![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিথ্যাকে নয়, সত্যকে আকড়ে ধরুন। সত্যকে নয়, মিথ্যাকে বিচার করুন।
ছেলেটির কথায় খুব অবাক হলেন হল প্রভোস্ট।
-" তুমি এখন কোন শতাব্দীতে বাস করছো? এই বিংশ শতাব্দীতে সেই মধ্যযুগীয় ধারণাগুলো অচল।"
ছেলেটি ভড়কে গেলো না। বরং খুবই ধীর স্থিরভাবে তুলে ধরলো মৃত্যুর পরের কথা। কবর, হাশর, জান্নাত, জাহান্নাম এক এক করে এমনভাবে তুলে আনলো, খ্রিস্টান প্রফেসরের অন্তরেও যেন ভেসে উঠলো আখিরাত। অনেকদিন তাকে এই কথাগুলো কেউ বলে নি।
খ্রিস্টানরা এমনিতেই আখিরাতে বিশ্বাসী।
ছেলেটির প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা জাগলো তাঁর।নিজের ধর্মকে, নিজের বিশ্বাসকে কেউ এমনভাবে এখনও আঁকড়ে ধরতে পারে তাঁর ধারনাই ছিলো না।
সেই ভারতবর্ষ থেকে প্যারিসে পড়তে আসা একটা ছেলে কেবল হালাল-হারামের কথা চিন্তা করে আলাদা খাচ্ছে! অথচ ইচ্ছে করলেই ক্যান্টিনে খেতে পারতো।
আসলে এই ব্যতিক্রমের কারন জানতেই ছেলেটিকে ডেকেছেন হল প্রভোস্ট।
-" ঠিক আছে মাই চাইল্ড! তোমার কোন সমস্যা হলে আমাকে বলো। আমি চেষ্টা করবো তোমার জন্যে কিছু করতে।"
ছেলেটি প্যারিসে রওয়ানা হওয়ার আগে নিজামুদ্দীনের বড়দের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলো। আল্লাহর রাস্তায় সময় লাগিয়ে তার বুঝে এসেছে পরামর্শের গুরুত্ব।
বড়গন তাকে দুটি জিনিসের পাবন্দী করতে বলেছিলেন। প্রথমটি নামাজের সময় হলে আযান দিয়ে নামাজ পড়া, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে হালাল খাওয়া।
ছেলেটি সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটি ঢুকেই দেখলো তার রুমমেট একটা মেয়ে। ফরাসী ভাষা শিখানো ও ফ্রান্সের কালচারের সাথে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যে বহিরাগত ছাত্রদের ক্ষেত্রে এমন করা হয়ে থাকে।
নামাজের সময় হতেই যেই না সে 'আল্লাহু আকবার' বলে আযান শুরু করেছে, মেয়েটি ভয়ে সেই যে গেলো আর আসে নি। সম্ভবত সে আর আসবেই না। আর এমন একটা অসামাজিক ছেলের সাথে কেই বা থাকবে! পুরো ইউনিভার্সিটিতে কোন মসজিদ নেই।বরং কোন মসজিদ নেই পুরো ফ্রান্সে। একবার কিং ফায়সাল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছে একটা মসজিদ বানানোর অনুমতি চেয়েছিলেন।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এই শর্তে অনুমতি দিয়েছিলেন, বায়তুল্লাহর কাছাকাছি একটা গীর্জা করতে দিতে হবে।
ছেলেটি আযান দিয়ে রুমেই নামাজ পড়ে। আস্তে আস্তে তার রুমে নামাজী বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলিম ছেলেরা আযান শুনে জামাতে নামাজ পড়তে আসছে। এক পর্যায়ে মুসল্লি এত বেড়ে গেলো, তার রুমে জায়গাই হয় না।
সে হল প্রভোস্টের কাছে গেলো মসজিদের আবেদন নিয়ে। হল প্রভোস্ট কথা রাখলেন। সিনেটে প্রস্তাবটি পেশ করলেন। প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলো। এটি প্যারিসে প্রথম মসজিদ।
মসজিদে এখন শুরু হলো কাজ। দাওয়াতের মেহনত।নিজামুদ্দীন থেকে জামাত গেলো সেখানে। আস্তে আস্তে মেহনত ছড়িয়ে পড়লো প্যারিসে, এরপর পুরো ফ্রান্সে।
এর প্রায় বারো বৎসর পর। ছেলেটি নিজামুদ্দীন থেকে জামাত নিয়ে ফ্রান্সে এসেছে। বিমানবন্দরেই সে যা দেখলো, তাতে অবাক হলো। সে যখন পড়াশুনার জন্যে এখানে এসেছিলো, তখন এ অবস্থা ছিলো না।এখন বিমানবন্দরেই দাঁড়িওয়ালা পুরুষ, হিজাব পরিহিত মহিলা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
'ফ্রান্সের এ পরিবর্তন কিভাবে হলো?'
একজনকে সে তা জিজ্ঞেসও করলো।
-"কয়েক বছর আগে আমাদের এখানে এক ভারতীয় পড়তে এসেছিলো। সানাউল্লাহ নামের সেই ছেলেটির মেহনতে প্যারিসে প্রথম মসজিদ হয়। সেই থেকেই ফ্রান্সে মুসলমান বাড়ছে। আর এখন এই পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা আপনি দেখছেন।"
মহান রবের কাছে শোকরিয়া জানায় ছেলেটি।দু'ফোঁটা আনন্দাশ্রুও কি তার চোখ থেকে বের হয় নি?
সেদিনের ছেলেটা আজ আলীগড় ইউনিভার্সিটির প্রফেসর।
দাওয়াতের কাজের বড় মুরুব্বীও।
©somewhere in net ltd.