![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রায় দশ পনেরো দিন আগের লাশ ।কয়েকটুকরা কাপড়ের ছেড়া অংশ না থাকলে বুঝাই যেতনা লাশটা নারী না পুরুষ । গলে পঁচে কাদা জলে একেবারে মিশে গেছে । মনে হচ্ছে এক খন্ড কয়লার পিন্ড।গালের চামড়া খসে পড়েছে , দাতগুলো বের হয়ে গেছে। শরীরের প্রায় অংশই ইতিমধ্যে শেয়ালে খেয়ে ফেলেছে । পোকা কিলিবিল করছে । বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে পঁচা গন্ধ । গরু চরাতে এসে গ্রামের রতন নামের একটি ছেলে প্রথমে লাশটি দেখতে পায় । কয়েকদিন ধরে জঙ্গলের খাল থেকে একটা মরা পঁচা গন্ধ বাতাসে ভাসছিল । সবাই ভেবেছিল হয়তো কারো মরে যাওয়া পোষা প্রাণী এখানে ফেলে রেখেছে । আজ রতন গরু চরাতে এসে প্রচন্ড গন্ধে অস্থির হয়ে পড়ে । রতন ভাবে এটি মাটিতে ঠিকমতো পুতে ফেললে আর গন্ধ ছড়াবেনা ।
রতন যতই সামনে এগুচ্ছে গন্ধের মাত্রাও যেন বাড়ছে । রতন একেবারে কাছে যেতেই থমকে যায় ।অর্ধডুবিত অবস্থায় খাল থেকে দুটি গলিত মানব চোখ যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ।রতন ভয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড়াতে থাকে।
...
সারা গ্রামে দ্রুত এ খবর ছড়িয়ে পড়ে । কেউ কেউ বলছে মেয়েটাকে এমন নির্দয় ভাবে কোন পাষন্ড হত্যা করলো ! কেউ বলছে নিশ্চই কোন কুলাঙ্গারের দল মেয়েটাকে ধর্ষণ করে হত্যা করছে ।অল্প কিছু সময়ের মধ্য পুলিশ চলে এসেছে , সাংবাদিকরা ছবি তুলছে । সবাই চেষ্টা করছে লাশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া যায় কি না। লাশ উত্তলনের কাজ চলছে । হঠাৎ লাশের চেয়ে একটু দূরে আধ খাওয়া গলিত হাতের পাশে একটি চামড়ার মিনিব্যাগ দেখতে পাওয়া যায় । এই সব ব্যাগে মেয়েরা সাধারণত মোবাইল ও টাকা পয়সা রাখে । পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যাগটি হাতে নিয়ে তা নিরিক্ষা করে , যদি কিছু পাওয়া যায় । নাহ কিছুই নাই ।ব্যাগ আর লাশে জড়ানো শাড়ির কয়কটা পঁচা টুকরাই আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করা হলো । লাশটি চেনার মতো কোন অবস্তা নেই । তাই বেওয়ারীশ লাশ হিসেবে মেয়েটিকে কবর দেওয়া হলো ।পত্রপত্রিকা আর ইন্টারনেটে এটি ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র । চারিদিকে আলোচনার ঝড় বইছে ।
...
আফিয়া বেগম আৎকে উঠেন , কয়দিন থেকেই তাঁর মেয়ে পরী নিখোঁজ । থানায় ইতিমধ্য ডায়রি করেছেন । ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ব্যাগের ছবি দেখে তাঁর বুকে শুন্য হাহাকারের ডেউ খেলে যায় । তিনি ছুটে যান থানায় । পুলিশের কাছে রাখা ব্যাগ আর কাপড় দেখতে চাইলে , পুলিশ তা নিয়ে আসে অফিয়া বেগমের সামনে । আফিয়া বেগম বুক ফাঁটা আর্তনাদে চিৎকার দিয়ে উঠেন । আমার বুক খালি হয়ে গেলরে , পরী ও পরীরে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । থানার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে । তবু পুলিশ নিশ্চিৎ হতে পারেনা । কারন পুলিশের উপযুক্ত প্রমাণ চাই । আফিয়া বেগম জানান হারিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে পরী তাদের স্থানীয় মার্কেট থেকে শাড়ি কিনতে গিয়ে শখ করে ব্যাগটিও কিনেছিল । পুলিশ এই তথ্য সূত্র ধরে ঐ মার্কেটে যায় ।ব্যাগের দোকানের বিক্রেতা ব্যাগটির ভেতরে একটি স্টিকার দেখে নিশ্চিত করলেন এটি তার দোকানেরই ব্যাগ ।
...
