নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তাফসীর নিয়ে গবেষনামূলক লিখা লিখতে ভালবাসি, যুক্তি সহজে হজম হয় না, বিশুদ্ধ কিতাবের উদ্ধৃতি ছাড়া ধর্মীয় কোন বিষয় গ্রহণ করি না, আক্রমনাত্বক সমালোচনা পড়তে ও লিখতে সাচ্ছন্দ বোধ করি।

ডিগবাজি বিশারদ

খাটি কাঠমূল্লা যাকে বলে সেটাই আমি

ডিগবাজি বিশারদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুক্তিদর্শন ও এর ভুল প্রয়োগ

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪২



যুক্তিদর্শন আমার অত্যান্ত আগ্রহের একটি বিষয়। স্বল্প-বিস্তর পড়াও চালিয়ে যাচ্ছি। কাষ্ঠ খন্ডের মত খটখটে তবে যুক্তির বিস্তৃত বাহু সম্পর্কে কল্পনা করলেই অনেক খানি চিত্তানন্দ অনুভব করি।
অন্তত একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিৎ 'ধর্মীয় যুক্তিদর্শন' সামাজ-রাষ্ট্র, প্রাকৃতিক-অতিপ্রাকৃতিক ইত্যাদী বিষয়গুলাতে প্রয়োগ করতে হলে বেশ সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
দায়সাড়াভাবে যেকোন যুক্তি ধর্মের নামে গ্রহযোগ্য নয় বরং পথিকৃত পূর্বসুরীদের স্বীকৃতি থাকতে হবে তাতে। দায়বদ্ধ থাকতে হবে তাদের কাছে। তাদের উদ্ধৃতিতেই যুক্তি দর্শাতে হবে। হ্যা! ধরণ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু উৎসের বেলায় কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু অনেক ভাই বিষয়টি বুঝতে চান না। তাদের যুক্তির স্থুলতা ধরে দিলেও মানতে নারাজ। এমন কিছু বিষয় আছে যেখানে শরীয়াহ্ (ইসলামী ধারা) যৌক্তিক রেফারেন্স হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। আবার এমন কিছু বিষয় আছে যেখানে শরীয়াহ্ প্রয়োগ মুর্খামী আর গোড়ামী বৈ কিছু নয়। এদুটি বিষয় আমি একটু ক্লিয়ার করছি-
.
আমাদের কওমী মাদ্রাসার ক্লাস গুলোতে 'উচ্চতর যুক্তিদর্শন' পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। যার অপর নাম ইলমুল কালাম। এখনকার ইলমুল কালাম আর পূর্বসূরিদের ইলমুল কালাম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে - পূর্বসুরিদের বই-পুস্তকে শুধুই কুরআন হাদিসের উদ্ধৃতি। যুক্তির অবস্থান ছিল না বললেই চলে। তাদের বই-পুস্তক দেখলে মনে হয় 'বিষয়ভিত্তিক' আয়াত ও হাদিস সংকলন।
আর পরবর্তিদের ইলমুল কালামে কুরআন হাদিস নেই বললেই চলে। আগা-গোড়া যুক্তিতে ভরপুর।
এমন পার্থক্য কেন হল? এটা বিস্তর আলোচনার দাবি রাখে।
.
প্রথম বিষয়টি হল- কোন্ ক্ষেত্রে কোরআন হাদিসের প্রয়োগ গ্রহনযোগ্য নয়?
মেধা একটু পরিষ্কার করে সামনে বাড়ুন- শরীয়াহ্ এর বিধিবিধান তথা কুরআন-হাদিস আল্লাহ কর্তৃক আবিষ্কৃত। (যার মাঝে কোন অসঙ্গতি নেই। যদি কোন যায়গাতে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে 'এ স্থানে আমার মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে' সবকিছুই মস্তিষ্ক 'ক্যাচ' করবে তা কিন্তু জরুরী নয়।) এ কথা থেকে দুটি বিষয় খুব পরিষ্কার-
১. আল্লাহ পাকের সত্ত্বার অস্তিত্ব অগ্রে। কারণ আল্লাহ হলেন ইসলামী শরীয়াহ্ এর উদ্ভাবক। আর উদ্ভাবক অস্তিত্বের বিচারে অগ্রগামী।
২. ইসলামী শরিয়াহ্ এর অস্তিত্ব পশ্চাতে। কারণ শরীয়াহ্ আল্লাহ কর্তৃক উদ্ভাবিত। আর উদ্ভাবিত বিষয় বা বস্তু অস্তিত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে পশ্চাদগামী।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমানিত না হলে ইসলামী শরীয়াহ্ যে, আল্লাহ কর্তৃক প্রণীত, এটা বলা নিতান্তই ভুল হবে। আগে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমান করতে হবে তারপর শরীয়াহ্ ভিত্তিক দলীল প্রমানের গ্রহণযোগ্যতা আসবে।
এখন আপনি যদি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে এমন দলিল প্রদান করেন যার ভিত্তি ইসলামী শরিয়াহ্ এর উপর। তাহলে ফলাফলটা কি দাঁড়াবে?
.
যুক্তিঃ * শরীয়াহ্, যার অস্তিত্ত নির্ভরশীল আল্লাহর অস্তিত্বের উপর * আল্লাহ, যার অস্তিত্ত নির্ভর করছে শরীয়াহ্ এর উপর
ফলাফলঃ শরীয়াহ্ এর অস্তিত্ত্ব নির্ভর্শীল শরীয়াহ্ এর উপর।

