নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাসলে ব্লগে নতুন। লেখা লেখি শিখতে চাই, ব্লগে পদচারনা তাই।

উন্মুক্ত অাঙ্গিনা

আমি একটি শান্ত ছেলে/আমি কম কথা বলতে ভালোবাসি/ফেসবুক ব্লগ ভালোই লাগে/ মাঝে মাঝে গান করি/ পরিচয় দেওয়ার মতো অার কোন পরিচয় নেই।

উন্মুক্ত অাঙ্গিনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

#পল্লী কবি "জসিম উদ্দীন" >>>

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭


কাল সে আসিয়াছিল
জসীমউদ্দীন
( কাব্যগ্রন্থ » বালুচর )
কাল সে আসিয়াছিল ওপারের বালুচরে,
এতখানি পথ হেঁটে এসেছিল কি জানি কি
মনে করে।
কাশের পাতায় আঁচড় লেগেছে তাহার কোমল
গায়,
দুটি রাঙা পায়ে আঘাত লেগেছে কঠিন পথের
ঘায়।
সারা গাও বেয়ে ঘাম ঝরিতেছে, আলসে অবশ
তনু,
আমার দুয়ারে দাঁড়াল আসিয়া দেখিয়া অবাক
হনু।
দেখিলাম তারে- যার লাগি একা আশা-পথ
চেয়ে থাকি,
এই বালুচরে মাথা কুটে কুটে ফুকারিয়া যারে
ডাকি।
দেখিলাম তারে- যার লাগিএই উদাস ঝাউ-এর
বন,
বরষ বরষ মোর গলা ধরি করিয়াছে ক্রন্দন।
দেখিলাম তারে, তবু কেন হায় বলিতে নারিনু
ডাকি,
কোন অপরাধে আমার ললাটে দিলে এত ব্যথা
আঁকি!
বলিতে নারিনু, ওগো পরবাসী, দেখিতে এলে
কি তাই,
আগুন জ্বেলেছ যেই ঘন-বনে সেকি পুড়ে হল
ছাই!
এলে কি দেখিতে-দূর হতে যারে হেনেছিলে
বিষ-বাণ,
সে বন বিহগী বেঁচে আছে কিবা জীবনের
অবসান!
বলিতে নারিনু, নিঠুর পথিক, কেন এলে
মিছামিছি
অলস চরণ, অবশ দেহটি, সারা গায়ে ঘাম, ছি
ছি!
এতখানি পথ হাঁটিয়া এসেছে কত না কষ্ট সহি,
তারি কাছে মোর দুখের কাহিনী কেমন
করিয়া কহি!
নয়নের জল মুছিয়া ফেলিনু, মুখে মাখিলাম
হাসি,
কহিলাম, বুঝি পূর্বের সুরুয সাঁঝেতে উদিল
আসি!
আঁচলে তাহারে বাতাস করিণু চরণ দুখানি ধূয়ে,
মাথার কেশেতে মুছাইয়া দিয়ে বসিলাম
কাছে নুয়ে!
কহিলাম-বড় ভাগ্য আমার, আজিকার দিনখানি,
এমনি করিয়া রাখাযায় নাকি দুই হাতে যদি
টানি!
রবির চলার পথ,
আজিকার তরে ভুলিতে পারে না অস্ত পারের
পথ?
কৌটায় ভরে সিঁদুর ত রাখি, আজিকার দিন
হায়,
এমনি করিয়া কৌটার মাঝে ভরে কি রাখা না
যায়!
এই দিনটিরে মাথায় কেশেতে বেঁধে রাখা
যায়নাকি!
মিছেমিছি কত বকিয়া গেলাম ছাই পাশ
থাকি থাকি।
শুনে সে কেবল হাসি-মুখে তার আরও মাখাইল
হাসি,
সেই রাঙা মুখে- যে মুখেরে আমি এত করে
ভালবাসি।
মুখেতে মাখিল হাসি,
সোনা দেহখানি নাড়া দিয়ে গেল বুঝি হাওয়া
ফুল-বাসী!