মেয়েটির পরিচয় পাওয়া গেছে তাই তার লাশ আবার কবর থেকে তুলা হয় । লাশ বলতে আসলে কয়েকটুকরা হাড়গোড় । পরীর স্বামী কদম গাজী স্ত্রী পরী হত্যার একটি মামলা থানায় দায়ের করলেন । প্রাথমিক তথ্যের জন্য পরীর নিকট আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করলো পুলিশ । পরীর বাবা-মা জানালেন দুই বছর পূর্বে কদম গাজির সাথে বিয়ে হয়েছে পরীর । সুখেই চলছিল কিন্তু গত দুই-মাস ধরে কদমের সাথে বনিবনা হচ্ছিলনা।তাই কদম তাকে আমাদের কাছে পাটিয়ে দেয় ।অভাবের তাড়নায় গত মাস থেকে একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেয় পরী । কিন্তু চাকরিতে যাওয়ার পনের দিন পার হতে না হতেই নিখোঁজ হয় তাদের মেয়ে এ কথা বলেই তাঁরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । পুলিশের সন্দেহ হয় কদম গাজির উপর ।কথায় আছে চোরের মন পুলিশ পুলিশ ।কথাটি কদমের ক্ষেত্রে পুরাটাই খাটে ।
নিজে স্ত্রী হত্যার মামলা করে নিজেই পালিয়ে যায় কদম । এবার পরীর স্বামী কদম গাজীকে মূল আসামী করে মামলা করেন আফিয়া বেগম । ভারত পালিয়ে যাওয়ার পথে আটক হয় কদম । কোর্টে হাজির করা হলে , কোর্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ।
....
রিমান্ডে চলছে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ।
পুলিশের ওসিঃ তুমি তুমার স্ত্রীকে খুন করেছো কেন ?
কদম দাত কেলিয়ে হাসে যেন কিছুই হয়নি ।
পুলিশ কদমের মুখে উপর্যোপুরী ঘুষাতে থাকে , ঠোঁটের কোণা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ।
তোর এতো বড় স্পর্দা ! আমার সাথে ইয়ার্কি মারা হচ্ছে ? বলেই কদমের গালেকানে খসিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেন । কদম আবার হাসে । যেন সে সুখের ঘোরে মজে আছে ।পুলিশ আশ্চর্য হয় , একটা খুনি কি করে এতো হাসতে পারে !
পুলিশ আবার জিজ্ঞেস করে।
কদম মাতালদের মত মুখ ভেংচিয়ে বলে স্যার সে অনেক কথা তবে তিন দিন লাগবেনা ধৈর্য থাকলে একদিনেই শুনতে পারবেন ।
পুলিশ ধমক দিয়ে বলে মাতলামি করবেনা , আমার উত্তর ঠিকমত দাও ।
....
তাহলে শুনেন স্যার..।
প্রায় তিন বছর আগের কথা অভাবের তাড়নায় ঢাকার একটি পোষাক কারখানার শ্রমিকের কাজ নেই ।যেদিন কাজে যোগ দেই সেদিনই আমার সাথে আরো একটি মেয়ে কাজে যোগ দেয় । পরীর মতো চেহারা । বয়স পনেরো ষোলর বেশী হবেনা ।
ওরে আমার খুব মনে ধরে , মাঝে মাঝেই ইশারা করতাম । প্রথম প্রথম আমাকে কোন পাত্তা দিতনা কিন্তু এক সময় ঠিকই সে আমার প্রেমের মায়াজালে বন্ধী হয় ।।একদিন কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি গো ?সে লাজুক লতার মতো বললো মোর নাম পরী।
...
