নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তাফসীর নিয়ে গবেষনামূলক লিখা লিখতে ভালবাসি, যুক্তি সহজে হজম হয় না, বিশুদ্ধ কিতাবের উদ্ধৃতি ছাড়া ধর্মীয় কোন বিষয় গ্রহণ করি না, আক্রমনাত্বক সমালোচনা পড়তে ও লিখতে সাচ্ছন্দ বোধ করি।

ডিগবাজি বিশারদ

খাটি কাঠমূল্লা যাকে বলে সেটাই আমি

ডিগবাজি বিশারদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘‘কানিজ ফাতিমা’’ নাম রাখা শিরক নয়!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:২০

আপনি যদি ‘কানিজ ফাতিমা নাম রাখা’ বাক্যটি লিখে গুগলে সার্চ করেন তাহলে নামটি রাখা শিরক এই ধরণের ফাতওয়া বেরিয়ে আসবে। এছাড়াও ‘কানিজ সুলতানা, কানিজ ফারজানা, কানিজ রাজিয়া’ জাতীয় নাম রাখা শিরক এমন ফাতওয়া-ও আসবে।
উনারা এজাতীয় নামে শিরকের কারণ হিশেবে লিখেছেন- ‘কানিজ’ অর্থ বান্দি, দাসি। আর ‘কানিজ ফাতিমা’ শব্দ দুটিতে “সম্বন্ধ সূচক” সম্পর্ক রয়েছে। পূরা নামের অর্থ দাড়াল: ফাতিমার বান্দি।
এবার ফলাফলে আসা যাক- গোলামী বা দাসত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর কিন্তু এই নামে দাসত্ব হচ্ছে ফাতিমার। তাই ‘কানিজ ফাতিমা’ নাম রাখা শিরক। কারণ নামের অর্থই হল ‘ফাতিমার বান্দি’।
এই হল তাদের বক্তব্যের সারাংশ।
.
বাস্তবতা - ‘কানিজ ফাতিমা নাম রাখা শিরক’ বক্তব্যটি সঠিক নয়। সর্বোচ্চ ‘মাকরুহে তানজিহী’ বলা যেত অর্থাৎ নামটি না রাখা ভাল তবে রাখলে সমস্যা নেই।
আবার মাকরুহে তানজিহী তখনই বলা যাবে যখন ‘কানিজ’ শব্দটিকে ফারসি ধরা হবে। কারণ শুধু মাত্র ফার্সিতেই কানিজ শব্দের অর্থ বান্দি। আর যদি বলা হয়- কানিজ শব্দটি আরবি। তখন মাকরুহে তানজিহী-ও বলা যাবে না।
আমরা বাংলাদেশি মুসলিমগণ ‘কানিজ ফাতিমা’ নামটি আরবি হিশেবেই রেখে থাকি সুতরাং শরয়ী কোন বাধা নেই। যারা নামটি রেখেছেন ভালই করেছেন। নামটি বড়ই শ্রুতিমধুর।
.
এবার দলিল সহ আমার বক্তব্য উপস্থাপন করছি। আমার মতে নামটি ফার্সি হিশেবে রাখুন চাই আরবি হিশেবে কোন সমস্যা নেই।
১. নামটি যদি আরবি হয় তাহলে বিরুদ্ধবাদীদের কোন কথাই চলবে না। কারণ আরবি প্রসিদ্ধ অভিধান আল মুজামুল মাআনী, আল মুজামুর রাঈদ, আল মুজামুল ওয়াসীত, আল মুনজিদ প্রভিতৃতে ‘কানিজ’ শব্দের অর্থ ‘সঞ্চয়কারী। সঞ্চিত। শীতকালে খাওয়ার জন্য সঞ্চিত খেজুর।’ লেখা হয়েছে।
এখন নামটির অর্থ হল- সঞ্চয়কারিণী ফাতিমা। কানিজ ফাতিমা জানে প্রতিটি বস্তুর অফ সিজন আছে। এক সময় বস্তটির দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তাই কানিজ ফাতিমা অতি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বস্তুটি সঞ্চয় করে রাখছে। অফ সিজন ও দূর্ভিক্ষেও যেন বস্তুটি তার কাছে সহজলভ্য থাকে। বিপাকে পড়তে না হয়।
.
২. নামটি ফার্সি হলেও সমস্যা নেই।
প্রথমে দুটি শব্দের মাঝে “সম্বন্ধ সূচক সম্পর্ক” নিয়ে একটু আলোচনা করছি।
(ক) ফার্সিতে সম্বন্ধ সূচক বাক্য ‘কানিজে ফাতিমা। কলমে মুহাম্মাদ। কিতাবে সাহির।’ এভাবে পড়তে হয় অর্থ হবে- ফাতিমার বাদি, মুহাম্মদের কলম, সাহিরের কিতাব।
(খ) দুই ‘স্বতন্ত্র নামের’ মাঝে সম্বন্ধ সূচক সম্পর্ক করা যায় না। সুলাইমানে যুবায়ের, জাহিদে ইলিয়াস, হুমায়ুনে মাহমুদ। অর্থ হবে- যুবাইরের সুলাইমান, ইলিয়াসের জাহিদ, মাহমুদের হুমায়ুন।
একটা পাগলও বলবে এটা সঠিক নয়।
.
'ক' এর আলোচনার পূর্বে ফার্সিতে কানিজ শব্দের অর্থা দেখা যাক। প্রসিদ্ধ ফার্সি অভিধান 'লুগাতে কিশোরি'তে কানিজ শব্দের অর্থ ‘বাদি। যুবতি মেয়ে।’ লিখা হয়েছে।
