![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একটি শান্ত ছেলে/আমি কম কথা বলতে ভালোবাসি/ফেসবুক ব্লগ ভালোই লাগে/ মাঝে মাঝে গান করি/ পরিচয় দেওয়ার মতো অার কোন পরিচয় নেই।
★★★★
মা.. মা আমাকে আর মেরোনা মা...
আমি
আর কখনো ভাত চুরি করে খাবনা....
আমাকে আর
মেরোনা মা... আর পারছিনা মা...
.
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে যাচ্ছে
পাঁচ বছরের
ছোট্ট শিশু আসাদ। কিন্তু তার মা
আছিয়া বেগম
সেদিকে কান না দিয়েই এতটুকু
ছেলেটাকে
মারতে লাগলেন। গতরাতের কিছু
ভাসি
পান্তাভাত রেখেছিলেন নিজে
খাওয়ার জন্য।
কিন্তু খাওয়ার জন্যে বাসন উল্টিয়ে
দেখলেন
সেখানে খাবার গুলো নেই। তার আর
বুঝতে
বাকি রইলোনা পান্তাভাত গুলো
আসাদই চুরি
করে খেয়েছে...
.
আছিয়া বেগম আসাদের আসল মা নয়।
আসাদের
যখন তিন বছর বয়স তখন তার মা
সালেহা বেগম
মারা যায়। ছেলেটাও মা মা করে
পাগল হয়ে
যায়। আসাদের বাবা রহিম মিয়া
স্ত্রীকে এতোটাই ভালোবাসতেন যে
দ্বিতীয় বিয়ের কথা কখোনই
মনে দিলেও আনতেন না। রহিম মিয়া তার
স্ত্রীর
দুঃখে নিরবে কাঁদতেন। তার কান্নায়
সালেহা
বেগমের কবরের মাটি ভিজে যেত।
ছেলে
আসাদকে বাবা রহিম মিয়া খুব
ভালোবাসেন।
কিন্তু আসাদ সারাক্ষণ মা মা করে
কেঁদে
ফিরতো। বাবা কাছে থাকলেই নতুন মা
এনে
দেবার জন্য বায়না করতো। অবশেষে
ছেলের কথা
ভেবেই রহিম মিয়া দ্বিতীয় বিবাহ
করেন।
.
রহিম মিয়া যেদিন আছিয়া বেগমকে
বিয়ে করে
নতুন ঘরে আনলেন সেদিন আসাদকে
দেখিয়ে
বলেছিলেন ছেলের যেন অমর্যাদা না
হয়।
আছিয়া বেগমও মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ
বলেছিলো।
কিন্তু কোথায় কি। নতুন মা ঘরে আসার
পর থেকে
আসাদের জীবনে দুঃখ নেমে এলো।
সামান্য একটু
ভুল হলেই আসাদকে মারা শুরু হয়ে যেত।
এছাড়াও
না খাইয়ে এতোটুকু ছেলেটাকে
শাস্তি দিতো।
দুদিন থেকে না খাওয়া ছেলেটা
ক্ষুদার যন্ত্রনায়
আগের দিনের ভাসি পান্তাভাত চুরি
করে
খাওয়ায় কি মারটাই না মারলো
ছেলেটাকে।
.
এভাবেই সৎমায়ের অত্যাচারের
মধ্যদিয়ে কেঁটে
যেতে লাগলো আসাদের দিন। বছর
খানিক পরে
তার একটা ভাইও হলো। এরপর তো তার
অত্যাচার
আরো বেড়ে গেল। আছিয়া বেগম কথায়
কথায়
বকতেন আর মারতেন। তার ছেলের
আশেপাশেও
ঘেঁষতে দিতেন না।
সৎভাইটাও আসাদকে পছন্দ করতো না।
আসাদ
কিন্তু ঠিকি মা ভাইকে
ভালোবাসতো। আসাদের
বাবা সব দেখেও কিছুই করতে পারতেন
না।
কোনো এক অদৃশ্যশক্তি তার সকল
ক্ষমতা যেন
কেড়ে নিয়েছে। ছেলের জন্য দুঃখ
করতে করতেই
আসাদের বাবা মারা গেলেন।
.
আসাদের যখন বাবা মারা গেল
ততদিনে আসাদ
অনেকটাই বড় হয়েগেছে। আসাদদের
জায়গাজমিও
ছিল অনেক। এলাকার এক বুদ্ধিমান
লোক আসাদের
কাছে তার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে
দিয়ে সৎমা
আর ভাই থেকে আলাদা করে দেয়। তখন
থেকেই
আসাদের সুখের দিন শুরু...
.
এভাবে ভালোয় ভালোয় আরো অনেক
গুলো বছর
কেঁটে গেল। আসাদ এখন খুবি সুখী
মানুষ। আসাদের
সৎভাইটা শহরে গেছে লেখাপড়া
করতে তাও
অনেকদিন। মা বাড়িতে একা থাকায়
আসাদ
মাঝে মাঝে দেখতে যেত। কিন্তু
ততদিনেও বৃদ্ধ
আছিয়া বেগম আসাদকে সৎছেলে বলে
দুরদুর করে
তাড়িয়ে দেয়।
আসাদকে তাড়িয়ে দিলেও এখন কেন
জানি
আসাদের জন্য তার খুব মায়া হয়। তার
নিজের
ছেলেটা সেই যে শহরে গেছে আর
কোনো খবর
নেয়নি। কিন্তু আসাদ সৎছেলে হয়েও
মাকে
দেখতে আসে...
.
ইদানীং আছিয়া বেগমের শরীরটা
তেমন ভালো
যাচ্ছে না। বিচানা থেকে নড়চড়ার
শক্তিটুকুও আর
অবশিষ্ট নেই। মায়ের এই করুন অবস্থার
কথা
লোকমুখে শুনে বেহায়ার মতো আসাদ
আবারও ছুটে
গেল মাকে দেখতে।
দরজাটা আস্তে করে ফাঁক করে আসাদ
আছিয়া
বেগমের রুমে প্রবেশ করলো। তারপর
কাঁন্নাজড়িত
কন্ঠে বলে উঠলো --মা গো মা...
তোমার কি
হয়েছে মা...
আছিয়া বেগম এক পলক আসাদের
দিকে
তাকালেন। সারাজীবন যে
ছেলেটাকে কষ্ট
দিয়েছেন আর আজ মৃত্যুশয্যায় সে ই
ছুটে এসেছে।
আছিয়া বেগম শত চেষ্টা করেও কথা
বলতে
পারছেনা। চোখ দিয়ে অনবরত পানি
ঝরে পড়ছে।
অনেক ইচ্ছে করছে আসাদকে একটু
বুকে জড়িয়ে
ধরতে কিন্তু বলতে পারছেননা।
এমনি সময়ে আছিয়া বেগম দেহত্যাগ
করলেন।
আসাদ দ্বিতীয় বারের মতো চিৎকার
দিয়ে
কেঁদে উঠলো
--মা গো মা...
©somewhere in net ltd.