পরীর সাথে আমার ভালোবাসা গভির থেকে গভিরতর হয়ে পড়ে । দুইজনে অবাধ্য প্রেমলীলায় মেতে উঠি । এ কথা জানাজানি হয়ে গেল কারখানায় । ম্যানেজার সব শুনে আমাদের চাকরি থেকে বের করে দিলেন । কলঙ্কিত প্রেমের কলঙ্ক মুছে দিতে আমরা সরাসরি গেলাম কাজি অফিসে ।আর কোন বাধা রইলনা , এখন আমরা দুজন দুজনার ।
বিবাহীত জীবনকে সুখের করতে আমি একটা কোম্পানীতে দারওয়ানের চাকরি নেই। তাকে আমি আর কাজে দিতে দেইনি , সীমিত আয় হলেও আমাদের সংসার ছিল সুখে ভরপুর ।তবে মাঝে মাঝে সে এটা ওটা আবদার করতো । তার সকল চাহিদা আমার পক্ষে মেটানো সম্ভব ছিলনা ।যতটুকু পারতাম সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম । এ দিকে সংসারে আলোর ঝলকানি এনে দিতে তার ভিতরে আমার ভালোবাসর প্রদিপ শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। সে মা হবে আর আমি বাবা । দুজনের খুশির অন্ত নেই ।ডিউটি শেষে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি । আমার পরীর ভেতর আমাদের প্রেমের ফসল পূর্ণতা পাচ্ছে , একজন কষ্ট করলে দুজনেরই ক্ষতি হবে তাই পরীকে কোন ভারি কাজ করতে দেইনি । ভারি কাজ গুলো সব নিজে থেকে করে নিতাম । কিন্তু এতো কিছুর পরেও আমাদের ভালোবাসার ফসল আলোর মুখ দেখতে পারলোনা।
...
খুব অসস্তি বোধ করতে লাগলাম ।ডাক্তার বলেছে এই বয়সে ওর সন্তান নেওয়াটা ঝুকি পূর্ণ ছিল , তবে সন্তান বাঁচাতে না পারলেও মাকে যে বাঁচানো গেছে এটাই ভরসা । আরো দুই বছর ব্যবধানে সন্তান নিতে হবে অন্যতায় সন্তান এবং মায়ের জন্য হবে ঝুকিপূর্ণ । নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে নিলাম , পরীকে বুঝালাম । কয়েকদিনে আস্তে আস্তে সব কিছু ভুলার চেষ্টা করলাম । সংসারে আবারো আগের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে । অভাবের সংসারে আরো একটু স্বাচ্ছন্দের আশায় বাড়ি থেকে দূরে , দূর শহরে আগের চেয়ে ভালো বেতনের একটি চাকরি পেয়ে গেলাম । সপ্তাহে একদিন বাড়ি আসতাম । কিন্তু ইদানীং বাড়ি আসলেই যেন ও কেমন কেমন করতো । আমি বাড়ি থেকে চলে এলেই যেন সে রাজ্যের সব সুখ পায় । আমার কাছে ব্যাপারটা বাজে টেকলো । ভাবলাম একাকিত্বের কারনে হয়তো এমন করছে , অথবা মাতৃত্ব হারানোর বেদনা ওকে কুড়ে খাচ্ছে। এক দিনের কথা । শরীর একটু খারাপ করছিল তাই সপ্তাহের একদিন আগেই বাড়িতে চলে আসি । বাসায় এসে দরজায় অনেক্ষন ডাকার পর এলোমেলো চুলে এসে সে দরজা খুলে । আমার হৃদয়ে আচমকা রক্তক্ষরণ বয়ে যায় । কিন্তু শরীর ভীষণ খারাপ থাকায় তাকে কিছু না বলেই শুয়ে পড়ি ।
...
স্যার শুনছেন ? বলছিলামনা স্যার ধৈর্য ধরে শুনতে হবে ।
পুলিশঃ ধমক দিয়ে! তুমি কিন্তু মূল ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছো , কেন খুন করেছো সেটা বলো । খুন আবার করলাম কখন ? পাপ মুচন করছি স্যার পাপ মুচন। দুইটা খুন করে এখন আমি মহাখুনি ।
দুইটা খুন ? কথাটি শুনে পুলিশের ওসি সাহেব যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ।
মুষ্টিতে চুল ধরে আবারো এক নাগারে গিটা রিমান্ড শুরু করলেন । গিটা রিমান্ড মানে হচ্ছে শরীরের জুড়ায় জুড়ায় পেটানো । রিমান্ড চলছে এমন সময় ওয়ার্লেসে খবর আসে ছিন্নভিন্ন এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে । পুলিশ ফোর্স নিয়ে লাশটি উদ্ধার করতে হবে ।
ওসি যেন এক অসহ্য যন্তণার অগ্নি পিন্ডে নিক্ষিপ্ত হলেন ।
ওসির ব্যস্ততা দেখে কদম খিলখিল করে হাসছে । স্যার এতো ব্যস্ততা কিসের ! লাশ উদ্ধার করতে যাচ্ছেন ? ঐ শালাতো স্যার একটা খাড়া বদমাশ ছিল ।
তুমি কি করে জানলে ও একটা বদমাশ ছিল ?
