নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবতাকে সব পরিচয়ের উপরে স্থান দিতে পারলেই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।

চলো স্বপ্ন ছুঁই

একটু পড়ি, একটু লিখি

চলো স্বপ্ন ছুঁই › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কর্মহীন নারী"!!!!

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮

গ্রামে ছোটখাটো এক জটলা দেখে সামনে এগিয়ে গেলাম, ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখি এক মাঝ বয়সী মহিলা চিতকার করে কাঁদছে,"ও মাগো,আমি মরে গেলাম গো,ও মা আমি বাঁচবো না গো, বুজি দেখেন আমার পিঠটা কি করছে" (লোহার পাতের প্রচন্ড আঘাতে পিঠের চামরা ফেটে রক্ত ঝরছে,আর আঘাতের খত গোটা বিশের কম হবে না।

পাশ থেকে একজন মহিলা দেখে আফসোস করছে-"মানুষরে মানুষ এমনে মারে,শিমার একটা"

আর একজন মহিলা বলছে,"তোর একটা কপাল, একটা হতভাগী,আজকাল বউকে কেউ এমনিতে মারে,আজরাইলের ঘরে আইছিস"

ভিড় ঠেলে এক বৃদ্ধ চাচি এসে বলল, "এভাবে কানলে (কান্না) মানুষ মন্দ কইব,আর বেটা মানুষ একটু রাগ হতেই পারে,যা ঘরে গিয়ে মলম দে,
ঢং, স্বামী একটু মারছে তা কেমন চিল্লায়।"

এতক্ষণ ঘটনা দেখে, আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম,কি অপরাধ করছে??

পাশের একজন বলল,--"প্রতিদিন জমিতে ভাত নিয়ে যায়,আজকে চুলা ভিজা ছিল,আর প্রচন্ড বাতাসে আগুন নিভে যাচ্ছিল, তাই ভাত রাঁধতে দেরী হইছে।তাই স্বামী বাড়ি এসে মারধর করছে,হাতের কাছে লোহার রড পেয়েই গরুর মত পিটাইছে"

আমি বললাম তার স্বামী কোথায়??? সবাই বলল, ওই যে ওখানে, মাচা বাধছে।

আমি তার স্বামী কোথায় জিজ্ঞেস করার কথা শুনেই মহিলা কষ্ট করে উঠে দাড়িয়ে বলল, "আমার কিছু হয়নাই, এতটুকু আঘাতে কিছছু হবে না,আপনি কিছু কইয়েন না, পড়ে রাতে আবার হাত চলব"

আমি বললাম দেখি,আপনার ক্ষতি হইলে কিছুই বলল না।

বাড়ির সামনেই মাচা বাধছে, দেখে সামনে এগিয়ে গেলাম।

চাচা(এলাকার, তাই চাচাই বলি)কেমন আছেন? ভালো তুমি কেমন আছো? ঢাকা থেকে কখন আসছো? এই কালকে।
চাচা, চাচি কাঁদছে কেন??

এই কথা শুনতেই তার চোখ চড়ক গাছ,কে বলছে?? না, কেউ বলে নাই, আমি চাচির সাথে দেখা করতে আসছিলাম,তাই দেখলাম।

এবার আর লুকানোর পথ নাই এইভেবে,সে বলল, আর বলিস না,কলিজাডা জালাইয়া ফেলছে।কোন কাজ করে না, খালি বাড়ি বসে খাওন আর খাওন,আর কোন কাম নাই। কিচ্ছু করে না।

আমি রুজি করি,সারাদিন খাটি আর সে বসে বসে রং বে রঙের খাওন আর খাওন,এছাড়া কিচ্ছু করে না। দিছি আজকে।
এই কথা বলেই সে মৃদু হাসলো, দিছি।

চাচার কথা,অঙ্গভংগি,চাহনি,এক্সপ্রেশন দেখে আমি অবাক।

আমার কথার সায় না পেয়ে, সে বলল, কি ঠিক করছি না, ঠিক করছি না????
জ্বী কাকা, অবশ্যই ঠিক করছেন!!!!

কাকা, এবার অট্টহাসি,কেননা তার কথায় সায় মিলেছ.
আমি এবার বলা শুরু করলাম,"চাচি কিছুই করে না??
কিচ্ছু না, একেবারে আকাম এর লোক।

চাচা শুনেন,আপনি বিরাট একটা অন্যায় করেছেন।

চাচা, আকাশ থেকে পড়ল,কেননা না,একটু আগেই তার কথায় সায় দিয়েছিলাম।

চাচা আপনি একটা অমানুষ বললেও ভুল হবে,বর্বর, বন্য স্বভাবের হিংস্র জীব।

এবার চাচা বিনীত হল,সে আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো, কেননা, বিগত পঁচিশ বছরে আমার মুখ থেকে সে এমন কথা শুনেনি,শুনবে চিন্তাও করেনি।


চাচা, চাচি কিছুই করে না??? তাই না???

