![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু পড়ি, একটু লিখি
শাহবাগ মোড় সকাল ৯.৪০,চিরচেনা শহরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার মিছিলে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে আমি আজকে শামিল হয়েছি কারওয়ান বাজার যাওয়ার জন্য।
ব্যস্ত নগরী, ব্যস্ত এর বাসিন্দারা, প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা রাস্তায় বের হওয়ার ফুসরত কারও নেই।
ঢাকা শহরের কর্মব্যস্ততা উপলব্ধি, অবলোকন বা পর্যবেক্ষণ করার জন্য শাহবাগ, ফার্মগেট, গুলিস্তান, সদরঘাট, গাবতলি মোড় এর বিকল্প নাই।
প্রতিদিন সকালে একঝাক মানুষের তীব্রস্রোত আর বিকালে উল্টো ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নামে এই জায়গা গুলোতে।
কর্মস্থল,কাজের ধরণ শ্রেনী বিশেষে পার্থক্য থাকলেও সবার মাঝে অবিরাম এগিয়ে চলার প্রচেষ্টায় এতটুকু উদাসীনতা নেই।
দ্বিতল বাস সার্ভিস শহরের রাজপথ গুলোতে চলাচল করা মানুষের পথযাত্রাকে একটু হলেও স্বস্তি দেয়।
আমিও সব সময় দ্বিতল বাসে যাতায়াত করার চেষ্টা করি। প্রতিদিন সম্ভব হয়ে উঠে না।তবে আজকে যাত্রাপথে সামনে পেয়েই উঠে বসলাম পিছনের দরজার কাছে।যাত্রাপথের দূরত্ব কম তাই উপরে উঠি নাই।
মুহূর্তে বাস ভরে গেল। বাস ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এক মধ্যবয়সী
লোক একটি শিশু মেয়েকে নিয়ে উঠে পা দানির একটু সামনে দাঁড়িয়ে রইল কেননা গন্তব্যস্থল অতি সন্নিকটে( মনে হইল)
শিশুর বয়স ৪/৫ বছর হবে। সে উঠেই বলল,'
বাবা চল উপরে উঠি
বাবা বলল - না, মা সামনেই তো নেমে যাব,উপরে উঠে কি লাভ,আবার নামতে হবে।
মেয়েটি আবার বলল - চল বাবা উপরে যাই।বাবার উত্তর আগের মতই হওয়ায় মেয়েটি তাকিয়ে রয়েছে তার পিতার চোখপানে। মুখ থেকে একটি কথাও বের হচ্ছে না।
সামনেই আমি বসে আছি। আমি বললাম, ভাই বসেন এইতো জায়গা।তারা বসছে না যদিও চেষ্টা করলে বসা যেত। আমি নিরবে তাকিয়ে বাবা-মেয়ের কথোপকথন দেখছি।
বাবা যখন মেয়েকে বুঝিয়ে বলল মেয়ে শুনল,শান্ত হল মনে হয় না। একটু বিরতি দিয়ে আবার বলল বাবা চল উপরে যাই। বাবা এই কথার তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে আবার বলল, বাবা আমরা তো সামনেই নেমে যাব।
অযথা উপরে উঠার কি দরকার?
