নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শঙ্খনীল কারাগার

ভালো থেকো সবুজ পাতা

ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।

ভালো থেকো সবুজ পাতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ যখন প্রথম প্রেম

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৪৩

ইসরাত আরা খানম এর বয়স ৪৭। তাকে দেখে বয়সটা বুঝার উপায় নেই। এখনো সুন্দর কুচি করে শাড়ি পরেন। জন্মকাজল চোখ দুটোকে কাজল লাগিয়ে আরও তীক্ষ্ণ করে তোলেন।এক হাতে রিচওয়াচ আর অন্য হাতে এক ডজন চুড়ি পুরে দিলে মনে হয় উনিশ-কুড়ির কোন তরুণী শখ করে সেজেছে। তার মনটাও একই রকম। গল্প করতে পছন্দ করেন। আসরও জমাতে পারেন ভালো।যেখানে যাকনা কেন খুব সহজে আসরের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হন। প্রত্যেকটা গল্পই সুন্দর একটা ভূমিকা দিয়ে শুরু করেন। সেখান থেকে কখন যে গল্পে প্রবেশ করে শেষ করে ফেলেন শ্রোতারা বুজতেই পারে না। এরপিছে মুল কারনটা হচ্ছে তার শানিত কণ্ঠ আর গল্প বলার ধরন। আর গল্পের প্রসঙ্গটা যখন প্রথম প্রেম তখন সে আসর অন্য মাত্রায় পোঁছে যায়।
শুরুতে ইসরাত আরা খানম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তার একটা হাত উপরে উঠান। আমার হাতে এই ঘড়িটা দেখছ। কেউ আন্দাজ করতে পারবে এর দাম কত? লাখের নিচে ভেবে থাকলে, থাক বলার দরকার নাই। গুলশানে আমার একটা ফ্ল্যাট আছে। ২১,০০০ স্কয়ার ফিটের মহলে আমি প্রায় একাই থাকি। আলমারিতে শাড়ির সংখ্যা যে কত হবে তার হিসাব নেই। কিন্তু একদিন এইসবের কিছুই ছিলনা। বাবার তিন রুমের সরকারি কোয়াটারে চার ভাইবোন আর বাবা মা মিলে গাদাগাদি করে থাকতাম। সারা বছরে পরার জন্য জামা পেতাম দুটো। তাও ঈদের সময় কিনা হতো। একটা মোটামুটি সুন্দর আরেকটা ঘরে পরার জন্য কাপড় কিনে সেলাই করতাম। কিন্তু রুপটা ঠিকই ছিল। আর মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে রূপবতী হয়ে জন্মানো যে কতটা বিপদের তা নিশ্চই বলতে হবেনা। বাসা থেকে আমার কলেজ ছিল বিশ-পচিশ মিনিটের হাটার পথ। তারপরও হেঁটে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। বাবার কষ্ট হলেও ভাড়া দিতেন।আমি ও সবসময় রিক্সায় যাওয়া আসা করতাম। এরপরও কিছুকিছু সময়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতো।একটা দিন ছিল অন্য রকম। কিন্তু অসস্থিকর, খুবই অসস্থিকর। তখন আমি সেকেন্ড ইয়ারে। অসস্থিটার মুলে ছিল ফাজিল বান্ধুবি গুলা।দিনের সকালটা শুরু হয় আমজাদ স্যার এর বোরিং ইকোনোমিক্স ক্লাস দিয়ে।যা পড়িয়েছিল সব মাথার উপর দিয়ে যায়। ক্লাস থেকে বের হয়ে বাহিরে তাকাতেই মাথা ধরে যায়।ঠিক করি ক্লাস করবো না। বাসায় চলে আসবো। পথেই বান্ধুবি রুমা আমার হাত চেপে ধরে।চল ফুসকা খাবো। রুমা খুব নাছোড় বান্দা। আমি যদি বলি খাবো না মাথা ধরেছে ও সিওর মুখের উপর বলে দিবে ও হাত ধরে বলাতে বুজি দেমাগ বেড়ে গেছে। তাই না করলাম না। ফুসকা খেতে চলে গেলাম।ওরা গল্প শুরু করে দেয়।