কাল এসেছিল এই বালুচরে আর মোর কুঁড়ে ঘরে-
তার পাশে চলে ছোট্ট নদীটি দুইখানি তীর
ধরে।
সেই দুই তীরে রবি-শস্যেতে দিগন্ত গেছে
ভরি-
রাই সরিষার জড়াজড়ি করে ফুলের আঁচল ধরি।
তারি এক তীরে বাঁকা পথখানি, দীঘল বালুর
লেখা,
সেই পথ দিয়ে এসেছিল কাল আঁকিয়া পায়ের
রেখা।
কাল এসেছিল, চখা আর চখী এ ওরে আদর করি,
পাখা নেড়েছিল, তারি ঢেউ লাগি নদী
উঠেছিল নড়ি।
তারি ঢেউ বুঝি ভেসে এসেছিল আমার পাতার
ঘরে-
বহুদিন পরে পেয়েছিনু তারে শুধু কালিকার
তরে।
কালিকার দিন, মেরু- কুহেলির অনন্ত
আঁধিয়ারে
শুধু একখানা আলোক- কমল ফুটেছিল এক ধারে।
মহা-সাগরের দিগন্ত-জোড়া ফেন-লহরীর পরে
প্রদীপ-তরনী ভেসে এসেছিল বুঝি এ ব্যথার
ঝড়ে!
কালকে তাহারে পেয়েছিনু আমি, হায়, হায়,
কত-কাল,
যারে ভাবি এই শূনো বালুচরে চিতায় দিয়েছি
জ্বাল;
সেই তারে হায়, দেখিয়া নারিনু খুলিয়া
দেখাতে আমি
এই জীবনের যত হাহাকার উঠিয়াছে দিন-
যামী, -
যে আগুনে আমি জ্বলিয়া মরেছি, সে-দাবদাহন
আনি
কোন্ প্রাণে আমি নারী হয়ে সেই ফুলের
তনুতে হানি!
শুধু কহিলাম-পরাণ বন্ধু! তুমি এলে মোর ঘরে,
আমি ত জানিনে কি করে যে আজ তোমারে
আদর করে!
বুকে যে তোমারে রাখিব বন্ধু, বুকেতে
শ্মাশান জ্বলে;
নয়নে রাখিব! হায়রে অভাগা, ভাসিয়া যাইবে
জলে!
কপালে রাখিব! এ ধরার গাঁয়ে আমার কপাল
পোড়া;
মনে যে রাখিব! ভেঙে গেছে সে যে কভু
নারে লাগে জোড়া!
সে কেবল শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চাহিল আমার
পানে;
ও যেন আরেক দেশের মানুষ, বোঝে না ইহার
মানে।
সামনে বসায়ে দেখিলাম তারে, দেখিলাম
সেই মুখ।
ভাবিলাম ওই সুমেরু হইতে কি করে যে আসে
দুখ।
দেখিতে দেখিতে সকাল কাটিল, দুপুরের উঁচু
বেলা,
পশ্চিম দেশে গড়ায়ে পড়িল মেঘেতে আঁকিয়া
খেলা।
বালুচর হতে বিদায় মাগিল নতুন বকের সারি,
পাখায় পাখায় আকাশের বুকে শেফালীর ফুল
নাড়ি।
সে মোরে কহিল“দিন চলে গেল, আমি তবে
আজ আসি?
-যার রাঙা মুখ ফুলের মতন, তাতে মাখা মিঠে
হাসি।
সে মোরে কহিল, একটি কথায় ভাঙিল স্বপন
মোর,
ভাঙিল তাহার সোনার চুড়াটি, ভাঙিল সকল
দোর।
সে মোরে কহিল, “শোন তাপসিনি। আজকের
মত তবে,
বিদায় হইনু, আবার আসিব মোর খুশী হবে যবে।”
হাসিয়াই তারে কহিলাম, “সখা বিদায়
সমস্কার”
অভাগিনী আমি রুষিতে নারিনু নয়ন জলের
ধার।
খানিক যাইয়া ফিরিয়া চাহিল, কহিল আমারে,
“নারি।
কোন কিছু কয়ে ব্যথা দেছি তোমা, কেন
চোখে তব বারি?”