আপনাদের বিয়ে হয়েছে, বিশ বছর হবে না??
তাতো হবেই।

এই বিশ বছরে একদিনও কি নিজের জামা-কাপড় নিজে ধুইছেন??? না।
এই বিশ বছরে,একদিনও কি নিজে মশারি টানাইছেন? না।

চাচি কি একদিনও আপনাকে রেখে সকাল, দুপুর বা রাতের খাবার খেয়েছেন?? না।
আপনি কতবার চাচিকে রেখে খেয়েছেন হিসাব আছে??? না,প্রায়ই খাই।

চাচি কি একদিনও নিজের প্লেটে মাছের মাথা নিয়েছে?? না,নেইনি,নেয়ার চিন্তাও করেনি।
চাচি কি একটা মানুষ, নয়?? তার কি ভালো খাবার খেতে ইচ্ছে করে না??? ওইতো খায় না।

আপনিতো কোনদিনও তাকে মাছের মাথা দেয়ার চিন্তা করেছেন কি????
আপনি কি একবেলাও নিজে রান্না করে খেয়েছেন?? না,একদিনও না,রাঁধতে পারলে তো।আপনি জানেন বিশ বছরে কয় বেলা রান্না করতে হয়????

আপনি কি যতদিন কাজে গেছেন একদিনও দুপুরের খাবার না খেয়ে থেকেছেন?? না,তা থাকিনি।

আপনি কি জানেন, সবাই খাওয়ার পর কতদিন তরকারির অভাবে চাচি না খেয়ে রাত কাটিয়েছে???

আপনার আগে একদিনও কি চাচি খেয়েছে???
না,ও আমারে রেখে খায় না,গরম খাবার আমার প্লেটে দেয়ার পর থাকলে খায়।

আপনার চার চারটি ছেলে-মেয়ের কাপড়-চোপড় ধোয়া,খাবার পরে প্লেট ধোয়া, ময়লা হাড়ি-পাতিল ধোয়া
,ঘড় মোছা,উঠান ঝাড়ু দেয়া ,গরুর গোবর পরিষ্কার করা,গরুকে পানি খাওয়ানো, ঘর গোছানো, ঝাড়ু দেয়া কে করে??
ও করে।

চাচা,চাচি বেড়াতে গেলে আপনাকে কে রান্না করে দেয়???

ও তরকারি রান্না করে রেখে যায়। অথবা পাশের বাসায় কাউকে রান্না করার জন্য অনুরোধ করে যায়,সেই রান্না করে দেয়।
আপনি অসুস্থ হলে, চাচি কি সেবা করে???

করে,সারারাত একফোঁটাও ঘুমাতে পারে না,আমার মাথার কাছে বসে থাকে। কখনো মাথায় পানি পট্ট,কখনো পানি দেয়,কখনো মাথায় তেল দিয়ে দেয়।হাত-পায়ে তেল মালিশ করে দেয়।শরীর মুছে দেয়।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।আমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ওর নাওয়া-খাওয়ার ঠিক থাকে না।

আর চাচি অসুস্থ হলে, আপনি কি ঠিকমত তার খুজ-খবর নেন?? রাত জেগে পাহারা দেন???
না,এসব আমি পারি না। তবে কয়েকদিন পর ডাক্তার দেখানোর টাকা দেই।

আর চারটি ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠানো,তাদের পড়ালেখার তদারকি করা,অসুস্থ হলে সেবা-শ্রশূষা করে সুস্থ করার কাজ কে করে???
তোমার চাচিই এসব করে।

আপনি বাজার থেকে ফিরতে দেরি হলে,চাচি কি ফোন দেয়??? হা হুতাস করে???
করেনা আবার!!!ওই ছেলে-মেয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর ফোন দিয়ে কখন আসবেন????কখন আসবেন???কেন এত দেরি হচ্ছে???? কোন সমস্যার পড়লেননি??? বলে অস্থির হয়ে যায়।
আমি না ফেরা পর্যন্ত ও খায় না। আসলেই শরবত বানিয়ে দেয়,কাছে এসে বাতাস করে,গামছা এগিয়ে দেয়,বসার জন্য পাটি বিছিয়ে দেয়। আমার ক্লান্তি না কাটানো পর্যন্ত পাখা ওর হাতেই থাকে।

কিন্তু চাচি কোথাও গেলেতো আপনি এমন করেন?? না,এত অস্থির হওয়ার কি আছে??? আসবেই।

চাচা উঠানে দেখছি -গম,ধনিয়া পরে আছে,এগুলো মাড়ায় কে??? ও,আমি, ছেলে-মেয়ে মিলে একসাথেই মাড়াই। কিন্তু খড়গুলো ওই যত্ন করে রাখে।

ধানের সময় ওই ধান সিদ্ধ,বস্তা ভরা,ঘরে তোলা এসব করে।আমি কেবল বাড়িতে এনে দেই।তারপর উভয় মিলে গরু দিয়ে মাড়াই করি।
চাচা,তাহলে কে কাজ বেশি করে????