আমি নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করি।খাওয়া শেষে একজন আরেকজনকে ঠেলাঠেলি শুরু করলো বিল দেওয়ার জন্য। অন্যদিন এটা স্বাভাবিক থাকলেও ঐদিন কেনো জানি ওদের প্রতিটাশব্দ আমার কানে তীক্ষ্ণ ভাবে আগাত করতে লাগল। আমি জিদ করে একশ টাকার একটা নোট বের করে দেই। সবাই থ হয়ে যায়। তখনকার দিনে একশ টাকা অনেক কিছু ছিল। আর সত্যি বলতে আমার কাছে একশ টাকার নোট ছাড়া অল্পকিছু খুচরা পয়সা বাকি ছিল। আমি হাটা শুরু করি। ঠিক করি আজকে হেঁটে বাড়ি চলে যাবো। কলেজগেট থেকে বের হয়ে দেখি প্রচণ্ড রোঁদ।একটু হাটার পর বুজতে পারলাম রাস্তা প্রায় জনশূন্য। হঠাৎই মনে ভয় ধরে যায়।শরীর চমচম করতে থাকে। ভয়ের চোটে হয়তো আমার জুতার একটা পাটি ছিঁড়ে যায়। আমি আরও ভয় পেয়ে যাই। না পারি জুতা হাতে নিয়ে হাঁটতে না পারি স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে। তারপরও স্বাভাবিক ভাবে চলার চেষ্টা করি।থেমে থেমে হাটতে থাকি। হঠাৎ রাস্তার বিপরীত পাশে তরঙ্গীনী স্টোর দিকে চোখ পড়তেই দেখি একটা লম্বা ছেলে এ দিকে এগিয়ে আসছে। এই গরমেও তার পরনে গাঢ় নীল রঙের ফুলহাতা শার্ট, কালো জিন্স। শার্ট অর্ধ ইং করা। সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে আমার হাত পা কাপা শুরু করে। ছেলেটা কাছে এসে হাসিমুখে বলে ছেঁড়া জুত নিয়ে বুজি বেকায়দায় পড়েছেন। এই বলে হঠাৎ আমার গায়ের দিকে এগিয়ে আসে। আমি আঁতকে উঠে একহাত পিছিয়ে যাই। কিন্তু আমার জুতা পিছায় না। ছেলেটা জুতা জোড়া হাতে নিয়ে বলে যাস্ট পাঁচটা মিনিট দাঁড়ান দেখি কি করতে পারি। এই বলে জুতা নিয়ে হাটা শুরু করে।শুরুতে মনে হল এটা বুজি নতুন ধরনের জুতা চোর। পরে ভাবলাম আমার দেড়শ টাকার ছেঁড়া জুতা নিয়ে ওর কি লাভ। একটুপরে সে ফিরে আসে। জুতা জোড়া হাতে দিয়ে বলে শেলাই করে দিলাম। এবার ঝটপট ২৫ টাকা বের করুন। টাকার কথা শুনে আমি গাবঢ়ে যাই। আমার কাছে মোট মিলে ১০ টাকা ও হবে না। কি বলব বুজতে পারি না। ওআমার মুখেদিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে সাথে টাকা নেই বুঝি। বাসায় নিশ্চই আছে। চলুন বাসায় চলুন।এই বলে সে একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়ে। আমিও আগে পিছে কিছু না ভেবে রিক্সায় উঠে পড়ি। কিছুক্ষণ পর সে বলে আজীব মানুষতো আপনি। বাসার ঠিকানাতো এটলিস্ট বলতে হবে।আমি হড়বড় করে বাসার ঠিকানা বলে দেই। রিক্সা চলতে থাকে। আমি একহাতে শক্ত করে রিক্সা ধরে রাখি।তারপরও আমার শরীর স্পষ্টই কাঁপতে থাকে। তখনকার সময় ছেলে মেয় একসাথে চলাফেরা স্বাভাবিক ছিল না।আর অচেনা কেউ হলে তো কথাই নেই। মাথার ভিতর সব খারাপ চিন্তা ঘুরতে থাকে।আমি মনে মনে ঠিক করতে থাকি কোন পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করবো।কিন্তু ওর মাঝে তেমন অস্বাভাবিক কিছু দেখি না। যথেষ্ট জড়সড় হয়ে রিক্সার একপাশে বসে থাকে। পুরো পথে একবারও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি।একবারও তাকিয়ে দেখেনি। তবু আমি ভয় পেতে থাকি।২০ মিনিটের পথকে ২০ বছরের পথ মনে হতে লাগলো। একসময় যখন দৃষ্টি সীমানায় নিজের বাসাটা দেখতে পাই তখন একটু একটু করে মনে সাহস আসতে থাকে।যাই করুক এখন চিৎকার করলে অন্তত মানুষ বের হওয়ার যোগান আছে।বাসার সামনে রিক্সা দাড়ায়। আমি নেমে পড়ি ও বসে থাকে। হাসি মুখে বলে ২৫ টাকা প্লাস রিক্সা ভাড়া ২০ টাকা মোট ৪৫টাকা নিয়ে আসেন।আমি বাসার দিকে হাটা শুরু করলে ও পিছন থেকে ডেকে বলে আচ্ছ টাকাটা কালকে নিলে হয় না।আমি বললাম কেন? না আজকের দিনটা আমার বোনাস ডে।তাই বসে থেকে নষ্ট করতে চাচ্ছি না। বোনাস ডে মানে? বিধাতা কিছু মানুষের উপর খুশি হয়ে ৩৬৫দিনের বাহিরে ও দুই একটা দিন বেশি দিয়ে থাকেন।আজকে আমার তেমনি একটাদিন। আমি কিছু বলি না।ও হাসি মুখে বলে আজকের দিনটা বোনাস ডে কেন জানতে চাইবেন না? আমার মনের ভয়টা অনেকখানি কেটে গেছে।আমি ওর চোখের দিকে তাকাই এবং কিছু একটা বুজতে পারি। হালকা কণ্ঠে বলি আপনি দাঁড়ান আমি যাবো আর আসবো। ঘরে গিয়ে প্রথমে হাত মুখ ধুই। কলেজ ড্রেসটা পাল্টে অন্য একটা ড্রেস পরি। খোপার চুল ছেড়ে হালকা আঁচড়াই।তড়িগড়ি করে কপালে টিপটা দিতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। টাকা নিয়ে বের হয়ে দেখি ও নেই। সব ফাঁকা।আমি ধাক্কার মত খেলাম। দোড়ে রাস্তার মোড়ে যাই,এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি কিন্তু কিছুই দেখা যায় না। বুঝতে পারি বোকার মত একটা কাজ করেছি।আমার কেন জানি কান্না পেতে লাগলো। বিষণ কান্না। মনের ভিতর একধরণের অসস্থি শুরু হয়। ঐ দিন আমি আরও কয়েকবার রাস্তাই যাই।পরের দিন আমার একটা ক্লাস টেস্ট ছিল। পড়ার টেবিলে বসি কিন্তু মন বসেনা। টাকাটা একবার হাতে নেই আরেকবার টেবিলে রাখি।তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি কিন্তু ঘুম আসে না। পরবর্তী কয়েকটা দিন আমার কাছে টাকা থাকা সত্তেও আমি হেঁটে যেতাম। ভয় পেলেও তরঙ্গীনী স্টোর এর সামনে দাড়িয়ে থাকতাম। আজেবাজে ছেলেরা চারদিকে ঘুর ঘুর করতো। তারপর ও মাটি কামড়ে দাড়িয়ে থাকতাম।আর হাতের মুঠোও শক্ত করে ধরে রাখতাম ৪৫ টাকা। সেদিন থেকে আজ অবদী আমি যেখানেই যাই না কেন ঐ টাকাটা ব্যাগের এককোণে আলাদা করে রেখে দেই।ঠিক করে রাখি ওর সাথে দেখা হলে ৪৫ টাকা হাতে দিয়ে বলবো এই যে মিস্টার বিধাতা বোনাস ডে শুধু আপনাকে দেয় না, আমাকেও দেয়। আজ আমার বোনাস ডে। বয়স আমার ৪৭। ২৭ টা বছর পার হয়ে গেছে। একবারের জন্যও তার দেখা পেলাম না। কিন্তু অসস্থিটা আজও অনুভব করি!!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৮

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: প্রথম প্রথম আজীবন ধরে রাখার গল্প । খুব ভাল লাগলো ।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৯

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: প্রথম প্রেম আজীবন ধরে রাখার গল্প খুব ভাল লাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.