এটাকে 'দাওর' বলে অর্থাৎ ঘুরেফিরে একই জিনিষ। আর এই দাওর 'ভ্রান্ত ও অগ্রহণযোগ্য'। উপরের যে যুক্তি দিয়েছি এটাকে তর্ক শাস্ত্রের পরিভাষায় 'শিকলে সানী' বলে অর্থাৎ যুক্তি গ্রহণের দ্বীতিয় পদ্ধতী।
.
সুতরাং আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে আপনাকে এমন যুক্তি দর্শাতে হবে যাতে যুক্তি ভ্রষ্ট না হয়। এখানে শরীয়াহ্ ভিত্তিক কোন দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহর অসস্তিত্ত্বের মত আরেকটি বিষয় হল 'আল্লাহর কালাম' তথা আদেশ নিষেধ ইত্যাদী। এখানেও শরীয়াহ্ এর দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।
(প্রমানঃ শরহু আকাঈদিন নাসাফিয়্যাহ - সা'দ উদ্দীন তাফতাযানী, পৃ ৩৬ [হিন্দুস্তানী ছাপা])
তবে শরীয়াহ্ এর ভাষ্য থেকে লদ্ধ যুক্তি 'বাস্তবতার নিরিখে' উপস্থাপন করাতে কোন দোষ নেই।
এছাড়া আল্লাহর যত বৈশিষ্ঠাবলি আছে, সেগুলাকে শরীয়তের দলীল দ্বারা প্রমান করা সম্ভব। এগুলা কেন সম্ভব? এরও যুক্তি আছে। আরেকদিন বলা যাবে।
.
দ্বীতিয় বিষয়টি অত্যান্ত বিবেচনার সাথে গ্রহণ করার অনুরোধ রইল- প্রশিদ্ধ একটি গ্রুপে আমাদের পক্ষের একজন ভাইকে দেখলাম। তিনি বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারকে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ করে বুঝাতে চাচ্ছেন - এগুলা নতুন কিছু নয়। ১৪০০ বছর আগের সুত্র। (তাহলে এতদিন আবষ্কৃত হল না কেন? নাকি ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ, আলী, সাঈদ ইবনে যুবায়ের, ইকরিমা, তাউস, আতা, মুকাতিল, মুজাহিদ, সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব, ইবনে জারীর, ইবনে কাসীর, আলূসী, ইবনে হাইয়্যান, কুরতুবী, বাগাভী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখ পন্ডিতরা তা বুঝতে সক্ষম হন নি? [এই প্রশ্নের উৎস এক নাস্তিক])।
যেমন উনি পৃথীবির সর্বোচ্চ 'ডিগ্রি' (কোন ডিগ্রি কিছুই বলেন নি) নির্ধারণ করলেন ৩৬০° অতঃপর কুরআনের আয়াত আনলেন رافع الدرجات আর অর্থ করলেন 'তিনি সর্বোচ্চ ডিগ্রির অধিকারী'। তারপর বললেন- এই দুই শব্দের গণিতিক মান ৩৬০ (সুবহানাল্লাহ)।
এটা উনার বক্তব্যের সারাংশ। এর ফলে তিনি একটা গোষ্ঠির শত বছরের সাধনা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। তাদের কর্মের অস্বীকৃতি জ্ঞ্যাপন করলেন।এর দ্বারা ইসলাম বিদ্বেষি বাড়ল না কমল? এধরণের ব্যাখ্যা যদি না করতেন তাহলে কি মুসলিম জাতি হালাক হয়ে যেত? কুরআন কি মুসলমানদের অন্তরে তার অবস্থান হারিয়ে ফেলত? এধরণের ব্যাখ্যার ফলেই আজ 'ডিগবাজি বিশারদ নাস্তিকরা' কুরআনকে ভুল প্রমানের পায়তাড়া করছে।
এধরণের একটা বইও আছে আমার কাছে। যেখানে ১৯ সঙখ্যা নিয়ে লেখক জিলাপি ভেজেছেন।
.
আমার প্রশ্নঃ আয়াতের অর্থ ও তাফসীর কি পূর্বসুরী দ্বারা সমর্থিত? কুরআন কি কোন বৈজ্ঞানিক সুত্র গ্রন্থ? এসমস্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে কুরআনের কতটুকু সত্যতা প্রমান হচ্ছে? এর মাধ্যমে বিরুদ্ধবাদিদের প্রশ্নের দ্বার কতটুকু রুদ্ধ হচ্ছে?
এগুলোর উত্তর যদি খুজতে যান তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে।
