার উপর কিছুটা গোসসা হইলো। গান ছাড়িয়া দিলাম, "জোছনা করেছে আড়ি, আসে না আমার বাড়ী"। গানটি শুনিলে কিছুটা হালকা বোধ হয়।

জোছনা করেছে আড়ি

দুপুর ১২:৩০ - দুঃখের কথা বলিবার জন্য বাল্যকালের প্রবাসী বন্ধুকে ফোন করিলাম। কহিলাম, কেমন আছিস, কি করিতেছিস? বন্ধু কহিলো, বড়ই পেজগিতে আছি, স্ত্রী ওভারটাইম করিতেছেন, তিনি ফিরিয়া রান্না করিবেন, রান্নার যোগাড় আয়োজনে ব্যাস্ত, পরে কথা হইবে। তাঁহার কথা শুনিয়া আমার দুঃখকষ্ট আরো একটু বাড়িয়া গেলো।
দুপুর ১:০০ - কাপড়চোপড় লন্ড্রি করিবার জন্য ওয়াসিং মেশিনে থুইলাম। ঘরের মেঝে ভ্যাকাম করিলাম। এলোমেলো বেজমেন্ট কিছুটা গুছাইলাম।
দুপুর ২:০০ - একটু বিশ্রাম লইবার জন্য ফোনের ইউটিউবে গান ছাড়িয়া দিলাম "শ্রাবনের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে, অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবনের ধরা এই, আজ কেন মন উদাসী হয়ে…", সোফাতে আধা শোয়া মনটা দূর অজানায় হারায়ে যায়।

শ্রাবনের মেঘগুলো

মেসেঞ্জারের ঘন্টা শব্দে সম্বিৎ ফিরিলো, ছোট কন্যা মেসেজ দিলো, "lunch is getting ready".

দুপুর ২ঃ৩০ - স্নান সমাপনান্তে খাদ্য গ্রহন শুরু, দেখিলাম টেবিলে ডিম-আলুভর্তা। সাথে দেখিলাম খিচুড়ি, ইহাও বলিতে চাহিয়া ভয়ে বলি নাই। আরো দেখিলাম বেগুন সহযোগে ইলিশ মাছের তরকারি ও ধনেপাতা চাটনি। আমার চোখে পানি আসিবার উপক্রম হইলো।
দুপুর ৩ঃ৩০ - উপরতলা হইতে গান ভাসিয়া আসিল "আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে"। বুঝিলাম আমার স্ত্রীর মন আনন্দে উদ্বেলিত, গুনগুন গান করিয়া কোন আনন্দদায়ক কর্মে ব্যাস্ত।
দুপুর ৪:০০ - টিভিতে কনিষ্ঠ কন্যার মুভি বা শোর শব্দ, টিভিতে ঝড়বৃষ্টির শব্দে নিদ্রা নিদ্রা ভাব আসিতে থাকিলো, সোফাতে চোখ বন্ধ করিয়া থাকিয়া গেলাম।
বিকাল ৫ঃ৩০ - নিদ্রা ভঙ্গ, ছোট কন্যা আসিয়া কহিল, "Mummy asking you to get ready".
সন্ধ্যা ৭ঃ০০ - নিকটবর্তী শহরে নিমন্ত্রন, যাত্রা শুভ।
রাত ৯:০০- আহারান্তে অতিথি বৃন্দের সহিত গল্প, আলাপন। আলাপের বিষয়বস্তু: রাজনীতি।
আলাপের নমুনা -
১ম অথিতি - হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক হইতে লোপাট হইয়া গেলো, দেশ রসাতলে গেলো।
২য় অতিথি - শুধু ব্যাংক না ভাই, প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
৩য় অতিথি - পদ্মা ব্রিজ হইলো, মেট্রো রেল হইলো, আরো হইতেছে কর্ণফুলি টানেল, আরো কত কি হইতেছে, কত হাজার লোকের কর্মসংস্থান হইলো, আপনারা অন্ধ, আপনারা কোন উন্নয়নই চোখে দেখিতে পান না!
১ম অতিথি - শেখ হাসিনা আর তাঁহার সরকার দুর্নীতি করিয়া দেশকে ধ্বংস করিতেছে। সমস্ত প্রকল্প দুই তিনগুন খরচে হইতেছে।
৩য় অতিথি- আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির প্রমান দিন?
১ম অতিথি - (কিঞ্চিৎ উত্তেজিত সুর) আলাপে এইসব টেকনিক্যাল কথা জিজ্ঞাসা করেন, পত্রিকায় কত কিছু ছাপা হইতেছে দেখিতে পান না?
৩য় অতিথি - পত্রিকায় তো কত লেখা ছাপা হয়, তাহা তো আর প্রমাণ হইতে পারে না, প্রমান দিন। আপনাদের জিয়া পরিবার তো দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত, প্রমাণিত।
১ম অতিথি - (অতি উত্তেজিত, চেয়ার হইতে দাঁড়াইয়া) আপনারাই তো আইন করিয়াছেন যে পত্রিকার লেখা প্রমান হিসাবে গন্য হইবে এবং তাহা দ্বারা বেশ কিছু ব্যাক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলাইয়াছেন।
৪র্থ অতিথি - থামুন তো ব্রাদার, আমরা এখানে টিভির টক শো দেখিতে বা করিতে আসি নাই, আমরা আসিয়াছি তিন্নি ভাবীর অপূর্ব স্বাদের মিস্টি খাইতে, চলুন মিস্টি দেওয়া হইয়াছে, উহা লইয়া আসি।

