![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাইফুল পারভেজ এবার বিসিএস পরীক্ষা দিবে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সে কিছুতেই পড়ালেখায় মন বসাতে পারছেনা। তার ধারণা প্লাস্টিকের পড়ার টেবিলটাই যত নষ্টের মূল, এটা বদলে ফেললে পড়ায় মন বসবে। তাই সে ঠিক করলো একটা কাঠের টেবিল কিনবে। বন্ধু খালিদ কবিরকে ফোন দিল পরামর্শের জন্য। খালিদ কবির বলল এত টাকা খরচ করে নতুন টেবিল কিনার দরকার নেই, তারচেয়ে বরং একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কিনলে ভাল হয়। পরামর্শটা তার মনে ধরলো।
পরদিন দুই বন্ধু মিলে সারা শহরের সেকেন্ড হ্যান্ড ফার্নিচারের দোকানগুলো চষে বেড়ালো। কিন্তু কোথাও মন মত টেবিল মিলাতে পারলনা। অবশেষে এক দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া এক বাড়ির দারোয়ান জানালো তার মনিব কিছু ফার্নিচার বিক্রি করবে, যার মধ্যে একটি পড়ার টেবিলও আছে। তারা যদি সত্যি নিতে আগ্রহী হয় তবে সে তাদেরকে দেখাতে নিয়ে যেতে পারে।
সেগুন কাঠের তৈরি চার ফুট বাই তিন ফুটের বিশাল টেবিল। টেবিলের উপর অর্ধেকটা জুড়ে আবার বুকশেলফ বানানো। টেবিল দেখে দুই বন্ধুই খুব খুশি, তারা এরকম কিছুই খুঁজতে ছিল। খালিদ কবির বলল এই টেবিল যদি সাইফুল পারভেজ না নেয়, তাহলে সে নিজেই নিয়ে নিবে। দরদাম করতে গিয়ে তারা আরেক দফা অবাক। মালিক মাত্র দেড় হাজারে ছেড়ে দিতে রাজী! তারা তিন হাজার হলেও নিতে ইচ্ছুক ছিল। তাই আর কথা না বাড়িয়ে নিয়ে নিলো।
খুশি মনে টেবিল নিয়ে বাসায় ফিরে তাদের মাথা ঘুরে গেল। টেবিলটা কোন মতে সদর দরজা দিয়ে ঢুকানো গেলেও সাইফুল পারভেজের পড়ার রুমে কিছুতেই ঢুকানো যাচ্ছেনা। প্রাথমিক ভাবে ছোট দরজা বানানোর জন্য বাড়িওয়ালাকে অভিসম্পাত করলেও মায়ের বকুনি খেয়ে তারা বাস্তবতায় ফিরল। এটা সেটা ভাবার পর সিদ্ধান্ত হল টেবিল খালিদ কবির তার বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু খালিদ কবির বাসায় গিয়ে দরজার মাপ নিয়ে দেখে এই টেবিল তার বাসায় ঢুকানোও সম্ভব নয়।
এদিকে সাইফুল পারভেজের মা তাকে সারাক্ষণ বকুনির উপর রাখল। কেন সে এত বড় বোকামি করল, কেন সে মাকে না জানিয়ে এত বড় টেবিল কিনে নিয়ে আসলো এবং এই টেবিল যেন অতিদ্রুত বাসা থেকে দূর করে। এত শখ করে টেবিল কিনে তা রুমে ঢুকাতে না পেরে সাইফুল পারভেজের মন এমনিতেই খারাপ ছিল, তার উপরে মায়ের বকুনি শুনে তার মাথা গরম হয়ে গেল। হঠাৎ এক ধরনের অভিমান ভর করলো তার ওপর। সে গলির মোড়ের দোকান থেকে একজন কাঠের মিস্ত্রী নিয়ে এলো। বাসায় এনে টেবিল দেখিয়ে মিস্ত্রীকে বলল,
- এটা আপনি নিয়ে যান।
- কী কাজ করতে হবে বলেন, এখানেই করতে পারবো। এত বড় জিনিস একবার দোকানে নিয়ে যাওয়া, আবার এখানে নিয়ে আসা অনেক ঝামেলার কাজ।
- আসলে টেবিলটা আমি কিনেছিলাম আমার রুমে বসানোর জন্য। কিন্তু রুমের দরজা ছোট হওয়ায় ভেতরে ঢুকাতে পারছিনা। তাই আপনাকে নিয়ে যেতে বলছি।
- ওহ, বুঝেছি। আপনি টেবিলটা সেল করতে চাইছেন।
- না, আমি এটা আপনাকে গিফট করতে চাইছি।
চরম অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে কাঠমিস্ত্রি সাইফুল পারভেজের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরকম কৌতুক সে আগে কখনো শুনেনি। তার অবিশ্বাসের দৃষ্টি দেখে সাইফুল পারভেজ তাকে আশ্বস্ত করলো,
- সত্যি বলছি, এটা আপনি নিয়ে যান। কোন টাকাপয়সা দিতে হবেনা।
কাঠমিস্ত্রির মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি ফুটে উঠলো। সে জানালো, সন্ধ্যার পর সে ভ্যান নিয়ে এসে টেবিল নিয়ে যাবে। তার ফোন নাম্বারটা সাইফুল পারভেজকে দিয়ে বলল যদি কখনো কোন কাজে তাকে দরকার হয় শুধু একটা ফোন দিলেই হবে, সে চলে আসবে।
সন্ধ্যার আগেই সাইফুল পারভেজ বাসা থেকে বের হয়ে খালিদ কবিরকে ফোন দিল। তার একটি সিগারেট খাওয়া দরকার, সে আবার একা একা সিগারেট খেতে পারেনা।
©somewhere in net ltd.