এই যে কুরআনের অর্থ ও গণিতিক মান দিয়ে এর ব্যাখ্যা! এগুলা চরম নির্বুদ্ধিতা। বরং একপর্যায়ে তা ইয়াহুদী অভ্যাস রীতি। (প্রমান স্বরুপ দেখুন - তাফসীরে বায়যাবী, খন্ড ১, পৃ ৪৩ [বৈরুত])
.
ভাই! বিশ্বাস করুন কুরআন কোন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয়। নিজের জিবনের লাগাম দেয়ার গ্রন্থ। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার গ্রন্থ। বিজ্ঞানের ব্যবহার সীমায় আনার গ্রন্থ। আমরা আয়াতের বৈজ্ঞানিক সুত্র খুজতে গিয়ে এর মুল শিক্ষা হারিয়ে ফেলছি। তাকে সিমাবদ্ধ করছি। তাকে নিছক একটি 'বই!' এ পরিণত করছি।
তবে বিজ্ঞানের কোন বিষয় যদি কুরআনের সাথে মিলে যায় তো ভাল। এতে খুড়াখুড়ির কিছু নেই।
বিজ্ঞানকে কুরআনের অধিন করার অর্থ, নিজেদের ধংশের দিকে ঠেলে দেয়া। আপনার এসব ব্যাখ্যার দ্বারা বিজ্ঞানের অনেক অবৈধ আবিষ্কার মুসলিম সমাজে বৈধতা পাচ্ছে। কারণ? আপনার ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিজ্ঞান ত কুরআনেরই ফসল।
আজ বিভিন্ন নাস্তিক্যবাদি ব্লগ গুলা দেখলে নিজেদের অযোগ্যতার পরিচয় পেতে হয়। তারা কুরআনের আয়াতগুলাকে বিজ্ঞান দিয়ে কটাক্ষ করছে। এ সুযোগ পেল কোথায়? তারা তো ধর্মেই বিশ্বাসি না ধর্মগ্রন্থ নিয়ে মাতল কিভাবে?
আমরা দিয়েছি সুযোগ। আমাদের এসব ব্যাখ্যাই তাদের মাতিয়েছে। যার ফলে হাজার হাজার মুসলিম ভাইয়েরা তাদের কালোথাবা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না।
.
আচ্ছা আপনি কুরআন দিয়ে বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করলেন। মাশাআল্লাহ ভাল কাজ করেছেন। এবার একটু ভাবুন ত! বিজ্ঞান কি স্থির? কশ্চিনকালেও বিজ্ঞান স্থির নয়। আজ একটি বিষয়ে এক মত দিচ্ছে। কয়েকদিন পর সেবিষয়েই আরেক মত প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ কুরআন সু-স্থির ও অবিচল।
যুক্তিঃ স্থির ও অবিচল বিষয় দিয়ে অস্থির বিষয়কে পরখ করা কতটুকু যুক্তি সংগত? এর দ্বারা স্থির বিষয়ের স্থিরতার মাঝে প্রশ্ন উত্থাপিত হবে না? অবশ্যই হবে।
.
আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল- সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্র আছে। যেমন আমাকেই ধরুন- আমি একজন 'কাঠমূল্লা' (আলহামদুলিল্লাহ)। আমার কি নির্দিষ্ট পরিমন্ডল নেই? আমি যদি গানের আসরে যাই! আপনারাই ত আমাকে ধিক্কার দেবেন। সমাজচ্যুত করবেন।
তেমনিভাবে কুরআনেরও একটি বাস্তব প্রয়োগ ক্ষেত্র আছে। তাকে সেখানেই রাখতে হবে। জীবনের প্রতিটি শাখাকে কুরআন দিয়ে সাজাতে হবে। নাস্তিকদের ভ্রান্ত যুক্তি, ভ্রান্ত যুক্তির মাধ্যমেই খন্ডন করতে হবে। বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের মাধ্যমেই ব্যাখ্যা করতে হবে। বিজ্ঞানের সত্ত্বাকে কুরআনের মাধ্যমে নয় বরং বিজ্ঞানের ব্যাবহারিক দিক গুলা কুরআন দ্বারা ব্যাখ্যা করতে। বিজ্ঞানের ব্যাবহার সীমাবদ্ধ করতে হবে।
..
আল্লাহ তুমি আমাকে হিদায়াত দান করো। জ্ঞানের দৈন্যতা দূর করে দাও। আমীন।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৮

বলেছেন: সুন্দর পোস্ট!!

শুভ কামনা



হ্যাপি ব্লগিং

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:২১

ডিগবাজি বিশারদ বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলাম।
ধন্যবাদ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.