এবার আমার মনে নানা কথার উদয় হতে শুরু করল-- চার পাচ বছরের শিশুর কাছে যেটা লাভ ,এই ধরণীর অন্য বয়সী মানুষের কাছে সেটা কি লাভ বিবেচিত হতে পারে? মোটেও না।
এই বসুন্ধরার বুকে যে মানুষ যতবেশী আগে পদার্পণ করেছে তার আবেগ, ভালোবাসা, অনুভূতি, ভালোলাগা,মন্দলাগা ততটা ভিন্ন। সব কিছু সবাইকে সমানভাবে টানে না,সব কিছু সবার কাছে সমান আবেদন সৃষ্টি করতে অপারগ।
বহুবর্ণী এই ধরার রূপ ছোট্ট শিশুর কাছে এখনো অধিকাংশক্ষেত্রেই অজানা,অচেনা,রোমাঞ্চকর। শিশুটি উপরে উঠতে চায় এটা তার কাছে অনেক আনন্দের,একতলা উঠবে এটা তার কাছে রোমাঞ্চকর।
উপর থেকে রাস্তাকে অবলোকন করবে এটা ভেবে সে অত্যন্ত খুশি হয়,রোমাঞ্চিত হয়,আন্দোলিত হয়।
হয়তোবা বাসের উপর তলাটা দেখতে কেমন এটাই তার কাছে অনেক আনন্দের বা উপরের মানুষ গুলোর অনুভূতি কতনা উপভোগ্য এটা তার কোমল হৃদয়কে শিহরিত করে। অথবা একই পরিমাণ টাকা ভাড়া দিয়ে কেন নিচের তলায় থাকবো এটা তার কোমল মনে বোধগম্য হয় না।
শিশুটি আবার বলল বাবা একটু উপরে চল না।এবার একটু জোড় দিয়েই তার বাবাকে বলেছিল, আর বাবার হাত টানতে ছিল।
কিন্তু এই বয়সের শিশুর জোর খাটানো তার বাবার কাছে সামলে নিতে তেমন বেগ পেতে হয় না,অতটুকু সাড়া জাগাতে পারে না।
শিশুটি আবার চেষ্টা করল নিজের ইচ্ছা, আবদার মেটানোর জন্য।
এবার বাবার সুর চড়া হতে শুরু করলো, বলে উঠল --কি হয়েছে তর??এমন করছিস কেন?? চুপ। সামনে নেমে যাব আর উপরে উঠতে হবে না।
আমি বললাম, ভাই যাননা একটু উপরে,ও এত করে বলছে। দরকার হলে উঠেই আবার নেমে যাবেন, আর একটু জ্যাম তো আছেই আপনার নামতে আর পাচ-দশমিনিট লাগবে( ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি সে ফার্মগেট নামবে)। সে আমার কথায় কর্ণপাত করল না,কোন উত্তরও দিল না। কেবল একটু তাকিয়ে থাকল।অত:পর মেয়েকে বলছে- আবার বাসে উঠলে, উপরে বসব।
বাস ধিরে ধিরে সামনে এগুচ্ছে আমিও নেমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাস আমার গন্তব্যে পৌছলে আমি নেমে যাই। শিশু ও তার বাবা পরে উপরে উঠছিল কিনা আমি জানি না।
তবে নামার পর আমার কানে শিশুটির কথা বাজতে লাগল--বাবা চলনা উপরে যাই।
পরক্ষণে আমার মনে হাজারো প্রশ্নের উদয় হল-- উপরে উঠলে বাবার কি এমন ক্ষতি হত ?? শিশুটির চাওয়াটা কি এতই বড় ছিল যে মেটানো যেত না???
শিশুটির সামান্য আবদার যার জন্য তার বাবার একটু সদিচ্ছা ছাড়া আর কিছুই লাগত না, তাও অপূর্ণ রয়ে গেল??? এমন লাখো ইচ্ছাতো শিশুটির রয়েছে যা মেটানোর সাধ্য তার বাবার নেই, তা পার্থিব যেকোন সীমাবদ্ধতার কারণেই হোক।
হাজারো প্রশ্নের মাঝে একটা প্রশ্নই বারবার উদয় হল--কেবল সদিচ্ছা থাকলেই শিশুর হাজারো ছোট-খাটো আবাদার কি আমরা মেটাতে পারি না???
শিশুকে খুশি করতে কি সব সময়ই অনেক বেশি অর্থ,সময় খরচ করতে হয়??? তার জন্য কি অনেক বিত্তশালী হওয়ার দরকার আছে???
শিশুরা নিষ্পাপ, তার চাহিদা সর্বদা অত বড় হয় না। আমাদের একটু সদিচ্ছাই কি তার জীবনের শুরুতে একটি অপ্রাপ্তি ঘোচাতে পারে না????
অপ্রাপ্তি
৩০/১০/২০১৬
©somewhere in net ltd.