আমি কহিলাম, “সুন্দর সখা, আমার নয়ন ধার-
পাইয়াও যেগো পাইবে তোমারে ভাষা এই
বেদনার।’
“ আমি কি নিঠুর?” সে মোরে শুধাল, আমি
কহিলাম, “নয়।
ফুলেরো আঘাত গায়ে লাগে যার, কে তারে
নিঠুর কয়?
গলায় যাহারে মালা দেই নাক হয়ত মালার
ভারে,
তাহার কোমল ফুলের অঙ্গে কোন ব্যথা দিতে
পারে ।
ছুঁইনা যাহারে ভয়ে,
ও দেহ-তরুর অফুট কুসুম যদি পড়ে হায় খয়ে।
সে মোরে দিয়েছে এই এত জ্বালা এ-কথা
ভাবিব যবে
রোজ-কেয়ামত ভেঙে পড়ে যেন আমার মাথায়
তবে।”
“তবে কেন কাঁদ? হায় তাপসিনি।জীবনের
ভোরখানি,
কার হেলা পেয়ে আজিকে এনেছ মরণের
দেশে টানি।”
আমি কহিলাম-“সোনার বন্ধু এ-মোর ললট-লেখা
কেউ পারিবে না মুছাইয়া দিতে ইহার গভীর
রেখা।
মাথার পসরাখানি,
মাথায় লইয়া চলিতে হইবে সমুখে চরণ টানি।
এ-জীবনে কেউ দোসর হবে না, নিবে না
করিয়া ভাগ,
এই বুক ভরি জমায়েছি যত তীব্র বিষের দাগ।
তবু বলি সখা। কেন কাঁদি আমি, তোমারে
দেখিয়া মোর,
কেন বয়ে যায় শাঙনের ধারা ভাঙিয়া নয়ন
দোর।
আমি কাঁদি সখা, তুমি কেন হেথা মানুষ হইয়া
এলে-
বিধির গড়া ত সবই পাওয়া যায়, মানুষের নাহি
মেলে।
আকাশ গড়েছে শ্যাম-ঘন-নীল, দুধের নবনী
মেঘে-
সন্ধ্যা সকাল প্রতিদিন যায় নব নব রুপ মেখে;
যত দুরে যাই তত দুরে পাই, কেউ নাহি করে
মানা,
কেউ নাহি পারে কাড়িয়া লইতে মাথার
আকাশখানা।
বিধাতা গড়েছে সুন্দর ধরা, কাননে কুসুম-কলি,
কোলে কোলে তার পাখি গাহে গান, গুঞ্জরে
মধু অলি।
বাতাস চলেছে ফুল কুড়াইয়া পাখায় জড়ায়ে
ঘ্রাণ-
যারে পায় তারে বিলাইয়া যায় ফুল-সখীদের
দান।
তটিনী চলেছে গাহি-
তার জলে আজ সম-অধিকার, কারো কোন ব্যধা
নাহি।
শুধু মানুষের পায়না মানুষ, নাহি কারো
অধিকার,
মানুষ সবারে পাইল এভাবে। মানুষ হল না কার।
কেন তুমি সখা। মানুষ হইলে, অতটুকু দেহ ভরি,
বিশ্ব-জোড়া এ রুপ-পিপাসারে কেন রাখিয়াছ
ধরি।
আমি কাঁদি সখা। কেন তুমি নাহি আকাশের
মত হলে-
যেখানে যেতাম তোমারে পেতাম.দেখিতাম
নানা ছলে।
আকাশের তলে ঘর
যারা বাঁধিয়াছে তাদের তৃষ্ণা অমনি
বিপুলতর।
তুমি কেন সখা। কানন হলে না, ফুলের সোহাগ
পরি-
রঙিন তোমার দেহ-নীপখানি পুলকে উঠিত
ভরি।
বাউল বাতাসে ভাসিয়া যেতাম তোমার ফুলের
বনে,
অনন্ত-তুষ্ণা মিটায়ে দিতাম অনন্ত-পাওয়া
সনে।
কেন তুমি সখা। মানুষ হইলে। সীমারে বরণ
করি-
অসীম ক্ষুধারে সীমার বেড়ার বাহিরে
রেখেছ ধরি।
তুমি কেন সখা! এমন হলে না-যত দুরে যাইতাম
আকাশের মত যত দুরে চাহি তোমারেই
পাইতাম।
আমি অনন্ত, আমি যে অসীম, অনন্ত মোর ক্ষুধা-
বিপুল এ-দেশে ভাসিয়েছ তুমি একটু সীমার
সুধা।
হায় রে মানুষ হায়।
কেমন করিয়া পাব তারে, যারে ধরা ছোঁয়া
নাহি যায়।
আমি কাঁদি কেন সুন্দর সখা।তোমারে বলিব
খুলি।
এই বেদনায়, কেন তুমি এলে মানুষ হইয়া ভুলি?