• পাঠক! লক্ষ্য করুন- কানিজ ফাতিমার তারা যে অর্থ করেছে “ফাতিমার বাদি” এটা তখনই সঠিক হবে যখন আপনাকে ‘কানিজে ফাতিমা’ নামে ডাকা হবে। কিন্তু আপনাকে ডাকা হচ্ছে কানিজ ফাতিমা। কাজেই এখানে ফার্সির নিয়মানুসারে অর্থ উঠানো ঠিক হবে না। কারণ অর্থানুযায়ী শব্দের উচ্চারণ নেই।
সুতরাং ধরা হবে এখানে পৃথক দুটি শব্দ দিয়ে একটি নাম রাখা হয়েছে। এটাকে “মুরাক্কাবে মানা সরফ বা মুরাক্কাবে মাযাজী” বলে। আর এজাতীয় নামের বাংলায় যেমন অর্থ করা হয় এটারও তেমন অর্থই করা হবে। সাবের আব্দুল্লাহ অর্থ ধৈর্যধারী আব্দুল্লাহ। সায়েম মাহমুদ অর্থ সংযমশীল মাহমুদ। কানিজ ফাতিমা অর্থ হবে ‘যুবতি কিংবা বাদি ফাতিমা’। আসলেই ফাতিমা বাদি কারণ সে ত আল্লাহর দাসত্ব করছে।
.
উচ্চারণ ঠিক না হলে অর্থ ঠিক হবে না, এর বড় দলিল হল- নামাজে কুরআন পাঠে উচ্চারণ বিশুদ্ধ না হলে নামাজই সঠিক হয় না।
আরেকটি মজার কথা বলছি- শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী ‘জাহানে দীদাহ্’ নামে একটি বই লিখেছেন। দূর্ভাগ্য বশত বইএর নামটি ‘জাহাঁ দীদাহ্’ নামে লোকমুখে প্রশিদ্ধ হয়ে যায়।
এব্যাপারে তিনি লিখেন: আমার লিখিত প্রথম সফর নামা যার নামের সঠিক উচ্চারণ হল ‘জাহানে দীদাহ্’। ‘জাহাঁ দীদাহ্’ সঠিক উচ্চারণ নয়।
[দেখুন, রাতের সূর্য (শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী) বই এর ভূমিকা]
.
• আর 'কানিজ' কে স্বতন্ত্র নাম ধরা হলে। তখন ত কানিজ ফাতিমা শব্দের মাঝে ‘সম্বন্ধ’ ঠিকই হবে না। যে ‘সম্বন্ধ’কে সম্বল করে তারা আপত্তি তুলেছেন। কারণ 'খ' তে আমরা একটা নিয়ম লিখেছি। স্বতন্ত্র দুটি নামকে পরস্পর সম্বন্ধ করা যায় না। সুতরাং এখানেও বলা হবে দুইটি পৃথক নামকে একত্র করে একটি নাম রাখা হয়েছে। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের নামই কয়েকটি নামের সমষ্টি।
অর্থ আগেরটাই, আল্লাহর বাদি ফাতিমা কিংবা যুবতি ফাতিমা।
.
কানিজ স্বতন্ত্র নাম। দলিল হল- ‘বাহর ইবনে কানিজ’ নামক একজন দূর্বল মুহাদ্দিস রয়েছেন। মুসনাদে বাজ্জার, শুয়াবুল ঈমান, মাজমাউয জাওয়ায়েদ, বিদায়া ওয়ান নিহায়া প্রভৃতি গ্রন্থে উক্ত মুহাদ্দাসের অনেক হাদিসও আছে।
[তার জিবনী জানতে দেখুন, কিতাবুল মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন ১/২১৮]
.
আলহামদুলিল্লাহ্। আরো সম্ভাব্য অনেক দিক নিয়ে আলোচনা করা যেত। লেখা অতি দীর্ঘ হবে বিধায় ছেড়ে দিয়েছি।
মোট কথা অর্থের বিচারে কোন ভাবেই এটাকে শিরকী নাম বলা যাবে না। তবে এই নামটা শীয়া কাফেররা ব্যবহার করে। মুসলিমদের এই নাম থেকে বেচে থাকাই উচিৎ। তবে রাখলে সমস্যা নেই। এই কথা ভেবেই আমি শুরুতে মাকরুহে তানজিহী বলেছি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: এক দেশের গালি
অন্য দেশের বুলি
.......................................
অতএব যেদিকে বৃষ্টি
সেদিকেই ছাতা ধরুন

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: নাম নিয়ে লাফালাফির দরকার নাই।
মানুষের কর্ম টাই আসল।
মনে রাখবেন- নামের জন্য কেউ নোবেল পায় না। কর্মের জন্যই পায়।

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:২২

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার লেখার উপস্থাপন এবং সূত্র ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। বেশ কষ্ট করেছেন ছোট একটা নামের জন্য তবে কিছু লিখলে সেটা ভালো ভাবেই লেখা উচিৎ।
@রাজীব ভাই, আপনি আমার মনের কথাই বলে দিয়েছেন। তাই আর রিপিট করলাম না।
ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:১১

ডিগবাজি বিশারদ বলেছেন: আমি এমন একটা ব্রাউজার ব্যবহার করি যেটা দিয়ে আপনাদের কমেন্টের উত্তর দিতে পারি না। কোন সাড়া না দেওয়াতে ক্ষমা সুনদর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.