নিজ হাতে খুন করেছি স্যার , নিজ হাতে।বলেছিলামনা স্যার পাপ মুচন করছি ? ও হলো আমার দ্বিতীয় খুন । বউকে মারার পর মাথায় খুন খেলা করেছিল , আসলে একটা খুন করলে আরো খুন মাথায় চেপে বসে তাই জীবনরে মরণের দরজায় পাটায়ে দিছি । ওর ঘাড় বরাবর প্রথমে এক কূপ , তার পর মাথায় আর মুখে এলোপাতাড়ি কূপিয়ে খতম পর্ব শেষ করেছি , ও ছিল আমার সাথের ভাড়াটিয়া, ইস্কুলে পিওনের চাকরি করতো, ছোট ভাইয়ের মতো দেখতাম। ওসিকে এবার মনে হলো ভিন্ন জগতে আছেন । ঐদিকে ফোর্স নিয় লাশ উদ্ধারে যেতে হবে আবার এদিকে কদম একেকটা রহস্যের জাল বিস্তার করছে ।
....
লাশ উদ্ধার করা হলো , লাশের মানিব্যাগে পরিচয়পত্র থাকায় লাশ সনাক্ত করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি পুলিশের । মৃত যুবকের নাম জীবন আলী । পোষ্টমের্টাম শেষে জীবনের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় । জীবন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছে পুলিশ ।
...
দ্বিতীয় দিনের রিমান্ডে পুলিশ বেতরে আসতেই কদম স্বাভাবিক ভাবেই বলে স্যার ভালো আছেন ? এমন ভাবে জিজ্ঞেস করল যেন ওর বাড়িতে পুলিশের অসি সাহেব মেহমান এসেছেন ।এবার পুলিশের আর তেমন কিছু বলা লাগলোনা কদম নিজে থেকেই বললো স্যার শাস্তি কি হবে আমি জানি আর কেন খুনখারাবিতে নিজেকে জড়িয়ে নিলাম সেটা সবার জানা দরকার । কদম গাজি থেকে কেন খুনি কদম হলাম সে কথা বলার জন্য আমার পেট ফাপাচ্ছে । গ্যস্ট্রিকের মতো কথা গুলো ভিতরে কুন্ডুলি পাকাচ্ছে । আমার কথাগুলো স্যার দেশবসিরে জানিয়ে দিবেন যাতে আর কোন কদম গাজিকে খুনি কদম না হতে হয় । আর কোন ভালবাসা আর বিশ্বাস যেন ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন না হয়ে পড়ে ।
হ্যা ! ঠিক আছে বলো......
....
বাসায় একা থাকত পরী, জীবন আলী সেই সুবাদে পরীর সাথে ভাব জমায় । প্রথম প্রথম ব্যপারটা আমি তেমন আমলে নেই নাই । কিন্তু সময় সময় পরীর সাথে আমার সম্পর্কের অবনতী ঘটতে থাকে ।কেন জানি সন্দেহ হয় , মনে হয় পরীকে জীবন ইচ্ছে মতোই ভোগ করছে , পরীর শরীরের সাথে যেমন আমার পরিচয় আছে আমার চেয়ে জীবনের পরিচয়ও এখন মনে হয় কিছুতেই কম নয়। কিন্তু ওরে কিছু বুঝতে দেইনি। ভেবেছিলাম হয়তো আমার কোথাও ভুল হচ্ছে ।তবু মনের ভেতর চাপা থাকা অভিমানে তাকে বাপের বাড়ি পাটিয়ে দেই।আমার সন্দেহ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায় তখন যখন শুনলাম জীবন পরীকে ওর স্কুলের পাশের একটি কারখানায় কাজের ব্যবস্তা করে দিছে।বেশ কয়েকদিন পর ওর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করি , ওকে আমার সাথে দেখা করতে বলি । কিন্তু সে কিছুতেই আমার কাছে আসতে চায়না , অতপর নানান কায়দায় তাকে বুঝিয়ে আমার কর্মস্থলের কাছে নিয়ে আসি । প্রথম প্রথম সংসার নিয়ে একটু আলাপ হয় , আলাপ করতে করতে দুজনে আমার কর্মস্থলের পাশের জঙ্গলের ধারে যাই । এক সময় তাকে জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই সে খেপে যায় , অস্বীকার করে , কিন্তু তর্কে তর্কে সে এক সময় বলেই ফেলে বেশ করেছি । জীবন আমার সকল চাহিদা মিটাতে সামর্থ রাখে । আর তুমি ? তুমি কি করো ? অভাবের সংসার তার উপর ভালোবাসাহীন এক শরীর মনের জড়বস্তু আমি।