নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন ব্লগার।

Blogger Zubair

আপাতত তেমন কিছুই নই, অনেককিছু হতে চাই

Blogger Zubair › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকা সম্পর্কে হুমায়ুন আহমেদ যা লিখে গিয়েছেন (পর্ব ১)

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩১

আমেরিকা খুব সহজেই মানুষকে বদলে দেয়। চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করে। নয়তো কেন এত এত শিক্ষত ভদ্রঘরের চমৎকার ছেলেরা বাসন মেজে দিন পার করাতেই আনন্দ ও জীবনের পরম লক্ষ্য খুঁজে পায়? কী আছে এই দেশে? সাজানো গোছানো শহর, চমৎকার মল, চোখ ধাঁধানো হাইওয়ে? এই কী সব?
একটি আমেরিকান পরিবারের জীবনচর্যা চিন্তা করলে কষ্ট হয়। ওরা কী হারাচ্ছে তা বুঝতে পারে না। আমরা যারা বাইরে থেকে আসি বুঝাতে পারি কিংবা বুঝাতে চেষ্টা করি।

একটি শিশুর জন্ম থেকে শুরু করা যাক।

সর্বাধুনিক একটি হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হলো। বিশ্বের সেরা ডাক্তাররা জন্মলগ্নে শিশুটির পাশে থাকলেন। সে বাসায় ফিরল, কিন্তু মায়ের কাছে ফিরল না। তার আলাদা ঘর। আলাদা খাট। কেঁদে বুক ভাসালেও মা তাকে খাবার দেবেন না। ঘড়ি ধরে খাবার দেবেন। সে বড় হতে থাকবে নিজের আলাদা ঘরে। এতে নাকি তার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ হবে।
শিশু একটু বড় হলো। বাবা-মা’র কাছে নয়, বেশিরভাগ সময় এখন তাকে থাকতে হচ্ছে বেবি কেয়ার কিংবা বেবি সিটারদের কাছে।
তার চার-পাঁচ বছর বয়স হওয়ামাত্র শতকরা ৮০ ভাগ সম্ভাবনা সে দেখবে তার বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছেন। এই ঘটনায় তারা যেন বড় রকমের শক না পায় তার জন্যেও ব্যবস্থা করা আছে। স্কুলের পাঠ্যতালিকায় বাবা-মা আলাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যা উল্লেখ করা আছে।
শিশুটির বয়স বারো পার হওয়ামাত্র স্কুল থেকে তাকে জন্মনিয়ন্ত্রণের সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। এটি নতুন হয়েছে। যাতে যৌন রোগে আক্রান্ত না হয় সেই ব্যবস্থা। বয়োঃসন্ধি কালে যখন তারা মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনে হতচকিত সেই সময়টা তাদের কাটাতে হবে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর খোঁজে, যাদের পরবর্তী সময়ে বিয়ে করবে। কী ভয়াবহ জীবন অনুসন্ধান! একটি মেয়েকে অসংখ্য ছেলেদের মধ্যে ঘুরতে হবে যাতে সে পছন্তমতো কাউকে খুঁজে পায়। সময় চলে যাওয়ার আগেই তা করতে হবে। প্রতিযোগিতা । ভয়াবহ প্রতিযোগিতা।
উনিশ-কুড়ি বছর বয়স হলো। বেরিয়ে যেতে হবে বাড়ি থেকে। এখন বাঁচতে হবে স্বাধীনভাবে। নিজের ঘর চাই। নিজের গাড়ি চাই। কোনো একটি চাকরি দ্রুত প্রয়োজন।
চাকরি পাওয়া গেল। তাতেও কোনো মানসিক শান্তি নেই। চাকরি সবই অস্থায়ী। কাজ পছন্দ হলো না তো বিদায়। সংসার প্রতিপালন করতে হচ্ছে এক ধরনের অনিশ্চয়তায়। অনিশ্চয়তায় বাস করতে করতে অনিশ্চয়তা চলে আসছে তাদেও আচার-আচরণে। তাদের কোনোকিছুই একনাগাড়ে বেশিদিন ভালো লাগে না। গাড়ির মতো স্ত্রী-বদল হয়।
এই করতে করতে সময় ফুরিয়ে যায়। আশ্রয় হয় ওল্ড হোম। জীবনের পরিণতি। একসময় মৃত্যুবরণ করতে হয়। মৃত্যুর পর দেখা যায় তারা তাদের ধনসম্পদ উইল করে দিয়েছে প্রিয় বিড়ালের নামে, কিংবা প্রিয় কুকুরের নামে।
আমি আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝেছি তা হলো, এদের প্রায় সবার চিন্তা-ভাবনা সীমাবদ্ধ। বস্তুকেন্দ্রিক। একটি মেয়ের জীবনের সর্ব্বোচ্চ আকাক্সক্ষা হলো চিয়ার লিডার হবে। ফুটবল খেলার মাঠে স্কাট উচিয়ে নাচবে। স্কার্টের নিচে তার সুগঠিত পদযুগল দেখে দর্শকরা বিমোহিত হবে। এই তার সবচেয়ে বড় চাওয়া। একটি ছেলে চাইবে মিলিওনিয়ার হতে।
এই অতি সভ্য দেশে আমি দেখি মেয়েদের কোনো সম্মান নেই। একজন মহিলাকে তারা দেখবে একজন উইম্যান হিসেবেই। একটি মেয়ের যে মাতৃরূপ আছে, যা আমরা সবসময় দেখি, ওরা তা দেখে না। একটি মেয়ে যত দিন পর্যন্ত শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় তত দিন পর্যন্তই তার কদর।
যা কিছু হাস্যকর, তার সবই এদের ভাষায় মেয়েলি, এফিমিনেট। শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, এই দেশে মেয়েরা একই যোগ্যতায় একই চাকরিতে পুরুষদের চেয়ে কম বেতন পান। বিমানের ক্যাপ্টেন যদি মহিলা হন, তাহলে বিমানের যাত্রীদের তা জানানো হয় না। ক্যাপ্টেন পুরুষ হলে তবেই শুধু বলা হয়, আমি অমুক, তোমাদের বিমানের ক্যাপ্টেন। মহিলা ক্যাপ্টেনের কথা বলা হয় না। কারণ কোনো মহিলা বিমানের দায়িত্বে আছেন জানলেই যাত্রীরা বেঁকে বসতে পারে। আমাদের দেশে মহিলাদের অবস্থা খারাপ, তবু একজন মহিলা ডাক্তার একজন পুরুষ ডাক্তারের মতোই বেতন পান। কম পান না।
আমরা আমাদের দেশে একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের কথা চিন্তা করতে পারি। ভাবতে পারি। ওরা তা পারে না। আসছে এক শ’ বছরেও এই আমেরিকায় কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হবে না। অতি সুসভ্য এই দেশ তা হতে দেবে না।
জাতির শরীর যেমন আছে, আত্মাও আছে। এই দেশের শরীরের গঠন চমৎকার। কিন্তু আত্মা? এর আত্মা কোথায়?
.
ভ্রমণসমগ্র ২৬৮-২৬৯
মে ফ্লাওয়ার, পরিচ্ছেদ নং ৫
হুমায়ুন আহমেদ