যে মানুষ এই ধরারে দেখিছে নীতির চশমা
পরি,
যার যাহা পায় তাই লয় সে যে পালায় ওজন
করি।
জগৎ জুড়িয়া পাতিয়াছে যারা মনুসংসিতা বই-
আমি কাঁদি সখা! আর কিছু নও তুমি সে মানুষ
বই।
জগতের মজা ভারি-
চোখ বেঁধে যারা ধরারে দেখিল তাহাদেরি
নাম জারি।
বাহিরে হাসিছে নীতির জগৎ, তাহার
আড়ালে বসি,
কাঁদে উভরায় উলঙ্গ নর পরি শাসনের রসি।
সে বলে যে আমি না ভাল মন্দ, আমি নর-
নারায়ণ,
মহা-শক্তিরে বাঁধিয়া রেখেছে সংস্কার
বন্ধন।
আমি কাঁদি সখা। আমার মাঝারে আছে সে
আমার আমি,
মোর সুখে-দুখে মন্দ-ভালোয় সুনাম-কুনামে
নামী ;
এ-জগতে কেউ চাহিল না তারে ; এ-মোর
পসরাখানি,
যারে দিতে যাই, সেই ফিরে চায় হেলায় নয়ন
টানি।
জগতের হাটে তাই
সে মোর আমারে খন্ড করিয়া দোকানে
বিকায়ে যাই।
কেউ হাসি চায়, কেউ ভালবাসা, কেউ চায়
মিঠে-কথা,
কেউ নিতে চায় নয়নের জল কেউ চায় এর
ব্যথা।
শস্যের ক্ষেতে একেলা কৃষাণ বীজ ছড়াইয়া
যাই-
কোথা পাপ কোথা পুণ্য ছড়ানু, কোন কিছু মনে
নাই।
আমি কাঁদি সখা। হাটে-বেচা সেই খন্ড
আমারে লয়ে,
যারে ভালবাসি-তাহার পূজায় কেমনে আনিব
বয়ে।
হায় হায় সখা। তুমি কেন হলে হাটের
দোকানদার-
খন্ড করিয়া চাহ যারে তুমি পূর্ণ চাহনা তার?
সব কথা মোর শুনে সে কেবল কহিল একটু হাসি-
“মোর যত কথা কব একদিন, আজকের মত আসি?”
পায়ে পায়ে পায়ে যতদুর গেল, নিমেষ রহিনু
চেয়ে ;
সন্ধ্যা-তিমিরে কলস ডুবাল সাঁঝের রঙিন
মেয়ে।
শূন্য চরের মাতাল বাতাস রাতের কুহেলি-কেশ
নাড়িয়া নাড়িয়া হয়রাণ হয়ে ফিরিল ঊষার
দেশ।
কত দিন গেল, কত রাত এলো ঋতুর বসন পরি,
চলে কাল-নটী বরণে বরণে বরষের পথ ধরি।
আজো বসে আছি এই বালুচরে, দুহাত বাড়ায়ে
ডাকি
কাল যে আসিল এই বালুচরে, আর সে আসিবে
নাকি?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.