"আস্থায় সংকট, আস্থায় মুক্তি"

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৭

চুল কাটাচ্ছি,অভিজ্ঞতায় ভরপুর, দক্ষ ব্যক্তি যখন চুল কাটে কিছু কথাবার্তাও চলতে থাকে টিপটিপ বৃষ্টির মত।আমার চুল যে কাটছে তার মাথায় চুল নেই বললেই চলে।পাশের সহকর্মীর সাথে কথা বলছে মাথায় চুল লাগাবো।পাশের জন বলছে বিয়ে করার আগে তো অবশ্যই।

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ের বাজারে অনেক কিছুর সাথে পূর্বশর্ত হল মাথা অন্তত চুলে ঢাকা থাকতে হবে যাতে জামাই টাক এই অপবাদ কেউ দিতে না পারে।এই সমাজ সংসারে অর্ধমাথা চুলের মানুষদের বিয়ের বাজারে বিড়ম্বনার অভাব নেই,শাশুড়ি, মেয়ের বান্ধবী, মেয়ের দাদি শাশুড়ি সবারই তীক্ষ্ম দৃষ্টি থাকে জামাইয়ের মাথার চুলের প্রতি।সহকর্মী বলছে কোথায় করাবি হেয়ার টিট্রমেন্ট??? ঢাকা?? না রে ভাই, এমনিতেই চুল নাই মহাবিপদে আছি আবার আবোল-তাবোল চিকিৎসা করামু না,ইন্ডিয়া যামু খরচও কম,চিকিৎসাও ভালো হয়।আমার এক বন্ধু করাইছে।

হায় রে বিদেশ,হায় রে ইন্ডিয়া!!!আজকাল অনেকে শেভ করানোর জন্যও ইন্ডিয়া যায় কিনা কে জানে!!!তবে চিকিৎসার জন্য,শপিং এর জন্য প্রতিদিন হাজারো মানুষ ইন্ডিয়া যায় ,ভালো চিকিৎসা পায় টাকা খরচ করে তৃপ্তি মিলে,সেবা পেয়ে মন খুশিতে ভরে উঠে, আসার সময় করে সাধ্যমত শপিং।আর আমরা হাত তালি দেই আমরা ধনী হচ্ছি।

এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ১০-১২লক্ষ লোক চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাচ্ছে। যার সোজা বাংলা করলে দাঁড়ায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে শুধু ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে।অভিযোগ আছে, চিকিৎসকরা রোগ চিহ্নিত করতে না পারায় রোগীরা বাধ্য হয়ে ভারতে যায়।

ভারতের রেমিটেন্স আয়ের উৎসের দিক থেকেও বাংলাদেশ ৫ম।প্রতি বছর শুধু শপিং করতেই ইন্ডিয়া যায় কয়েক লাখ মানুষ,যাদের শপিং এর ভলিউম কয়েক হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।

শাকিব খানের সাথে শুভশ্রীকে জুড়ে দিলেই কেন ছবি হিট।আয়না বাজি, দেবীর মত মুভি না হলে কেন কেউ সিনেমা দেখতে যায় না????

অনেকেই বলতে পারেন আমি ভারত বিদ্বেষী কথা বলছি।না রে ভাই,আমি এটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি যে,বাংলাদেশে এপোলো, স্কোয়ার,বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেল এর মত হাসপাতাল থাকার পরও কেন তাদের চাহিদা মিটাতে পারছি না??? কেন আস্থার জায়গাটা সৃষ্টি করতে পারছি না???ভারত কিভাবে বাংলাদেশের চেয়েও সস্তায় উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে??? এর উত্তর জানা দরকার।এই দিকে নজর দেয়া জরুরী।

বাংলাদেশে কেন কোন রোগের চিকিৎসা নিতে হলে কয়েকজন ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন এর গড় নিয়ে ঔষধ খেতে হয়??? কেন ডাক্তারের কাছে গেলেই শুধু এন্টিবায়োটিক সাজেস্ট করে??? কেনই বা একজন ঢাকা মেডিকেল,সলিমুল্লাহ মেডিকেল থেকে পাস করার পরও বিসিএস দিয়ে এসপি,ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায়????কেন বাংলাদেশের ডাক্তারিতে আসার পড় মানব সেবা করতে চাওয়া ছেলে বা মেয়েটিও পার্সেন্টেজ এর ব্যবসায় অংশীদার হয়ে যায়???

সাধারণ একজন নাগরিকেও কেন বসুন্ধরা-যমুনা ফিউচার পার্ক থাকতে ইন্ডিয়া যেতে হবে বিয়ের শপিং করতে??? কিভাবে ইন্ডিয়া আমাদের চেয়েও কম মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করে????

অনেকেই অনেক কথা বলতেই পারে তবে আমার মনে হয় বেশিরভাগ নাগরিকই বাধ্য হয়েই ভারতে যায় চিকিৎসা নিতে,শপিং করতে।আমরা রেমিটেন্স নিয়ে বেশি ব্যস্ত। অথচ প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা যে চোখের সামনে দিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে তার জন্যে আমরা কিই বা পদক্ষেপ নিয়েছি???

আমাদের চিকিৎসা উন্নত করার জন্য আমরা কতটুকু পদক্ষেপ নিয়েছি???মানুষের আস্থা ফেরাতে কি উদ্যোগ নিয়েছি???

শপিং সেন্টারগুলোর এত মুনাফামুখী মনোভাব কেন কমাতে পারছি না??? কেন বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিদেশে সেবা নিতে যেতে বাধ্য করছি????

অথচ পোশাক শিল্পে বিশ্বে আমরাই ডমিনেটিং। কিন্তু কারো সুন্নতে খাতনা হলেই কেন শপিং এ যেতে হয় বিদেশে??? কারণ খুজতে হবে,ক্ষতস্থানে ঔষধ দিতে হবে,নয়তো একদিন পচন ধরবে ক্ষতস্থানে,সমস্ত শরীর রোগাকান্ত হবে তখন আর কিছুই করার থাকবে না।

ভেবে দেখার সময় এসেছে আমরা আমাদের টাকা কেন দেশে রাখতে পারছি না,কেন যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিচ্ছি না।বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ এখানে কাউকেই ধরে বেধে সেবা নিতে বাধ্য করার সুযোগ নেই,মানসম্মত সেবা অন্য দেশের চেয়ে কম মূল্যে দিতে পারলেই জনগণ সেবা নিবে।দেশে আস্থা ফেরাতে পারলেই জনগণ সেবা নিবে।আমরা উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু ফান্ডামেনটাল উন্নয়ন না হলে দ্রুত এই স্বপ্ন পূরণ হবে কি????

এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই বিগত কয়েক বছরে দেশে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে।তাইতো সময় এসেছে দেশের টাকা দেশে রাখার অভ্যাস গড়ে তোলার।ঘর বানানো হয়েছে, এখন দরকার ইদুরের গর্ত বন্ধ করার সংস্কৃতি চালু করা।তাহলেই এগিয়ে যাবে সোনার বাংলাদেশ।

"

০ টি +০/-০