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ যা লিখে রেখে গেছেন, তা' তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ। সুতরাং অবিশ্বাস্য নয়, যদিও আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক কালচারে এগুলো অবিশ্বাস্য মনে হয়।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪২

Mukto Mona বলেছেন: আপনার সাথে একমত পোষণ করলাম।

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

আহা রুবন বলেছেন: কুকুরের জীবন

৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩

কলাবাগান১ বলেছেন: বাল্যখিল্য সরলিকরন

৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৪

ইমরান আশফাক বলেছেন: হুমম

৬| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

ক্যাপ্রিয় সুমন বলেছেন: আরো বড় একটি দিক যা ‘মেরিকার পার্থিব জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা। নারী উপভোগের পাশাপাশি মদ্যপান, স্লিপিংপিল সেবন, মানসিক অস্থিতিশীলতা, সংগীহীনতা ও সুইসাইটের ঝুকি।

৭| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

কলাবাগান১ বলেছেন: আংগুর ফল টক। ডিভি...

৮| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
চরম বাস্তবতার কথা বলেছেন হুমায়ুন! আসলেই সেই দেশের আত্মনাশ হয়েছে বহুত আগেই। এম্রিকা জাস্ট একটা মেশিন যার চাবি এখন তাদের সেরা ফেমিনিস্ট ট্রাম্পের হাতে!

৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮

Mukto Mona বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ যা লিখে গিয়েছেন তা সবই সত্য আমেরিকা খুব সহজেই মানুষকে বদলাতে পারে। এমনকি মানুষের চিন্তাভাবনাকেও প্রভাবিত করে। তাইতো এত এত শিক্ষত ভদ্রঘরের চমৎকার ছেলেরা বাসন মেজে দিন পার করেও আনন্দ খুঁজে পায়? কী আছে চমৎকার এই দেশে? আছে সাজানো গোছানো শহর, চমৎকার ভদ্রতার মতো সাদা মানুষগুলির মনের পরিবেশ ।

১০| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অথচ সবাই আমেরিকা ছুটে যায়!
ওদের লাইফ ওদের হিসেবে ঠিকই আছে। ওদের লাইফস্টাইল এখানকার লাইফস্টাইলের চেয়ে কয়েক হাজারগুন উন্নত। এখানে ওল্ড হোমে যায় না বটে, তবে বুড়ো বয়সে সবাই কেমন ব্যবহার পায় তা জানা আছে, তার চেয়ে সেই বরং ভালো

১১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনি আমেরিকায় আছেন না যাবেন ? যদি কোনটাই না হয় (আমার ধারণা তাই) তাহলে এইসব গু-বেষণা করে অযথা সময় অপচয় করিবেন না ।

আপনার যখন সত্যি সত্যি আম্রিকা বা বৈদেশ যাবার ঘটনা ঘটবে তখন আপনি জিন্দেগিতেও হুমায়ুন আহমেদ পড়ে আম্রিকা বা বৈদেশ সম্পর্কে ধারণা নিবেন না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.