রাত ১০:০০ - মিষ্টান্ন খাইবার পর, চা দেওয়া হইলো। চায়ের কাপে এইবার দ্বিতীয় পর্যায়ের আলাপ শুরু হইলো। এই ধরণের আড্ডায় আমি হামেশাই দুই একটি অথিতি পাই যাহারা ধর্ম লইয়া কথা না বলিলে শান্তি পান না এবং সাধারনত হুজুর বা মুসল্লী গোছের অতিথিকে খোঁচাইয়া এক ধরণের আনন্দ পান।
আজকের বিষয় - ইসলামে বহুবিবাহ, তবে বিষয়টি সরাসরি আলোচনায় আসে না।

১ম অতিথি - আজিকে মর্মনদের উপর একখানি ডকুমেনটারী দেখিলাম। তাঁহারা এ যুগেও বহু বিবাহ করে, ভাবিতেও অবাক লাগে! (কথাগুলি তিনি হুজুর অতিথির দিকে তাক করিয়া বলিলেন)
২য় অতিথি - এযুগে আমাদের ধর্মের লোকেরাই হরহামেশাই বহু বিবাহ করিতেছে, অন্যদের লইয়া আর কি বলিবো!
১ম অতিথি - আমাদের নবী আসলে ১২ না ১৩ খানা বিবাহ করিয়াছিলেন, ইহাই সুরাহা হইলো না আজতক। (মুসল্লী অতিথির দিকে চাহিয়া) ভাইজান আমাদের ধর্মীয় ইতিহাস কি বলে?
মুসল্লী অতিথি - (হাসির সহিত) আপনি কয়খানা চাহেন?
১ম অতিথি - আমার চাওয়া না চাওয়া কোন ব্যাপার নহে, ভাবিতেছিলাম রসূলকে অনুসরণ করাই যদি সুন্নত হয়, তবে শরীয়তে চারখানায় ইহা থামাইয়া দেওয়া হইলো কেনো? সকল সাচ্চা মুসলিমের সুন্নত মানিয়া ১২/১৩ খানা বিবাহ করা উচিত।
মুসল্লী অতিথি - আপনাকে সাচ্চা মুসলিম মনে হইতেছে, আপনাকে তো সেই সুন্নত মানিতে হইলে প্রথমে বিবি খোদেজার ন্যায় একজন বিধবা বিবাহ করিতে হইবে এবং তাঁহার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিবাহ করিতে পারিবেন। তিনি টানা ২৫ বৎসর বিবি খাদিজার সহিত সংসার করিয়াছিলেন।
১ম ব্যাক্তি যারপর নাই লজ্জা পাইলেন এবং উঠিয়া ধৌতখানা বরাবর ধাবিত হইলেন।