আপনার চেয়ে দশগুন বেশি কাজ করে চাচি।আর আপনি বলেন কিচ্ছু করে না।

আপনার কাজ শুরু হয় সকালে আর শেষ হয় সন্ধ্যায়।আর চাচির কাজ শুরু হয় ভোর হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে, আর শেষ হয় রাতে আপনাদের খাওয়ার পরে নোংরা প্লেটগুলি পরিষ্কার করার পর।

আপনার মশারি,ছেলে-মেয়েদের খাওয়া,মশারি টাঙানোর পর।
এত কিছু করার পরও চাচি কিছুই করে না। শুধু খায় আর খায়??

সবচেয়ে ভালো মাছের পিচ,ভালো তরকারি,সতেজ খাবার আপনিই খান।চাচি খায় বাসি,উচ্ছিষ্ট, তলানির খাবার।

চাচি আপনার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কাজ করে।আর আপনি কিছু টাকা কামানোর জন্য তার সকল অবদান অস্বীকার করেন,তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করেন না।

সে কি ফেরেশতা????তার কি ভুল হতে পারে না???

সে কি মানুষ নয়????তার কি স্বাদ,আহ্লাদ নেই??? তার কি ঘেন্নাপিত্তি নেই????
সে কি এতটাই দুর্বল যে,প্রতিবাদ করতে পারে না???

আপনার লাঠি ধরার শক্তি তারও আছে। সেও চাইলে আপনাকে আঘাত করতে পারে।

যে এত কাজ করতে পারে, সে চাইলে ওই লাঠি,রড়ও চালাতে পারে।

তারও শক্তি আছে আপনাকে রক্তাক্ত করার,মেরে ক্ষত-বিক্ষত করার, আপনার মত উচ্চ-বাচ্য করার ক্ষমতা তারও আছে।
চাচা, তার সবই আছে। কিন্তু কি নেই জানেন???

স্বামীকে অপমান করার ইচ্ছা, প্রিয় মানুষটিকে রক্তে রঞ্জিত করার পশুত্ব।
কি নেই জানেন???

স্বামীরূপি দেবতার মুখটি গোমড়া না দেখার পৈচাশিক আনন্দ। নেই, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার যথেষ্ট অভদ্রতা, কাপুরুষতা,হিংস্রতা,বর্বরতা, অমানবিকতা।

চাচা,নারীকে নারী নয়,মানুষ ভাবুন।

নারীকে দুর্বল নয়,বিনয়ী ভাবুন।

নারীকে অশ্রদ্ধা নয়,সম্মান করুন।

নারী সমাজকে অবজ্ঞা নয়, তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন।

মা,বোন,স্ত্রী,সন্তান বা অন্য কোন নারীকে সম্মান করুন।

কেবল ক্ষেত্র-বিশেষে শারিরিক শক্তি, কয়টা টাকা উপার্জন এতটুকু গর্বের বিষয় নয়।

সৃষ্টির প্রতিটি জীবের অবদান চিন্তা করে তার প্রতি আচরণ করুন,কেবল নিজের কাজ দেখে নয়।

পৃথিবীর জন্য সবার কাজই দরকার।

আমরা যাদেরকে কর্মহীন বলি,তাদের কাজ ছাড়া সভ্যতা কি এতটুকু এগুতে পারবে????????

হঠাত, চাচির ডাক, "ভাত বেড়েছি,খেতে আসেন।"

এই হল কর্মহীন নারী,হাজারো অন্যায় সহ্য করে স্বামী-সন্তান,পরিবারের দিকে তাকিয়ে জীবন পার করে দেয়ার অসীম ক্ষমতার অধিকারী মানবসত্তা।

জয় হোক কর্মহীন নারীর,জয় হোক নারী জাতির।
"কর্মহীন নারী"!!!!
২০/০২/২০১৭
দুপুর:২.২৫ ঘন্টা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০০

টুনটুনি০৪ বলেছেন: আপনাকে ব্লগে স্বাগতম জানাই। ২ দিনে দেখছি বেশ কয়েকটা পোষ্ট করেছেন। আপনার পোষ্টটি ভালো লাগল।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৩

চলো স্বপ্ন ছুঁই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। লেখার চেষ্টা করি,নানা সমস্যা যখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখনই চেষ্টা করি দু'কলম লেখার।পোস্টটি ভালো লেগেছে শুনে আমারও ভালো লেগেছে।

৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
গল্পটা সুন্দর ছিল কিন্তু শেষে এসে নিজের মত ডায়লগ দিয়ে শেষ করে দিলেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.