শরীর মন জুড়াতে আমার জন্য জীবনই উত্তম । ওর এমন কথায় মাথায় খুন চেপে বসে । রাগের চোটে পাশে থাকা এক খন্ড পাথর দিয়ে ওর মাথায় সজোরে আঘাত করি ।পরী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে , অতপর বাকী কাজ সহজেই শেষ করি ঠান্ডা মাথায় । তার লাশ জঙ্গলের খালের কাঁদায় পুঁতে ফেলি । পরীকে মারার পর মাথা ঠিক রাখতে পারছিলামনা প্রচন্ড কেঁদেছি । যেকনো সময় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় আমাকে প্রায় পাগল করে ফেলেছিল । পরীকে সবাই হন্য হয়ে খুঁজছে । আমিও সবার সাথে পরীকে খোঁজার অভিনয় করছি । জঙ্গল থেকে মরা পঁচা গন্ধ বের হচ্ছে , কেউ না জানুক আমিতো জানি এ আমার পরী , যে ছিল আমার স্বপ্ন , ভালোবাসা আর বিশ্বাস । কিন্তু ওর কচি মনে আমার উপর ভাগ বসিয়েছিল জীবন যার ফলে আমার পরী আজ পঁচা লাশ । আবার মাথায় খুনের নেশা জেগে উঠে । জীবনকে ডেকে নিয়ে ওর রক্তে আমার নেশার পিয়াস মিটাই। জীবনকে খুন করার পরের দিন পরীর লাশ পাওয়া যায় । এবার আমার পালা , জানি ধরা পড়লে নিশ্চিত মৃত্যুদন্ড । তাই আরো কয়টা দিন ভালোভাবে বাঁচার আশায় ভেবেছিলাম পুলিশকে বোকা বানিয়ে ভারতে চলে যাবো, তাই ভালোমানুষ সাজতে পরী হত্যার মামলাটি করেছিলাম । কিন্তু তা আর হলো কই ।এইতো আপনাদের লাত্তিগুতোর আপ্যায়নে বেশ আছি স্যার ।
...
ওসি সাহেবের নির্দেশে সন্দেহ ভাজন দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হলো । পরদিন পত্রিকার পাতায় প্রধান শিরোনেম হলো পরী খুনের নেপত্যে পরকিয়া , পরী ও তাঁর গোপন প্রেমিক জীবন হত্যার দায় স্বীকার করেছে কদম গাজী । মানুষ খবরের বিস্তারিত পড়ছে আর একটা ঘুরের ভেতর ডুবে যাচ্ছে , কার জন্য অনুসূচনা করবে বুঝতে পারছেনা । আসলে পরকীয়া বড়ই নির্মম এক সামাজিক ব্যধির নাম । সবাইকে এই ব্যধি থেকে বের হয়ে আসতে হবে । পুলিশের ওসি পরকিয়া আর বাল্য বিয়ের ব্যাপারে গনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসুচি গ্রহণ করেছেন ।পরী আর জীবন হত্যা মামলা কোর্টে চলছে ।মামলার রায় আগাম ধরণা করা যাচ্ছে যে কি হতে পারে। কদমের মুখে কেন জানি আর হাসি নেই , চোখে মুখে তার শুধু ভিষন্নতার ছাপ ।
-----------------------------------------------------
-----------------------------------------------------
গল্প
_____খুনি কদম_______
লেখকঃ এইচ.এম আলমগীর
২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৮
এইচ.এম আলমগীর বলেছেন: হুম ভাই ডাঃ এম.এ আলী
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আসলে পরকীয়া বড়ই নির্মম এক সামাজিক ব্যধির নাম । সবাইকে এই ব্যধি থেকে বের হয়ে আসতে হবে । দারুন লিখেছেন । খুবই ভাল লেগেছে ।