রাত্রি ১১:০০ - সকল ভাবীগণের ফটোসেশন চলিতেছে, অতি উৎসাহী স্বামীগণ নিজ নিজ বউ ও ভাবীগনের ফটো তুলিতেছেন। বাকি নির্বিবাদী পুরুষগণ অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করিতেছেন।
রাত্রি ১২ঃ০০ - বাড়িতে পুনরাগমন, পোশাক ছাড়িয়া নিদ্রার চেষ্টা, দাওয়াত সম্পর্কিত কিঞ্চিত গল্প। স্ত্রী বলিলো, "শুনিয়াছো মৃধা সাহেবের একমাত্র পুত্র ভার্সিটির লেখাপড়া শেষ করিতে পারিলো না, সারাদিন বেজমেন্টে একা থাকে, ইদানিং নিজের সাথে একা একা কথা বলিতেছে, বড়ই পরিতাপের বিষয়। জোয়ার্দার সাহেবের কন্যার সাদা জামাতা নতুন সন্তান হইবার বছরও পার হয় নাই, তাঁহারা আলাদা থাকিতেছে। আমাদের কন্যাদ্বয়ের কি হইবে গো? বড় চিন্তা হইতেছে।" আমি সাহস দিয়া কহিলাম, আল্লাহ রক্ষা করিবেন। ইহার পর কি করিলে কি হইত বলিয়া হা-হুতাশ করিলাম, উভয়েই বলিলাম, হয়ত দেশে থাকিলেই ভালো ছিল! এক সময় গিন্নির নাক ডাকিয়া নিদ্রা গমন, তাঁহার একটি হাত আমার বুকের উপর আসিয়া পড়িল, সেই হাতে আমি সমুদ্র সমান ভালোবাসা অনুভব করিলাম। আমি মনে মনে বলিলাম, এই হাত সড়াও, ইহা সমুদ্রের ন্যায় ভারী ঠেকে, এই ভার আমি লইতে পারি না। আমি ভাবিতে লাগিলাম আমার ভালোবাসা কি সমুদ্র সমান গভীর? "আমার ভালোবাসা কি সমুদ্র সমান গভীর?" কথাটি মনের মধ্যে থাকিয়া থাকিয়া ধাক্কা দিতে লাগিলো।
How deep is your love
আমাকে তোমার নিঃশাসে অনুভব করো
আমি সেই নিঃশাসের উষ্ণ বাতাস
তোমার শরীরের সমস্ত অনুকনিকায়
বেড়াতে চাই বাধাহীন নিঃসংকোচে

কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
সে কি মহাসমুদ্র?
তুমি কি সেই মহাধ্যান?
কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
সে কি নির্বানা?
আর কত আঘাত
কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
সে কি মহাসমুদ্র?
আমায় গভীরে টেনে নাও আবার
কতটা গভীর সে ভালোবাসা?

ক্ষমা করে দাও আমায়
দেখো কে দাঁড়িয়ে
তোমার সমস্ত গোপন সুড়ঙ্গে
বেড়াতে চাই বাধাহীন নিঃসংকোচে

বলো, কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
আরো গভীরে নিতে পারো?
বলো, কতটা গভীর সে ভালোবাসা?
একদম গভীরের গভীরে যেতে পারো?

গানের কথা







মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪৯

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনি প্রবাসে?

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৫৮

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: হ্যা, তিনযুগ আগে দেশ ছেড়েছি

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫

জুল ভার্ন বলেছেন: বাহ! চমতকার দিনপঞ্জি!

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩৯

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।

৫| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৬

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আমার পুত্র কে কুমন এ দিতে চাই।
আপনার পরামর্শ প্রয়োজন।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১১

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: কিছুটা analytical skill বাড়ায়, মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে স্ট্রেসফুল, আমার বড় মেয়ে দুই বছর করার পর বাদ দেয়।

৬| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
সহজ সরল জীবনযাপন।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১১

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৭| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:১৮

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আপনার ইমেইল অ্যড্রেস কি দেয়া যাবে?

৮| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৩৯

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: [email protected]

৯| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দিনপঞ্জি ও গান সব মিলিয়ে দারুন হইয়াছে সহাশয়।

১০| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

১১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ বাহ আপনার সমস্ত দিনটিকে যেমন মধুময় করিয়াছিল আপনার প্রিয়গান। তেমনি আমাদের পোষ্ট পাঠের আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলো গানের সে তালিকা।

১২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৪২

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য বোন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.