নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবতাকে সব পরিচয়ের উপরে স্থান দিতে পারলেই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।

চলো স্বপ্ন ছুঁই

একটু পড়ি, একটু লিখি

চলো স্বপ্ন ছুঁই › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'\'হাসপাতাল\'\'

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৪৮


হাসপাতাল শব্দটি কোন শতাব্দী থেকে মানুষের কাছে পরিচিত বা ঠিক কোথায় এর প্রথম কদম পরেছে তা বেশিরভাগ মানুষ না জানলেও হাসপাতাল সম্পর্কে পরিচত নন এমন একটা মানুষেরও দেখা পাওয়া ভার।

ধরণীর বুকে যত গুলো পা ফেলার জায়গা আছে তার মধ্যে হাসপাতালই একমাত্র জায়গা যেখানে প্রতিটি মানুষই অনিচ্ছাকৃত যায়।আবাল বৃদ্ধ বনিতা, শিশু-কিশোর সবার জানাশোনায় কম বেশি থাকলেও এক জায়গায় সবাই এক আর তা হল হাসপাতাল সুস্থ মানষের জায়গা নয়,এখান থেকে কবে ছুটি হবে,একটুও থাকতে ভালো লাগে না এসব নিত্য পরিচিত শব্দাবলী।

যার যা কিছু মনে হোক না কেন, আমার মনে হয় পৃথিবীতে ঈশ্বরের কাছাকাছি যাওয়ার দুটি জায়গা আছে --
এক.হাসপাতাল
দুই.জেলখানা

হাসপাতালে ঢোকার মুহূর্তটা ঝাকে ঝাকে হলেও সময় ঘনিয়ে আসার বা দিন গড়িয়ে রাত্রিতে পাশে থাকার মত মানব বা মানবী ৭৩০কোটির বসুন্ধরায় খুব কমই আছে।শ্মশানঘাট থেকে ফেরা কিংবা কবর দেয়ার পর ফিরে আসা মানুষের দলের মত একে একে সবাই চলে আসে একান্ত প্রিয়জনকে কাছে রেখে।প্রিয়জনটিকে বা রোগীর সঙ্গী হিসেবে তাকে রেখে আসার কারণ দুটি ---

এক.প্রিয়জনটি রোগীকে ছাড়া থাকতে চায় না বা
দুই.রোগীকে ছাড়া সে থাকতে পারে না বিশেষ করে প্রিয়জনটির বিপদের দিনে।

হাসপাতাল এর বাহিরটা চাকচিক্য থাকা না থাকার বিভেদ থাকলেও ভিতরটা একই রকম।হোক সেটা মাউন্ট এলিজাবেথ বা বস্তির পাশে গড়ে উঠা নাম সর্বস্ব ছোট্ট ঘরের হাসপাতালটি।ভেতরে সর্বত্রই বেরিয়ে আসার আর্তনাদ,রিলিজ হওয়ার একান্ত আকুতি,প্রিয় বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার নানামুখি স্বপ্নের ফুলঝুরি যা কিছুদিন আগেও অসুস্থ ব্যক্তিটি ও তার পরিবারের কাছে বাস্তবই মনে হত,হাত দিয়ে ছোয়া যেত।আর মুহূর্তের ব্যবধানে রূপ নিয়েছে পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে ভাসমান সামুদ্রিক ভেলার মত,ক্ষণিক ডোবে তো ক্ষণিক ভেসে উঠে।

যে যে চিকিৎসা নিতেই আসুক না কেন নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে সবাই এখানে এসেছে তা শোনা যায় চাপা কান্নার মাঝে খানিক বিরতির মাঝখানে।এক এক জনের কাছে হাসপাতাল এর দরজা মাড়ানোর গল্প এক এক রকম হলেও হাসপাতাল এর খিড়কি দিয়ে মুক্ত দুনিয়ার বিচরণ করার স্বপ্ন একই রকম।কেউ আলিশান ফ্ল্যাট, কেউ বস্তিতে বেড়ে উঠার সত্ত্বেও হাসপাতালে ঢোকার পর সবাই সবার কাছের মানুষ হয়ে যায়,দু:খ ভাগাভাগির ভাগিদার হতে কারো সামান্য আপত্তিও থাকে না,কেননা এইটা যে ভগবানের পাশের বাড়ি,এখানে মানবিকতা না দেখালে চলে!!

তাহলে যে সৃষ্টিকর্তা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিবে আর এই নরক যন্ত্রনা আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে,শেষে সবারই ধর্যের বাধ ভাঙ্গবে একে একে এই ভাবনা থেকে।

মানুষের উষ্ণ রক্ত শীতল হওয়ার সর্বোত্তম জায়গা হাসপাতাল।এখানে আসলেই সবাই একটু সদয় হয়ে যায়,ভ্রাতৃত্ববোধ জেগে উঠে, দেখা মিলে সৃষ্টির রহস্যের---মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য।

হাসপাতালে ঢুকলে আরো একটা ব্যাপার চোখে পড়ে আর তা হল--সেবা শ্রশ্রূষা করার ব্যাপারে বা অসুস্থের পাশে বসে ঘুমহীন রাত্রী জাগতে, সহমর্মিতার সবটুকু ঢেলে দেয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ,মহীয়সী নারীরা,প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীরা, পৃথিবীর ভালো অংশের ভগিনীরা পুরুষের চেয়ে লাখো-কোটি গুন শুধু এগিয়েই নয়, এক কথায় অতুলনীয়।

হাসপাতালের বারান্দা মাড়ালে এটাও স্পষ্ট হয় যে কিছু কিছু ডাক্তার রোগীর সমস্যাকে কেজি,পাউন্ট বা এমনকি কখনো কখনো মণেও পরিমাপ করতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করে না,একটু আধটু কম বেশি হলে তেমন সমস্যা নেই।আর দুর্ব্যবহার তা তো রোগীর ইহজন্মের প্রাপ্য,আত্মীয়-স্বজনদের অধিকার।

হাসপাতালের অন্তরটা অনেক সুন্দর,আলোকিত,স্বচ্চ,প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।সে হয় রোগীকে সুস্থ করবে নতুবা চির শান্তির শহরের না ফেরার টিকেট সে নিজে কিনে দেবে।

আর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়জনকে আদর করে আনন্দে ভাসিয়ে দিবে বা হাতে পথে বসার ঘটিবাটি নিজেই ব্যবস্থা করে দিবে।

হাসপাতাল এর সবচেয়ে মহাত্ম্য হল এই যে,হাসপাতাল
বের করে দেওয়ার তুলনায় ধরে রাখে খুবই অল্প যার জন্যই সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ হাসপাতালমুখি হয় যখন তখন,কারণে অকারণে সুন্দর স্বপ্নময়, আলোকিত আগামীর প্রত্যাশায়।

''হাসপাতাল''

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.